অনেকের আছে, আমার এই সিবিআই বা কলকাতা পুলিশ আমাদের বিভিন্ন তদন্ত সংস্থা এবং বিচার ব্যবস্থার উপরে বিরাট কোনও ভরসা নেই, সিকি পয়সা ভরসা রাখার মতো কোনও কারণ তো আমি দেখি না। স্মৃতি থেকে খুঁড়ে বের করে এনে সেসব রহস্য যা আমাদের বোধবুদ্ধি চেতনার ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিল, এমন কোনও একটারও নাম করতে পারবেন যার কিনারা সংশয়ে ঘেরা নেই? একজনকে ফাঁসিতে লটকানোর জন্য মিছিল সভা হয়ে গেল, ফাঁসিও হয়ে গেল, সেই আঁখো দেখা হালের সময় মিডিয়ার রক্ত গরম কভারেজ, আহা আহা এক দোষী অপরাধী শাস্তি পাচ্ছে। পরে জানা গেল বহু বহু তথ্য এমনও ছিল যার বিচার হলে কেবলমাত্র বেনিফিট অফ ডাউট পেয়েই ছেলেটা হয়তো বেঁচে যেত, বা খালাস হয়ে যেত। আমরা কি পেয়েছি ভিখারি পাশওয়ানের খুনিদের? পেয়েছি সেই কবেকার ভুষি কেলঙ্কারি থেকে নারদা সারদা রোজ ভ্যালি কেলেঙ্কারির আসল দোষীদের? পাইনি তো? হেমন্ত বসু, প্রকাশ্য দিবালোকে খুন হয়েছিলেন, কে করেছিল খুন? জানা নেই, এক জঘন্য ট্রিগার হ্যাপি পুলিশকর্তার মুখের ঝাল খেতে আমি রাজি নই। জানিই না সরোজ দত্ত কীভাবে গায়েব হয়ে গেল। জানা নেই কেন সুরূপা গুহ মামলায় ঠান্ডা মাথায় খুন করার জন্য কেন কারও ফাঁসি হল না। জানা নেই আনন্দমার্গী থেকে বানতলা, ধানতলাতে কারা দোষী, জানিই না কারা ধর্ষণ খুন করল তাপসি মালিককে, করন্দার ক’জন খুনি ফাঁসিতে চড়েছে? হরিহরপাড়ার সেই লাশের সারি, ক’জন শাস্তি পেয়েছে? কেবল ভোট দেওয়ার জন্য হাত কেটে নেওয়া হয়েছিল, কারা দোষী? জানা নেই। কাজেই এই পুলিশ, সিবিআই, বিচার ব্যবস্থা নিয়ে আমার তেমন কোনও ভরসা নেই।
তাহলে এই আরজি কর খুন ধর্ষণের, এই মামলার এই আন্দোলনের শেষ কোথায় বলতে আমি কোন আলোচনাটা করব? দুটো দিকের শেষটা বোঝার চেষ্টা করছি। প্রথমটা হল এক আন্দোলন তার সামাজিক প্রভাব শেষমেশ কতটা গভীর? কতটা তার ব্যাপ্তি? এই যে আন্দোলন তা কি সত্যিই এই ধর্ষণ, মহিলাদের উপর অত্যাচার, জেন্ডার ইকুয়ালিটি, লিঙ্গসাম্য নিয়ে কোনও দিশা দেখাতে পারল? সেই দিকে কি নতুন কোনও আলোচনা শুরু হল? যা ছড়িয়ে পড়বে? আর অন্যটা হল একজন পলিটিক্যাল কমেন্টেটর হিসেবে যে কোনও জনবিক্ষোভ, যে কোনও আন্দোলনের একটা জায়গাতে এসে তো আমাদের হিসেব করতেই হয় যে ইন টার্মস অফ ইলেকটোরাল পলিটিক্স, নির্বাচনী রাজনীতির ক্ষেত্রে এই ঘটনা, এই আন্দোলনের প্রভাব কী? প্রভাব কতখানি। আসুন প্রথমে এই আন্দোলনের সামাজিক প্রভাব নিয়ে ক’টা কথা বলে নিই। এই আন্দোলনের কেবল সূত্রপাতই