skip to content
Sunday, February 9, 2025
HomeScrollFourth Pillar | বিরলের মধ্যে বিরলতম, কী বলছে আইন? আরজি করে কী...
Fourth Pillar

Fourth Pillar | বিরলের মধ্যে বিরলতম, কী বলছে আইন? আরজি করে কী হয়েছিল সেদিন?

ধর্মাবতার আপনিই যদি বুঝিয়ে দেন, বিরলতম আর কাকে বলে?

Follow Us :

একজনকে অন্ধকারে, নির্জনে বেকায়দাতে পেয়ে গেল এক বিকৃত মানুষ, তাকে ধর্ষণ করল, তাকে খুন করল। এমন কি কম হয়? আমরা তো জানিই যে প্রতি ৯ মিনিটে আমাদের দেশে একটা করে ধর্ষণ হয়। খুনের সংখ্যাও কম নয়, কিন্তু কথা হচ্ছে রেয়ারেস্ট অফ দ্য রেয়ার নিয়ে, বিরলের মধ্যেও বিরলতম। সেটা কীরকম? সেটা দু’দিক থেকে হতে পারে, একটা নৃশংসতার দিক থেকে, দিল্লির নির্ভয়া খুন আর ধর্ষণের বিবরণ যাঁদের মনে আছে তাঁরা জানেন যে মেয়েটিকে কেবল ধর্ষণই করা হয়নি তার যৌনাঙ্গকে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে, লোহার রড পুরে দেওয়া হয়েছে। এমনও নয় যে সেই মেয়েটিকে তারা চিনত, তাদের কোনও পুরনো রাগ ছিল, না তেমনও নয়, তারা কেবল এক বিকৃত রুচি মেটানোর জন্যই এটা করেছিল, বিচারক বলেছিলেন এটা বিরলের মধ্যে বিরলতম। আর একটা বিষয়কেও ধর্তব্যের মধ্যে আনা হয় যেখানে রক্ষকই ভক্ষক হয়ে ওঠে। যাকে দেওয়া হল রক্ষকের কাজ, যাদের ওপরে ভরসা করে সমাজ রাষ্ট্র চলে, তারাই যদি ধর্ষণ খুন করে তাহলে তা বিরলতম বইকী, বার বার আদালতে এরকম কথা বলা হয়েছে। তো এই ঘটনাতে কী হয়েছিল? সঞ্জয় আরও অনেক আছে, কিন্তু এই সঞ্জয় রায় আরও অনেক এলেমদার গুণধর। এএসআই অনুপ দত্তের সঙ্গে ছায়ার মতো থাকত, পানাহারের সঙ্গী হত আর মেজবাবুর ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদে নিজেকে পুলিশের মর্যাদায় উঠিয়ে নিতে তার বেশি সময় লাগেনি। ৬ অগাস্ট এই অনুপ দত্তের সঙ্গে এই সঞ্জয় গিয়েছিল সালুয়া, পশ্চিম মেদিনীপুরের সালুয়া, ৩ দিনের পুলিশ ওয়েলফেয়ার বোর্ডের মিটিংয়ে। রাতের বৈঠকে বলেছিল, পারেন বটে আপনারা, কী সব হ্যাজ দিচ্ছিলেন মাইরি। পুলিশ আর পাব্লিক বন্ধু, সাদা সাদা কালা কালা, হ্যা হ্যা করে হেসেছিল সবাই, মাথায় মদের গ্লাস রেখে জামাল কুদু হয়েছিল? হবে হয়তো, কিন্তু যখন হয়েছিল তখন সঞ্জয় ছিল না, ভিডিও কলে ব্যস্ত ছিল।

