skip to content
Monday, January 20, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar | সোনিয়া, মমতা, অখিলেশ রামমন্দির উদ্বোধনে যাচ্ছেন না, এতে কার...

Fourth Pillar | সোনিয়া, মমতা, অখিলেশ রামমন্দির উদ্বোধনে যাচ্ছেন না, এতে কার কতখানি ক্ষতি?

Follow Us :

এমনিতে তো ধরুন দেশের আর কোনও সমস্যাই নেই। মূল্যবৃদ্ধি, অশিক্ষা, অস্বাস্থ্য, দেশের অর্থনীতি, বাড়তে থাকা বৈষম্য বা আত্মহত্যার সংখ্যা, এসব নিয়ে তো কিছু বলার নেই বা থাকলেও এগুলো বিজেপি সরকার, নরেন্দ্র মোদি–অমিত শাহের সরকার কোনও সমস্যা বলেই মনে করেন না। আপাতত আলোচনা একটাই, রামমন্দির উদ্বোধন। দেশজুড়ে বিজেপি নেতারা ছড়িয়ে পড়েছেন, বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে, কোথাও ঘরে ঘরে চাল সংগ্রহ চলছে, কোথাও রুপোর পাদুকা পরে হাঁটছে, কোথাও যজ্ঞ হচ্ছে, কোথাও অষ্টপ্রহর সংকীর্তন হচ্ছে। এবং টিভি চ্যানেল খুললেই সেই রামলালার কাহিনি, বাবরি মসজিদের ইতিহাস, বাবরের ইতিহাস, নাকি লক্ষ হিন্দু শহীদের রক্তের বিনিময়ে গড়ে উঠেছে রামমন্দির, তার কাহিনি চলছে তো চলছেই। তার সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে কংগ্রেসের বিশ্বাসঘাতকতার কাহিনি, তারা এর আগে সোমনাথ মন্দির তৈরিতেও নাকি বাগড়া দিয়েছিল, এবারেও নাকি তারই পুনরাবৃত্তি। চ্যানেলে চ্যানেলে বিজেপি নেতারা নতুন উদ্যমে জওহরলাল নেহরুর আরেকটি ভুলের আলোচনায় নেমে পড়েছেন। দেখে শুনে একজন কংগ্রেসি প্রবীণ নেতা বললেন, মোদি সরকারের একটা জওহরলাল নেহরু দফতর থাকলে ভালো হত, সেই দফতর রোজ জওহরলাল নেহরুর ভুলগুলোকে মানুষের সামনে রাখতে পারত। তো যাই হোক, এইসব আলোচনার সঙ্গেই আলোচনা এটাও হচ্ছে যে কংগ্রেস, রাহুল সোনিয়া ভুল শুধরোনোর সুযোগ পেয়েও শুধরে নিতে পারলেন না, আবার ভুল করলেন। কী রকম ভুল?

এই যে রামমন্দিরে, এক হিন্দু পুনরুত্থানের ইতিহাস থেকে নিজেদেরকে সরিয়ে রাখলেন, এ এক হিমালয়ান ব্লান্ডার। তো আসুন আজ সেটা নিয়েই খানিক আলোচনা করা যাক, এই যে রামমন্দিরে রামের প্রাণপ্রতিষ্ঠা, যাকে রামমন্দির উদ্বোধন বলা হচ্ছে, সেখানে বিরোধীরা গেলে কী হত, যাচ্ছেন না, তাতেই বা কী হতে পারে? এমনিতে দেশের যে কোনও বাচ্চা ছেলে বা সাধারণ মানুষও জানে যে এই রামমন্দির উদ্বোধন এক রাজনৈতিক ঘটনা, পলিটিক্যাল ইভেন্ট। এরসঙ্গে ধর্মের যোগাযোগ নেই বললেই চলে, ধর্ম এখানে এক আবহ, যে আবহকে ব্যবহার করে নির্বাচনী রুটি সেঁকা হচ্ছে। গরিব মানুষজন ধারধোর করে একটা আস্তানা তৈরি করছেন মাথা গোঁজার আশ্রয় তৈরি করছেন, বাইরে প্লাস্টার হয়নি, দুটো জানলার কপাট লাগানো হয়নি, একটা ঘরে তো মেঝেও হয়নি, তাতে কী, সে ঘরে ঢুকে পড়েন, পড়েন কারণ ভাড়া বাড়ির ভাড়াটা তো বাঁচানো গেল, এটাই মাথায় ঘোরে। তারপর ধীরেসুস্থে মেঝে হয়, জানলার কপাট হয় আর বাইরের প্লাস্টার? আরও ক’ বছর যাক না। তো হিন্দু মর্যাদা পুরুষোত্তম রাম এমন কোন ভাড়ার ঘরে ছিলেন যে তাঁকে মন্দির পুরোপুরি তৈরি হওয়ার আগেই এসে এক নির্মীয়মাণ মন্দিরে ঠাঁই পেতে হল? বিজেপি তো বলেইছে অবকি বার ৪০০ পার, রাজীব গান্ধীর রেকর্ডটা ওনাদের কষ্ট দিচ্ছে তাই ওই চারশো পারের স্লোগান। তো রামের ইচ্ছেয় যদি ৪০০ পার হয়েই যায়, তারপরে বছর দুয়েক পরেও যদি মন্দির উদ্বোধন হত, তাতে ক্ষতি কী হত? আসলে ২০২৪-এর নির্বাচন আসলে এক ধর্মযুদ্ধ, ধর্মযুদ্ধ ২০২৪। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, মূল্যবৃদ্ধি, বেকারি নয়, এবারের ইস্যু ধর্ম, তার মধ্যে এই রামমন্দির। কাজেই সেই ধর্মযুদ্ধের আবহে ধর্মের বিভাজনকে আরও স্পষ্ট করে তোলার জন্য প্রধানমন্ত্রী ১০ দিন উপোস করবেন, তারপর গঙ্গায় ডুব দিয়ে, নর্মদায় স্নান শেষে খালি পায়ে মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশ করবেন। দেশের কোটি কোটি মানুষ এই ছবি লাইভ ট্রান্সমিশন দেখবে।

