অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তিনি। জিতবেন না হারবেন তা সময়ই বলবে। কিন্তু বাইচুং ভুটিয়া মনে করেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো বিশ্ববরেণ্য ক্রিকেটার যদি দুর্দান্তভাবে ক্রিকেট বোর্ড চালাতে পারে তাহলে তিনও ফুটবল ফেডারেশন চালাতে পারবেন। একটা সময় অবধি ধরে নেওয়া হয়েছিল কল্যাণ চৌবেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হয়ে যাবেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার সবাইকে অবাক করে বাইচুং প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন জমা দেন। তাঁর মনোনয়ন জমা দেওয়ার কিছুক্ষণ আগে মনোনয়ন জমা দেন কল্যাণ চৌবে। অতএব ২ সেপ্টেম্বর ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট পদে যুযুধান দুই প্রার্থী হলেন দুই ফুটবলার। ফেডারেশনের ৮৫ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম প্রেসিডেন্ট পদে বসতে চলেছেন কোনও ফুটবলার।
শুক্রবার দিল্লিতে সাংবাদিক সম্মেলন করেন বাইচুং। সেখানে তিনি বলেন, “সোঋভকে দেখুন। ভারতের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার বোর্ড সভাপতি পদে কত ভাল কাজ করছেন। এতেই বোআ যায় খেলোয়াড়রা প্রশাসক হিসেবে কত ভাল কাজ করতে পারেন। আর আমি তো ফুটবলে নতুন নই।জাতীয় দলের হয়ে ১৬ বছর খেলেছি। ১২ বছর অধিনায়কত্ব করেছি। তারপর টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেছি। তাই আত্মবিশ্বাসী যে ভাল কাজ করতে পারব।” বাইচুং জানেন, কল্যাণের বিরুদ্ধে তাঁর জেতার সম্ভাবনা কম। কারণ কল্যাণের পিছনে বেশির ভাগ রাজ্য সংস্থার সমর্থন রয়েছে। তবে বাইচুং মনে করেন, কল্যাণকে ভুল বোঝানো হচ্ছে। কারণ প্রেসিডেন্ট হিসেবে কল্যাণ যে সব পরিকল্পনার কথা বলেছেন তা এই মুহুর্তে কোনও অগ্রাধিকার হতে পারে না। বাইচুংয়ের কথায়, “কল্যাণ বলেছে, প্রত্যেক রাজ্যের একটা ভাল অফিস এবং পরিকাঠামো থাকা দরকার। যেখানে পরিকল্পনা এবং নীতি নির্দ্ধারণ হবে। প্রত্যেক রাজ্যের হাতে দশ হাজার স্কোয়ার ফুটের অফিস থাকা দরকার, যেখানে পরিকল্পনা এবং নীতি নির্দ্ধারণ হবে। আমার কাছে এটা মোটেই অগ্রাধিকার নয়। এটা হোর বিবৃতি কি না জানি না। মনে হয় কল্যাণকে ভুল বোঝানো হচ্ছে। পরের দিকে এ সব কাজ হতেই পারে। আগে ফুটবল পরিকাঠামো, উৎকর্ষ কেন্দ্র গড়র তোলা উচিত। ফুটবল লিগ, তৃণমূল স্তরের উন্নয়ন করা উচিত, যাতে বাচ্চা ছেলেরাও ফুটবল খেলতে পারে। কোচেদের জন্য পরিকল্পনা করা যেতে পারে।”
প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে নিজের পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন বাইচুং। দুটো জিনিসের উপর তিনি জোর দিতে চাইছেন। প্রথমত তৃণমূল স্তরে ফুটবলের উন্নতি। দ্বিতীয়ত রাজ্য সংস্থাগুলিকে আরও বেশি টাকা দেওয়া। পাশাপাশি এ দিন জানালেন, প্রতিটি রাজ্যে একতী করে উৎকর্ষ কেন্দ্র গড়ে তুলতে চান। সেখানে ছোট থেকেই সমস্ত দলের ফুটবলাররা অনুশীলন করতে পারেন। কোচেদের উন্নতির পরিকল্পনাও রয়েছে তাঁর। কোচেদের জন্য যাতে স্থানীয় ভাষায় পরীক্ষা হয়, সে ব্যবস্থাও করতে চান তিনি।
কল্যাণ চৌবে বিজেপির নেতা। সেই দলের হয়ে লোকসভা এবং বিধানসভায় লড়াই করেছেন। তাঁর মনোনয়ন পত্র প্রস্তাব করেছে গুজরাত, সমর্থন করেছে অরুণাচল প্রদেশ। ধরে্ নেওয়া যায় কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের আশীর্বাদ আছে তাঁর উপর। বাইচুং কী করে এ সবের বিরুদ্ধে লড়াই করবেন? প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক বলেন, “আমি কোনও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচনে দাঁড়াইনি। তাই আমি সব রাজ্যের ক্ষমতাশীল দলের কাছে সাহায্য চাইতে পারি। রাজনৈতিক যোগাযোগ, বৈরিতার কারণে আগে অনেক সমস্যা হয়েছে। আমি আর ও সবে নেই। নির্বাচনে জিতলে ফুটবলের জন্য ভাল কাজ করতে চাই।”
এখন পর্যন্ত যা মনোনয়ন জমা পড়েছে তাতে সহ সভাপতি পদে নির্বাচন হচ্ছে না। একটাই মনোনয়ন জমা পড়েছে। তিনি হলেন কর্নাটকের এন এ হ্যারিস। তবে কোষাধ্যক্ষ পদে নির্বাচন হচ্ছে। মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন দুজন। তাঁরা হলেন কিপা অজয় এবং গোপালকৃষ্ণ কোসারাজু। তবে সব আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন। সেখানে জেতার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কল্যাণ চৌবেই ফেভারিট। শেষ পর্যন্ত তিনি যদি জেতেন তাহলে প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সির পরে আবার একজন বাঙালি প্রেসিডেন্ট পাবে ভারতীয় ফুটবল।