পৃথিবীর তিনিই একজন যিনি ওয়াটারপ্রুফ জ্যাকেট আর ট্রাউজার পরে জলে নামলেন, কিন্তু বেণী ভেজালেন না। আর তাঁর এই পুণ্যস্নান নিয়ে গত ক’ বছর ধরে তিনি যাদের পুষছেন, কাউকে মাইনে দিয়ে, বোনাস দিয়ে, কাউকে জেলে না পুরে, কাউকে জেলে পুরে ফের জেল থেকে ছেড়ে দিয়ে, সেই তাঁরা তাঁদের সামর্থ্য অনুযায়ী প্রভুর গুণগান করতে নেমে পড়েছেন, হ্যাঁ আমি মোদিজির কথা বলছি। এতবড় দুর্ঘটনা ঘটে গেল প্রত্যেক বিরোধী দল এই অব্যবস্থা নিয়ে সংসদে ক্ষোভে ফেটে পড়ছে, জানতে চাইছে কতজন মারা গেছে? কোন কোন রাজ্যের কতজন? কেন লাশ তোলার জন্য পে লোডারের ব্যবহার করতে হল? কেন লাশ যা পাওয়া গেছে তা আত্মীয় স্বজনকে দেওয়ার আগে পোস্ট মর্টেমটাও করা হল না? শুনেছেন কোনও কথা? না তিনি একটা কথাও বলেননি। আগে হাজার কথা বলেছেন, পাতা জোড়া সহাস্য মুখের বিজ্ঞাপন ছাপা হয়েছে, মানুষ এসেছেন মারা গেছেন, উনি এখন মৌন। মানে এক দুর্ঘটনা ঘটার পরে যে সরকার এখনও ঠিক কতজন মারা গেছেন তা বলতে তা জানাতে রাজি নয়, সেই সরকারের মাথা ৫ ফেব্রুয়ারিকে বেছে নিলেন পুণ্যস্নানের জন্য, ওনার কাছে পাপ-পুণ্য কিছুই নেই, ধর্ম নেই, আধ্যাত্মিকতা বলে কিছু নেই। যে কোনও উপলক্ষকে উনি ওনার গদি বাঁচানোর রাজনীতির কাজে লাগাতে চান, চেষ্টা করেন, অনেকটা সফলও হন। নির্বাচনের শেষ দিন, উনি চলে গেলেন হিমালয়ের গুহাতে, একান্তে, নির্জনে ধ্যান করবেন বলে। পাতা উল্টে দেখুন ভারত তো বটেই পৃথিবীর বহু ফোটগ্রাফার সেদিন হাজির ছিলেন সেই ইভেন্টের ছবি তোলার জন্য, উনি চেয়েছিলেন প্রচার হোক, হয়েছে। উনি ৩৬টা ক্যামেরার সামনে বেনারসে গঙ্গাস্নান করে আরতি করলেন, প্রচার হল। উনি কন্যাকুমারিকাতে গিয়ে শান্তিগোপালের মতো বিবেকানন্দ সেজে ধ্যানে বসলেন, সেও নির্জনতায়, ১৭টা ক্যামেরা ছিল, ভিডিও ক্যামেরা। ওনার প্রচারের জন্য। উনি মায়ের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন, নির্বাচনের দিনেই, ক্যামেরা প্রেসের সামনে, মাকে একবার নয় চার পাঁচবার প্রণাম করলেন, মাকে আশীর্বাদ করতে বললেন, ভোটের দিনে প্রচার হল। তিনি ভোট দিতে যাচ্ছেন, ২০ গাড়ির কনভয়ে, প্রচার চলছে। এবারে দিল্লির নির্বাচন, উনি বেছে নিলেন সেই দিনটাতে, অন্য কত ভিভিআইপিরা গেছেন, গেছেন উপরাষ্ট্রপতি, মন্ত্রী সান্ত্রী, সঙ্গে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, কিন্তু উনি তো উনিই, উনিজি পুণ্যস্নানে যাবেন, সে প্রচারের আলোর সবটুকু শুষে নেবেন তিনিই, আর কেউ নয় কাজেই সঙ্গে নেই যোগী আদিত্যনাথ। তিনি একলা, পরনে ওয়াটারপ্রুফ জ্যাকেট, ওয়াটারপ্রুফ ট্রাউজার, জলে নামলেন, মাথা নিয়ে