skip to content
Sunday, March 16, 2025
HomeScrollFourth Pillar | ডাক্তারবাবুরা গাছেরও খাবেন, তলারও কুড়োবেন?
Fourth Pillar

Fourth Pillar | ডাক্তারবাবুরা গাছেরও খাবেন, তলারও কুড়োবেন?

লুকিয়ে অনেকেই প্রাইভেটে রোগী দেখেন!

Follow Us :

১৪ আগস্ট-এর এক স্বতস্ফুর্ত জনবিক্ষোভের পর কিছুটা বাংলাদেশের ছাত্র অভ্যুথ্বানের গ্যাস খেয়ে বেশ কিছু লোক ভেবেছিলেন ব্যস, মমতা জামানা শেষ, হেলিকপ্টার নামল বলে ঐ নবান্নের ওপরে, তারপর তলার দিকে তাকিয়ে দেখবেন মমতা। ওনাদের ভাষায় এক চলমান বিপ্লব, কেন যে চলমান তা আজও বুঝিনি। কিন্তু বেশ কিছু মানুষের মনে হয়েছিল এই ফাঁকে এক বিপ্লবী জোব্বা পরে নিলে আগামী রেজিমে আগামী জামানাতে হতেই পারি এক কেষ্ট বিষ্টু। তো এমনিতে মানুষ খায় কি, মাখে কি, তার সম্পর্কে বিলকুল ওয়াকিবহাল নয় যে, টলিউডের সংরা, তাঁরাও এসেছিল রাজপথে। আগ বাড়িয়ে প্রচুর কথাও বলেছিল, রাস্তায় বসে ফ্যামিলি পিকনিকও হয়েছিল। মজার কথা হল যেই আন্দোলনে ভাটা পড়েছে, অমনি তাঁরা উধাও, এখন ব্যস্ত, এখন পেট ব্যাথা, মায়ের অসুখ, ছেলের পরীক্ষা। এমনকি অভয়ার জন্মদিনে খুউউউউব ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও নাকি তেনাদের কেউ হাজির হতে পারেনি। এবং সেই ডাক্তারবাবুরা, যাঁরা এক বিশাল থ্রেট কালচারের জনক ছিলেন, জামানা ঘুরে স্বাভাবিকভাবেই নতুন থ্রেট কালচার সেন্টার গড়ে উঠেছে, কাজেই বড় মানসিক কষ্টে ছিলেন, তো এই এক ধর্ষণ আর মৃত্যু তাঁদের কাছেও এনে দিয়েছিল পুনরায় ঘি দুধ মধুর সেই সুখ স্মৃতির দিনগুলোর স্বপ্ন। আর ঐ স্বপ্ন দেখার সাহস কর বলে সেই তাঁরা নেমেছিলেন ফিরিয়ে আনতে এক নতুন থ্রেট কালচার সেন্টারকে। টাকা যুগিয়েছেন কাঁড়ি কাঁড়ি, এসে হাজির হয়েছেন ধরণাতলায়, এমনকি রিজাইন, মানে গণ পদত্যাগেও সই করেছেন। কিন্তু শেষ মেষ আন্দোলন পথ হারিয়ে কানাগলিতে ঢুকে যাবার পরেই তেনারা আবার মন দিয়ে ডাক্তারিটাই শুরু করেছিলেন, এইবারে শুরু হল মজা।

