বেঙ্গালুরু: পঞ্চম দিনের খেলা তখনও শুরু হয়নি। বৃষ্টির জন্য শুরু হতে দেরি হচ্ছে। চিন্নাস্বামীতে কমেন্ট্রি বক্সের নীচের ফ্লোরে দুটি চেয়ারে পাশাপাশি বসে রবি শাস্ত্রী এবং সুনীল গাভাসকর। তাঁদের পাশে দাঁড়ানো জনাকয়েক সাংবাদিক। সাংবাদিকদের দিকে তাকিয়ে শাস্ত্রী বললেন, ‘আপনারা ৪৬ অল আউট নিয়েই পড়ে আছেন। একবার ভাবুন ৪৬ অল আউট হয়েও একটা সময় এই দলটি জয়ের স্বপ্ন দেখছিল। আগে যা ছিল কল্পনার অতীত। এই টিম ইন্ডিয়ার মানসিকতাই এখন বদলে গিয়েছে। ভয়ডরহীন বেপরোয়া ক্রিকেট খেলতে ভালোবাসে এই দল। রোহিত শর্মার আক্রমণাত্মক অধিনায়কত্বেরও প্রশংসা করতে হবে।’ পাশে বসে থাকা লিটল মাস্টারও শাস্ত্রীর সঙ্গে সহমত। বললেন, ‘ম্যাচের ভবিতব্য হয়তো আমরা জানি সবাই। কিন্তু এই টিম ইন্ডিয়ার কামব্যাক করার সাহস এবং চেষ্টাটা ভুলে গেলে চলবে না।’
ম্যাচ সবে সবে শেষ হয়েছে। প্রেজেন্টেশন সেরিমনি শেষ করেই দ্রুত প্রেস কনফারেন্স রুমে রোহিত শর্মা। হতাশ, কিছুটা বিষণ্ণ। তবে আত্মবিশ্বাসী তাঁর দলকে নিয়ে। চোখে জ্বলজ্বল করছে ঘুরে দাঁড়ানোর জেদ। বললেন, ‘প্রথমদিনের ওই তিন ঘণ্টা দিয়ে সবকিছু বিচার করবেন না। অনেক ইতিবাচক দিকও রয়েছে এই টেস্ট ম্যাচে। ভারত যেভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে তাতে অধিনায়ক হিসেবে আমি খুশি।’ কোথাও যেন সকালের ব্রেকফাস্ট টেবিলের শাস্ত্রী-সানির সঙ্গে একবিন্দুতে মিলিত হলেন দুপুরের প্রেস কনফারেন্স রুমের রোহিত শর্মা। আর এটা নতুন নয়। প্রথম টেস্ট হেরে সিরিজে ঘুরে দাঁড়ানোর কথাও মনে করিয়ে দিলেন ক্যাপ্টেন। বছরের শুরুতে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট হেরেও ৪-১ সিরিজ জিতেছিল ভারত। তাই বলা বাহুল্য পুনেতে ঘুরে দাঁড়ানোর শপথ বেঙ্গালুরুতেই নিলেন রোহিত-বিরাটরা।
আরও পড়ুন: মেয়েদের টি২০ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ড
তবে ঋষভ পন্থ কি পুনেতে খেলবেন? তিনি ব্যাটিং করলেও চিন্নাস্বামীতে উইকেটের পিছনে গ্লাভস হাতে আর দেখা যায়নি। পন্থের ব্যাপারে যে কোনওরকম ঝুঁকি নিতে চায় না টিম সেটা আগেই জানিয়েছিলেন অধিনায়ক। আজ বলে গেলেন পন্থের ক্ষেত্রে extra care নেওয়া হবে। ‘আপনারা দেখছিলেন ব্যাটিংয়ের সময় ঠিকমতো দৌড়াতে পারছিলেন না পন্থ। স্ট্যান্ডে বল পাঠাচ্ছিলেন সেটা অন্য বিষয় (হাসি)। পন্থের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত যত্নশীল ভারতীয় থিঙ্কট্যাঙ্ক’, বলেন রোহিত শর্মা। ক্যাপ্টেন যেটা বললেন সেটা ভুল কিছু নয়। ৯৯ রানের দুর্ধর্ষ ইনিংসের আগের দিনও কুলদীপের পিঠে হাত দিয়ে খুঁড়িয়ে টিম বাসে উঠছিলেন। সেই অবস্থা থেকেও যে ইনিংসটি অদম্য ইচ্ছেশক্তির জোরে খেললেন সেটা বোধহয় একমাত্র পন্থের পক্ষেই সম্ভব। তাই তাঁর মতো গেম-চেঞ্জারের জন্য দল যে অতিরিক্ত যত্নশীল হবে সেটাই তো স্বাভাবিক!
