যেমনটা রোজ করে থাকি, একটা বিষয়ের অবতারণা আর সেই বিষয়কে নিয়ে অন্তত দুটো ভিন্ন মতামতকে এনে হাজির করা, যাতে করে আপনারা আপনার মতটাকে শানিয়ে নিতেই পারেন আবার আপনার বিরুদ্ধ মতটাকেও শুনে নিতে পারেন। আজ বিষয় ট্রাম্প বিশ্ব মানবতার শত্রু।
বুধবার ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনের ভাষণ দিচ্ছিলেন, তো তেনার সেই বক্তব্য ছড়িয়ে পড়েছে দেশে বিদেশে। ট্রাম্প সাহেব বলেছেন, ‘‘আমাদের লক্ষ্য আমেরিকাকে ফের ধনী বানানো। অন্য বিভিন্ন দেশ আমেরিকার পণ্যে চড়া হারে শুল্ক বসাচ্ছে। এখন আমেরিকাও এই দেশগুলির পণ্য আমদানিতে শুল্ক বসাবে চড়া হারে।’’ কেবল চীন নয়, আমেরিকার পণ্য শুল্কের হার বেশি রাখার দায়ে অন্য দেশগুলির সঙ্গে জুড়েছেন ভারতকেও। ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন ২ এপ্রিল থেকে চীন, ভারতের মতো দেশগুলির আমদানিতে বাড়তি হারে শুল্ক নেওয়া শুরু হবে। এর কোনও কথাই নতুন নয়, তিনি আবার জিতে আসার পর থেকেই বুঝতেই পারছেন যে ভাঁড়ে মা ভবানী। এদিকে নির্বাচনের সময় থেকেই মাগা মাগা বলে চেঁচাচ্ছিলেন, যাঁরা সেই মাগা জানেন না তাঁদের জন্য বলি, মেক আমেরিকা গ্রেট এগেন। মানে বাইডেনের ৫ বছরে আমেরিকার অর্থনীতি ধসে গেছে, মূল্যবৃদ্ধি, পে কাট, ছাঁটাই এসবের বিরুদ্ধে আবার আমেরিকাকে মহান করে তুলতে হবে, মানে ৫ বছর আগে তাঁর জমানায় ফিরে যেতে হবে। তো আমাদের মোদিজি তো শিশু ভোলানাথ, এমন কিছু শুনলেই তাঁর মন উদ্বেলিত হয়। তিনি ওই ট্রাম্প সাহেবের সামনেই হেঁ হেঁ করতে করতেই স্লোগান দিলেন মেক ইন্ডিয়া গ্রেট এগেন, মিগা, মিগা। এদিকে গত ১০ বছর ধরেই যে তিনিই গদিতে আছেন তা আর তেনার মনেই নেই। তো সে কথা থাক, দেশের লোকদের কাছে এক প্রকৃত বেওসাদার হতে চেয়ে ট্রাম্প সাহেব ফালতু খরচ বন্ধ করছেন, দুনিয়ার অবিকশিত, বা উন্নয়নশীল দেশে এমনি এমনি নয়, নজরদারির জন্যই এক ধরনের অনুদান দিত আমেরিকা, বদলে সে সব দেশের ওপরে নজরদারি রাখত। সেই টাকায় তাঁদের দালাল পোষাও হত, সেসব বাতিল করেছেন ট্রাম্প, এবং জানিয়েছেন যে শুল্ক সমান হবে, তাঁর দেশের পড়ে থাকা খনিজ সম্পদ বা সারি দিয়ে পড়ে থাকা যুদ্ধবিমান বা অস্ত্রের উপরে যে শুল্ক বসানো হবে, সেই শুল্কই বসবে অন্য দেশের রফতানি হয়ে আসা সামগ্রীর উপরে। এতে ঠিক কী হবে জানা নেই কিন্তু তিনি এটা বলেছেন, বলছেন। এই কথাগুলো বলার মধ্যে এক ধরনের নাটকীয়তা আছে বটে, কিন্তু এগুলো যে পুরোদস্তুর অন্যায্য, তাও তো বলা যাবে না, তিনি তাঁর দেশের আমদানি বা রফতানি শুল্ক নিয়ে কথা বলতেইও পারেন, বলছেন। তিনি তাঁর দেশে নতুন চাকরি দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন, কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে বিরাট ছাঁটাই তো সরকারি দফতরেই শুরু হয়ে গেছে, মানুষ রাস্তায় প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, সারা দেশেই। কিন্তু এটাও তো তাঁর ছাগল, তিনি ল্যাজে কাটবেন না মাথায় কাটবেন সে তো তাঁর ব্যাপার।
আরও পড়ুন: অদিতির সঙ্গে সাদা কালো | আনন্দ আর বিষণ্ণতার এই শহরে
