Thursday, July 3, 2025
HomeScrollFourth Pillar | এদেশ আদানির, এদেশ আম্বানির, মোদিজি কেবল চৌকিদার
Fourth Pillar

Fourth Pillar | এদেশ আদানির, এদেশ আম্বানির, মোদিজি কেবল চৌকিদার

মুকেশ আম্বানির ৩৬৮০ কোটি ডলার বেড়ে হয়েছে ৮৫৫০ কোটি ডলার

Follow Us :

আপনার পাড়ায় কারও বাড়িতে বিএমডব্লু আসে, আপনি কর গোনেন, তাদের ক’টা গাড়ি আছে, অবাক হন। কিন্তু অবাক হন না এই খবর জেনে যে আমার আপনার দেশে ধনকুবেরের সংখ্যার শেষ হিসেবে ভারত আরও কুলীন হয়েছে। ভারতে ১ মিলিয়ন ইউএস ডলার, মানে কমবেশি ৯ কোটি টাকার বেশি সম্পত্তি রয়েছে এমন মানুষজনের সংখ্যা এই মুহূর্তে ৮৫,৬৯৮। সম্পত্তি উপদেষ্টা সংস্থা নাইট ফ্র্যাঙ্কের রিপোর্ট অনুযায়ী, মিলিয়নেয়ারদের তালিকায় ইউএস, চীন ও জাপানের পরে চার নম্বরে ভারতের স্থান। ভারত আবার জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে। ১৪০ কোটি মানুষের প্রায় ৮৬ হাজার মানুষের ৯ কোটি টাকা বা তার বেশি সম্পদ আছে। ওই রিপোর্টের হিসেব বলছে, ২০২৪ সালে বিশ্বে মিলিয়নেয়ারের সংখ্যা ৪.৪ শতাংশ বেড়ে ২.৩ মিলিয়ন ছাড়িয়ে গিয়েছে। অন্য দিকে, ১০০ মিলিয়ন ইউএস ডলারের বেশি সম্পত্তি রয়েছে এমন বিলিয়নেয়ারের সংখ্যা গোটা বিশ্বে এই প্রথম ১ লক্ষের গণ্ডি পেরিয়ে গেছে। বুধবারই বেরিয়েছে নাইট ফ্র্যাঙ্ক ইন্ডিয়ার ‘দ্য ওয়েল্থ রিপোর্ট ২০২৫’ যা বলছে ভারতের এই বিরাট অগ্রগতির কথা, ২০২৪ সালে ভারতে মিলিয়নেয়ারের সংখ্যা ছিল ৮৫,৬৯৮। যা ২০২৩ সালে ৮০,৬৮৬ ছিল। ২০২৮ সালের মধ্যে ভারতে মিলিয়নেয়ারের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ৯৩,৭৫৩-তে, এটাও এই রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে। বলা হয়েছে ভারতের এক শক্তিশালী দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক উন্নয়ন, বিশাল লগ্নির সুযোগ বৃদ্ধি আর লাক্সারি গুডস, বিলাস দ্রব্যের বাজারের বিকাশ বিশ্বে সম্পদ সৃষ্টিতে ভারতকে একটি অন্যতম প্রধান দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করছে।

ভাবা যায়, ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি আর মিলিওনিয়ারের গিনতিতে চার নম্বরে। কেবল কি মিলিওনিয়ার? ২০২৪ সালে ভারতে বিলিয়নেয়ারের সংখ্যাতেও বিরাট বৃদ্ধি হয়েছে। নাইট ফ্র্যাঙ্ক ইন্ডিয়ার রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘ভারত এখন ১৯১ জন বিলিয়নেয়ারের দেশ। গত বছর এই তালিকাতে ২৬ জন নতুন যোগ করেছে ভারত আমার ভারতবর্ষ। ২০১৯ সালে ভারতে বিলিয়নেয়ারের সংখ্যা ছিল মাত্র ৭। বৃদ্ধির হার ভাবুন একবার। আর সেই বিলিয়নেয়ারদের মোট সম্পত্তির মূল্য ৯৫০ বিলিয়ন ইউএস ডলার, যা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম। বিলিয়নেয়ারদের সম্মিলিত সম্পত্তির নিরিখে তালিকায় ১ নম্বরে ইউএস (৫.৭ ট্রিলিয়ন ইউএস ডলার) ও দু’নম্বরে চিন (১.৩৪ ট্রিলিয়ন ইউএস ডলার)। মোদ্দা কথা হল দেশের অর্থনীতি তিন নম্বরে, বিলিয়নিয়ারের সংখ্যায় তিন নম্বরে, মিলিওনিয়ারের হিসেবে চার নম্বরে আর মাথাপিছু আয়ের হিসেবে কোথায়? ১৪৩-এ। হ্যাঁ ১৯৪টা দেশের মধ্যে মাথাপিছু আয়ের হিসেবে আমরা ১৪৩ নম্বরে। কী মজার খেলা। দেশের অর্থনীতি বাড়ছে, দেশের মিলিওনিয়ার, বিলিওনিয়ারদের সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় কমছে। না, এটা ম্যাজিক নয়, যে কারণে ওই মিলিওনিয়ার বিলিওনিয়ারদের সংখ্যা বাড়ছে, ঠিক সেই কারণেই মাথাপিছু আয় কমছে। কারণ গরিব আরও অনেক বেশি গরিব হওয়ার শর্তেই বড়লোক আরও বড়লোক হয়।