রাষ্ট্র বা রাষ্ট্র ক্ষমতা আসলে আনুগত্য চায়, টোটাল লয়ালটি, সে যেই থাকুক ক্ষমতায়, এখানে হিটলার, স্তালিন, রেগান, ওবামা, ইন্দিরা, মোদি, রাজীব, জ্যোতি মমতা-তে কোনও ফারাক নেই। লয়ালটি, আনুগত্য ছাড়া চলবে কিভাবে রাজ্য? কাজেই আপনি বঞ্চিত হলে বড়জোর অনুগত জনে ‘কেন কর এত প্রবঞ্চনা’ বলে গান গাইতে পারেন, ব্যাস! মানে দেখুন না যদি পারেন তাহলে একটু করে দিন না ইত্যাদি সবিনয় আবেদন, ক্ষমতা এই আবেদনের ভাষা বোঝে। এর বিপরীত উপায় হলো আন্দোলন, অল আউট বিরোধিতা। করাই যায়, অনেকেই করেন, সেই কবে থেকে কতগুলো মানুষ ৫০০-৬০০ একে-ফর্টি সেভেন নিয়ে, কটা গেরামে তৈরি জলছবি রকেট লঞ্চার নিয়ে বিদ্রোহের মশাল জ্বালিয়েই রেখেছে। আজ ৬ জন, তো কাল ৩১ জন মারা যাচ্ছে, তাদের থ্যাঁতলানো রক্ত মাখা মুখগুলো সনাক্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু মাঝে মধ্যে চুপ করে গেলেও আবার সেই অবাধ্যতা মাথা চাড়া দেয়। এনাদের কোনও পিছুটান নেই, মরবো বা মারবো বলে দুনিয়ার অন্যতম সফিসটিকেটেড আর্মস সজ্জিত বাহিনীর সঙ্গে লড়াই জারি রাখে। আনুগত্যের প্রশ্নই নেই। কিন্তু বাকি মানুষজন, যাঁরা এদিক ওদিক দেখে ট্রাফিক রুল ভাঙেন, ইনকাম ট্যাক্স ফাঁকি দেন, বিনা রসিদে টাকা রোজগার করেন, যাঁরা ঘুষ, ইংরেজিতে কিকব্যাক দিয়ে ছেলেকে স্কুলে ঢোকান, রেলের রিজার্ভেশন করান, কর্পোরেশনের বার্থ সার্টিফিকেট জোগাড় করেন, সেই তাদের অনুগত তো হতেই হয়। না হলে রাষ্ট্রের কর্তা এবং কর্তীরা রাগ তো করবেই। এবং সেই তাঁরা যখন আন্দোলন তথাকথিত বিপ্লবে নামেন তখন সমস্যা হল, সেই আন্দোলন সেই তথাকথিত বিপ্লব শেষে এক ভাঙনের মুখোমুখি হয়ে ভারি বিপদে পড়েন। যে বিপ্লব, যে অভ্যুথ্বানের পরিকল্পনায় সেদিন ডাক্তারবাবুরা নেমেছিলেন, তাঁদের মাথাতেই ছিল না বহু ক্ষেত্রেই এমন অভ্যুথ্বান, এমন বিপ্লব, এমন আন্দোলন হেরে যায়, পথ হারায় বা সেই জমাট আন্দোলনে আসলে প্রচুর ভেজাল ছিল, তাই কিছুদিন পরেই তা পিছু হটে। আর সেই সময়ে এতদিন মুখ বুঁজে সমস্ত চোখ রাঙানি সহ্য করার পরে রাষ্ট্র নামে তার কাজে, যে প্রকল্পের নাম হল, ‘দ্যাখ কেমন লাগে’।

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | শিশমহল হারিয়ে দিল কেজরিওয়ালকে? শিশমহলের রহস্যটা জানুন