নয়, এই আন্দোলনের ফর্ম থেকে শুরু করে কনটেন্ট, সবটাই মূলত নাগরিক, ভীষণভাবেই শহর বড়জোর শহরতলির ব্যাপার ছিল। কেন? ধরুন রাত দখল। শহরে এসে মহিলাদের কাছে রাত এক অন্য মানে নিয়ে হাজির হয়েছে, সেখানে রাত এক অজানা আতঙ্কে ভোগে, গ্রামবাংলার রাত আলাদা, এখনও গ্রামবাংলার মেয়েরা কমসম করেও দিন কুড়ি বছরে এমনিই রাত দখল করে বসে থাকেন, বিভিন্ন ব্রত আর অনুষ্ঠানের কারণে, এখনও গ্রাম বাংলার রাত গা ছমছমে নয়, আতঙ্কের নয়। রাত দখল হয়ে যায়নি তাঁদের কাজেই নতুন করে পুনর্দখলের ডাক তাদের কাছে খুব উদ্ভট শোনায়।
দ্বিতীয় হল লিঙ্গসাম্যের বিষয়, সেখানে আবার উল্টোটা, এ সম্বন্ধে ন্যূনতম ধারণা এখনও নেই গাঁ গেরামে মহিলারা লিঙ্গসাম্য তো দূরে থাক, পুরুষ শাসনের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার জন্য যেটুকু ভয় কাটিয়ে কথা বলতে হয়, তাও তারা জোগাড় করে উঠতে পারেননি। হ্যাঁ, সুরক্ষার প্রশ্ন তাদেরও আছে, কিন্তু তা হল একেবারেই মহিলাদের ইজ্জত মহিলাদের শুচিতা সংক্রান্ত ধারণা। হ্যাঁ মানে হ্যাঁ আর না মানে না, ব্যাখ্যা করে দেখুন না আপনি হাসির খোরাক হবেন, হ্যাঁ অবস্থাটা এখনও তাই। এবং সেরকম একটা অবস্থায় এই রাত দখলের আন্দোলন, তাতে পরিচিত মুখেদের পার্টিসিপেশন, সেসব খবরের রিল তৈরি হওয়া, টিভি বা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ার ফলে কোথাও একটু হলেও তো এই সামাজিক আন্দোলনের পরিধিটা বাড়ল। কোথাও ওই মহিলারা কথাগুলো শুনে একবার তো ভাববেন, কথাগুলোর মানে কি? আচ্ছা এরকমও বলা যায়? অবাক হয়েই ভাববেন। আমি আমার ঘরের লোকটাকে না বলব, সে শুনবে? হ্যাঁ, বৃত্তের বাইরে এই খবর পৌঁছল। রাত দখল বলুন মহিলা নির্যাতন বলুন, নারী সুরক্ষার কথা বলুন কোথাও একটা চর্চা ছড়িয়ে পড়ল, তার একটা সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে বইকি। নারীকে আপন ভাগ্য জয় করিবার কেন নাহি দিবে অধিকার, হে বিধাতা, এই প্রশ্ন যে বৃত্তে আটকে ছিল সেই বৃত্তটা এই আন্দোলনের ফলে আরও বেড়ে গেল, এটা তো ঘটনাই। তার কারণ আমাদের সমাজে এই জেন্ডার ইকুয়ালিটি, লিঙ্গসাম্য নিয়ে যেসব কথাবার্তা সাধারণ সময়ে বলা হয় তা হল ছ’জন সহমত লোকেদের নিজেদের মধ্যে পিঠ চুলকোনো, কে কত গভীরভাবে সেই জেন্ডার ইকুয়ালিটির তত্ত্ব বুঝেছে, লিখেছে তাই নিয়ে আলোচনা। সেই বৃত্তের মধ্যেই সেই জ্ঞানভান্ডারের জন্ম এবং মৃত্যুও।
আরও পড়ুন: Fourth Pillar | ইডি, সিবিআই গ্রেফতারির পিছনে অপরাধ? নাকি কেবলই প্রভুর নির্দেশ?