এবারে আসুন ওই উন্মাদের অন্য কথাগুলো, কাজগুলো দেখা যাক। তিনি এসেই জানিয়ে দিয়েছেন ওই বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন ইত্যাদি নাকি ফালতু, ওসবের মধ্যে উনি নেই। মানে বিশ্বের পরিবেশ উষ্ণায়ন নিয়ে তিনি এক ডলার খরচ করতে রাজি নন। উনি এসেই জানিয়ে দিলেন ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন ইত্যাদিতে উনি থাকবেন না, কেন? কারণ ও নাকি চীন পরিচালিত একটা ব্যাপার, মাত্র ক’ বছর আগেই প্যান্ডেমিকের সময়ে এই ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের প্রত্যেকটা সার্কুলার কিন্তু আমেরিকার প্রশাসন থেকে নাগরিকদের পাঠানো হয়েছিল, আজ ট্রাম্প সেই সংগঠন থেকে বেরিয়ে আসতে চায়। এবং সব্বাইকে অবাক করে দিয়ে এবার কিউবার চিকিৎসা দল অন্য দেশে পাঠানোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করল ট্রাম্প প্রশাসন।
আমেরিকার কুখ্যাত নিষেধাজ্ঞা কেবল কিউবার উপর নয়, যে যে দেশ চিকিৎসা পরিষেবা নেবে তারাও সমস্যায় পড়বে। রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হওয়ার পর থেকে সমাজতান্ত্রিক কিউবার বিপক্ষে পরপর পদক্ষেপ নিয়ে চলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। জো বাইডেন প্রশাসন কিউবাকে ‘সন্ত্রাসবাদের মদতদাতা রাষ্ট্রের’ তালিকা থেকে বাদ দিয়েছিল। দক্ষিণ আমেরিকায় লাতিন আমেরিকা সংক্রান্ত বিতর্কে আমেরিকা একঘরে হয়ে পড়তে থাকায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাইডেন প্রশাসন। এবার ট্রাম্প এসেই সেই সিদ্ধান্ত উল্টে দিয়েছেন। ফের কিউবাকে আনা হয়েছে ওই তালিকায়। আর চলতি সপ্তাহেই নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আমেরিকা। আমেরিকার বিদেশসচিব মার্কো রুবিও নিষেধাজ্ঞা জারি করে জানিয়েছেন, ‘‘কিউবা চিকিৎসাকর্মীদের অন্য দেশে যেতে বাধ্য করে। তার বিনিময়ে বিদেশি মুদ্রা আয় করে। যে দেশ এই পরিষেবা নেবে তাকেও সমানভাবে দোষী বলে বিবেচনা করা হবে।’’ অনেক সঙ্কটে আছে কিউবা, আজ থেকে নয়, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে লড়ছে কিউবা সেই জন্মলগ্ন থেকেই, কিন্তু সেসব সংকট থাকলেও কিউবার চিকিৎসা কর্মী এবং পরিষেবা সারা বিশ্বে সমাদৃত। সেই কবে ১৯৬৩-তে প্রথম কিউবা চিকিৎসকদল পাঠিয়েছিল আলজেরিয়ায়। ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনকে পরাজিত করে স্বাধীন হয়েছিল আলেজেরিয়া। তারপর থেকে প্রয়োজনে বিশ্বের বিভিন্ন বিপন্ন দেশে ত্রাণ এবং চিকিৎসা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে কিউবা। কোভিড সঙ্কটে যখন আমেরিকা এবং ইউরোপের ধনী দেশগুলি নাজেহাল, তখনও কিউবা অন্য দেশে ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছে। এছাড়া চিকিৎসক দলও পাঠিয়েছে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। এই বিবৃতি জারি হওয়ার পরে কিউবার রাষ্ট্রপতি মিগুয়েল দিয়াজ কানেল বলেছেন, ‘‘আমেরিকার বিদেশ দফতরকে জানাতে হবে, কিউবার চিকিৎসা পরিষেবা বন্ধ করে আমেরিকা কোন কৃতিত্ব দেখাচ্ছে। বহু দেশ এই পরিষেবার ওপর নির্ভর করে।’’ বিশ্বের ৬০টি দেশে কিউবা চিকিৎসা পরিষেবা দেয়। বিপ্লবের পর থেকে ১৬০ দেশে বিভিন্ন সময়ে প্রায় ৬০ হাজার চিকিৎসা কর্মী পাঠিয়েছে ছোট্ট কিউবা। আজ উন্মাদ ট্রাম্প সাহেব ক্ষমতায় বসেই সেই কিউবার উপরে আবার নিষেধাজ্ঞা জারি করল, এতে কেবল কিউবা নয়, লাতিন আমেরিকার ছোট ছোট বহু দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর প্রভাব পড়বে।