গৌতম আদানির ২০২০-তে সম্পদ ছিল ৮৯০ কোটি ডলার, এক বছরের মধ্যে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৫০৫০ কোটি ডলারে, কোন ম্যাজিকে? মুকেশ আম্বানির ৩৬৮০ কোটি ডলার বেড়ে হয়েছে ৮৫৫০ কোটি ডলার, কোন সময়ে? যখন আমি আপনি লকডাউনের মধ্যে ঘরে বন্দি। কোন জাদুবলে? কাদের প্রত্যক্ষ সহায়তায়? ওই অতিমারির ভেতরেই, দেশের স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় কমেছে ১০ শতাংশ, শিক্ষা খাতে ব্যয় কমেছে ৬ শতাংশ, সামাজিক সুরক্ষা খাতে ব্যয় হয়েছে মোট ব্যায়ের ০.৬ শতাংশ সম্পদ। কেন? আর এগুলো করার জন্য কি আকুলি বিকুলি, ২৪ কোটি টাকার গাড়ি কিনে ফেলেছেন, প্রধানমন্ত্রী, যাদের জন্য তিনি ২৪ ঘণ্টা কাজ করেন, তাদের কেউ যেন তাঁকে মেরে না ফেলে, তাঁর জন্য তাঁর সুরক্ষা খাতে প্রতিদিন ব্যয় হয় ১.৬৩ কোটি টাকা, সেই প্রধানমন্ত্রী গঙ্গাজলে ডুব দিয়ে মানুষের উপকার করার কথা বলছেন। এমএলএ-এমপিরা টিকিট না পেয়ে হাউ হাউ করে কাঁদছে, কাঁদে, আমরা দেখেছি। দেশের সাংসদদের ৭০ শতাংশ কোটিপতি। দেশের মিডিয়া, দেশের প্রতিটা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, দেশের আমলা, পুলিশ, প্রশাসন, দেশের প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের মুখে একই কথা, দলিত পিছড়ে বর্গ, গরিব মানুষের উন্নয়ন, অথচ প্রতিটা বছরের শেষে সম্পদ গিয়ে জমা হচ্ছে তাদেরই ঘরে, তাদের ব্যাঙ্কে উপচে পড়ছে টাকা, এই বৈষম্যের শেষ কোথায়? বিশ্বের দুই বৃহৎ গণতন্ত্রের দুই শীর্ষ নেতা যখন পরস্পরের সঙ্গে কথা বলেন, তখন সেই আলোচনায় কোনও ব্যক্তিবিশেষের প্রসঙ্গ আসে না— ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাশে দাঁড়িয়ে কথাটি বলেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | সেদিন যাদবপুরে ঠিক কী হয়েছিল? কেন হয়েছিল?

