কলকাতা: বুধবার রাজ্যের তিন বিধানসভা কেন্দ্রে অকালের উপনির্বাচন (Assembly By-Elections)। কেন্দ্রগুলি হল উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা, নদীয়ার রানাঘাট দক্ষিণ এবং উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ। অকাল বলছি এই কারণে যে, ওই কেন্দ্রগুলিতে এখন নির্বাচনের দরকার ছিল না। তিন কেন্দ্রের বিধায়করা লোকসভা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান। তাই তাঁদের ছেড়ে আসা কেন্দ্রগুলিতে উপনির্বাচন করতে হচ্ছে। আর কলকাতার মানিকতলা কেন্দ্রের উপনির্বাচন (Maniktala By-Elections) অনেকদিন ধরে বকেয়া।
২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে এই কেন্দ্রে জেতেন তৃণমূলের সাধন পাণ্ডে। তিনি অবশ্য মানিকতলা এবং পূর্বতন বড়তলা কেন্দ্র থেকে বহুবার জিতেছিলেন। ২০২২ সালে সাধন মারা যান। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোট নিয়ে মামলা করেছিলেন ওই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী কল্যাণ চৌবে। মামলার কারণে সেখানে উপনির্বাচন হচ্ছিল না। সম্প্রতি কল্যাণ মামলা তুলে নেওয়ায় নির্বাচন কমিশন ওই কেন্দ্রেও উপনির্বাচনের দিন স্থির করেছে ১০ জুলাই।
২০২১ এর বিধানসভা ভোটে রায়গঞ্জে কৃষ্ণ কল্যাণী, রানাঘাট দক্ষিণে মুকুটমণি অধিকারী এবং বাগদায় বিশ্বজিত দাস বিজেপির টিকিটে জয়ী হন। পরবর্তীকালে তিনজনই তৃণমূলে যোগ দেন। কিন্তু কাগজে কলমে তাঁরা বিজেপিরই বিধায়ক ছিলেন। এবারের লোকসভা ভোটে রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রে কৃষ্ণ, রানাঘাটে মুকুটমণি এবং বনগাঁয় বিশ্বজিত তৃণমূলের প্রার্থী হন। তিন প্রার্থীই বিজেপি প্রার্থীদের কাছে হেরে যান। তার ফলে তাঁদের বিধায়ক পদে ইস্তফা দিতে হয়।
আরও পড়ুন: ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র বানানোর প্রচেষ্টা আটকানো গিয়েছে, দাবি অমর্ত্যের
নির্বাচন কমিশন তিন কেন্দ্রে উপনির্বাচন ঘোষণা করে। তৃণমূল রায়গঞ্জ এবং রানাঘাট দক্ষিণে যথাক্রমে লোকসভা ভোটে পরাজিত সেই কৃষ্ণ কল্যাণী এবং মুকুটমণিকেই উপনির্বাচনে প্রার্থী করেছে। বিশ্বজিত অবশ্য বাগদায় প্রার্থী হননি। বিশ্বজিত আগেই জানিয়েছিলেন, তিনি প্রার্থী হতে চান না। ওই কেন্দ্রে মতুয়া বাড়ির মেয়ে মধুপর্ণা ঠাকুর তৃণমূলের প্রার্থী। মধুপর্ণা বনগাঁর প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের মেয়ে।
এবারের লোকসভা ভোটের নিরিখে তিন বিধানসভা কেন্দ্রেই এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। সেই অর্থে বলা যেত পারে, উপনির্বাচনে অ্যাডভান্টেজ বিজেপি। রায়গঞ্জে বিজেপির প্রার্থী মানস ঘোষ। কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন প্রবীণ নেতা মোহিত সেনগুপ্ত। এর আগে তিনি এক সময় কংগ্রেসের বিধায়ক ছিলেন। ওই কেন্দ্রে বামেরা কোনও প্রার্থী দেয়নি। রায়গঞ্জে বাম এবং কংগ্রেস কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ছে। মোহিত ভালো লড়াই করবেন বলে দাবি করছেন স্থানীয় কংগ্রেস নেতারা। বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূলের নির্দেশে পুলিশ বিজেপি কর্মীদের রাতে বাড়ি থেকে থানায় তুলে এনে শাসানি দিচ্ছে। বলা হচ্ছে, ভোটে কাজ করা চলবে না। এর প্রতিবাদে উত্তরবঙ্গের বিধায়করা শুক্রবার রায়গঞ্জ থানার সামনে বিক্ষোভ দেখান।
প্রার্থী নিয়ে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। জেলার অনেক পদাধিকারী প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে ইস্তফা দিয়েছেন। একই সমস্যা বিজেপিকে ভোগাচ্ছে রানাঘাট দক্ষিণ এবং বাগদাতেও। ওই দুই কেন্দ্রেই অনেক বিজেপি কর্মী কাজ না করে বসে পড়েছেন। বাগদায় আবার স্থানীয় এক নেতা নির্দল হিসেবে দাঁড়িয়ে গিয়েছেন। তিনি পুরোদমে প্রচারও শুরু করে দিয়েছেন। রানাঘাট দক্ষিণে সিপিএমের প্রার্থী অরিন্দম বিশ্বাস। বাগদায় বামফ্রন্টের শরিক ফরওয়ার্ড ব্লকের গৌরাদিত্য বিশ্বাস প্রার্থী হয়েছেন। লোকসভা ভোটের ফলাফলে বামেরা একেবারেই হতাশ। সেই হতাশা নিয়েই বাম কর্মীরা উপনির্বাচনে কাজ করছেন।
১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট ক্ষমতায় আসার পর থেকে টানা ২৫ বছর বাগদার বিধায়ক ছিলেন ফরওয়ার্ড ব্লকের কমলাক্ষী বিশ্বাস। ২০০৬ সালে তাঁকে হারিয়ে তৃণমূলের দুলাল বর জয়ী হন। পরের বার ২০১১ সালে দুলালকে সরিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাগদায় প্রার্থী করেন প্রাক্তন সিবিআই কর্তা উপেন বিশ্বাসকে। ২০১৬ সালে দুলাল তৃণমূল ছেড়ে বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী হয়ে ভোটে জেতেন বাগদায়। পরে তিনি আবার বিজেপিতে যোগ দেন। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে বাগদায় বিজেপির প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন বিশ্বজিত দাস। এবারের লোকসভা ভোটের আগে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। এই মুহূর্তে বাগদা বিধানসভা ক্ষেত্রে বিজেপি এগিয়ে আছে প্রায় ২১ হাজার ভোটে।
আরও খবর দেখুন