২৫ নভেম্বর কোনও দোকানে কোনও ধরনের মাংস বিক্রি করা যাবে না, সার্কুলার উত্তর প্রদেশের বিজেপি সরকারের। উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, দিল্লি, হিমাচল, উত্তরাখণ্ড, মধ্যপ্রদেশ জুড়ে নবরাত্রির সময়ে আমিষ রেস্তরাঁ খোলা থাকলে তা ভাঙা হবে বলে জানিয়েছিল বজরং দল। কেউ প্রতিবাদ করেনি, বন্ধই ছিল, এখন এটাই রেওয়াজ। আবার শ্রাবণ মাসেও বন্ধ থাকবে, পবিত্র কুঁয়ার যাত্রার সময়। দেশের সংসদে গেরুয়াধারীরা আছেন, সংসারের মায়া কাটিয়ে যাঁরা সন্ন্যাসী হলেন তাঁরা রাজনীতির মায়া কাটাতে পারছেন না। উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথ তৈরি হচ্ছেন আগামিদিনে দেশের হাল ধরার জন্য, খুল্লমখুল্লা, কোনও রাখঢাক নেই। রাজস্থানে দুই কেন্দ্রে সবথেকে বেশি ভোট পড়েছে, একটা পূর্ব রাজস্থানের তিজারা আর পশ্চিম রাজস্থানের পোখরান। এই দুই কেন্দ্রেই বিজেপির প্রার্থী দুই মহন্ত, তিজারা আসনে বাবা বালকনাথ আর পোখরানে মহন্ত প্রতাপপুরি। বাবা বালকনাথ তো প্রায় আদিত্য যোগীর কার্বন কপি, সেই তীব্র মুসলমান বিদ্বেষ, তীব্র ঘৃণা, কথায় কথায় বুলডোজার চালানোর হুমকি, এনকাউন্টারের হুমকি, এই দুই কেন্দ্রেই আদিত্য যোগী এসেছিলেন প্রচারে। একই প্রচার কর্নাটকে করেছেন প্রধানমন্ত্রী নিজে। বজরঙ্গবলীর নাম করে ইভিএম বাটন টিপতে বলেছিলেন, এবারে রাজস্থানে কানহাইয়ালালের হত্যাকারীদের ফাঁসি দেওয়ার জন্য বাটন টিপতে বললেন। জুনেইদ আর নাসিরের কথা ভুলেই গেলেন, মধ্যপ্রদেশেও একই হিন্দুত্বের প্রচার করেছেন, এবারে তেলঙ্গানাতে গিয়ে বললেন হায়দরাবাদের নাম বদলে ভাগ্যনগর করা উচিত। দিল্লির রাস্তার নাম বদলানো হয়েছে, এলাহাবাদ স্টেশনের নাম বদলানো হয়েছে, বাবরি মসজিদ ভেঙে রামমন্দির তৈরি হয়েছে, তাজমহলের নাম বদলানোর দাবি তোলা হচ্ছে। এ কোনও বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়, এক পরিকল্পিত ছক মেনেই এগোচ্ছে আরএসএস–বিজেপি। আজ নয়, স্বাধীনতার আগে থেকেই তাদের এটাই লক্ষ্য, এটাই পরিকল্পনা। যে সময়ে দেশ জুড়ে মানুষ বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন আদর্শকে সামনে রেখে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে শামিল হচ্ছেন, কমিউনিস্টরা তাদের মতো করে, ভগৎ সিং সোশ্যালিজমের কথা বলছেন, গান্ধীজি সত্যাগ্রহের কথা বলছেন, কিন্তু লড়ছেন ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে।