সেই আগলটা ভাঙল, এটা একটা বিরাট ব্যাপার। যদিও ভাবতে খারাপ লাগে যে এই বিষয়ে এই সাধারণ চর্চাকে ছড়িয়ে দেওয়ার অনুঘটক হিসেবে কাজ করল একটা জঘন্য ধর্ষণ আর মৃত্যু। এবারে আসুন এই ধর্ষণ আর মৃত্যুকে ঘিরে যে প্রতিবাদ, আন্দোলন মিছিল মিটিং রাজনৈতিক অরাজনৈতিক কাণ্ডকারখানা চলেছে, চলছে, আরও কিছুদিন চলবে, তার প্রভাব আমাদের ইলেকটোরাল পলিটিক্সে কী হতে পারে? আন্দোলনের এক অংশ নিজেদেরকে দলহীন অরাজনৈতিক হিসেবে ঘোষণা করেছে। ধরুন ডাক্তারদের আন্দোলন। আমরা দেখেছি দিলীপ ঘোষকে চিৎকার করে বের করে দিতে, মাঝরাতে হাজির হয়েছিলেন সেই তমলুকের সাংসদ অভিজিৎ গাঙ্গুলি আর আগে সিপিএম, পরে তৃণমূল এখন বিজেপি রুদ্রনীল ঘোষ, ডাক্তার ছাত্ররা রীতিমতো স্লোগান তুলে তাদের ঘরে পাঠিয়েছেন। অধীর চৌধুরী খানিক ফুটেজ খেতে গিয়েছিলেন, কিন্তু ফল আমরা দেখেছি, সাফ জানিয়ে দিয়েছেন ওই ছাত্ররা যে আজ্ঞে আসুন। হ্যাঁ, ওরা কাউকেই অ্যালাও করেনি। কাজেই ওই জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন থেকে সরাসরি ফায়দা তোলার মতো রাজনৈতিক দল নেই। এরপরে আমরা তিলোত্তমা, তাদের অন্যতম উদ্যোক্তা সুদীপ্তা চক্রবর্তী জানিয়েছেন যে দাবি এক দফা এক মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ স্লোগানটা তিনি নিজেই বদলে দাবি এক দফা এক সব দোষীরা শাস্তি পাক করেছেন, এই নতুন কয়েনেজ তাঁর। মানে এখানেও দেখছি যে ওঁরা এক দলহীন আন্দোলনের কথা বলছেন। আন্দোলনের কয়েকজন তো নতুন দলের কথাও ভাবছেন। তাঁরা একটা মঞ্চও করেছেন, জানিয়েই দিয়েছেন কারও পদত্যাগ তাঁরা চাইবেন না। তার মানে হল এই যে রোজ বিরাট মিছিল বা মিটিং হচ্ছে তা অন্তত মুখে দলহীন, তাঁদের মঞ্চে সরাসরি দলের আন্দোলনের নেমন্তন্ন নিয়েও কেউ হাজির হয়নি। এবং উল্লেখযোগ্যভাবে এই বিরাট কোট আনকোট অরাজনৈতিক আন্দোলনের উদ্যোক্তারা বিজেপি সম্পর্কে ভয়ঙ্কর ক্রিটিক্যাল।
এবারে আসুন এই আন্দোলনে বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেসের ভূমিকা ঠিক কী? কংগ্রেসের কুষ্ঠিতে রয়েছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, কাজেই আন্দোলনে থাকবে না তা তো হয় না, তাদের এক গোষ্ঠীমিছিল বার করেছিল, তাদের স্লোগান সেটিং ছেড়ে বিচার দাও নইলে সিবিআই ফিরে যাও। মানে খুব সোজা, বল এখন সিবিআই-এর কোর্টে, তাদের বিচার করতে হবে। মিছিলে ছিলেন প্রদীপ ভট্টাচার্য, আবদুল মান্নান প্রমুখ। অন্যদিকে হারের দগদগে ঘা নিয়ে অধীর চৌধুরীর বিশ্বাস, সিবিআই বিচার দেবে, জাতীয় স্তরে মণিপুর থেকে হাথরসে দেয়নি তো কী আছে, বাংলাতে দেবে। আর কংগ্রেসের রাজনৈতিক স্ট্যান্ড তো শেষমেশ বাংলার নয়, মালদা আর মুর্শিদাবাদের, এখনও এই জনকলরোল সেখানে সেভাবে পৌঁছয়নি। হ্যাঁ বামেরা মাঠে, তাঁরা সুযোগ তো