এটিকে মোহনবাগান –১ মুম্বই সিটি এফ সি–১
(লিস্টন কোলাসো) (জর্জ দিয়াজ)
ডুরান্ডের প্রথম ম্যাচে দুবার এগিয়ে গিয়েও হারতে হয়েছিল এটিকে মোহনবাগানকে। দ্বিতীয় ম্যাচেও শাপমুক্তি হল না। বুধবারও মুম্বই সিটি এফ সি-র বিরুদ্ধে ৭৭ মিনিট পর্যন্ত এগিয়ে থেকেও জিততে পারল না জুয়ান ফেরান্দোর দল। দুই ম্যাচে তিন গোল খাওয়ার পর প্রশ্ন উঠতে পারে বাগানের ডিফেন্স নিয়ে। নতুন ডিফেন্স নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও মোহনবাগানের ম্যাচ না জেতার আসল কারণ কিন্তু ডিফেন্স নয়। তাদের দলে পজিটিভ স্ট্রাইকারের অভাব। রয় কৃষ্ণ এবং ডেভিড উইলিয়ামসের মতো গোলগেটারকে ছেড়ে দেওয়ার খেসারত দিতে হচ্ছে মোহনবাগানকে। লিস্টন কোলাসো গত মরসুমেও ভাল খেলেছিলেন। এই মরসুম সবে শুরু হয়েছে। এদিন গোলও করলেন। বাগানের আক্রমণের মূল উৎস ছিলেন তিনি। কিন্তু কিয়ান নাসিরি কিংবা মনবীর সিং গোল করার ধারেকাছে নেই। হুগো বুমো কিংবা জনি কাউকো যতই গোল করুণ না কেন তাঁরা তো আদতে মিডফিল্ডার। ভাল পজিটিভ স্ট্রাইকার না পেলে বাকি মরসুম ভুগতে হবে মোহনবাগানকে।
মুম্বই সিটি এফ সি বরাবরের গাঁট মোহনবাগানের। গত ছটা সাক্ষাতে তারা পাঁচ বার জিতেছে। একবার ম্যাচ ড্র হয়েছে। এ রকম একটা দলের বিরুদ্ধে সল্ট লেক স্টেডিয়ামে মোহনবাগান শুরু থেকেই অ্যাটাকিং ফুটবল খেলতে থাকে। দু দলেই চারজন করে বিদেশি ছিলেন। বাগানে ফিওরিন্তিন পোগবা, কার্ল ম্যাকহিউ, হুগো বুমো এবং জনি কাউকো। মুম্বইয়ে আহমেদ জাহুয়া, গ্রেগ স্টূয়ার্ট, গ্রিফিথ এবং নগুয়েরা। মুম্বই তাদের নিয়মিত ডিফেন্ডার মোর্তাদা ফলকে নামায়নি। তাই ডিফেন্সে বেশ ফাঁকফোকড় তৈরি হচ্ছিল। কিন্তু সেগুলোকে কাজে লাগাবার মতো স্ট্রাইকার ছিল না। আশিক কুরিয়ান কিংবা আশিস রাই গত বছরের ভাল প্লেয়ার। কিন্তু নতুন ক্লাবের জার্সিতে এখনও তেমন মানিয়ে উঠতে পারেননি। তাও মুম্বইয়ের ক্যাপ্টেন রাইট ব্যাক রাহুল ভেকে প্রথমার্দ্ধের মাঝামাঝি চোট পেয়ে বসে যান। বাগান অ্যাটাকাররা সেই সুযোগটা নিতে পারলেন কোথায়?
উল্টো দিকে মুম্বইয়ের শক্তির আসল উৎস মাঝ মাঠে আহমেদ জাহুয়া এবং অ্যাটাকে গ্রেগ স্টূয়ার্ট। আহমেদ যথারীতি ভাল খেললেন। মোহনবাগানের আক্রমণগুলো মাঝ মাঠে আটকাবার পিছনে তাঁর বড় ভূমিকা ছিল। কিন্তু গ্রেগ স্টূয়ার্টকে ব্যর্থই বলা যায়। তাই মুম্বইয়ের সব আক্রমণের উৎস ছিলেন বিপিন সিং। বাঁ দিক দিয়েই অপারেট করেন তিনি। কিন্তু বাগান রাইট ব্যাক প্রীতম কোটাল তাঁকে খুব একটা ভয়ঙ্কর হতে দেননি। ডান দিকে বিক্রম সিং-ও আটকে গেছেন শুভাশিস বসুর কাছে। তাই মুম্বইয়ের আ্যাটাক ছিল মাঝ বরাবর। কিন্তু পেনিট্রেটিভ জোনে গিয়ে তারা খেই হারিয়ে ফেলছিল। দূর থেকে নেওয়া তাদের দুর্বল শটগুলি বাগান গোলকিপার বিশাল কাইথের বিশ্বস্ত দুটি হাতে আটকে পড়ছিল। অমরিন্দর সিংকে বিদায় করে মোহনবাগান তাদের কোচ জুয়ান ফেরান্দোর পছন্দ করা গোলকিপার বিশাল কাইথকে নিয়েছে। এদিনই তিনি বাগানের জার্সি গায়ে প্রথম নামলেন। একটি গোল খেলেও তাঁর উপর ভরসা করা যায়।
এবং ফিওরিন্তিন পোগবা। পল পোগবার দাদা এই মরসুমে বাগানের সবচেয়ে গ্ল্যামারাস রিক্রূট। ফরাসি লিগে খেলে এসেছেন। বিরাট অভিজ্ঞতা। তাঁকে নিয়ে সমর্থকদের বিরাট প্রত্যাশা। কোচ ফেরান্দোও সন্দেশ ঝিঙ্গনকে বাদ দিয়ে তাঁকে নিয়েছেন। ফিওরিন্তিন ভাল। কিন্তু কতটা ভাল তা বুঝতে আরও কয়েকটা ম্যাচ না গেলে হবে না। তবে প্রথম দুটি ম্যাচে তিন গোল খাওয়া নিশ্চয়ই তাঁর পক্ষে ভাল বিজ্ঞাপণ নয়। মোহনবাগানের গোলটা ৪০ মিনিটে। ডান দিক থেকে বল নিয়ে উঠে আশিস রাই সেন্টার করেন। মুম্বি কিপার লাচেনপা বলটা থামান। কিন্তু বল তাঁর হাত থেকে বেরিয়ে যায়। সামনেই ওৎ পেতে ছিলেন লিস্টন কোলাসো। উঁচু শটে গোল করেন। একটু পরেই গ্রেগ স্টূয়ার্টের সেন্টারে শট নেন বিপিন সিং। কিন্তু বিশাল কাইথ চমৎকার সেভ করেন। মুম্বই গোলটা শোধ করে ৭৭ মিনিটে। সঞ্জীব স্টালিন ডান দিক থেকে চমৎকার সেন্টার করেন। গোটা বাগান ডিফেন্সকে টপকে সেই বল এসে পড়ে জর্জ দিয়াজের মাথায়। তাঁর চমৎকার হেড বিশালকে এড়িয়ে গোলে ঢুকে যায়।
মোহনবাগান দুই ম্যাচ খেলে মাত্র এক পয়েন্ট পেল। ২৮ আগস্ট ডার্বিতে তাদের জিততেই হবে। না হলে এবারের ডুরান্ড থেকে তাদের বিদায় নিশ্চিত। জুয়ান ফেরান্দো কি বিসর্জনের বাদ্যি শুনতে পাচ্ছেন?