কিন্তু আদত বাস্তব তো তাই নয়, দেদার লুঠমার চলছে দেশের মধ্যে আর দেশের প্রায় সবটাই বেচে দেওয়া হয়েছে হাতেগোনা মুষ্টিমেয় কিছু ব্যবসায়ীকে, প্রধানমন্ত্রী সেই সম্পদের পাহারাদার মাত্র। তাই প্রধানমন্ত্রী যা-ই বলুন, আদানির প্রশ্নটি নিতান্ত ব্যক্তিবিশেষের নয়— তার সঙ্গে ভারতীয় অর্থব্যবস্থার অভ্যন্তরীণ প্রশাসন, দুর্নীতি ইত্যাদি অনেকগুলি বিষয় জড়িয়ে আছে; এবং তা জড়িয়েছে আন্তর্জাতিক পুঁজির বাজারের সুতোয়। সংবাদসূত্রে যা যা বেরিয়েছে, সেটাই বলি? ২০১৪ সালে গৌতম আদানির মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ৫০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি; ২০২২ সালে সেই সম্পদের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াল ১২,১০০ কোটি ডলারে। ২০১৪ সালে তিনি ধনীতম ভারতীয়দের তালিকায় দশম স্থানে ছিলেন, ২০২২-এ স্বল্প সময়ের জন্য হলেও বিশ্বের দ্বিতীয় ধনীতম ব্যক্তির মুকুট পরেছিলেন। আর আদানির উত্থানের সঙ্গে মোদির প্রধানমন্ত্রিত্বের সময়ের হিসেব ধরবেন না? এটা কেবল সমাপতন? সব এমনি এমনিই হয়েছে? মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর যে সমস্ত দেশে সফরে গিয়েছিলেন, তার প্রতিটাতেই নিয়ম করে দেখা গিয়েছিল আদানিকে। কেন? সে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভা অথবা ২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়ায় জি২০ বৈঠক, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা বা অস্ট্রেলিয়া বা ফ্রান্স প্রত্যেক সফরে আদানিকে দেখা গিয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর পাশেই। এবং বচ্চে লোগ হাততালি বাজাও, প্রধানমন্ত্রীর দফতর জানাচ্ছে কোনও সফরেই সরকারি প্রতিনিধি তালিকায় আদানি ছিলেন না। স্বাধীন দুনিয়ার স্বাধীন নাগরিক হিসাবে নাকি যে কোনও জায়গায় যাওয়ার অধিকার তাঁর ছিল এবং আছে। কিন্তু তিনি কেন আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীকে ফলো করছেন? নাকি উল্টোটাই সত্যি তিনি যেখানে যেতে চাইছেন, সেখানেই যাচ্ছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী?

যে ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে ঘুষ দেওয়া থেকে শেয়ার বাজারে জালিয়াতির মতো হরেক অনিয়মের অভিযোগ উঠেই চলেছে, তাঁর সঙ্গে বারে বারেই প্রধানমন্ত্রীর নামটি জড়িয়ে ফেলার হক কি আদানি নিজেই নিয়েছেন? নাকি তাঁকে সেই হক দেওয়া হয়েছে? যদি শেষেরটাই হয়, তাহলে বিনিময় মূল্যটা কী? কী বা এমন বাধ্যবাধকতা আছে যে, নিতান্ত এক ব্যক্তিবিশেষের থেকে প্রধানমন্ত্রী নিজের নামটিকে কিছুতেই বিচ্যুত করতে পারেন না? ২০১৭-তে প্রশ্ন উঠল এয়ারপোর্ট দেখরেখের জন্য মাত্র দুটো কোম্পানি কেন থাকবে? আরও ব্যক্তিগত মালিকানাধীন কোম্পানিও আসুক, ডুয়োপলি তো কাজের কথা নয়। অতএব মোদি সরকার আসার পরে অন্য কোম্পানিদের কাছ থেকেও বিনিয়োগ চাওয়া হল। আটটা এয়ারপোর্ট নিয়ে কথা শুরু হল। তারমধ্যে ৬টা চলে গেল আদানি গ্রুপের কাছে, লখনউ, জয়পুর, আমেদাবাদ, গুয়াহাটি, ম্যাঙ্গালুরু, তিরুবনন্তপুরম। গুজরাটে রাজকোট গ্রিনফিল্ড এয়ারপোর্ট গেল রিলায়েন্সের কাছে, নভি মুম্বই তো ছিলই জিভিকে-র কাছে। মানে এবার ব্যবসাতে ঢুকলেন আদানি আর আম্বানি। মানে আপাতত এদেশে মুক্ত বাণিজ্য মানে আদানি আর আম্বানির এন্ট্রি। ছ’খানা এয়ারপোর্টের দেখরেখের যে টেন্ডার বের হল সেখানে আদানি সবচেয়ে বড় বিডার, মানে সব থেকে বেশি পয়সা দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, অতএব তারাই দেখরেখের ভার পেয়েছে। এখন এ ধরনের টেন্ডারে কি কেবলমাত্র যাত্রীপিছু বেশি টাকা দেওয়াটাই বা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি করাটাই একমাত্র শর্ত? একটাই ক্রাইটেরিয়া? যাত্রীপিছু জিভিকে ৬৫ দেবে বলেছে, আদানি ১০০ দেবে বলেছে, অতএব এয়ারপোর্ট তার। এরকম তো হতে পারে না। তাদের এরকম কাজ করার সামর্থ্য আছে কি না, তাদের এরকম কাজের অভিজ্ঞতা আছে কি না, এসবও তো দেখা হয়।

