এটিকে মোহনবাগান-৩ কেরালা ব্লাস্টার্স–২
(হুগো বৌমো-২, রয় কৃষ্ণ, লিস্টন কোলাসো) (সাহাল আব্দুল সামাদ, পেরিয়ার দিয়াজ)
গত বছরের আই এস এল-এ দশ নম্বরে থাকা কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে এটিকে মোহনবাগানের জয় নিয়ে কোনও সংশয়ই ছিল না। দেখার ছিল গত বছরের রানার্স কী রকম খেলে। গোল করতে কতটা সময় নেয়। নতুন ফুটবলাররা টিমের সঙ্গে কতটা মানিয়ে নিতে পারল। এই সব প্রশ্নগুলোর সব জবাব অবশ্য শুক্রবারের ম্যাচে পাওয়া যায়নি। হ্যাঁ, প্রথম গোলটা করতে এটিকে-র লাগল মাত্র তিন মিনিট। তারা বড় ব্যবধানে জিতলও বটে। কিন্তু কেরালা টিমটা এটটাই দুর্বল এবং তাদের ডিফেন্স এতটাই আগোছালো যে মোহনবাগানের ওজনটা ঠিক বোঝা গেল না। তবে কয়েকটা ব্যাপার অবশ্য বেশ ভাল রকমেই বোঝা গেল।
এক নম্বর হল, মুম্বই সিটি এফ সি থেকে আসা ফরাসি মিডফিল্ডার হুগো বৌমো এবারের মোহনবাগান টিমের এক নম্বর ফুটবলার হতে পারেন। তাঁর জার্সি নম্বর দশ। সাধারণত টিমের সেরা প্লেয়ারের গায়েই দশ নম্বর জার্সিটা ওঠে। তা আন্তোনিও হাবাস এবং তাঁর কোচিং টিম কিন্তু টিমের সেরা প্লেয়ারটাকেই দশ নম্বর জার্সিটা দিয়েছেন। খেলা তৈরি করাটা তাঁর যেন সহজাত। কোথায় দাঁড়ালে বা গেলে বলটা ঠিক মতো ধরার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি দেখে নেন কে কোথায় আছে। পাসগুলো যেন ঠিকানা লেখা। এ রকম একটা গেমমেকারের দরকার হয় চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে। এটিকে খুব ভাল প্লেয়ার পেয়ে গেছে। একই কথা যদি তাদের ফিনল্যান্ড মিডফিল্ডার সম্পর্কে বলা যেত তাহলে ভাল লাগত। কিন্তু সদ্য ইউরো কাপ খেলে আসা জনি কাউকো সম্পর্কে সে কথা বলা যাচ্ছে না। অন্তত প্রথম দিনের খেলা দেখে। তবে বিশালদেহী জনির এটি আই এস এল-এর প্রথম ম্যাচ। টিমের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য তাঁকে কিছুটা সময় দিতেই হবে। জনি নিজের ভূমিকাটাই ঠিক মতো বুঝে উঠতে পারেননি। প্রথম দিনে তাঁর খেলা তাই কাউকেই সন্তুষ্ট করতে পারেনি। কেরালা যার জন্য মাঝ মাঠের নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই নিজেদের দখলে রাখতে পেরেছে। কিন্তু তাদের স্ট্রাইকাররা তেমন দরের নয়। তাদের ভেদশক্তিরও অভাব আছে। একটা গোল অবশ্য তারা করেছে। কিন্তু সেভাবে অমরিন্দর সিংকে ঝামেলায় ফেলতে পারেনি। জনি কাউকোর ব্যর্থতা অনেকটাই ঢেকে দিয়েছেন লেনি রডরিগস। তবে সব ম্যাচে তো কেরালার মতো দুর্বল টিমকে সামনে পাবে না মোহনবাগান।
