Monday, June 9, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ: বিকাশের গপ্পো……

চতুর্থ স্তম্ভ: বিকাশের গপ্পো……

Follow Us :

নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসাতে আমরা, দেশের মানুষজন বিকাশের গপ্পো শুনছি৷ লোকে মজা করে বলছে, তারে আমি চোখে দেখিনি, শুধু তার গল্প শুনেছি৷ আর শুধু গল্প শুনে কোনও এক অপরূপা কন্যাকে অল্প অল্প ভালবাসা যায় বটে, অধরা বিকাশকে ভালবাসা যায় না। তো এতদিন বিভিন্ন বিদেশি সংগঠন, হাঙ্গার ইনডেক্স ইত্যাদি বের করে রাম কা নাম বদনাম কর দিয়া, অ্যাট লিস্ট এরকমটাই মোদিজি বলার চেষ্টা করছিলেন।

এবার দেশি তথ্য হাতে এসেছে৷ এমনিতে তথ্য দেওয়ার ব্যাপারে মোদিজীযির খুব একটা সুনাম নেই৷ এমপ্লয়মেন্ট সংক্রান্ত ডেটা দেওয়ার পরে তুলে নেওয়া হয়েছে৷ ক্রাইম রিসার্চ ব্যুরো তথ্য সামনে আনা হয়নি৷ কিছু বেরিয়ে গিয়েছে৷ সে অন্য কথা। এবার নীতি আয়োগের তথ্য বেরিয়েছে৷ বার করতেই হত৷ এবং বের হবার পর দেশের কঙ্কাল চেহারাটা আমাদের সামনে৷ বহু চেষ্টা করেও সেই কঙ্কালসার চেহারাকে বিকাশের চাদরে ঢাকা যাচ্ছে না৷ নীতি আয়োগ অনেকগুলো মাপকাঠি বদলেছে৷ তাতে তথ্যের চেহারা মোলায়েম করার চেষ্টা ছিল৷ কিছুটা হয়েওছে৷ কিন্তু তারপরেও যা বেরিয়ে এল, তা মোদিজির ২০১৪ থেকে ৭ বছর শাসনের এক কঙ্কাল চেহারা শুধু নয়, বিজেপি বা বিজেপি ও শরিক শাসিত রাজ্যের ভুক্ত চেহারাই নয়, গোটা দেশের অসম্ভব ক্ষুধা দারিদ্র আর অনগ্রসরতার ছবি আমাদের সামনে৷

৪৭ এর স্বাধীনতা যে কেবল রাজনৈতিক স্বাধীনতাই ছিল, তা আজ পরিস্কার৷ তাই আজাদির স্লোগান আজও প্রাসঙ্গিক। পুঁজিবাদ সে আজাদি, ভুখমরি সে আজাদি, মনুবাদ সে আজাদি আজও বড্ড দরকারি আর প্রাসঙ্গিক। আসুন একটু খতিয়ে দেখা যাক৷ নীতি আয়োগের এই বিরাট তথ্য ভাণ্ডার আমাদের কী জানাচ্ছে? এর সঙ্গেই পাওয়া গিয়েছে এস ডি জি, সাস্টেনেবল ডেভলপমেন্ট গোলের রিপোর্ট৷ আর ওই নীতি আয়োগেরই ন্যাশন্যাল মাল্টিডায়মেনশনাল পভার্টি ইনডেক্স। এর মধ্যে এসডিজি রিপোর্ট, সারা পৃথিবীর ১৯৩টা ইউনাইটেড নেশনের সদস্যদের পাঠানো তথ্যের সংকলন৷ আর নীতি আয়োগ তো মোদিজির অবদান৷ উনি কাজের কাজ না করলেও দাগ রেখে যেতে চান৷ ১৯৫০ এর প্ল্যানিং কমিশনের সঙ্গে জুড়েছিল নেহেরুর নাম৷ সেটা ওনার না পসন্দ৷ তাই উনি নতুন নাম দিলেন নীতি আয়োগ৷ সেই নীতি আয়োগেরই তৈরি ওই ন্যাশন্যাল মাল্টিডায়মেন্সনাল পভার্টি ইনডেক্স। কী বলছে সেই ইনডেক্স?