গেলেন জলের কাছে, উঠে এলেন। বেণীটুকুও না ভিজিয়ে উঠে এসেই নতুন জামাকাপড় পরে অগ্নি আরতি আর বিড়বিড় করে মন্ত্র। প্রচার হল সর্বত্র, প্রত্যেকটা ন্যাশনাল মিডিয়ার প্রভুভক্তদের মুখে উল্লাস দেখে কে? সবকা বোলতি বন্ধ, এই হল ক্যাপশন। যার মানে হল সবার মুখের কথা কেড়ে নিয়েছেন মোদিজি, সব্বাই স্তম্ভিত। কেন? কোনও রকমে চান করার এই ভদ্দা, ফালতু ভিডিও দেখে বোলতি বন্ধ হবে কেন? আমাদের চিন্তা দেশের ক্রমশ ক্ষয়ে যাওয়া গণতন্ত্রের আবহ নিয়ে, আমাদের চিন্তা আগামী দিনে দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোর অস্তিত্ব নিয়ে। এক রাষ্ট্রে গণতন্ত্র আছে কি না কীভাবে বোঝা যায়? এমনিতে ফ্রিডম হাউস নামের এক সংগঠন পৃথিবীর দেশে দেশে গণতন্ত্র আছে কি না তার একটা হিসেব দেয়। তাদের হিসেবে এখন পর্যন্ত, ২০২৩ সালের অক্টোবরের সর্বশেষ দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ভারতকে ‘অংশত মুক্ত’ দেশের ক্যাটাগরিতে স্থান দেওয়া হয়েছে। হ্যাঁ এই হিসেব দেখলে সত্যিই মনে হয় দেশের গণতন্ত্র বিপন্ন। আসুন মূল আলোচনায় আসি। সমাজ বিজ্ঞানেও ফর্মুলা আছে, একটা রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক কি না, তা মাপার ব্যবস্থা আছে। ধরুন ১০টা বিষয়ের এক তালিকা আছে, যা আছে না নেই, এটুকু জানলেই বলে দেওয়া যায়, দেশটা কতটা গণতান্ত্রিক। দেশে সার্বজনীন ভোটাধিকার আছে কি না? দেশে সংবাদমাধ্যম স্বাধীন কি না? দেশের শাসকরা মানুষের কাছে জবাবদিহি করেন কি না? মানুষের সভা সমাবেশ, বিরোধিতা করার অধিকার আছে কি না? এরকম আরও বেশ কয়েকটা বিষয়ের এক তালিকা হল সেই ফর্মুলা যা মিলিয়ে নিলেই বোঝা যায় যে আলোচনার দেশটাতে গণতন্ত্র আছে? না নেই? নাকি থাকলেও তা খণ্ডিত।
তো সেরকম একটা ফর্মুলা আছে, যা দিয়ে বোঝা যায় যে একটা রাজনৈতিক দল, আসলে ধর্মীয় মৌলবাদী কি না? বোঝা যায় যে এই দলটার রাজনীতি করার মূল উদ্দেশ্য এক বিশেষ ধর্মকে কেন্দ্র করে মানুষজনকে সঙ্গে নিয়ে ধর্মীয় কুসংস্কারাচ্ছন্ন এক কল্পিত স্বর্গ বা জন্নত বা হেভেন-এর দিকে রওনা দেওয়া। বোঝা যায় যে এই দলটির নেতা আসলে ধর্মের বিভেদকে কাজে লাগিয়ে নিজের স্বার্থসিদ্ধি করতে চায়।
আসুন সেই ফর্মুলা দিয়েই আরএসএস-বিজেপির বিভিন্ন দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্তে আসার চেষ্টা করি।