মাঠে আদানি আর তাঁর কোম্পানি Adani Airport Holdings Limited is a Public incorporated on 02 August 2019. It is classified as Non-govt company and is registered at Registrar of Companies, Ahmedabad. Its authorized share capital is Rs. 100,000,000 and its paid up capital is Rs. 100,000. রেজিস্টারার অফ কোম্পানিস থেকে এই তথ্য পাওয়া গেল। ২০১৯-এ অগাস্ট মাসে এই কোম্পানি তৈরি হয়েছে, আমেদাবাদে নথিভুক্ত হয়েছে। ডিরেক্টররা হলেন Jugeshinder Singh, Karan Gautam Adani, Malay Ramesh Mahadevia, এর মধ্যে করণ আদানি হলেন chief executive officer of Adani Ports & SEZ Limited, মানে কোম্পানি তৈরি হল, এয়ারপোর্ট পেয়ে গেল। ২০১৯-এ কোম্পানি তৈরি হল, একবছর যেতে না যেতেই তারা দেশের মুম্বই সমেত সাতটা এয়ারপোর্টের দখলদার, তারাই দেখরেখ করবে। একবার ভাবুন সরকারের সঙ্গে কতটা গভীর যোগাযোগ থাকলে এটা জানা যায় যে বিমানবন্দর নিলামে তোলা হবে, খবর পেয়ে, তবেই তো আদানি নতুন কোম্পানি করল? তাই না? ওদিকে মোদিজি চিল চিৎকার করছিলেন, না খাউঙ্গা, না খানে দুঙ্গা। তাই নাকি? তাহলে এটা কী? আসলে দেশ তুলে দেওয়া হচ্ছে ফড়েদের হাতে, আর চৌকিদার ঠিকই বলেছিলেন, তিনি সেই ফড়েদের চৌকিদারিই করে চলেছেন।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Good Morning Kolkata | সকালের গুরুত্বপূর্ণ খবর, দেখুন একনজরে সরাসরি
00:00
Video thumbnail
Ali Khamenei | খামেনিকে মা/রা অসম্ভব কেন? দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
00:00
Video thumbnail
Sukanta Majumdar | Samik Bhattacharya | সভাপতি হলেন শমীক, কী বললেন সুকান্ত?
00:00
Video thumbnail
Iran-Israel | ইরানের তথ্য পাচার করছিল এই জুটি, কী সিদ্ধান্ত খামেনির? কী করবে ইজরায়েল?
00:00
Video thumbnail
Alifa Ahmed | বিধানসভায় শপথ গ্রহণ আলিফার, দেখুন এই ভিডিও
00:00
Video thumbnail
Kasba Incident | কোন ফাঁদে গ্রেফতার মনোজিৎ? দেখুন চাঞ্চল্যকর ভিডিও
03:21:36
Video thumbnail
Hooligaanism | Melar Gaan | হুলিগানইজমে- এ টুপির রহস্যটা কি ?
01:38
Video thumbnail
Ali Khamenei | খামেনিকে মা/রা অসম্ভব কেন? দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
11:21:55
Video thumbnail
BJP Koustav Bagchi | হাসপাতালে ঢুকে চিকিৎসকদের শা/সা/নি কাঠগড়ায় কৌস্তভ বাগচি
11:20:51
Video thumbnail
Samik Bhattacharya | বিজেপির রাজ্য সভাপতি হলেন শমীক ভট্টাচার্য
11:16:46

Deprecated: Automatic conversion of false to array is deprecated in /var/www/ktv/wp-content/themes/techinfer-child/functions.php on line 39