পেয়েছেন কিন্তু সেই লড়াই কোথায়? কেমন যেন মেপে মেপে পা ফেলছেন, ছকভাঙা আন্দোলন নয়, বরং ওনাদের আস্থা আর ভরসা সিভিল সোসাইটির যে আন্দোলন গড়ে উঠছে তার উপর, তাঁরা জল মাপছেন। আর ক্লু-লেস আমাদের বিজেপির নেতারা। প্রথমত বিজেপিতে মহিলা নির্যাতন নিয়ে কথা বলবে কে? রুদ্রনীল ঘোষ না দিলীপ ঘোষ? না অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়? শুভেন্দু বিষয়টাকে স্বতস্ফূর্ততার উপর ছেড়ে নবান্ন দখলের কথা ভেবেছিলেন বাংলাদেশের কায়দায়, আটারলি ফেল করেছেন, ডাহা গাড্ডা। না মানুষ ওই নবান্ন অভিযানে সাড়া দিয়েছেন, না মানুষ বনধে শামিল হয়েছেন। লাগাতার ধরনাতে বসেছিলেন সুকান্ত মজুমদার কিন্তু তার কোনও ছবিছাবাও ছাপেনি সংবাদমাধ্যম, এতটাই জৌলুসহীন সেই সভা। আর বিজেপির কাঁধে নারী নির্যাতনের এত বিশাল দায় আছে যে কথা উঠলেই হাথরস, উন্নাও, কাঠুয়া, বাবা রাম রহিম থেকে আশারাম বাপুর পরে মণিপুর এসে যাচ্ছে, সব মিলিয়ে এই আন্দোলনে বিজেপি কোথায়? মাইক্রোস্কোপিক প্রেজেন্সও নেই।
এবং তৃণমূল, ফ্রিজ মোডে চলে গিয়েছিল, পার্সেপশন ব্যাটল, ধারণা তৈরির লড়াইয়ে কিছু কাজ করছিল কয়েকজন। হ্যাঁ, ভুল হয়েছে গোছের কিছু কথাবার্তার সঙ্গে সঙ্গে অপরাজিতা বিল, ধর্ষণের শাস্তি ফাঁসি, তাড়াতাড়ি বিচার ইত্যাদির দাবি আর তার সঙ্গে চুপ করে বসে থাকা, সময় কত ব্যথাই তো সারিয়ে দেয় এই থিওরি মেনে দু’পা পিছিয়ে সময় বুঝে এক পা আগে নিয়ে যাওয়ার স্ট্রাটেজি নিয়েছিল তারা। এটা দৃশ্যতই দলকে ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছিল তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই, কিন্তু সবুরে মেওয়া ফলেছে, মমতা শেষ রাতে ওস্তাদের মার কাকে বলে দেখিয়ে দিয়েছেন। জুনিয়র ডাক্তার সংগঠনের সঙ্গে যখন তিনি শেষবার বসলেন, তখন তো মনে হচ্ছিল বিড়াল যেমন ইদুর নিয়ে খেলে, উনি সেরকম খেলছিলেন ওই বিপ্লবী ডাঃ নন্দ, ডাঃ মাহাতো, ডাঃ হালদারদের সঙ্গে। এবার যে কোনও গণ আন্দোলনের হিসেব নিকেশ তো সংসদীয় রাজনীতিতে নির্বাচনে তার প্রভাব দিয়েই মাপা হয়, সবক্ষেত্রেই হয়, কৃষকরা আন্দোলন করেছিল তার নির্বাচনী প্রভাব নিয়ে আমরা কথা বলেছি, মণিপুরের জাতিদাঙ্গা গণধর্ষণ চলছিল আমরা তার নির্বাচনে প্রভাব নিয়ে কথা বলেছি, কাজেই স্বাভাবিকভাবেই এই যে আরজি কর ধর্ষণ-খুন আর পাশাপাশি সমান্তরাল এক দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে গণ আন্দোলন গড়ে উঠেছে, চলছে তার প্রভাব নির্বাচনে কী হবে তা নিয়েও তো আলোচনা করা দরকার। অনেকের হঠাৎ করে বাম জমানার শেষের দিকে সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম আন্দোলন ইত্যাদির কথা মনে পড়ছে, অনেকের মনে পড়ছে খাদ্য আন্দোলনের কথা, শিক্ষকদের আন্দোলনের