ঠিক তখন আরএসএস–হিন্দু মহাসভা ব্রিটিশদের সাহায্য করছে। তাদের লক্ষ্য হিন্দুরাষ্ট্র আর শত্রু মুসলমান, ইসলাম। দেশ স্বাধীন হয়েছে, দেশের অসংখ্য সমস্যা, দারিদ্র, বেকারত্ব, শিল্প গড়ে তুলতে হবে, কৃষিতে আরও উৎপাদন চাই। ওদের লক্ষ্য একটাই, সেই মুসলমান। আর আজকে যখন সারা দেশে দারিদ্র বাড়ছে, বৈষম্য বাড়ছে, বেকারত্ব রেকর্ড করেছে, মূল্যবৃদ্ধির ফলে নাজেহাল মানুষ, তখন সেই কল্পিত শত্রু মুসলমান, ইসলামকে সামনে রেখে বিজেপি-আরএসএস দেশের ক্ষমতা দখলে রাখতে চায়। অন্য কোনও লক্ষ্য নেই। কাশ্মীর সমস্যার সমাধান তারা চায় না, তারা কাশ্মীরকে ভেঙে দু’ টুকরো করে দেশের মানুষের কাছে নিজেদেরকে তীব্র মুসলমান বিরোধী হিসেবে দাঁড় করাতে চায়। সিএএ আর এনআরসি-ও সেই একই উদ্দেশ্যে। ওনারাও জানেন দেশের ১৮-১৯ শতাংশ মুসলমান মানুষজনকে দেশ থেকে বের করা সম্ভব নয়। কিন্তু তাঁদের আতঙ্কের মধ্যে রেখে, তাঁদের ভয় দেখিয়ে হিন্দু মানুষজনের কাছে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে চায় বিজেপি। এই যে নাম পরিবর্তন, কী হবে এতে? এলাহাবাদের নাম শ্রীরাম রাখলেও কি সেখানের মানুষ, প্রত্যেক মানুষ খেতে পরতে পারবেন? বিজেপিও এ প্রশ্নের উত্তর জানে, কিন্তু এগুলো করছে হিন্দু ভোটের মেরুকরণের জন্য। তাদের ফর্মুলা খুব সোজা, ৭৪ শতাংশ হিন্দু ভোটের ৭৫-৮০ শতাংশ তাদের চাই। ধর্মের ভিত্তিতে সেই মানুষেরা বিজেপিকে সমর্থন করলে ক্ষমতার পাকাপাকি দখল নেবে বিজেপি, তারা হিন্দুরাষ্ট্রের পথে এগোবে, এটাই তো পরিকল্পনা। হিটলারের কথা মনে পড়বেই, জার্মান ক্যাথলিক খ্রিস্টানের ৮০ শতাংশ তাঁর সমর্থনে, তিনি দেশের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেছেন নাস্তিক কমিউনিস্ট আর ইহুদিদের। তাদের খুন করা হচ্ছে, সাধারণ জার্মান মানুষজন দু’ হাত তুলে সমর্থন করছেন ফাসিস্ত নাজি শাসনের মাথায় বসে থাকা হিটলারকে। কিন্তু এদেশে সমস্যা দুটো, এদেশের হিন্দুরা হাজারো গোষ্ঠীতে বিভক্ত, তাদের চিন্তাভাবনা, আচার আচরণ আলাদা। তাঁরা ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের মতো মনোলিথিক, এক ধরনের আচরণ করেন না।
আরও পড়ুন: ১৬ দিন পার হয়ে গেল, কবে সুড়ঙ্গ থেকে উদ্ধার করা হবে শ্রমিকদের?