প্রথম সূত্র দলটি একটি বিশেষ ধর্মীয় সমুদায়ের হয়েই কথা বলবে, নাম যাই হোক না কেন? এক বিশেষ ধর্মীয় সমুদায়ের মানুষজনই ওই দলের নেতৃত্বে থাকবে। এবার মিলিয়ে দেখা যাক। আরএসএস বা রাষ্টড়ীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা ভারতীয় জনতা পার্টির নামে কোথাও হিন্দুত্ব নেই, নামে বলা নেই যে দলটি হিন্দুত্ববাদী, কিন্তু নেতৃত্বে হিন্দুরা, হিন্দুত্ববাদীরা। বিজেপিতে তবু দু’ চার জন মুসলমান পাওয়া গেলেও যেতে পারে, আরএসএস-এ তাও নেই। তাঁরা নিখাদ হিন্দু। তাঁরা চালনা করেন, তাঁদের হাত ধরেই দেশ চালান নরেন্দ্র মোদি। তাই আরএসএস এক হিন্দু মৌলবাদী সংগঠন, বিজেপি এক হিন্দুত্ববাদী দল।
দ্বিতীয় সূত্র হল তাঁরা অন্য ধর্মকে ঘৃণা করবেন, অন্য ধর্মের মানুষজনদের ঘৃণা করবেন। তাকিয়ে দেখুন, নরেন্দ্র মোদি, যিনি নাকি এ দলের একচ্ছত্র নেতা, তিনি মনে করেন মুসলমান মানেই লুঙ্গি আর মাথায় ফেজওলা মানুষ। আরএসএস দফতর থেকে বিজেপি আইটি সেল থেকে প্রতিদিন ঘৃণা উগরে দেওয়া হচ্ছে কেবল মুসলমানদের বিরুদ্ধে নয়, এমনকী সেই উদার গণতান্ত্রিক মানুষদের বিরুদ্ধেও, যাঁরা মুসলমানদের পক্ষে দুটো কথা বলছেন, তাদের বিরুদ্ধেও। আইটি সেল থেকে স্বরা ভাস্করকে বলা হচ্ছে খান হয়ে যান, মুসলমান হয়ে যান, আমাদের রাজ্যের বিজেপি ছানাপোনা নেতারা মমতাকে বেগম মমতা বলে সম্বোধন করছেন। মানে মুসলমান হওয়া তো ছেড়েই দিন, হিন্দু মানুষজনকেও তাঁরা হিন্দু ধর্মের আওতা থেকে বার করে দিতে চান। এই সূত্র মেনেই আরএসএস এক হিন্দু মৌলবাদী সংগঠন, বিজেপি এক হিন্দুত্ববাদী দল।
তৃতীয় সূত্র হল ধর্মস্থল, উপাসনাস্থলকে ব্যবহার করা। বিজেপির দিকে তাকিয়ে দেখুন, প্রত্যেকটা উপাসনা স্থলকে ব্যবহার করার কী দারুণ চেষ্টা। কলকাতায় এলেন তো কালীঘাট চলো, দক্ষিণেশ্বর চলো, বীরভূমে তারাপীঠ চলো, কঙ্কালীতলা চলো। মোদ্দা কথা হল উপাসনাস্থলে গিয়ে নিজেদের আইডেনটিটি, হিন্দু অস্তিত্বকে জাগিয়ে তোলা। হিন্দু ধার্মিক আবহ তৈরি করা, যা দিয়ে তাঁরা নিজেদের রাজনীতিকে প্রভাবিত করতে থাকেন। এর আগে এরকম নির্লজ্জভাবে পুজোর বেদীকে রাজনৈতিক কারণে ব্যবহার করা হয়নি। তাই আরএসএস এক হিন্দু মৌলবাদী সংগঠন, বিজেপি এক হিন্দুত্ববাদী দল।
আরও পড়ুন: Fourth Pillar | মোদিজি রাষ্ট্রগঠন, বিকাশের অ আ ক খ জানেন না
চতুর্থ সূত্র হল ধর্মীয় আন্দোলন গড়ে তোলা, ধর্মীয় উন্মাদনার জন্ম দেওয়া। আরএসএস বিজেপির এ তাবত সবথেকে বড় নয়, একমাত্র দেশব্যাপী আন্দোলন হল রামমন্দিরের আন্দোলন, দেশ জুড়ে রথযাত্রা, মিছিল মিটিং সমাবেশ। তাদের রাজনৈতিক উত্থানের পেছনে আছে অঈ রামজন্মভূমি আন্দোলন, তাকে ঘিরে দেশজুড়ে দাঙ্গা, গণ উন্মাদনার কথা আমরা জানি, রথ যেখান দিয়ে গেছে, সেখানে পড়েছে মানুষের লাশ, যেখান থেকে ইট এসেছে, সেখানেই রচিত হয়েছে দাঙ্গার ষড়যন্ত্র, ইতিহাস তাই বলছে। এবং এইখানেই শেষ নয়, এই ধর্মীয় আন্দোলনের অন্য ক্ষেত্রও তারা তৈরি রেখেছে। এই যাত্রায় কোথাও বাধা আসলেই তারা কাশী মথুরা নিয়ে মাঠে নামবেন, একথা বলাই বাহুল্য। তাই আরএসএস এক হিন্দু মৌলবাদী সংগঠন, বিজেপি এক হিন্দুত্ববাদী দল।