দেখার ছিল সন্দেশ ঝিঙ্গনের অভাবে মোহন ডিফেন্স ভোগে কি না। দু পাশে প্রীতম কোটাল এবং শুভাশিস বসুকে রেখে হাবাস সেন্ট্রাল ডিফেন্সে নামিয়েছিলেন দীপক ট্যাংরি এবং কার্ল ম্যাকহিউকে। দুটো গোল খেয়েছে তাদের ডিফেন্স। শুধু এ জন্যই নয়, কেরালার ঝাঁঝহিন আক্রমণ রুখতে এটিকে ডিফেন্স প্রায়শই খেই হারিয়ে ফেলছে। এই ডিফেন্স দিয়ে কিন্তু বড় ম্যাচগুলো জেতা যাবে না। হাবাসকে তাঁর ডিফেন্স নিয়ে অনেক ভাবতে হবে। যাঁরা খেলছেন তাঁদেরকেও অনেক ভাল খেলতে হবে।
দেখার ছিল রয় কৃষ্ণ নতুন মরসুমে কেমন ক্ষুরধার আছেন। না, কৃষ্ণকে নিয়ে ভাবার দরকার নেই। তিনি ঠিকই আছেন। সেই গোলের জন্য মরিয়া হওয়া। পঞ্চাশ-পঞ্চাশ বলের জন্য এগিয়ে যাওয়া। তাতে চোট পাওয়ার সম্ভাবনা থাজলেও পরোয়া নেই। সব মিলিয়ে কৃষ্ণ আছেন কৃষ্ণতেই। তবে তাঁর সঙ্গী মনবীরকে প্রথম দিন সেভাবে পাওয়া গেল না। সে দিক থেকে দেখলে নতুন রিক্রূট লিস্টন কোলাসো কিন্তু ভালই খেলছেন। বাঁ দিক দিয়ে তাঁর আক্রমণগুলো কিন্তু বেশ ভালই ছিল। মনে হচ্ছে কোলাসো-হুগো কম্বিনেশন অনেক ডিফেন্সের ঘুম কাড়বে।
এটিকে-র প্রথম গোল তিন মিনিটে। বাঁ দিক থেকে কোলাসোর কর্নার বক্সের বাইরে থেকে ধরে একটু উঁচু শটে গোল পেয়ে যান হুগো। বলটা গোলকিপার আলবিনো গোমসের সামনে ড্রপ খেয়ে গোলে ঢুকে যায়। ২৪ মিনিটে কেরালার মিডফিল্ডার সাহাল আব্দুল সামাদ বক্সের মধ্যে বল পেয়ে বুক দিয়ে রিসিভ করে ডান পায়ের গড়ানে শটে গোল শোধ করে দেন। তিন মিনিটের মধ্যে ২-১ করে ফেলেন কৃষ্ণ। হুগোর ফরোয়ার্ড পাস ধরে বক্সে ঢুকে গোলকিপারকে কাটাবার সময় আলবিনো তাঁকে ল্যাং মারেন। নিশ্চিত পেনাল্টি। গোল করতে ভুল করেননি কৃষ্ণ। ৩৯ মিনিটে আবার গোল করেন হুগো। বক্সের মধ্যে বল ধরে গতি বাড়িয়ে তিনি টপকে যান শেষ ডিফেন্সকে। তার পর ডান পায়ের প্লেসিং এবং গোল। বিরতির পর পাঁচ মিনিট যেতে না যেতেই গোল পেয়ে যান কোলাসো। বক্সের বাঁ দিক থেকে তাঁর উঁচু শট গোলে ঢুকে যায়। ৬৯ মিনিটে কেরালার স্প্যানিশ স্ট্রাইকার জর্জ পেরিয়ার দিয়াজ বাগানের দুই ডিফেন্ডারের মধ্য দিয়ে বেরিয়ে গিয়ে ২-৪ করে ফেললেন।
উদ্বোধনী সঙ্গীতটা ভালই গাইল মোহনবাগান। তবে বেশ কিছু প্রশ্নের জবাব কিন্তু পাওয়া গেল না।