শাক্ত আছেন, শৈব আছেন আবার বৈষ্ণবও আছেন, আছেন হাজার হাজার প্রতিবাদী গুরুদের শিষ্য সমর্থকরা। আছেন বিভিন্ন গোষ্ঠীতে বিভক্ত আদিবাসীরা, আছেন শিখ মানুষজন, আছেন ভগবানের অস্তিত্বই স্বীকার করেন না তেমন বৌদ্ধ, জৈন ধর্মের মানুষ। কাজেই এই পুরো জনসংখ্যাকে এক ব্র্যাকেটে ফেলে হিন্দু বলে দিলেও ওই ৭৪-৭৫ শতাংশ মানুষের ৫০ শতাংশের সমর্থন জোগাতেও বহু ঘাম ঝরেছে। মানে দেশের ৩৬-৩৭ শতাংশ ভোট সিকিওর করতে পেরেছে বিজেপি, তার উপরে উঠতে পারছে না। কাজেই জনসভা থেকে দেশের প্রধানমন্ত্রীকেই বিষ ছড়ানোর কাজে নেমে পড়তে হয়েছে। উনি মঞ্চ থেকেই লুঙ্গি টুপি দেখেই মুসলমান চিহ্নিত করতে পারেন, হিমালয়ের গুহায় দেড়শো ক্যামেরার সামনে একাগ্র চিত্তে ধ্যান করতে পারেন, ৪৮টা অনলাইন ক্যামেরা নিয়ে বেনারসের গঙ্গাজলে ডুব দিতে পারেন, শিবের মাথায় দুধ ঢালতে পারেন আর এসব করে আসলে সেই হিন্দু ভোট মেরুকরণের দায়িত্ব এখন তাঁর। সেই কর্মসূচি মেনেই হায়দরাবাদের নাম ভাগ্যনগর করার কথা তিনি বলেছেন, এবং বোঝাই যাচ্ছে আগামী লোকসভার নির্বাচনের প্রচারের অভিমুখ কোনদিকে হবে। কিন্তু এগুলো নতুন কিছুই নয়, আরএসএস–বিজেপির তো এটাই করার কথা, সেটাই তারা করছে। শুরু থেকেই সব্বাই জানে এক হল কড়া ডোজের হিন্দুত্ব আর দু’ নম্বর হাতিয়ার জঙ্গি জাতীয়তাবাদ। দুটোরই মহড়া শুরু হয়ে গেছে ২০২৪-এর জন্য। নতুন যেটা সেটা হল রাজ্যে রাজ্যে মুসলমান ভোট কাটুয়াদের জড়ো করা, তার এক মাস্টার প্ল্যানও রেডি। তেলঙ্গানায় কেসিআর কোনওভাবে সরকার তৈরি করলে বিজেপি তাকে সমর্থন দেবে। রাজস্থানে বিএসপি আর বেনিওয়ালের সমর্থনের জন্য তারা লড়ছে। কর্নাটকে দেবেগৌড়ার সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। ইউপিতে যাবতীয় ছোট দলের সঙ্গে যোগাযোগ আছে কিন্তু গোটা কাউ বেল্ট জুড়ে বিজেপির ভরসা আসাদুদ্দিন ওয়েইসি, মহারাষ্ট্র, দিল্লি, ইউপি, বিহারে বহু আসনে প্রার্থী দাঁড় করাবে এই দল এবং মুসলমান ভোটের এক অংশ তারা নেবে। ধর্মের নাম করেই নেবে, যার ফলে বিজেপি প্রার্থীদের সুবিধে হবে। এ বাংলায় আসাদুদ্দিন ওয়েইসিকে আনার পরিকল্পনা ছিল কিন্তু বাঙালি মুসলমানদের কাছে আসাদুদ্দিনের কোনও আকর্ষণ নেই তাই তাদের প্ল্যান বি এখানে আব্বাস সিদ্দিকি আর নওসাদ সিদ্দিকি। দক্ষিণবঙ্গে যে যে পকেটে মুসলমানদের ভোট বেশি সেখানে এখন থেকেই এদেরকে সক্রিয় করা হয়েছে। যাবতীয় সাহায্যের ব্যবস্থা হয়েছে, মুসলমান ভোটের ৭/৮/১০ শতাংশও যদি কেটে নিতে পারে, তাহলে বিজেপির হিসেব বলছে কম করে ১২-১৪টা আসন চলে আসবে বিজেপির খাতায়, এটাই ছক। এখানে হিন্দু পোলারাইজেশনের চেষ্টায় খুব একটা লাভ হয়নি কিন্তু যে বিজেপি বিরোধী এককাট্টা মুসলমান ভোটের উপর ভর করে তৃণমূলের জয়, সেই মুসলমান ভোটকে ভাগ করে দেওয়ার পরিকল্পনা পাকা। তার জন্য বেশ কিছু আড়কাঠি দিল্লিতে গিয়ে বৈঠক করেছে, তাদের আসন ইত্যাদি বোঝানো হয়েছে, রিসোর্স মানে টাকাপয়সার জোগান রেডি। ডিসেম্বরের ৮-১০ তারিখ থেকেই এইরকমভাবে চিহ্নিত ২৫-২৮টা আসনে ঝাঁপাবে ভোট কাটুয়াদের দল।