পঞ্চম সূত্র হল, ধর্মের কুসংস্কারকে জিইয়ে রাখা, ক্রমশ এক মধ্যযুগীয় ইতিহাসের দিকে ঠেলে নিয়ে যাওয়া। বিজেপি নেতাদের কথাগুলোতে কান দিলে বিজ্ঞানের ক্লাস ফোরের ছাত্রও হাসবে। দেশের প্রধানমন্ত্রী বলছেন, ওই যে গণেশের মাথা কাটা হওয়ার পরেই, সেই মাথার জায়গায় একটা হাতির মাথা জুড়ে দেওয়া হয়, এটা ছিল আমাদের দেশের প্রাচীনতম প্ল্যাস্টিক সার্জারির উদাহরণ। এ রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সাফ বলে দেন, দরকার নেই আমাদের মুসলমান ভোটের, হ্যাঁ প্রকাশ্যেই বলেন। ধর্মের যাবতীয় কুসংস্কার নিয়ে দেশটাকে মধ্যযুগে ফেরত পাঠাতে চায় বিজেপি। তাই আরএসএস এক হিন্দু মৌলবাদী সংগঠন, বিজেপি এক হিন্দুত্ববাদী দল।
ষষ্ঠ সুত্র হল, চরম নারী বিরোধিতা। নারী মানে হল পুরুষদের সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র, হ্যাঁ আরএসএস চিফ, আরএসএস প্রধান এই কথা বলেছেন। মোহন ভাগবত কেবল এটুকুই বলেননি, বলেছিলেন নারীরা সংসার ধর্ম করবে, সন্তানকে মানুষ করবে এটাই তো তাদের কাজ। পুরুষরা রোজগার করবে, সংসার প্রতিপালন করবে, নারী গৃহকর্মের দায়িত্ব নেবে, এটা ক’দিন আগেই মোহন ভাগবত বলেছেন। নারী অধিকার শুনলে এই মৌলবাদীদের কানে গরম সিসা পড়ার মতো প্রতিক্রিয়া হয়। এবং যে নারীরা কাজ করেন, বিশেষ করে গানবাজনা সিনেমা করেন, তারা যে অত্যন্ত নোংরা তা নিয়ে এঁদের কোনও সন্দেহই নেই। তাই আরএসএস এক হিন্দু মৌলবাদী সংগঠন, বিজেপি এক হিন্দুত্ববাদী দল।
সপ্তম সূত্র হল ক্ষমতায় আসার আগে এবং ক্ষমতায় আসার পরে তাদের চরিত্র পাল্টে যায়। এই মৌলবাদীরা মুখোশ পরে ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করে, মনে করে দেখুন ২০১৪তে নরেন্দ্র মোদির নির্বাচনী প্রচার। প্রত্যেকটা মিটিংয়ে তিনি বলছেন কংগ্রেসি দুর্নীতির কথা, মন্ত্রী সান্ত্রীদের দুর্নীতির কথা, প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন কালো টাকা ফেরত আনার, বলছেন স্বাধীনতার পর থেকে দেশের বিকাশ আটকে রেখেছে কংগ্রেস, আমাদের ভোট দিন আমরা কালো টাকা ফিরিয়ে আনব। গোধরা দাঙ্গার এই কলঙ্কিত নায়ক একবারের জন্যও হিন্দু মুসলমান, রামমন্দির প্রসঙ্গ নিয়ে একটা কথাও বলেননি। এবার দেখুন ২০১৯, বিজেপি একাই ৩০৩। রামমন্দির, তিন তালাক, কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা তুলে নেওয়া, মানে সব অর্থে এক সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের দিকে দেশকে ঠেলে দেওয়া। এটাই ধর্মীয় মৌলবাদী রাজনীতির এক চরিত্র, তারা মুখোশ পরে থাকে, সময়মতো মুখোশ খুলে লাফিয়ে পড়ে শিকার ধরতে। তাই আরএসএস এক হিন্দু মৌলবাদী সংগঠন, বিজেপি এক হিন্দুত্ববাদী দল।