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | রামমন্দির উদ্বোধনে যাচ্ছে না তৃণমূল, বাম এবং কংগ্রেস। কেন?

একবার জ্বলন্ত চিতা দেখে ঝোলা উজাড় করে দিয়েছিল ভারতের ভোটার, এবার আবার দেবে। হ্যাঁ দেবে, দিতেও পারে। কিন্তু তারপর? ২০২৯-এ? অযোধ্যা নয়, মথুরা কাশী, ধরে নিলাম আবার দেবে, কিন্তু তারও পরে? কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে আমার দেশ? সে আলোচনা টিভিতে হচ্ছে? চ্যানেলে দেখছেন? না হচ্ছে না, দেখতেও পাচ্ছেন না। আপাতত অযোধ্যা, রামমন্দির এবং সেটাই ইস্যু, এক রাজনৈতিক ঘটনা ঘটছে, একটা পলিটিক্যাল ইভেন্ট আমরা দেখছি। সেই ইভেন্টে নতুন টুইস্ট হল দেশের চার শঙ্করাচার্যের মন্দির উদ্বোধনে না আসার ঘোষণা। এই ঘোষণা বিজেপি আরএসএস-এর উৎসাহ বা প্রচারে খানিক ভাটা এনেছে বটে, কিন্তু এসব ওনারা আগে থেকেই জানতেন, এগুলো হঠাৎ করে হয়নি। মুম্বইয়ে দাউদের সঙ্গে শাকিল গ্যাংয়ের লড়াইয়ের মতো এর বেশ পুরনো ইতিহাস আছে, কারণও আছে। চার শঙ্করাচার্যের সঙ্গে দেশের বাকি হিন্দু নেতা, সাধু সন্ন্যাসীদের ঝগড়া আজকের নয়, সবটাই সুপ্রিমেসি নিয়ে লড়াই। চারজন শঙ্করাচার্য তো ছিলেন, তাঁরাই তো হতে পারতেন হিন্দু পুনরুত্থানবাদের নায়ক, হলেন কে? স্বামী বিবেকানন্দ। একজন কায়স্থ, মুরগি মাছ খান, কিন্তু সেকালের গ্রাজুয়েট, ইংরিজি বলতে পারেন। সাহেবসুবোরা ওনার কাছে গিয়ে বেদ বেদান্ত নিয়ে পাঠ শুনছেন, আলোচনা করছেন, শিকাগোতে গিয়ে তো এক ডজন গোল দিলেন ভারতের বাকি সনাতন ধর্মের প্রতিনিধিদের, যে মনে হবে সেই ধর্ম সম্মেলনে ভারতবর্ষ থেকে গেছেন কেবল বিবেকানন্দ, কিন্তু তা তো সত্যি নয়। কিন্তু বহু কারণেই চার শঙ্করাচার্যের থেকে এমনকী সনাতন ধর্মের মানুষজনও বহু সন্ন্যাসীকে আপন করে নিয়েছেন, তাঁদের কাছে দীক্ষা নিয়েছেন, শিষ্য হয়েছেন। একইভাবে যখন রামমন্দির আন্দোলন শুরু হল তখন ওই শঙ্করাচার্যদের থেকেও অনেক বেশি এগিয়ে ছিলেন অন্য সন্ন্যাসীরা, আজ প্রাণপ্রতিষ্ঠার সময়ে চারজন পুরো ক্ষীর খেতে চাইলে দেবে কে? ওনারা মুখে বলছেন অসম্পূর্ণ মন্দিরে প্রাণপ্রতিষ্ঠা হয় না, আসল আপত্তির কারণ কি সেটাই? একটু কথা বললেই বোঝা যাবে, এক পিছিয়ে পড়া জাতির মানুষ গর্ভগৃহে প্রতিমা স্পর্শ করবে, সেটাই সবথেকে বড় সমস্যা ওনাদের কাছে। না হলে ওনারা হিন্দু রাষ্ট্র চান, ওনারা কাশী মথুরাতে পুরনো কাঠামো ভেঙে মন্দির তৈরি করতে চান, ওনারা ধর্মরাষ্ট্র তৈরির কথা বলেন। তার সঙ্গেই বলেন শাসকদের উপরেও থাকবে চার পীঠের শঙ্করাচার্যরা আর এখানেই বিবাদ। কাজেই শঙ্করাচার্যের উদ্বোধনে না আসা নিয়ে যাঁরা উল্লসিত তাঁদের দলে আমি নেই, আমি খুশি যে এই ইস্যুতে ওনাদের মধ্যে এ বিবাদ তৈরি হয়েছে, ব্যস এই পর্যন্ত, তার বেশি নয়। মানে যদি এই প্রশ্ন ওঠে যে যাঁরাই সেদিন উদ্বোধনে অংশগ্রহণ করছেন না তাঁরা সব্বাই আসলে হিন্দু-বিরোধী তাহলে অন্তত জিজ্ঞেস করা যাবে যে তাহলে কি চার পীঠের শঙ্করাচার্যরাও হিন্দু-বিরোধী? ব্যস এই পর্যন্ত।