এই তথাকথিত ইসলামের মসিহাদের ধারণাও নেই কাদের হয়ে তাঁরা খেলতে নামছেন, কাদের দাবার ঘুঁটি হয়ে দেশের কতবড় ক্ষতি করতে চলেছেন। মুখে ইসলামের কথা বলে আদতে সংখ্যালঘু ভোট কেটে কোন হিন্দুত্ববাদীদের ওনারা সাহায্য করছেন, হয় সেটা তাঁরা জানেন না, বোঝেন না। আর না হলে এক বিশাল বিনিময় মূল্যের বদলে এই ভোট কাটার কাজে তাঁরা সম্মতি দিয়েছেন। কিন্তু সমস্যা তো আরও গভীরে, এই অবস্থা তৈরি হল কেন? কীভাবে? দেশ স্বাধীন হল, দেশভাগ হল। হিন্দু জনসংখ্যার কাছে অপশন ছিল না, মুসলমানদের কাছে ছিল। ছিল কিন্তু তাদের এক বিরাট অংশ ভারতবর্ষেই থেকে গিয়েছিল, তারা পাকিস্তান মেনে নেয়নি। তারা গান্ধী-নেহরুকেই তাদের নেতা বলে মনে করেছিল, জিন্নাকে নয়। মজার কথা হল, আবুল কালাম আজাদ, ডঃ জাকির হোসেন, ফকিরুদ্দিন আলি আহমেদের মতো বড় নেতারা থাকলেও এদেশে থেকে যাওয়া মুসলমানরা, গান্ধী-নেহরুকে তাদের অনেক কাছের নেতা হিসেবেই মনে করেছিল। কংগ্রেসকেই তাদের দল হিসেবে মনে করেছিল। এবং ৫২ সাল থেকেই মুসলিম ভোট ছিল কংগ্রেসের জন্য বরাদ্দ। ক্রমশ এই মুসলিম ভোট হয়ে ওঠে কংগ্রেসের ভোটব্যাঙ্ক, কংগ্রেস চলতে থাকে মুসলমান সম্প্রদায়ের কিছু কাঠমোল্লা, ইমামদের নির্দেশে। মুসলমান জনসংখ্যার মধ্যে শিক্ষা, তাদের স্বাস্থ্য, তাদের বাসস্থান নিয়ে কংগ্রেসের খুব বেশি চিন্তা ছিল না। দুর্ভাগ্যজনকভাবেই, মুসলিমদের মধ্যে একটা পেরিয়ার, একজন রামমোহন, একজন বিদ্যাসাগর এলেন না যাঁরা এলেনও বা তাঁদের আম মুসলমানেরা মেনে নিলেন না। অতএব মুসলমান জনসংখ্যা হয়ে উঠল মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক, আর কাঠমোল্লা মৌলবাদী কিছু মানুষ, কিছু ইমামেরা রইলেন ফতোয়া দেওয়ার জন্য, বিনিময়ে রাজ-অনুগ্রহ। নির্বাচনের আগে মুসলমান জনসংখ্যাকে ফতোয়া দেওয়া হত। ব্যস, মোটামুটি ১৯ শতাংশ মুসলমান জনসংখ্যা তা মেনেই ভোট দিতেন। কংগ্রেসই ছিল তাদের ভরসার জায়গা, আর কংগ্রেসের কাছে এই ভোটব্যাঙ্ক ছিল তুরুপের তাস, এ খেলা কমবেশি ৭৪-৭৫ পর্যন্ত চলেছিল। এরপর নসবন্দি, তুর্কমান গেটে বুলডোজার চালানো, পরপর কিছু ঘটনায় কংগ্রেসের কাছ থেকে সমর্থন তুলে নেন ইমাম, শাহি ইমামের দল।