দেশের ২৫% মানুষ এখনও দরিদ্র৷ কতটা দরিদ্র? হত দরিদ্র বললে কম বলা হয়৷ নিউট্রিশন, চাইল্ড মর্টালিটি রেট, শিক্ষা, রান্নার জ্বালানি, টয়লেট, পানীয় জল, বিদ্যুৎ, ঘর, সম্পত্তি আর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এই সবকটা প্যারামিটারে তলানিতে থাকা মানুষের সংখ্যা ২৫%। মানে? ১৩৫ কোটির ৩৩.৭৫ কোটি মানুষ, আমার দেশের মানুষ হতদরিদ্র। এক বাঙালি আইএএস অফিসার, সংযুক্তা সমাদ্দার এই রিপোর্ট তৈরির দায়িত্বে ছিলেন। তো সেই রিপোর্ট বলছে, দেশের ৩৭.৬ মানুষ পুষ্টির অভাবে ভুগছে৷ দেশের প্রায় ৫৯% মানুষের জ্বালানির উপায় কাঠ কুটো৷ মোদিজির উজ্জ্বলা যোজনা ইত্যাদি এক বড় ফানুস৷ ৫২% মানুষের ঘরে টয়লেট নেই৷ এদিকে স্বচ্ছ ভারত প্রকল্প চলছে। দেশের ৪৫.৬% মানুষের মাথায় ছাদ নেই, আমি বলছি না, নীতি আয়োগ বলছে৷ যার মাথায় বসে আছেন মোদিজির ভারি পছন্দের ডঃ রাজীব কুমার, অমিতাভ কান্ত। তাঁদের রিপোর্ট বলছে দেশের ৪৫.৬% মানুষের মাথার ওপর ছাদ নেই,

ওদিকে মোদি সখা মুকেশ আম্বানির অ্যান্টিলাতে৷ তাঁর বাড়ি ১ লক্ষ ৫ হাজার ৬৮ কোটি টাকায় তৈরি হয়েছে৷ যেখানে ১৬৮ টা গাড়ির গ্যারেজ আছে৷ মোট চার লক্ষ স্কোয়ার ফুটের এই বাড়িতে ৯টা লিফট আছে, সিনেমা হল আছে, মন্দির আছে, মন্দিরে ভগবান আছেন নিশ্চয়ই, সুইমিং পুল আছে, বাগান আছে, অজস্র ঘর আছে, কুকুরদের জন্যও আলাদা আলাদা ঘর আছে৷ একটা ঘর আছে, যেখানে সারা দিন বরফ পড়ে। দেশের ১৩৫ কোটি মানুষের ৭০ কোটির মাথায় ছাদ নেই, এবার সারা দেশের অবস্থা কি সমান? না, তা নয়।

এই দারিদ্রের সবচেয়ে ওপরে বিহার৷ যেখানে গত ১০ বছর ক্ষমতায় আছে বিজেপি আর তার শরিক দল৷ নীতীশ কুমার, ডেভেলপমেন্ট বাবু, তাঁর রাজ্যে ৫১.৯১% মানুষ এই হতদরিদ্রের তালিকায় আছে৷ তারপরেই আছে ঝাড়খন্ড৷ মাথায় রাখুন এই রাজ্য আগে বিহারেই ছিল এবং সবচেয়ে দরিদ্র ছিল৷ এখন অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ার পরেও ৪২.১৬% মানুষ হতদরিদ্রের তালিকায় আছে৷ মানে এই দুটো রাজ্যে দুজনের একজন গরিব। এরপরেই আছে যোগিজির রাজ্য উত্তরপ্রদেশ৷ যেখানকার বিকাশের কথা বলে মোদিজি, যোগিজি ভোট চাইছেন সেখানে ৩৭.৭৯% মানুষ হতদরিদ্র৷ তারপর আছে মধ্যপ্রদেশ৷ আবার বিজেপি শাসিত রাজ্য, মধ্যে এক বছর বাদ দিলে গত ১৫ বছর সেখানে বিজেপির রাজত্ব, সেখানে ৩৬.৬৫% মানুষ গরিব। এরপরেই আছে মেঘালয় আর অসম৷ প্রায় ৩৩% শতাংশ গরিব। মানে দেশের প্রথম ছটা গরিব রাজ্যের ৫ টা বিজেপি শাসিত রাজ্য৷ দেশের প্রধানমন্ত্রী মন কি বাতে এসব কথা বলেন না৷ সাংবাদিকের সামনে যান না৷ কারণ তিনি এই সত্যগুলো জানেন৷ তিনি জানেন যে বিকাশের কথা তিনি রোজ বলেন তা বায়বীয়, ভুয়ো, মিথ্যে।