থাক সে কথা, মূল আলোচনাতে ফিরি। আচ্ছা যদি সোনিয়া, রাহুল, মমতা, অখিলেশরা যেতেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে, ঢুকতেন গর্ভগৃহে? ঢুকতে দেওয়া হত যেখানে কপালে ভস্ম মেখে বসে থাকবেন দেশের প্রধানমন্ত্রী? সব্বাই জানে হত না, ওনাদের কঙ্গনা রানাওয়ত, অক্ষয় কুমারের সঙ্গে বসতে হত। মিডিয়া হেডলাইন করত, মোদিজি বিধর্মীদেরও আসতে বাধ্য করলেন। আচ্ছা সব হিসেব তো শেষপর্যন্ত ভোটের সংখ্যা নিয়ে, যদি বিরোধীরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যেতেনও, তাহলেও কি তাঁদের একটা ভোটও এক্সট্রা আসত? এই যে যাচ্ছেন না, মমতার সমর্থকরা সেই কারণে মমতাকে ভোট দেবেন না? এরকম সম্ভাবনা আছে নাকি? নেই। নেই কারণ যাঁরা বিজেপির সমর্থক তাঁরা বিজেপির ধারেই আছেন, যাঁরা বিরোধীদের তাঁরা বিরোধীদের দিকেই আছেন। কেবল এই রামমন্দির উদ্বোধনে সেই সমর্থকদের ভোটে খুব বেশি হেরফের হবে না, হলেও তা নগণ্য। সোনিয়া মমতারা মন্দির উদ্বোধনে গেলে বিজেপির কোনও সমর্থকের ভোট তাঁদের দিকে পড়বে না, আর না গেলে তাঁদের সমর্থকদের ভোট বিজেপির দিকে চলে যাবে না। তাহলে? আসলে এটা এক আবহ তৈরি করা, দেশ জুড়ে যে সামান্য অংশ হিন্দু এখনও মেরুকরণের রাজনীতিতে ভেসে যায়নি, তাদের নিজেদের দিকে নিয়ে আসার এক প্রবল চেষ্টা করছে আরএসএস–বিজেপি। এত বড় এক ইভেন্ট আসলে সেই কারণেই করা, কিছু ফ্লোটিং ভোটার আছে, যাঁদের মোদিজি বলবেন দেখো আমরা বলেছিলাম মন্দির ওহি বনায়েঙ্গে, বানালাম। ব্রাকেটে থাকবে বা বলবেন না কিন্তু উহ্য থাকলেও বুঝিয়ে দেবেন এ দেশ হিন্দুদের দেশ, এখানে হিন্দুদের নিয়ম আচরণ বিধিনিষেধ মেনেই চলতে হবে। শঙ্করাচার্যরা যাচ্ছেন না সেটা এক দিকের বিষয়, তাঁরা মুখে যা ব্যাখ্যা দিচ্ছেন দিন, আসল কারণ আগেই বলেছি সুপ্রিমেসির লড়াই। শঙ্করাচার্যরা গেলে তাঁদের অস্তিত্বে টান পড়ত, তাঁদের ইগো ভেঙে চুরমার হত। বলেই দিয়েছেন পুরী মঠের শঙ্করাচার্য, গর্ভগৃহে প্রতিমা স্পর্শ করবেন প্রধানমন্ত্রী, তিনিই যজমান, আমি কি গিয়ে হাততালি দেব? অন্যদিকে কমিউনিস্ট পার্টি যাচ্ছে না, গেলে দল ভেঙে যাবে, তাদের মূল বিশ্বাস ঘা খাবে। সীতারাম ইয়েচুরি আত্মা পরমাত্মা ইত্যাদির ব্যাখ্যা দিয়েই বরং কেলো করেছেন। আসল ব্যাপার হল এক বস্তুবাদী, নাস্তিক