এই টেস্ট ম্যাচের অন্যতম নায়ক সরফরাজকে নিয়েও দরাজ প্রশংসায় রোহিত শর্মা। বললেন, ‘মনে রাখবেন সরফরাজ তাঁর চতুর্থ টেস্টে দলের সম্পূর্ণ প্রতিকূল অবস্থায় ১৫০ রানের ইনিংস খেলেছেন। আশা রাখছি ভবিষ্যতে আরও এ ধরনের ইনিংস আসবে।’ তবে রোহিতের এই স্টেটমেন্টকে সাদামাটা ভাবে দেখার কোনও কারণ নেই। ক্যাপ্টেনের স্পিচের অন্তর্নিহিত অর্থ বোঝার চেষ্টা করুন। ইনসাইড স্টোরিটা কী তাহলে? পুনেতে সরফরাজ দলে থাকছেন। ম্যাচ শেষে চিন্নাস্বামীতে ব্যাটিং এবং ফিল্ডিং প্র্যাক্টিস করা শুভমান গিলও দলে ফিরছেন। তাহলে দলের বাইরে যাচ্ছেন কে? একটা নামই ঘুরেফিরে আসছে-কেএল রাহুল। ম্যাচ শেষে পিচে হাত দিয়ে কেএল রাহুলের প্রণাম করার দৃশ্য ইতিমধ্যেই ভাইরাল নেট দুনিয়ায়। ‘তিনি কি ঘরের মাঠে তাঁর শেষ টেস্ট ম্যাচটি খেলে ফেললেন?’ এমন প্রশ্নও উঠছে অনেকের মনেই। এক ঘনিষ্ঠ সূত্র জানাচ্ছে, সম্প্রতি অধিনায়ক রোহিত শর্মার সঙ্গে কেএল রাহুলের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। প্রথমদিন ৪৬ ডিজাস্টারের পর রোহিত শর্মাকে এক সাংবাদিক যখন প্রশ্ন করেন তিন নম্বর পজিশনে বিরাটের জায়গায় লোকাল বয় রাহুলকে পাঠালে কি ভালো হত না? উত্তরে ক্যাপ্টেন বলেন, ‘লোকাল বয় হলেই কি তাঁকে তিন নম্বরে পাঠাতে হবে?’ (কিছুটা ব্যাঙ্গাত্মক হেসে) তাহলে কি দুইয়ে দুইয়ে চার! হাইলি সাসপিশাস!!
তবে আজকের দিনের আসল টুইস্ট দুপুর ২টো বেজে ৩০ মিনিটে দেখল দর্শকহীন চিন্নাস্বামী। প্যাড পরছেন সহকারী কোচ অভিষেক নায়ার। বল হাতে কালো পোশাকে একজন। বাঁ-পায়ে স্ট্র্যাপিং। পাশে দাঁড়িয়ে বোলিং কোচ মর্নি মরকেল। কে ইনি? যাঁর সম্পর্কে টেস্ট ম্যাচ শুরুর আগের দিন রোহিত শর্মা বলেছিলেন যে তাঁকে অস্ট্রেলিয়ায় বর্ডার-গাভাসকর সিরিজের জন্য নিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব! ঠিক ধরেছেন, তিনি আর কেউ নন- মহম্মদ শামি। এই চিন্নাস্বামীতে দাঁড়িয়েই হয়তো নিজেকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন শামি। যথেষ্ট রিদমে বেশ কিছুক্ষণ বলও করলেন। তাহলে কি ভুল প্রমাণ করবেন অধিনায়ক রোহিতকে? উত্তর পাওয়া যাবে আসন্ন বর্ডার-গাভাসকর সিরিজেই…