অষ্টম এবং শেষ সূত্র হল, মৌলবাদী রাজনৈতিক দলের উত্থান এমনি এমনি হয় না, তাকে তুলে ধরতে সাহায্য করে অন্য দল, তারা অন্য এক দলের হাত ধরে হঠাৎই উঠে আসে, মানুষের সামনে এক মসিহার রূপ ধরে অবতীর্ণ হয় বলা যায়। যারা তাকে তুলে ধরে তাদের অনেক সময় ধারণাও থাকে না, ভবিষ্যতে এই মৌলবাদী দল কোন আকার ধারণ করবে। ভারতবর্ষে আরএসএস, জনসংঘ, বিজেপি কোথায় ছিল? জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর হাত ধরেই এরা মাঠে নেমেছে। তারও পরে এমনকী বামপন্থীরাও তাদের সমর্থন করেছে। এরপর রামজন্মভূমি আন্দোলন, দেখতে হয়নি। শেষ পেরেক কংগ্রেসের উপর থেকে সমর্থন তুলে নিয়ে কেন্দ্রে বাম কংগ্রেস আলাদা হয়ে যাওয়া। বিজেপি হু হু করে এগিয়ে এল শূন্যস্থান দখল করতে। জানা ছিল রাষ্ট্র বিজ্ঞানীদের, জানা ছিল যারা পড়েছেন আরএসএস-এর ঘোষণাপত্র সেই ১৯৫২-তে। কিন্তু মানুষ জানল, এই ক’বছর আগে, এক হিন্দু মৌলবাদের উত্থান চোখে দেখা যাচ্ছে এখন। তাই আরএসএস এক হিন্দু মৌলবাদী সংগঠন, বিজেপি এক হিন্দুত্ববাদী দল।
এমনিতে মৌলবাদেরই অনেক সমস্যা আছে, আমি যা বলছি তাই ঠিক, আমার কথার বিরুদ্ধে কোনও কথা হতে পারে না, এগুলো এক মৌলবাদের অংশ, কিন্তু তা যদি হয় ধর্মীয় মৌলবাদ, তাহলে হয়ে ওঠে আরও ভয়ঙ্কর, সমাজের যা কিছু ভালো তাকে উঁই পোকার মতো কুরে কুরে খেয়ে নেয়, একটা খোখলা কাঠামো পড়ে থাকে মাত্র। ধর্মীয় মৌলবাদ মানুষের সভ্যতার অগ্রগতির বিরোধী, ক্রমশ পেছনে ঠেলে নিয়ে যায় সমাজকে। যেমন এই বিজেপি আমাদের দেশ আর সমাজকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে ষোড়ষ শতাব্দী কি তারও পেছনে, এক মধ্যযুগীয় ব্যবস্থা কায়েম করতে চায় তারা। এই মৌলবাদকে পরাস্ত করতে হবে। বি আর আম্বেদকর সতর্ক করেছিলেন যে, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যগুলি সমাধান না করা পর্যন্ত ভারতে গণতন্ত্র একটি ‘উপরি আবরণ’ হিসাবে রয়ে যাবে। ১৪০ কোটি মানুষের দেশে গণতন্ত্র তাই এখনও লাউয়ের খোসা হয়েই থেকে গেছে, তাই সমস্ত নিয়মকানুনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মোদিজি নির্বাচনের দিনেই সকাল থেকে টানা ৩-৪ ঘণ্টা প্রচার করে যেতে পারেন, ওনার গলা জলে দাঁড়িয়ে আরতি আসলে ধর্ম নয়, পুণ্য নয়, আধ্যাত্মিকতা নয়, ১০০ শতাংশ রাজনীতি।