দেশের গড় ২৫% এর একটু বেশি, আমাদের বাংলায় এই দারিদ্রের হার ২১.৩৪%। অনেক বেশি, কিন্তু দেশের গড়ের তুলনায় কম এবং সেই হ্রাস গত কয়েক বছরে, মুর্শিদাবাদ ২০১০ এ ছিল দেশের দরিদ্রতম জেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম, এখন মুর্শিদাবাদ দরিদ্র জেলা নয়, নিতী আয়োগই তা জানাচ্ছে। আর সবচেয়ে কম দারিদ্র? কেরালায়। বামেরা কৃতিত্ব দাবি করতেই পারেন, এই কৃতিত্বের ভাগিদারি চাইতেই পারে কংগ্রেস, কারণ তারাও দীর্ঘ সময় কেরালা শাসন করেছিল, কিন্তু বামেদের সময়েই যে অগ্রগতি হয়েছে, সেটা কেউই অস্বীকার করতে পারবে না। তবে কেরালার প্রাচুর্যের পেছনে পেট্রো ডলারের বিরাট ভূমিকা আছে, প্রতি ১০ জনে ১ জন মিডল ইস্টে কাজ করেন, দেশে টাকা পাঠান, সমৃদ্ধি মূলত সেখান থেকেই এসেছে।

এবারে দেখুন, এই দরিদ্র তালিকার আরেক চেহারা। বিহার, ঝাড়খন্ড। উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, মেঘালয়, আসাম, ছত্তিশগড়, রাজস্থান, উড়িষ্যা, নাগাল্যান্ড, অরুণাচলপ্রদেশ এই প্রত্যেকটা রাজ্যের দারিদ্রের হার দেশের গড় দারিদ্রের চেয়ে বেশী, বিহার, ঝাড়খন্ড এ প্রতি দুজনে, উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, মেঘালয়, আসামের প্রতি তিনজনের একজন, আর বাকি রাজ্যের প্রতি চার জনের ১ জন দরিদ্র, কিন্তু এখান থেকেই আসে দেশের ২৩৮ জন সাংসদ, যাদের ৯৯% কোটি পতি। কি দারুণ তাই না? দারিদ্র দুর করার প্রতিশ্রুতি যারা দেন, তাঁরা কেউ দরিদ্র নয়, তাঁরা কোটি পতি, অনেকেই কোটি কোটি পতি।

অজস্র বিলাস, বৈভব আর প্রাচূর্যের তলায় হতদরিদ্ররা বাস করে, রান্নার জ্বালানি নেই, পুষ্টি নেই, শিক্ষা নেই, স্বাস্থ্য নেই, মাথার ওপরে ছাদ নেই, তাঁরা ভোট দেন, প্রতি বছরে ভোট দেন, পঞ্চায়েত, বিধানসভা, লোকসভা, সেসব নির্বাচিত নেতাদের ৯০% এর গাড়ি আছে, বাড়ি আছে, বাইক আছে, ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স আছে, পুষ্টি আছে, শিক্ষা আছে, স্বাস্থও আছে। এবারে আসুন আরেক তথ্যে, ব্যক্তির বিকাশ যে সমষ্টির বিকাশ নয়, তা এই রিপোর্ট পরিস্কার দেখিয়ে দিচ্ছে, যাঁরা বলেন দেশে বড়লোকের সংখ্যা, কোটিপতির সংখ্যা বাড়লেই, ওভার অল দারিদ্র কমবে, তাদের বলি আপনারা আপনাদের তত্ত্ব তাকে তুলে রাখুন, কেবল রাজস্থানের দিকে তাকান, এ রাজ্য বিজেপি শাসন করেছে বহুদিন, কংগ্রেস ক্ষমতায় আছে, আগে কংগেস ক্ষমতায় ছিল।

