কলকাতা: উপনির্বাচনে (WB By-Elections) ফিকে বিজেপি-বাম-কংগ্রেস। লোকসভার পর বিধানসভা উপনির্বাচনেও ধরাশায়ী বিজেপি। রাজ্যের চার কেন্দ্রের বিধানসভা উপনির্বাচনে তৃণমূলের কাছে হোয়াইটওয়াশ হল গেরুয়া শিবির। বাগদা, মানিকতলা, রানাঘাট দক্ষিণ ও রায়গঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনেই বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন তৃণমূল প্রার্থীরা। জয়ী চার প্রার্থীদের শুভেচ্ছা বার্তা পাঠালেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, আমার বিশেষ ধন্যবাদ মা-মাটি-মানুষকে। লোকসভা ভোটের পর এর একটা রাজনৈতিক গুরুত্বও রয়েছে।
শনিবার ফলপ্রকাশের পরই মুম্বই থেকে কলকাতায় ফিরেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। আর দমদম বিমানবন্দরে নেমেই ফলাফল নিয়ে নিজের প্রতিক্রিয়া জানালেন তিনি। মমতা বলেন, এই জয় মা-মাটি-মানুষের জয়। জয় রাজ্যবাসীকে উৎসর্গ করলাম। চারটের চারটেতেই আমরা জিতেছি। তবে এই ফলাফলের আলাদা রাজনৈতিক গুরুত্বের কথাও বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মানিকতলা আমাদের ছিল, আমাদেরই আছে। কিন্তু বাকি তিনটি আসনে গত বিধানসভা আর লোকসভা- দুটোতেই বিজেপি জিতেছিল। সেই আসনগুলোও আমরা জিতেছি। মমতা বলেন, লোকসভা ভোটে রায়গঞ্জ থেকে কৃষ্ণ কল্যাণী জিতে যেত। বিজেপি-কংগ্রেসের ষড়যন্ত্র করে হারিয়েছে। বাগদায় আমরা সবচেয়ে কমবয়সি মধুপর্ণাকে, মমতাবালা ঠাকুরের মেয়েকে দাঁড় করিয়েছিলাম। মধুপর্ণা খুব ভালো লড়াই করেছে। ওদের সবাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা। অন্যদিকে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে আসার পর মুকুটমণিকে লোকসভায় টিকিট দিয়েছিলাম। কিন্তু ও হেরে গেল। আবার সুযোগ পেয়ে জিতে গিয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলায় চারে ৪ তৃণমূল, ধরাশায়ী বিজেপি
মমতা আরও বলেন, মানুষের কাজ আরও বেশি করে করতে হবে। আমরা মানুষের জন্যই আছি। তাঁদের কাজের জন্য আমরা নির্বাচিত হই। এজেন্সি ও নানা ভাবে আটকানোর চেষ্টা হয়েছে। সামাজিক কাজের বাইরে যে যাবে সে বুঝে নেবে। বিজেপি রাজ্য হেরেছে, অল ইন্ডিয়াতেও হেরেছে। এনডিএ-র দিকে নয় ইন্ডিয়ার দিকে ভোট এসেছে। তারা ৪৬ শতাংশ ভোট পেয়েছে, আর ইন্ডিয়া ৫১% ভোট পেয়েছে। ন্যায় সংহিতা জানি না কী আইন। চিকিৎসক, সাংবাদিকরা খুব ভয়ে আছে। পুলিশ, আইনজীবীরাও জানেন না, নতুন আইনটা কী। এটি সঠিকভাবে প্রশাসন চালাতে সমস্যা করবে। আমাদেরও নিট ও ন্যায় সংহিতা বিলের বিরুদ্ধে বিধানসভা অধিবেশনে বিতর্ক হবে। মুকেশ জি খুব সম্নান দিয়েছেন।
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে রায়গঞ্জ, বাগদা, রানাঘাট দক্ষিণে জয়ী হয়েছিল বিজেপি। উপনির্বাচনে ওই তিনটি কেন্দ্রই তাদের থেকে ছিনিয়ে নিল জোড়াফুল শিবির। রানাঘাট দক্ষিণেও বিজেপি থেকে তৃণমূলে আসা মুকুমণি অধিকারীও বিজেপিকে হারিয়েছেন ৩৯ হাজারের বেশি ভোটে। উত্তরবঙ্গে বিজেপির গড়েও ঘা,ফুট ফুটেছে। মানিকতলায় ৬০ হাজারের বেশি ভোটে জয়ী হয়েছেন সাধন পাণ্ডের স্ত্রী সুপ্তি পাণ্ডে। সর্বকনিষ্ঠ প্রার্থী হয়ে বাগদায় মতুয়া গড়ে ফের ঘাসফুল ফোটালেন মধুপর্ণা ঠাকুর। সেখানে বিধানসভা ও লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি এগিয়ে ছিল। রায়গঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনে বিজেপি ৫০ হাজারের বেশি ভোটে হারিয়েছেন শাসকদলে প্রার্থী কৃষ্ণ কল্যাণী। এই প্রথমবার রায়গঞ্জ কেন্দ্রে জয়ী হল তৃণমূল। স্বাভাবিকভাবে রাজ্যের চার বিধানসভা কেন্দ্রে সবুজ ঝড় অব্যাহত। লোকসভা ভোটের পর বড় ধাক্কা গেরুয়া শিবিরে। লোকসভা ভোটের ফলাফলের নিরিখে এই চার কেন্দ্রের মধ্যে তিনটি কেন্দ্রে এগিয়ে ছিল বিজেপি। শুধুমাত্র মানিকতলায় সাড়ে তিন হাজারের কিছু বেশি ভোটে এগিয়ে ছিল ঘাসফুল। তবে মাত্র একমাসের ব্যাবধানে মানিকতলা সহ বাকি তিন কেন্দ্রে কামব্যাক করল শাসকদল। লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় ধরাশায়ী হয়েছে গেরুয়া শিবির। তার উপর চার উপনির্বাচনেও পরাজয়ের মুখ দেখতে হল বঙ্গবিজেপিকে।
দেখুন ভিডিও