রাঁচী: আপনার জীবনে কোনও কিছুই কি সঠিক পথে চলছে না? ধরুন যা চাইছেন তা কিছুতেই পাচ্ছেন না? বারবার চেষ্টা করেও সফল হচ্ছেন না? তাহলে এই অবস্থায় একটা মুভি দেখা যেতেই পারে- বিধু বিনোদ চোপড়ার ’12th Fail’। বারবার ব্যর্থতার মুখোমুখি হয়েও জীবনকে রিস্টার্ট মোডে নিয়ে যাওয়া এবং শেষে সাফল্যের স্বাদ আস্বাদন করা। এটাই ফর্মুলা- হেরে যাওয়ার পর আবার শুরু করা, আবার হারলে আবার শুরু! এই পথেই একদিন নিশ্চিত আসবে সাফল্য। পরপর ফ্লপ হওয়া ব্যাটারের ব্যাটে আসবে রান, দীর্ঘদিন উইকেট না পাওয়া বোলার পাবেন উইকেটের পর উইকেট! শুধু ক্রিকেটীয় জীবনে কেন? ভালোবাসার আকাশেও একই ফর্মুলা- এতেই প্রেমিক খুঁজে পেতে পারেন হারানো প্রেমিকাকে বা প্রেমিকা হারানো প্রেমিককে। সারমর্ম-জীবনে যতই কঠিন সময় আসুক বা ব্যর্থতা আসুক না কেন নিজেকে রিস্টার্ট মোডে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকুন সবসময়- কানে বাজুক ‘রুক জানা নেহি কাহিন তু হারকে…..’
গত টেস্ট ম্যাচে ৪৩৪ রানে হেরে যাওয়া ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকসের জীবনও এখন রিস্টার্ট মোডে। ২-১ এ সিরিজে পিছিয়ে তাঁর দল। এই টেস্ট ম্যাচ হারলে সিরিজ হাতছাড়া। রাঁচি টেস্ট তাই মরণ-বাঁচন ক্যাপ্টেন বেন স্টোকসের কাছে। এই অবস্থায় দাঁড়িয়েও বেন স্টোকস মনে করছেন, ইংল্যান্ড এই সিরিজ এখনও জিততে পারে ৩-২ ব্যবধানে। শুধু সবুজ গালিচায় বাজবল নয়, এতো দেখতে পাচ্ছি জীবন-দর্শন মানসিকতাতেও বাজবল মন্ত্রে দীক্ষিত ইংল্যান্ড ক্যাপ্টেন। বেন স্টোকসের সাহসী মানসিকতার পরিচয় অবশ্য এরা আগে ‘Ashes’- এ মিলেছে। বাজবলীয় মাইন্ডসেটের জোরে ভারতকে কি ছত্রভঙ্গ করতে পারবে বেন-বাহিনী? উত্তর অবশ্যই সময় দেবে।
তবে আক্রমণাত্মক মাইন্ডসেট শুধুমাত্র ইংল্যান্ড ক্রিকেটারদের মধ্যে রয়েছে এমনটা নয়। ইংল্যান্ড সমর্থকদের মধ্যেও এই মাইন্ডসেট লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সুদূর লন্ডন থেকে আসা অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ককর্মী বর্তমানে ক্রিকেট টুরিস্ট ফিলিপ বললেন, ‘আমি গত বেশ কয়েক বছর ধরে ইংল্যান্ড দলের সঙ্গে দেশ-বিদেশ ঘুরছি। একটা কথা বলতে পারি বাজবল ট্যাকটিক্সই ভবিষ্যৎ। আক্রমণাত্মক ক্রিকেট ছাড়া এখন আর ভাবাই যায় না। বাজবল মানে শুধু আক্রমণাত্মক ব্যাটিং নয়, আক্রমণাত্মক বোলিং-ফিল্ডিং- সর্বোপরি মাইন্ডসেট। অধিনায়ক হিসেবে বেন স্টোকসকে ব্রিয়ারলি-বোথামের উপরে রাখবো। দুটো টেস্ট পরপর হারলেও এই বাজবল গেমপ্ল্যানেই কামব্যাক করবে ইংল্যান্ড।’
অন্যদিকে, ভারতীয় শিবির বেশ শান্ত। জয়ের ধারা রাঁচিতেও অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদী ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট। দুই শিবিরেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ‘উইকেট’! ভারতীয় দলের ব্যাটিং পরামর্শদাতা বিক্রম রাঠোড় এদিন বলে গেলেন, ‘উইকেট দেখে মনে হচ্ছে টিপিক্যাল ভারতীয় উইকেট যেখানে স্পিনাররা শাসন করবেন। আমরা যেকোনও উইকেটেই খেলার জন্য প্রস্তুত।’ এটা রাঠোড়ের পোশাকি স্টেটমেন্ট বলা বাহুল্য। যা বার্তা দেওয়ার হেড কোচ রাহুল দ্রাবিড় পিচ কিউরেটরকে দিয়ে দিয়েছেন গতকালই। তাই তো পিচ নিয়ে সাসপেন্স কাটছে না ইংল্যান্ড অধিনায়কেরও। বুধবারই স্টোকস বলেন, ‘অদ্ভুত পিচ! দূর থেকে সবুজ আভা দেখা যায়, সামনে এলে দেখছি বেশ কিছু জায়গায় ক্র্যাকস!’
তবে ভারতীয় টিম কম্বিনেশন কী হবে সেটা বড় প্রশ্ন- তিন স্পিনার, দুই পেসার নাকি চার স্পিনার এক পেসার- কোন অপশন বেছে নেবেন ক্যাপ্টেন রোহিত তথা ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট? ব্যাটিং বিভাগে শুধু একজনকে নিয়ে প্রশ্ন-রজত পাতিদারকে কি আরেকটা সুযোগ দেওয়া উচিত, নাকি তাঁর জায়গায় দেবদত্ত পাড্ডিকাল? সূত্রের খবর, রজত পাতিদারকে আরও একটা সুযোগ দিতে চায় ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে ব্যাটিং অর্ডারে উপরের দিকে উঠে আসতে পারেন সরফরাজ খান।
ইংল্যান্ড অবশ্য তিন স্পিনার-দুই পেসার অপশনই বেছে নিয়েছে। চতুর্থ টেস্টে শুধু দু’টো পরিবর্তন- মার্ক উডের জায়গায় ওলি রবিনসন এবং রেহান আহমেদের জায়গায় শোয়েব বশির।
রাঁচিতে এখনও পর্যন্ত টেস্ট হারেনি ভারত। দুটি টেস্টের মধ্যে একটিতে ভারত জিতেছে, অপরটি ড্র হয়েছে। বাজবলীয় তত্ত্বে বেন স্টোকসের ইংল্যান্ড যদি অঘটন ঘটায় এখানে, তাহলে ধরমশালা টেস্টের আগে রিস্টার্ট মোডে আসতে হবে ভারতকে। সেক্ষেত্রে ধরমশালার পথে যেতে যেতে রোহিতদের কানে বাজতেই পারে- ‘রুক জানা নেহি কাহিন তু হারকে….’
দেখুন ভিডিও: