skip to content
Saturday, April 19, 2025
HomeScrollFourth Pillar | ভারত একদা ধর্মনিরপেক্ষ থেকে আজ সাম্প্রদায়িক
Fourth Pillar

Fourth Pillar | ভারত একদা ধর্মনিরপেক্ষ থেকে আজ সাম্প্রদায়িক

সম্পূর্ণ রাষ্ট্র তার সর্বশক্তি নিয়ে রামজন্মভূমি ভূমিপুজোয়, উদ্বোধনে শামিল হয়েছে

Follow Us :

একটু ইতিহাস চর্চা করা যাক, সোমনাথ মন্দির, গুজরাটের। আমরা সবাই জানি যে সে মন্দির অন্তত তিনবার লুঠ করা হয়েছে, তিন তিনবার এই মন্দির ভাঙা হয়েছে, প্রচুর সোনা ছিল যা নিয়ে গেছে, লুঠেরারা। এবং এই লুঠেরাদের মধ্যে মুঘল, উজবেক, পারস্যের মুসলমান শাসকেরা ছিলেন, এমনকী ছিল ব্রিটিশরাও। প্রাচীন এই মন্দির তৈরি হয়েছিল কাঠ দিয়ে, যে মন্দিরের কণামাত্রও আজ অবশিষ্ট নেই। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেই এই মন্দির পুনর্নির্মাণের কথা ওঠে। সদ্য দেশ ভাগ হয়েছে, বিরাট সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়ে গেছে, দাঙ্গার ক্ষত তখনও শুকোয়নি। প্রধানমন্ত্রী নেহরুর কাছে প্রথম কাজ ছিল এই উদ্বাস্তু সমস্যা মিটিয়ে, হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িক ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা এবং অবশ্যই দেশের শিল্প, বিদ্যুৎ ইস্পাত ক্ষেত্রের অগ্রগতি চাই, একটা কথা তখন প্রচলিত, ইস্পাত যোগ বিদ্যুৎ হল সমাজতন্ত্র। এবং সেই কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য, সব বিতর্ককে এড়িয়ে দেশের এই শিল্প কাঠামো গড়ে তোলার জন্য তাঁর মন্ত্রিসভায় তিনি শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জিকেও রেখেছিলেন, আবার ভি কে কৃষ্ণ মেননের মতো রাশিয়াপন্থী কমিউনিস্ট ছাপ মারা নেতাকেও, নিজের সেকুলার চিন্তাভাবনাকেও গোপন করেননি কোনওদিন, আবার হিন্দুত্ববাদের যে ফল্গুধারা এমনকী কংগ্রেসের মধ্যেও বইছিল, তারও বিরাট বিরোধিতা করেননি। ঠিক সেরকম সময়ে ক্যাবিনেটে সোমনাথ মন্দির পুনর্নির্মাণের প্রস্তাব এল, পণ্ডিত নেহরু সাফ বলে দিয়েছিলেন, পাবলিক মানি, মানে সরকারের টাকায় এ কাজ করা যাবে না। গান্ধীজি তখনও বেঁচে, বল্লভভাই প্যাটেলও। কে এম মুনসি, যিনি নেহেরুর মন্ত্রিসভায় খাদ্য কৃষি দফতরের মন্ত্রী, আরও কয়েকজন মিলে চলে গেলেন গান্ধীজির কাছে, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী গুজরাটেরই মানুষ , সোমনাথ মন্দির গুজরাটের ভারবেলের কাছে, তার ওপর তিনি নিষ্ঠাবান হিন্দু, তিনি সব শুনে বলেছিলেন, বললেন সোমনাথ মন্দির পুনর্নির্মাণ অত্যন্ত ভালো প্রস্তাব কিন্তু, “Let the people and not the Government bear the expenditure.” মানুষ টাকা দিক। সরকার যেন এই খরচের বোঝা না বহন করে, প্যাটেলরা জানতেন গান্ধীজির উপরে কথা বলা অসম্ভব। তাঁরা হিন্দু ধনী, এমনকী বিদেশে থাকে, তাদের কাছ থেকে পয়সা তোলা শুরু করলেন। এরই মধ্যে কাশ্মীরের সমস্যাও চলছিল, সেখানে ব্যস্ত ছিলেন প্যাটেল এবং তিনি মারা যান ডিসেম্বর, ১৯৫০-এ। এবার এই মন্দির পুনর্নির্মাণের দায়িত্ব নেন কে এম মুনসি, জওহরলাল তাঁকে চিঠি লেখে জানান যে এই কাজ তিনি সমর্থন করছেন না। “I do not like your trying to restore Somnath. It is Hindu revivalism.” নেহরু এই কাজকে হিন্দুত্ব জাগরণের চেষ্টা বলে মনে করতেন, এদিকে কে এম মুনসিও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নন, তিনি জবাবে নেহরুকে লিখলেন, যা তাঁরই বই, Pilgrimage To Freedom এ লিখেছেন, “Yesterday you referred to Hindu revivalism. You pointedly referred to me in the Cabinet as connected with Somnath. I am glad you did so; for I do not want to keep back any part of my views or activities… I can assure you that the ‘Collective Subconscious’ of India today is happier with the scheme of reconstruction of Somnath… than with many other things that we have done and are doing.” আপনি একে হিন্দুত্ব জাগরণ বলেছেন, আমি মনে করি যা আমরা করেছি বা করছি তা এক জাতীয় চেতনার জাগরণ, যাতে মানুষ আনন্দিত, এবং আমি আমার মত লুকিয়েও রাখছি না। কংগ্রেসের অত বড় নেতা হিন্দু মন্দিরের পুনর্নির্মাণকে জাতীয় চেতনার জাগরণ বলেছিলেন, অর্থাৎ সেদিনও আপাত ধর্মনিরপেক্ষতার মধ্যেই সাম্প্রদায়িক চেহারাটা ছিল, হ্যাঁ, তাদের অত জোর ছিল না।