বিশ্বাস নিয়ে কমিউনিস্ট পার্টি সেখানে যেতেই পারে না। কিন্তু সমস্যা তো বিচ কা-দের নিয়ে। তাঁদের অনেক ভাবতে হয়েছে, অনেক মতামত নিতে হয়েছে, তাঁরা শেষমেশ বুঝেছেন, গেলে খানিক ক্ষতি আছে, না গেলে কোনও ক্ষতি নেই এবং আরএসএস-বিজেপির এক রাজনৈতিক ইভেন্টে তাঁরা যাবেনই বা কেন? তাই সম্মিলিত সিদ্ধান্ত, ওনারা যাননি। এবং সবথেকে ভালো সিদ্ধান্ত সমাজবাদী দলের অখিলেশ যাদবের, বলেছেন, ওটা রাজনৈতিক ইভেন্ট আমই যাব না, ওসব শেষ হলে দলবল মিলেই রামলালার দর্শন করতে যাব। ইন্ডিয়া জোটের সবাই এটা সিরিয়াসলি ভাবতে পারেন, উদ্বোধন হয়ে যাক, আপনারা সব্বাই মিলে আরেকটা ইভেন্ট করুন, আরেকজন দলিতকে সামনে রেখে, খাড়্গেজিকে সামনে রেখেই অযোধ্যা ঘুরে আসুন। আরএসএস–বিজেপি আরেকটু সমস্যায় পড়বে, অন্তত রাম-বিরোধী, হিন্দু-বিরোধী তকমাটাকে ভোটের জন্য হলেও সরানো যাবে।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
RG Kar Case | Reaction | আরজি কর কাণ্ডে রায়ের পর কে কী বললেন? দেখুন এই ভিডিও
03:06:07
Video thumbnail
Saline | স্যালাইন কাণ্ডের জেরে বিক্ষোভে ডাক্তাররা, উত্তপ্ত মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ, হুলস্থুল কাণ্ড!
02:25:36
Video thumbnail
BJP | NDA | বিরাট চাপে বিজেপি! ভাঙছে NDA?
10:19:41
Video thumbnail
R G Kar Case Update | দোষী সাব্যস্ত শনিবার জেলে ফিরে, কী করেছে সঞ্জয়? জানলে চমকে উঠবেন
10:08:45
Video thumbnail
Donald Trump | শপথ গ্রহণের জন‍্য ওয়াশিংটনের উদ্দেশ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প, দেখুন সেই ভিডিও
09:57:26
Video thumbnail
Mahakumbh 2025 | কী কারণে মহাকুম্ভে অ*গ্নিকাণ্ড? ঘটনাস্থলে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ
05:31:46
Video thumbnail
RG Kar | কাল সাজা ঘোষণা, সারাদিন প্রেসিডেন্সির ৬ নম্বর সেলে কী করে কাটালেন সঞ্জয়? দেখে নিন প্রতিবেদন
04:41:51
Video thumbnail
Mamata Banerjee | জেলা সফরে মুখ্যমন্ত্রী, কী কী কর্মসূচি?
01:03:50
Video thumbnail
RG Kar | Kunal Ghosh | দোষী সাব্যস্ত সঞ্জয় রায়, কী বললেন কুণাল ঘোষ?
02:02:05
Video thumbnail
RG Kar | আরজি কর কাণ্ডের রায় শিয়ালদহ কোর্টে, দেখুন সরাসরি
02:16:54