ওই তিনদিনেই বহু রাত পর্যন্ত মোবাইল ভর্তি নীল ছবি ছিল বলেই ওই তিন দিনের বোরিং বৈঠক, ওয়েলফেয়ার মিটিংয়ের হ্যাজ শুনেও কাটিয়ে দিয়েছিল সঞ্জয়, ৮ তারিখে ফিরেছিল কলকাতা। সেদিনও ছিল গুমোট। এসেই ওই ব্যারাকেই ব্যাগটা ছুড়ে ফেলে সোজা সোনাগাছি, তিন দিনের ক্লান্তি ঘোচাতে শরীর দরকার, কিন্তু গিয়েই কিচাইন, পছন্দের জনের দেরি হচ্ছে আর তাই নিয়ে কথা কাটাকাটি, শালা জানো আমি কে? তুলে দেব। কিন্তু যে শালাকে বলছে সেও থানায় প্রতিদিন নিয়ম করে সেলামি দিয়ে আসে, রক্ষাকবচ তারও তো আছে, খানিক কথা কাটাকাটি হওয়ার পরে হাতাহাতি, ধাক্কাধাক্কি, শালা সিভিক, বলে পুলিশ। অমন পুলিশ আমি আমার এইখানে গুঁজে রাখি, সোনাগাছির মাসির ভাষায় এরপরেও আরও অনেক বিশেষণ ছিল, আমি তার বর্ণনাতে যাচ্ছি না। আমাদের গল্পের ভিলেন ততক্ষণে রাস্তায়। ধাক্কা, চলেগা, চড়, থাপ্পড় চলেগা, কিন্তু সিভিক, মাথায় শিরায় ধমনী কোষে কোষে সে পুলিশ, তাকে সিভিক বলল। মেজবাবুও বলে না। বাপ্পার ভাইটার আজ অপারেশন না? চমকে ধমকে আর খানিক লগা মেরে অপারেশনের ডেটটা পাওয়া গেছে, যাই দেখে আসি অপারেশনটা শুরু হল কি না, সঞ্জয় চলল আরজি করের দিকে, আর এক দিন এসে দেখে নেব মাসি, আমার নাম সঞ্জয়। বিড়বিড় করছিল সে। শালা ডিপামের্ন্টটাই ভুলে মেরেছি, ওটা হার্ট ছিল? কী হয়েছিল বাপ্পার ভাইয়ের? তিন চারটে ওটির দরজার সামনে ঘোরাফেরা করে শেষমেশ ট্রমা কেয়ারে, বাপ্পা দাঁড়িয়ে। কী হয়ে গেছে? না, আজ হবে না, কী একটা নেই। সে তো শালা ভালো, একদিন জিন্দেগি বেড়ে গেল, আজই হয়তো টেবিলেই পটকে যেত। হ্যা হ্যা করে হেসে আবার বাইরে, একটু মদ দরকার, এখনও কানের পাশটা দপদপ করছে, শালা সিভিক। মদ দরকার মানে মদ হাজির, নিট মেরে দিল তিন, নাকি চার পেগ মনে নেই, স্যর পাঁচও হতে পারে। পরে পুলিশকে বলেছিল। এরপরে আবার বাইক, আবার মেয়েছেলে চাই, এবারে চেতলা, সঙ্গে বন্ধু সৌরভ। সৌরভ ঢুকে গেল, কিন্তু সঞ্জয়? না, বাইকে বসেই পুরনো বান্ধবীকে ফোন, কিরে? কী করছিস? কতক্ষণ? কল লিস্ট বলছে দেড় ঘণ্টা, মেয়েটির সঙ্গে পরিচয়? ওই আরজি কর হাসপাতালেই, সাহায্য করেছিল, তারপরে পরিচয় ঘনিষ্ঠ হওয়া। সম্পর্কে না জড়িয়েও শরীরের দেওয়া নেওয়া, এরকম কিছু একটা বোঝাতে চেয়েছিল যা এখনকার বাংলা ছবির পরিচালকদের খুউউব প্রিয় বিষয়। কিন্তু এবারে আর কথায় তো হবে না, ভিডিও অন কর, ফোন কেটে দিল ওপার থেকে, ছেনালি নয়, ভিডিও, আবার ফোন কাটা। কানের পাশটা রগের উপরে হাতুড়ি ঘা মারছে, নেশা নেমে যাচ্ছে, কী রে ভিডিও অন করবি না হলে? নাহলে কী বলার আগেই ফোন কেটে গেল। সৌরভ বেরিয়ে এসেছে, আবার বাইক চলল, কোথায় আরজি কর। এত রাতে? রাত কী বে? তোর ফুর্তি শেষ, আমার শুরু। আরজি করে ফুর্তি? হা হা করে হাসল সঞ্জয়, আর কী বলল শোনা গেল না, অন্তত সৌরভ শুনতে পায়নি, কেবল কাছে এসেই নেমে গেছে সৌরভ।