কে এম মুনসির নেতৃত্বে সোমনাথ মন্দিরের পুনর্নির্মাণের কাজ চলল। মজার কথা দেখুন, নেহরু বিরোধিতা করছেন প্রকাশ্যে, কিন্তু এমনও নয় যে কে এম মুনসিকে মন্ত্রিত্ব ছাড়তে হচ্ছে। নেহরুর গণতান্ত্রিক সেকুলার মূল্যবোধ কোন মাপের ছিল ভাবুন।

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | গুজরাট আর বাংলা, আসুন না একটু তথ্য নিয়ে আলোচনা করা যাক

এরপর সোমনাথ মন্দির তৈরি হল, মুনসি তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্র প্রসাদকে এই মন্দিরের উদ্বোধনের জন্য ডাকলেন। নেহরু তাঁর অসন্তোষ প্রকাশ্যেই ব্যক্ত করেছিলেন। তিনি রাজেন্দ্র প্রসাদকে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে অনুরোধ করলেন, “I confess I do not like the idea of your associating yourself with a spectacular opening of the Somnath temple. This is not merely visiting a temple… but rather participating in a significant function which unfortunately has a number of implications.” তিনি বললেন এটা তো কেবল একটা মন্দিরে যাওয়া নয়, এর আরও সুদুরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে যে কথা ভেবে এই বর্ণময় মন্দির উদঘাটন সমারোহ থেকে আপনার দূরে সরে থাকাটাই উচিত বলে আমি মনে করি। এর পরেও রাজেন্দ্র প্রসাদ তাঁর কথা শোনেননি, তিনি মন্দির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন, তখনকার সময়ে সে এক বর্ণময় সমারোহ, তিনি উদ্বোধন করেন সোমনাথ মন্দির, ২ মে, ১৯৫১তে। যখন জানা গেল যে রাষ্ট্রপতি সোমনাথ মন্দির উদ্বোধনের সিদ্ধান্তে অটল, তিনিও পরিষ্কার বলে দিলেন, “I believe in my religion and cannot cut myself away from it.” আমি আমার ধর্মে বিশ্বাস করি এবং তার থেকে সরে আসতে পারব না। তখন নেহরু প্রত্যেক মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লেখে জানালেন, “It should be clearly understood that this function is not governmental and the Government Of India has nothing to do with it… We must not do anything that comes in the way of our state being secular. This is the basis of the Constitution and governments, therefore, should refrain from associating themselves with anything that tends to affect the secular character of our State.” পরিষ্কার জানালেন যে, এই অনুষ্ঠান কোনওভাবেই সরকারি নয়, অতএব তিনি নির্দেশ দিচ্ছেন যে এমন কিছু যেন না করা হয় যাতে দেশের সাম্প্রদায়িক সৌভ্রাতৃত্বের ক্ষতি হয়। অক্টোবর ১৯৬৩ তে নেহরু গেলেন ভাখরা নাঙ্গল ড্যাম উদ্বোধন করতে, ১৭ নভেম্বর ১৯৫৫তে এই বাঁধের কাজে প্রথম বালু সিমেন্টের ঝুড়ি তিনিই বহন করেছিলেন, উদ্বোধনের দিনে তিনি বলেছিলেন, “This dam has been built with the unrelenting toil of man for the benefit of mankind and therefore is worthy of worship. May you call it a Temple or a Gurdwara or a Mosque, it inspires our admiration and reverence”. মানুষের শ্রমে মানুষের জন্য গড়ে ওঠা এই ভাখরা নাঙ্গল বাঁধ এক উপাসনা স্থল, আপনারা একে ইচ্ছেমতো মন্দির, গির্জা, মসজিদ বা গুরুদ্বারা বলতে পারেন। উনি ছিলেন রাষ্ট্রনেতা, যিনি রাষ্ট্রকে ধর্ম থেকে বিযুক্ত রাখতে চেষ্টা করেছিলেন আর আজ আমাদের রাষ্ট্রনেতা লজ্জা ঘেন্না ভুলে ভূমিপূজন, মন্দির উদ্বোধন, কুম্ভ মেলায় চান থেকে শুরু করে যাবতীয় ধর্ম কর্ম প্রকাশ্যেই করছেন যা সেকুলার রাষ্ট্র ধারণার বিপরীতে, যা রাষ্ট্রপ্রধানের কাজ নয়।