কথা, ট্রামভাড়া বৃদ্ধির বিরুদ্ধে আন্দোলনের কথা, মিছিল-নগরী হয়ে ওঠার সেই দিনগুলোর কথা। কিন্তু একটা বেসিক ফারাক হল সেসব আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল একটা আগুনখেকো রাজনৈতিক দল। ৬০-৭০-এর দশকে ছিল কমিউনিস্ট পার্টি। সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের সময়ে ছিল তৃণমূল দল, তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল সিভিল সোসাইটির মানুষজন, বুদ্ধিজীবীরা। ষাটের দশকে কমিউনিস্ট পার্টির আন্দোলনের পাশে বাম বুদ্ধিজীবীরা, ইন ফ্যাক্ট বুদ্ধিজীবী বললেই তখন বাম বুদ্ধিজীবীই বোঝাত। কিন্তু আজ? পুরোটাই ধাঁধা।
সবথেকে বড় মিছিল সমাবেশ যে যে গ্রুপ, গোষ্ঠী বা এখনই গড়ে ওঠা সংগঠন থেকে হচ্ছে তাদের সবক’টাই প্রবলভাবে বিজেপি বিরোধী, সামাজিকভাবে প্রগতিশীল অংশের কিন্তু সরাসরি বাম রাজনৈতিক দলের পাশেও দাঁড়াতে নারাজ। বিজেপির বুদ্ধিজীবী হলেন নারী নির্যাতনের দায়ে অভিযুক্ত রুদ্রনীল ঘোষ এবং পাপিয়া অধিকারী। যার ফলে ইলেকটোরাল পলিটিক্সে সরাসরি এর কোনও প্রভাব পড়বে না। সরাসরি নাই বা পড়ল, এত মানুষ বের হলেন ঘর থেকে, প্রতিবাদ তো শেষমেশ জানাচ্ছেন রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে, পুলিশের বিরুদ্ধে, তাদেরও তো ভোট আছে, হ্যাঁ আছে। কিছুদিন আগেও যাঁরা বামেদের ভোট দিতেন, যাঁরা বসে গিয়েছিলেন, উপায় না দেখে বিজেপির পদ্মতে ছাপ দিয়েছিলেন, তাঁরা বা তাঁদের এক অংশ বামমুখো হচ্ছেন, নির্বাচনে তার প্রভাব পড়বে, শহর শহরতলিতে বামেদের কিছু ভোট বাড়বে। বিজেপির ইলেকটোরাল গেইন? উপনির্বাচনে বিজেপি জেতা আসনও হারাল, আর বামেরা জমানত হারাল প্রত্যেকটা আসনে। উল্টোদিকে তৃণমূলের মধ্যে একটা কোর্স কারেকশন তাদেরকে আরও সুসংহত করে তোলার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তার মানে আগামিদিনেও সব মিলিয়ে নির্বাচনী অঙ্কে খুব বিরাট উথালপাথাল হওয়ার কোনও চান্স নেই এমনকী এই মুহূর্তে বিধানসভা নির্বাচন হলেও নয়। এই বাংলায় বিজেপি আজ যেখানে দাঁড়িয়ে আছে, যে সংখ্যা তাদের আছে, তার চেয়ে অনেকটাই কমবে। আজ বলছি লিখে নিন, ২০২৬-এর নির্বাচনে বিজেপির পক্ষে ৫০ পার করাটাও অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। এই আন্দোলন সামাজিক ক্ষেত্রে মনে রাখার মতো এক আন্দোলন হয়ে থাকবে, তৃণমূলের হাজার দুর্বলতার পরেও অপরাজিতা বিল সত্যিই ইতিহাস হয়ে থাকবে কিন্তু সবচেয়ে যেটা বেশি উল্লেখযোগ্য সেটা হল জেন্ডার ইকুয়ালিটি নিয়ে চর্চার পরিসর বেড়ে গেল, মহিলাদের উপর নির্যাতন নিয়ে কথা বলার সাহস বেড়ে গেল, আগামী দিনে ফাঁসি নয় একজন নির্যাতনকারীর চোখের সামনেই ভাসবে এই উত্তাল শহর, এই রাজপথে অসংখ্য মানুষের দৃপ্ত পদচারণা, সেটা একটা প্রাপ্তি বটে।