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | বাংলাদেশের নতুন সংবিধান, নতুন পথ নাকি নতুন বোতলে পুরনো মদ?

আপনারা খাওয়া দাওয়া করলেন? তারপর? তারপর ডিউটি রুমের দিকে গেলাম। আর ও? তিলোত্তমা? সে তো বই নিয়ে বসল, ল্যাপটপ খোলা ছিল। অনেকগুলো উইনডো, একটাতে অলিম্পিক্সের বোধহয়, জ্যাভলিন থ্রো। তারপর? আমরা চলে এলাম। দরজা দিল না? না। অন্য একজন বলল, দরজা দেওয়া হয় না। কে চাবি খুলেছিল, আমি জানি না স্যর, বাকি তিনজনও ঘাড় নাড়াল। আপনারা চলে এলেন। আর যাননি। না স্যর। চার ডাক্তারের সঙ্গে পুলিশকর্তার কথোপকথন, হ্যাঁ যাঁরা বলেন এনাদের জেরা করা হয়নি যে কথা ডাহা মিথ্যে। এই চারজনকে তারপর থেকে বহুবার বলতে হয়েছে, একসঙ্গে, আলদা আলাদা করে, কিন্তু প্রতিবারে তা ছিল এক, হুবহু এক। ঠিক তখন সঞ্জয় ঘুরছে, এই বিল্ডিং ওই বিল্ডিং, না, আমরা কেউ জানি না কেন? এর আগেও কি কখনও কোথাও কোনও ঘরে একলা কাউকে পেয়ে গিয়েছিল? সে বাধা দিয়েছিল কিন্তু তারপরে আর টুঁ শব্দ করেনি, এরকম হতে পারে? করেছিস? না। কিন্তু ও ঘুরছিল খানিকটা নকটারনাল জানোয়ারের মতো শিকারের খোঁজে। এবার এই বিল্ডিং, দেখা যাচ্ছে সঞ্জয় উঠছে, কাঁধে তার ইয়ারফোন, গানের জন্য নয়, ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফোনে কথা বলা তার অভ্যেস, ভিডিও চ্যাটে সবটুকু পাওয়া তার অভ্যেস, আর সেই নীল ছবিগুলো যেখানে ঠোঁট কেটে রক্ত পড়ে, নীল ছবির নায়িকা চিৎকার করে, নায়ক হাসে, চুলের গোছা ধরে দেওয়ালে ঠুকে দেয় সজোরে, নায়িকার আর্তনাদ আর নায়কের হো হো উল্লাস, এরকম ক্লিপ সঞ্জয়ের মোবাইলে ভর্তি। এমনটা যে শুধু সঞ্জয়ের মোবাইলে থাকে তাও তো নয়, অনেকের থাকে, অনেকের, অনেকেই রাতভর এই ফোনালাপ করেন, ভিডিও কলে থাকেন। কিন্তু এদিনে সঞ্জয়ের কানের পাশে তখনও দপ দপ করছে, শালা সিভিক। তিনতলা দিয়ে হেঁটে গেল। কীভাবে গেল? একটা হাসপাতালে ওই রাতে কীভাবে গেল? আপনিও যান না, কে দেখার আছে? কতজনকে দেখবে। ৭০০ বেডে ১৬০০ পেশেন্ট, পেশেন্ট পিছু একজন দেখার লোক হলেও আরও ১৬০০, কে কাকে দেখে? আর যদিও বা দেখে তাহলেও সঞ্জয়কে আটকাবে কে? শালা পেশেন্ট পার্টি এসে মেরে বদন বিগড়ে দেওয়ার আগে হাত তুলে দাঁড়িয়েছিল কোন মা কা লাল? সে তো সঞ্জয়, ডাক্তারও জানে, নার্সও জানে, তারকাটা সঞ্জয়? এরকম নাম তার ছিল না, কিন্তু সঞ্জয় মদ খায়, মেয়েদের টিটিকিরি করে, আয়া থেকে নার্স, সবাই জানে।

তারপর একটা ঘর খুলে ঢুকে গেল সে, খানিক অন্ধকার। নাকি আলো ছিল, কানের নীচে রগটাতে ব্যথা হলে কেমন যেন ধোঁয়া ধোঁয়া লাগে, শালা বিপিতে কি রাম পাঞ্চ করেছিল? মিনিট তিরিশ পরে বেরিয়ে এসেছে সে, একইভাবে নেমেছে, ওসব চার পাঁচ ছয়ে তার পা টলে না, কেবল সে খেয়াল করেনি তার ঘাড়ে ঝুলছিল ইয়ারফোনটা, সেটা আর নেই। তারপর ঘরে, মানে সেই ব্যারাকে। জামাকাপড় ছেড়ে একটা ঘুম। উঠে চা খেতে খেতে শুনেছিল লাশ মিলেছে আরজি করে। সকালে কানের নীচের দপদপানি নেই, কিন্তু আর একটু ঘুম দরকার। যখন ঢুকলি তারপর কী হয়েছিল। এতক্ষণ সব বলেছে, আবার বলতে হবে। মেয়েটা কুঁকড়ে শুয়েছিল, এসির ঠান্ডায় গায়ে চাদর? কম্বল? মনে নেই স্যর। প্রথমে চিৎকার করতে গিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছিল না, তারপর বললাম আওয়াজ করিস না আমি।। কিন্তু শালা আমাকে ধাক্কা দিল, কানের কাছটায় না, মাথাটা ঠুকে দিলাম, ওই তো ফিনফিনে শরীর, খানিকটা অচৈতন্য, তারপর আবার সমস্ত সামর্থ্য নিয়ে মেয়েটা রুখে দাঁড়িয়েছিল, আমিও, আমারও আর না শুনতে ইচ্ছে করছিল না, বেশিক্ষণ থাকিনি স্যর, রেপ করেছি, খুন করতে যাইনি স্যর, চলে আসার সময়েও মনে হয়েছে, আমাকে চিনতে পারবে না, আমি বাড়ি এসে ঘুমিয়েছি স্যর, আমি খুন করতে চাইনি স্যর। আপনারা আমাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিন স্যর। হ্যাঁ, সিভিক ভলান্টিয়ার, মানুষের কাছে এক কোট আনকোট পুলিশ এইভাবেই ধর্ষণ আর খুন করেছিল এক ডাক্তারকে, এক তরুণীকে আধ ঘুমন্ত অবস্থাতেই কাবু করে ধর্ষণ এবং খুন। রায় শোনার পর থেকে মনে হচ্ছে, এটা যদি বিরলতম না হয়, তাহলে বিরলতম কোনটা? আমরা ঠিক এই বিবরণ দিয়েছিলাম ১৭-১৮ অগাস্ট, এই অনুষ্ঠানেই, আজ এতদিন পরে বিচারকের রায় মিলিয়ে দেখুন, সবটা মিলে যাবে, কেবল রায়ের কাছে এসেই থমকে যাচ্ছি, যাবজ্জীবন না ফাঁসি তা নিয়ে নয়, বিচারক বলেছেন এটা নাকি রেয়ারেস্ট অফ দ্য রেয়ার নয়, বিরলের মধ্যে বিরলতম নয়, তাহলে ধর্মাবতার আপনিই যদি বুঝিয়ে দেন, বিরলতম আর কাকে বলে?

RELATED ARTICLES

Most Popular