এই রাজ্য দেশের মধ্যে অন্যতম দরিদ্র রাজ্য, ১০০ জনের ৩০ জন হত দরিদ্র, ১০০ জনের ৪৩ জন পুষ্টিকর খাবার পায় না, প্রতি ১০০ শিশুর ৩ জন জন্মেই মরে যায়, ১৭ জন স্কুলে যায় না, ৫৯ জনের রান্নার জ্বালানি হল কাঠকুটো, ২৯ জনের ঘরে টয়লেট নেই, পানীয় জল নেই ২৭ জনের ঘরে, ৩৫ জনের মাথায় ছাদ নেই, আর সেই রাজ্যে থেকেই দেশের নামকরা শিল্পপতি, মিলিওনিয়ার, বিলিওনিয়াররা উঠে এসেছে, যমনা লাল বাজাজ, বাজাজ ইন্ডাস্ট্রিজ, কুমারমঙ্গলম বিড়লা, লক্ষী মিত্তল, হরি সিং রাঁকা টেক্সটাইল ব্যারন, আনন্দ পিরামল ফার্মাসিউটিক্যাল, সঞ্জীব গোয়েঙ্কা এই তালিকার কিছু নাম, এঁদের প্রত্যেকেই বিলিওনিয়র, কোটি, কোটি, কোটি টাকার মালিক, তাঁদের রাজ্যে প্রতি তিন জনের একজন হত দরিদ্র, এটাই বিকাশের চেহারা, এটাই দেশের চেহারা, আসলে দেশ কিছু শিল্প পতির, কিছু ফড়েদের হাতে, কিছু কর্পোরেটদের হাতে চলে গেছে, তাদের প্রভাব ছিল, এখন খুল্লম খুল্লা তারাই মালিক, তারা দেশ কিনে নিচ্ছে, দেশের সম্পদ তাদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে, যিনি তুলে দিচ্ছেন সেই চৌকিদার কাম চা-ওয়ালা দিনরাত বিকাশের গুলগল্প দিয়ে যাচ্ছে, তাই কৃষকরা পথে, তাই আজ শ্রমিকরা পথে, এই জগদ্দল পাথরের মত পচা গলা ব্যবস্থাটাকে না পাল্টালে আজ মোদী তো পরে অন্য কেউ এসে, গদিতে বসে বিকাশের ঢপবাজি চালিয়েই যাবে, এ বিকাশ আসলে তাদের ছাগল, আমাদের শ্রম আর ঘামের পয়সায় কাঁঠালপাতা খেয়ে, কলেবরে বড় হবার পর ওনাদের পাতে হাজির হবে, আমরা শুধু বিকাশে ব্যা ব্যা শুনেই জীবন কাটিয়ে দেবো?

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Bangladesh | Sheikh Hasina | বাংলাদেশের ভোটে লড়বেন হাসিনা? দেখুন সবচেয়ে বড় খবর
00:00
Video thumbnail
Yunus | Bangladesh | ইউনুস ভোট ঘোষণার পরই আসরে নামল আওয়ামী লীগ, এবার কী করবেন ইউনুস?
00:00
Video thumbnail
Mamata Banerjee | Nabanna | নবান্ন থেকে বড় বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর, দেখুন সরাসরি
00:00
Video thumbnail
Mamata Banerjee | ফের কোভিডের সংক্রমণ নিয়ে বিরাট নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর, কী বললেন শুনে নিন
00:00
Video thumbnail
Howrah Bridge | হাওড়া ব্রিজে টাকা তুলছে পুলিশ, তারপর কী হল দেখুন
00:00
Video thumbnail
Mamata Banerjee | সংবাদিক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
00:00
Video thumbnail
Fake Voter | TMC | নিউটন অস্বস্তি তৃণমূলের, কী সিদ্ধান্ত দলের?
00:00
Video thumbnail
Dilip Ghosh | BJP | ২৬-এর ভোটে বিজেপির প্রার্থী হবেন দিলীপ ঘোষ? দেখুন কলকাতা টিভি EXCLUSIVE
01:14:30
Video thumbnail
Chhattisgarh Sukma | সুকমার কোন্টায় প্রেশার আইডি বি/স্ফো/রণ, দেখুন চাঞ্চল্যকর খবর
42:11
Video thumbnail
Mamata Banerjee | নবান্ন থেকে বড় বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর, দেখুন সরাসরি
04:36