হ্যাঁ, প্রত্যেক আন্দোলনের শেষে এমনটা হয়েছে। মনে আছে ১৯৭৪ এর রেল ধর্মঘট? দেশ জোড়া সেই ধর্মঘট ভাঙার পরে আর কোনওদিন রেল শ্রমিকরা ধর্মঘটে নামতেই পারলেন না, কেন? কারণ ঐ ৭৪-এর ধর্মঘট ভেঙে যাওয়ার পরে রাষ্ট্র নেমেছিল তার যাবতীয় অস্ত্র নিয়ে। যারা ধর্মঘটের সাধারণ সমর্থনেও ছিল তাদের ওপরে এক নিয়মমাফিক ‘দ্যাখ কেমন লাগে’ নেমে এসেছিল। একজন বুকিং ক্লার্ক, ঐ স্টেশনে টিকিট বিক্রি করেন যাঁরা, সেইরকম এক বুকিং ক্লার্কের ৩৭ টাকা হিসেব মেলেনি বলে তাঁর চাকরি চলে যায়, তিনি রেল ইউনিয়নের এক বড় নেতাকে শেল্টার দিয়েছিলেন, এই মাত্র। হ্যাঁ এই ক’দিন আগে যে ডাক্তারবাবুরা আন্দোলন করলেন আন্দোলনে নেতৃত্ব দিলেন, কর্মসূচি ঠিক করলেন, মিডিয়ার সামনে বিশাল বিশাল বাকতাল্লা মারলেন তাঁদের অনেকেই তো কর্পোরেট হাসপাতালে কেবল টাকা কামানোর যন্ত্র। তাঁদের অনেকেই তো সরকারি চাকরি করতে করতে চাকরির সময়ের মধ্যেই বাইরে নিজেদের চেম্বারে বসেন। তাঁদের অনেকেই তো ঐ বিভিন্ন ডায়গনিস্টিক সেন্টার থেকে নিয়মিত কমিশন খান, এগুলো কি অস্বীকার করতে পারবেন? ঐ আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে এসে যেদিন মূখ্যমন্ত্রী বসলেন জুনিয়র ডাক্তারদের বিপ্লবী নেতৃত্বের সঙ্গে, সেদিনই তো তিনি তাঁদেরকে সাফ জানালেন যে, কীভাবে কর্মবিরতির আড়ালে জুনিয়র ডাক্তারেরা গিয়েছেন পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালে, কিভাবে সেখানে কাজ করেছেন, কীভাবে সেখানে স্বাস্থ্যসাথীর বিল পাস করিয়েছেন। একজনের, ঐ অনিকেত মাহাতো, দেবাশিস হালদার, কিঞ্জল নন্দের একজনেরও সৎসাহস ছিল তা নিয়ে কিছু বলার? ওখানে তো বাক্যিহারা হয়ে পড়েছিলেন, বাইরে এসেও কি বলেছিলেন? আসফাকুল্লা নাইয়া, নিজের নামের পাশে ভুয়ো ডিগ্রি ব্যবহার করছেন, বিপ্লবীরা মুখ বন্ধ রেখেছেন কেন? জুনিয়ার ডাক্তারেরা মেদিনীপুর হাসপাতালে প্রসূতিদের অপারেশনে যে গাফিলতি দেখিয়েছেন তা সামনে আসার পরে রাজ্য সরকার ব্যবস্থা নিলেন, যদি তা অন্যায় হয় কেন জুনিয়র ডাক্তারেরা আবার আন্দোলনে নামলেন না? কেন জুনিয়র ডাক্তারেরা আন্দোলনের বদলে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সাসপেনশন তুলে নেবার আবেদন জানালেন? কোথায় গেল ধর্ণা, কর্মবিরতি?