সম্পূর্ণ রাষ্ট্র তার সর্বশক্তি নিয়ে রামজন্মভূমি ভূমিপুজোয়, উদ্বোধনে শামিল হয়েছে, অথচ আমাদের সংবিধানের ঘোষণাপত্রে আমরা এখনও সেকুলার, আমরা এখনও ধর্মনিরপেক্ষ।

এই পরিবর্তনের ধারাটা শুরু থেকে একটু দেখে নেওয়া যাক। নেহরুর সময় রাষ্ট্র জাতীয়তাবাদী তো ছিলই, সেই জাতীয়তাবাদ ছিল কংগ্রেসের, যারা স্বাধীনতার লড়াই চালিয়েছিল, জেলে গিয়েছিল, মার খেয়েছিল। অবশ্যই নেহরু বাম মনস্ক ছিলেন কিন্তু তা বলে মূলত আন্তর্জাতিকতাবাদে বিশ্বাসী কমিউনিস্ট এমনও তো নয়, তিনি ধর্ম নিরপেক্ষ ছিলেন, দেশের কাঠামোও ধর্ম নিরপেক্ষ ছিল, ঘোষিতভাবেই দেশকে গড়ে তোলা হচ্ছিল সমাজতান্ত্রিক ধাঁচে। রাষ্ট্র তার দায়িত্বে শিল্প স্থাপন করছিল, বিদ্যুৎ ইস্পাত, কোর সেক্টরে রাষ্ট্রের ভূমিকাই ছিল বড়। আবার পাশাপাশি বিড়লা টাটাদের মতো শিল্প গোষ্ঠীও তাদের কাজ করছিল। মিক্সড ইকোনমি বললেও তাতে রাষ্ট্রের গুরুত্ব ছিল বেশি, শিক্ষা স্বাস্থ্য সেচ ইত্যাদির ক্ষেত্রে রাষ্ট্র এক ওয়েলফেয়ার স্টেটের ভূমিকা পালন করছিল। এবং গণতন্ত্রকে এক বিরাট পরিসরে নিয়ে যেতে পেরেছিলেন পশ্চিমি শিক্ষায় শিক্ষিত নেহেরু। এরপর সংক্ষিপ্ত সময় লালবাহাদুর শাস্ত্রীর, রাষ্ট্রের চেহারার বিশেষ কিছু ফেরবদল হয়নি, কেবল কৃষক পরিবার থেকে উঠে আসা শাস্ত্রীজি জয় জওয়ান জয় কিসান ন্যারা দিয়ে কৃষকদের সমস্যাগুলোকে পাদপ্রদীপের আলোয় আনার চেষ্টা করেছিলেন। এরপর ইন্দিরা গান্ধী, জাতীয়তাবাদ তখনও পশ্চিম ঘেঁষা উদার চিন্তা, সমাজতন্ত্র আর ধর্মনিরপেক্ষতাকে তিনিই নিয়ে এলেন সংবিধানের ঘোষণাপত্রে, ব্যাঙ্ক ন্যাশনালাইজেশন, কয়লাখনি ন্যাশনালাইজেশন দিয়ে সেই সমাজতান্ত্রিক চিন্তার বহিঃপ্রকাশ হল। ১৯৭১-এর যুদ্ধ হল, কিন্তু তা উগ্র জাতীয়তাবাদকে প্রশ্রয় দেয়নি, ঘর মে ঘুস কর মারেঙ্গে গোছের নির্বোধ স্লোগান ওঠেনি। কিন্তু গণতান্ত্রিক মুল্যবোধের বেশ পতন হয়েছে, জরুরি অবস্থা জারি তার অন্যতম নিদর্শন। এবং উনি ধর্মনিরপেক্ষতাকে সংবিধানে আনলে কি হবে, ধর্মকে ব্যবহারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন, নিজেও এই স্বামীজি, ওই যোগীজি করে বেড়াতেন, আবার মুসলিম ভোটব্যাঙ্কের দিকেও নজর ছিল। নসবন্দি থেকে ঘোষণা করে সরেই এসেছিলেন, শেষ পর্যন্ত, যদিও তার দায় তাঁকে নিতে হয়েছিল। ওনার পরে রাজীব গান্ধী, ওই সমাজতন্ত্র নিয়ে খুব কনভিন্সড নিজেই ছিলেন না, খোলাবাজারের দিকে খানিক এগোনো পিছনো চলছিল, জাতীয়তাবাদ আবার ফিরে গিয়েছিল তার পুরনো জায়গায়, তা নিয়ে বিশেষ উচ্চবাচ্য ছিল না, গণতন্ত্র মোটের উপর বরকরার কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে বেশ ঘেঁটে গেলেন। রামজন্মভূমির তালা খোলা, মাচান বাবার কাছে যাওয়া, শাহবানো মামলা নিয়ে গড়িমসিতেই বোঝা গেল তিনি ধর্মের তাস খেলতে নেমেছেন বটে কিন্তু সে তাস তাঁর আয়ত্তে নেই। তিনি আসলে রাজনীতির কোনও পাঠ না পড়েই ময়দানে নেমেছিলেন। এরপর মূলত সোনিয়া গান্ধীর ব্যাকডোর শাসন। গণতন্ত্র বরকরার, সমাজতন্ত্র না বাজার তাই নিয়ে ঘরে কোন্দল, একদিকে বামেরা অন্য দিকে চিদম্বরম মনমোহন। কিন্তু এর আগে নরসিমহা রাও বাজারের দরজা খুলে দিয়েছেন, মনমোহন সিং তখন পেছন থেকে চালাচ্ছেন, এখন সামনে থেকেই। কিন্তু বামেদের চাপে ১০০ দিনের কাজ, শিক্ষা ইত্যাদি নিয়ে বাম ঘেঁষা প্রকল্প, অন্যদিকে পাবলিক সেক্টর আন্ডারটেকিং বেচে দেওয়া। বলাই যায় যে সোনিয়া গান্ধীর ক’বছরে প্রতিটা মাসে বাজার অর্থনীতি আর সমাজতান্ত্রিক ধারণার লড়াই চলতে থাকলেও শেষমেশ বাজার জিতে যায়, ধর্মনিরপেক্ষতাও খানিক মুসলিম তুষ্টিকরণকে নিয়ে চললেও মোটামুটি ঠিকঠাক। জাতীয়তাবাদও তখন অ্যায় মেরে বতন কে লোগো ইত্যাদির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এবার নরেন্দ্র মোদির প্রথম টার্ম আর চলতি জমানা। প্রথম টার্ম ছিল সিনেমার ট্রেলার, সাংবাদিকরা প্রায়ই খোঁচাতেন, কই? রামমন্দির কী হল? ৩৭০ ধারা? ইউনিফর্ম সিভিল কোড? ওনারা খুব ধীরে ধীরে এগোচ্ছিলেন, জমি তৈরি করছিলেন, এমন একটা জমি যেখানে বিরোধিতার জায়গাও যেন না থাকে। মানে দেশের হিন্দু মেজরিটিকে পোলারাইজড করে এমন একটা জায়গায় নিয়ে আসা যেখানে সেই ভোটেই নির্ধারিত হয়ে যায় সরকারের চেহারা। সেই কাজ শেষ, ৩৭০ ধারা তুলে দিলেন, বাম আর তৃণমূল ছাড়া বিরোধিতা কোথায়? কেজরিওয়াল সেদিনেই সমর্থন জানিয়েছিলেন, আজ টের পেয়েছেন, কত ধানে কত চাল। কংগ্রেসের গলা ছিল খাদে, এক বিভ্রান্তির মধ্যে, ওনাদের ধারণা এক সফট হিন্দুত্ব না খেললে ওনাদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব সংকটে পড়বে, তাই অনভ্যস্ত হাতে মন্দিরে শিবের মাথায় জল ঢালছেন রাহুল গান্ধী। একই ব্যাপার তিন তালাক নিয়ে, বামেরা তৃণমূল ছাড়া বাকিরা প্রায় গলাই তোলেনি, এক অভিনেত্রী নুসরত কী সব বলেছিলেন, মমতা সেদিনেই বলেছিলেন, ওটা দলের মত নয়। এবার আসুন রামমন্দিরে, কংগ্রেস ভোট হারিয়ে ফেলার ভয়ে দেশের পুনর্গঠন হাতির দাঁত ব্যাঙের মাথা কী সব বলে যাচ্ছে, কারও গলাতেই এই রামমন্দিরের বিরোধিতার সুর নেই। প্রধান বিরোধী দলের মাথারা যদি মনে করেন এই রামলালার ভূমিপুজন, মন্দির প্রাণ প্রতিষ্ঠা দেশের ঐক্য সংহতিকে শক্তিশালী করবে তাহলে অন্যেরা আর কী বলবে? মুলায়ম থেকে লালু চুপ, এসপি, বিএসপি, তেলুগু দেশম, বিজেডি থেকে প্রায় সমস্ত