ঠিক এই সময় থেকে মুসলমান ভোটের ওপর কংগ্রেসের মৌরসিপাট্টার অবসান। সে ভোট চলে যায় জনতা দলের কাছে, মাথায় রাখুন ৭৭-এ ভোটের আগে শাহি ইমামের ফতোয়া। এরপর জনতা সরকার, কিছুদিন পরে মুসলিম ভোট আবার কংগ্রেসের কাছে, তারপরেই ইন্দিরা গান্ধী হত্যা, রাজীব গান্ধীর ক্ষমতায় আসা, শাহ বানু মামলা নিয়ে গড়িমসি, এবং শেষমেশ রামমন্দিরের দরজা খুলে দেওয়া। বিজেপির উত্থানের সঙ্গে সঙ্গেই, মুসলিম ভোট চিরকালের জন্যই কংগ্রেসের থেকে দূরে চলে গেল। এবার রামমন্দির, মণ্ডল, কমণ্ডলের অলক্ষে মুসলিম ভোট আরও জমাট হতে শুরু করল। যত বাড়তে থাকল বিজেপি আরএসএস, ততটাই ঘেটোর মধ্যে ঢুকে যেতে থাকল মুসলমান জনসংখ্যা। এখন তাদের ভোট ইউপিতে মুলায়মের দিকে, বিহারে লালুর দিকে, বাংলায় বামফ্রন্টের দিকে, পরে তৃণমূলের দিকে, অসমে অগপ-এর দিকে, মানে যেখানে বিজেপি বিরোধী অকংগ্রেসি শক্তি আছে তাদের দিকে, যেখানে অকংগ্রেসি শক্তি দুর্বল, সেখানে অগত্যা কংগ্রেসের দিকে। গুজরাতে মুসলমান ভোট কংগ্রেসেই যায়, এখনও। এবং মজার কথা হল, তাদের ভোট যায় কিন্তু হিন্দু নেতাদের দিকেই। সারা ভারতে ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ ছাড়া মুসলমান সম্প্রদায়ের কোনও দল ছিল না, এবং এইআইইউএমএল কেরলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ, বাকি সব জায়গায় মুসলিম ভোট যায় লালুর দিকে, মুলায়মের দিকে, জ্যোতি বসু, পরে মমতা ব্যানার্জির দিকে, জগন রেড্ডির দিকে, কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের দিকে। মোদ্দা কথা যে যেখানে বিজেপিকে আটকাতে পারবে, তাদের কাছে মুঠো ভরা মুসলমান ভোট। এবং এই দল, তাদের নেতারাও ধরেই নিয়েছেন, মুসলমান ভোট তো বাপের সম্পত্তি, সে আর যাবে কোথায়, সে তো রাখাই আছে। ওদিকে বিজেপির তীব্র মুসলিম বিরোধিতা। আদালতের এক অদ্ভুত রায় এল, মসজিদ ভাঙা অন্যায় কিন্তু জমি রাম জন্মভূমি ন্যাসকেই দেওয়া হল। সারা দেশের সেকুলার নেতারা, ওই আদালত যা বলেছে তা তো মেনে নিতেই হবে, কিন্তু ইয়ে, ইত্যাদি, প্রভৃতি, হেঁচকি ঢেঁকুর গিলে মেনে নিলেন। মাথায় অঙ্ক ঘুরছে হিন্দু ভোট না চলে যায়, মুসলমান ভোট তো আছেই। ঠিক এই পরিস্থিতিটাই চাইছিল বিজেপি। এই পটভূমিতেই অল ইন্ডিয়া মজলিসে ইত্তেহাদুল মুসলিমিন এর উত্থান, বাংলায় আব্বাস সিদ্দিকি, নওসাদ সিদ্দিকিদের উত্থান। অর্থাৎ স্বাধীনতার এত বছর পরে মুসলমান জনসংখ্যা, এবার তাদের নিজেদের সম্প্রদায় থেকে নেতা নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে। এতদিন তারা দেশের হিন্দু ‘সেকুলার’ নেতাদের উপর নির্ভর করেছিল, এতদিন তারা অকংগ্রেসি হিন্দু নেতাদের কাছেই ভরসা পেতে চাইছিল। এতদিন পরে তারা তাদের নিজেদের সম্প্রদায়ের নেতাকে খুঁজে পেতে চাইছে, কারণ অন্যদিকে বিজেপির তীব্র হিন্দুত্ব, আরও তীব্র মুসলমান বিরোধিতা, দেশের ১৯ শতাংশ মানুষকে সত্যিই এবার মেরুকরণে নামিয়ে দিল। একধারের স্লোগান হিন্দু খতরে মে হ্যায়, অন্যধারের স্লোগান মুসলমান খতরে মে হ্যায়, বিজেপি সফল। ২০২৪-এ বিজেপির এটাই গেমপ্ল্যান।