আসলে অন্যায় আন্দোলন আসল আন্দোলন করার ক্ষমতা কেড়ে নেয়। কিছুদিন আগেই রাজ্য সরকার এক সার্কুলার দিয়েছিল, সরকারি চিকিৎসকরা সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত প্রাইভেট প্র্যাক্টিস করতে পারবেন না। প্রত্যেক চিকিৎসককে সপ্তাহে ন্যূনতম ৬ দিন এবং ৪২ ঘণ্টা ডিউটি করতে হবে, জানিয়েছিল স্বাস্থ্য ভবন। এরপর এসেছিল আরও কড়া নির্দেশিকা, নতুন নির্দেশনামায় জানানো হয়েছে, সরকারি চিকিৎসকদের কর্মক্ষেত্রের ২০ কিমির বাইরে করা যাবে না প্রাইভেট প্র্যাকটিস। পাশাপাশি ডিরেক্টর অব হেলথ সার্ভিস (DHC) বা ডিরেক্টর অব মেডিক্যাল এডুকেশনের (DME) থেকে ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ নিতে হবে প্রাইভেট প্র্যাকটিসের জন্য। এবার ১৯ জন ডাক্তারবাবুকে ডাকা হল জবাবদিহির জন্য। বাইরে রোগী দেখার অনুমতি নেই যে সব সরকারি ডাক্তারের, তাঁদের নন–প্র্যাকটিসিং অ্যালাউয়েন্স দেয় সরকার। কিন্তু লুকিয়ে অনেকেই প্রাইভেটে রোগী দেখেন বলে অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। নন-প্র্যাক্টিসিং অ্যালাউয়েন্স নিয়েও প্রাইভেট প্র্যাকটিস করার অভিযোগে স্বাস্থ্য দপ্তরের স্ক্যানারে এবার ১৯ জন সরকারি চিকিৎসক। এমনিতে ধরা পড়তেন না, কিন্তু তাঁরা ধরা পড়ে গিয়েছেন স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে নার্সিংহোম ও বেসরকারি হাসপাতালে যুক্ত থেকে এই কাজ করার জন্য। এর বাইরেও আরও কত জন সরকারি চিকিৎসক এমন কাণ্ড ঘটাচ্ছেন রোজ—তার খোঁজও শুরু করেছে স্বাস্থ্যভবন। ওই ১৯ জনকে স্বাস্থ্যভবনে তলব করা হয়েছে এনকোয়ারি কমিটির সামনে শুনানিতে হাজিরা দেওয়ার জন্য। প্রত্যেকেই তাঁরা ক্লাস–১ গেজেটেড পদমর্যাদার আধিকারিক। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন ১৭ জন বিশেষজ্ঞ মেডিক্যাল অফিসার (এমও) এবং একজন করে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক (বিএমওএইচ) ও সিনিয়র রেসিডেন্ট (এসআর)। বিএমওএইচ যিনি তিনি পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশিয়াড়ি ব্লকে এবং এসআর হুগলি ইমামবাড়া জেলা সদর হাসপাতালে কর্মরত। বাকি এমও–রা মেডিক্যাল কলেজ, জেলা হাসপাতাল, মহকুমা হাসপাতাল, সুপার–স্পেশালিটি হাসপাতাল, গ্রামীণ হাসপাতালে কর্মরত। এই সব ক’টিই হল নন–প্র্যাকটিসিং পোস্ট, মানে এই পোস্টে কাজ করলে প্রাইভেট প্রাকটিস করা যায় না এবং সে জন্যে ওই সব চিকিৎসক নন–প্র্যাকটিসিং অ্যালাউয়েন্সও পান, যা সাধারণত তাঁর মূল বেতন বা বেসিক পে–র ৩০ শতাংশ। মানে একজন ঐ মাপের ডাক্তারবাবুর মাইনে ৮০ হাজার তাকা হলে এই নন-প্রাকটিসিং আলাওয়েন্স বাবদ তিনি ২৪ হাজার টাকা পান। কিন্তু অভিযোগ, এর পরেও ওই ১৯ জন চিকিৎসক তাঁদের কর্মস্থলের নিকটবর্তী নার্সিংহোম অথবা বেসরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্যসাথী স্কিমের আওতায় পরিষেবা দিয়ে থাকেন। মানে খুব পরিস্কার তেনারা গাছেরও খাচ্ছিলেন, তলারও কুড়োচ্ছিলেন, এখন ধরা পড়ে গেছেন, কারণ প্রকল্প চলছে, কোন প্রকল্প? ঐ যে ‘দ্যাখ কেমন লাগে’।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Kolkata Rain | স্বস্তির বৃষ্টি কলকাতায়, ঝড়ের আশঙ্কা কতটা?
00:00
Video thumbnail
Sukanta Majumdar | সাংবাদিক বৈঠকে বড় কথা বলে দিলেন সুকান্ত মজুমদার, দেখুন সরাসরি
00:00
Video thumbnail
A. R. Rahman | বাড়ি ফিরলেন এ আর রহমান, কেমন আছেন? কী জানালেন চিকিৎসকরা?
00:00
Video thumbnail
Donald Trump | ট্রাম্পের নির্দেশে ইরানকে চাপে রাখতে ইয়েমেনে হামলা আমেরিকার কী হতে চলেছে বিশ্বে?
00:00
Video thumbnail
Kolkata House | ফের কলকাতায় ভেঙে পড়ল বাড়ি, কোথায়? দেখুন কী অবস্থা
00:00
Video thumbnail
Weather | প্রবল ঝড়-বৃষ্টিতে ভিজবে কোন কোন জেলা? দেখুন বড় আপডেট
00:00
Video thumbnail
Hailstorm | Weather | প্রবল গরমে শিলাবৃষ্টি, বাংলায় কোন কোন জায়গায়? দেখুন এই ভিডিও
00:00
Video thumbnail
BJP | সুকান্তর মন্তব্যে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মনোভাব স্পষ্ট, আরও চাপে শুভেন্দু? দেখুন বিশেষ প্রতিবেদন
00:00
Video thumbnail
Sukanta Majumdar | সাংবাদিক বৈঠকে বড় কথা বলে দিলেন সুকান্ত মজুমদার, দেখুন সরাসরি
03:35
Video thumbnail
Virat Kohli | অবসর ভেঙে টি২০-তে ফিরবেন কিং কোহলি! কবে ফিরবেন? নিজেই জানালেন বিরাট
11:35:25