দলের হীরণ্ময় নীরবতা বলে দিয়েছিল তারা হিন্দু ভোট ব্যাঙ্কে ধস নামার ভয়ে চুপ করে আছেন বা মৃদু সমর্থন জানাচ্ছেন। কিছুদিন আগে র্যা ডিকাল লিবারালদের চোখের মণি, কেজরিওয়াল দু’ হাত তুলে সমর্থন জানিয়েছেন ভূমিপূজনকে, মন্দির স্থাপনাকে, আজ আমও গেছে ছালাও গেছে। সিপিএম সিপিআই কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে নতুন ভারত নির্মাণের স্বপ্ন দেখছে। রাম মন্দির থেকে ৩৭০ ধারা থেকে তিন তালাক, বিজেপি সরকার যাই করছে, দেশের প্রধান প্রধান বিরোধী দলের তার বিরুদ্ধে জোরালো কোনও প্রতিবাদই নেই, প্রায় বিনা বিরোধিতায় চলছে এক প্রবল ক্ষমতাশালী মোদি সরকার। কাজেই মোদি টু জমানায় ধর্মনিরপেক্ষতাকে গড়ের মাঠেও দেখা যাচ্ছে না, গণতন্ত্র ও আরএসএস বিজেপির মতো করেই, বিরোধিতা করলেই বোলতি বন্ধ জেলে ঢুকিয়ে দেবার হুমকি, গণতান্ত্রিক ধারণাগুলো কবর দেওয়া হচ্ছে একে একে। জাতীয়তাবাদ তার তুঙ্গে, কিছু বললেই দেশ খতরে মে হ্যায়, হিন্দু খতরে মে হ্যায়। এক নতুন হিন্দু জাতীয়তাবাদের জন্ম হচ্ছে, এক নতুন জঙ্গি জাতীয়তাবাদের জন্ম হচ্ছে। প্রশ্ন করলেই অনায়াসে বলা হচ্ছে আপনি দেশদ্রোহী, সে আপনি মোদিজির মার্কশিট নিয়ে প্রশ্ন করলেও, কোনও প্রশ্ন নয়-এর জমানা চলছে। আর সেই সাম্প্রদায়িক রাজনীতির দ্বিতীয় অধ্যায়ে এসে আরএসএস–বিজেপির প্রোপাগান্ডা আরও পরিষ্কার, ইংরেজদের সঙ্গে লড়াইয়ে যে বীর স্বাধীনতা সংগ্রামীরা জেলে গেল, লাঠি গুলি খেল, প্রাণ দিল, তাঁরা নন, তাঁরা এখন ফালতু বকওয়াস, বেমানান। যাঁরা লড়েছিলেন মুসলমান নবাব, সম্রাটদের বিরুদ্ধে, দেশজুড়ে মধ্যযুগের যত হিন্দু রাজগাথা সে সব একে একে বেরিয়ে আসছে ঝোলা থেকে। পরিকল্পিতভাবেই সেসব আসছে সিনেমার পর্দায়, মুসলমানদের কচুকাটা করে কখনও মারাঠা, কখনও রাজপুত, কখনও চোল, কখনও আহীর রাজপুত্রদের কল্পকাহিনিই হয়ে উঠছে ইতিহাস। সেসব ছবি দেখতে হলে গেলেই বুঝতে পারবেন কতটা ঘৃণা বর্ষণ হচ্ছে, আর উন্মাদনা তৈরি করা হচ্ছে, হলের বাইরে এসে তাদের মনে হচ্ছে তারাও সেই মুসলমান শাসিত শোষিত এক রাজপুরুষ, কাজেই এক ট্রেনের ডাব্বায় এক বৃদ্ধ মুসলমানকে পেলেই বীরত্বের আস্ফালন দেখছি আমরা। নেহাতই ফকির, তাড়া করে বেঁধে পেটানো হচ্ছে, বল জয় শ্রীরাম, বল জয় শ্রীরাম। হ্যাঁ আমরা নিখাদ অসাম্প্রদায়িক ছিলাম না কোনওদিন, কিন্তু এক সৌহার্দ্য ছিল, এত ঘৃণা ছিল না, ১৯৪৭ থেকে ২০২৫ আসতে আসতে সব সৌহার্দ্যের সুতোগুলো ছিঁড়ে এক প্রবল ঘৃণার আবহ তৈরি হয়েছে। আমরা জানি এটা দ্বিতীয় অধ্যায়, আমরা এও জানি এর পরেই আসছে সেই তৃতীয় অধ্যায়, তার আগে এই উন্মাদ সাম্প্রদায়িক শক্তিকে আটকাতেই হবে।

দেখুন খবর:

 

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Russia - Ukraine | Donald Trump | রাশিয়া-ইউক্রেন যু*দ্ধ নিয়ে বিরাট মন্তব‍্য ট্রাম্পের
00:00
Video thumbnail
C. V. Ananda Bose in Murshidabad | মুর্শিদাবাদের জাফরাবাদে রাজ্যপাল, দেখুন সরাসরি
00:00
Video thumbnail
Bangladesh News | মুর্শিদাবাদের অশান্তি নিয়ে বাংলাদেশের বি*স্ফো*রক মন্তব্য, কড়া জবাব ভারতের
00:00
Video thumbnail
C. V. Ananda Bose | র*ণক্ষেত্র বৈষ্ণবনগর,রাজ্যপালকে ঘিরে গ্রামবাসীদের বিক্ষোভ,দেখুন চাঞ্চল্যকর ভিডিও
00:00
Video thumbnail
Murshidabad Unrest | মুর্শিদাবাদে পৌঁছল জাতীয় মহিলা কমিশন, কী কথা বললেন স্থানীয়দের সঙ্গে?
00:00
Video thumbnail
CPIM Brigade Sabha | রবিবার বামেদের ব্রিগেড সভা, আজ থেকেই শুরু জোর প্রস্তুতি, দেখুন সেই ছবি
00:00
Video thumbnail
America | Russia | রাশিয়া-ইউক্রেনের শান্তি চুক্তি থেকে সরে আসতে পারে আমেরিকা, কারণ কী?
00:38
Video thumbnail
Murshidabad | Congress | মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জে যাচ্ছে কংগ্রেসের প্রতিনিধি দল
03:21
Video thumbnail
Murshidabad | স্বাভাবিক ছন্দে সামসেরগঞ্জ, শান্তি আর সম্প্রীতির বার্তা দিল মুর্শিদাবাদের আম জনতা
02:09