Thursday, July 3, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ: বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে

চতুর্থ স্তম্ভ: বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে

Follow Us :

ভোট পরবর্তী হিংসা, হত্যা, ধর্ষণের ঘটনা ইত্যাদি খতিয়ে দেখার কাজের দায়িত্ব পেল সিবিআই, যে সিবিআইকে কিছুদিন আগে সর্বোচ্চ আদালত সরকারের তোতাপাখি বলেছে, দায়িত্ব দিল কে? কলকাতা হাইকোর্ট। ভিত্তি কী? জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্ট। যে কমিশনের মাথায় ছিলেন কিছুদিন আগে সক্রিয় বিজেপির এক নেতা। তাহলে এখন কী হবে? খুন ধর্ষণ বা ধর্ষণের চেষ্টার মত যে অভিযোগ, তার তদন্ত করবে সিবিআই আর এর সঙ্গেই বাকি অভিযোগগুলোর তদন্ত করবে, রাজ্য পুলিশের তিন আইপিএস অফিসারের নেতৃত্বে তৈরি এক বিশেষ তদন্তকারী দল। এই সব তদন্ত ভোটের পরে যে হিংসা হয়েছে তাই নিয়ে, কলকাতা হাইকোর্টের পাঁচ সদস্যের বিচারকমণ্ডলীর রায়। রায় আসার পরে, রায়কে স্বাগত জানিয়েছে বিজেপি, দিলীপ ঘোষ, শুভেন্দু অধিকারী এবং খুব স্বাভাবিকভাবেই সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী। কংগ্রেস? না এখনও তাঁদের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া এসে পৌঁছয়নি। তাঁদের সংযুক্ত মোর্চার তরফেও মৌনতা বরকরার। তৃণমূলের তরফে স্বাভাবিকভাবেই বিরোধিতা করা হয়েছে, সৌগত রায় বলেছেন এই রায় দুর্ভাগ্যজনক। রাজ্য সরকার এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতেও যেতেই পারেন, সে সব পরের কথা।

প্রথমেই একটা কথা পরিস্কার করে নেওয়া যাক, গণতান্ত্রিক কাঠামোতে যে কোনও হিংসা অন্যায়, নির্বাচনের আগে, পরে, নির্বাচন চলাকালীন যে কোনও হিংসার বিচার হওয়া উচিত, যে কোনও সুস্থ মানুষ এই কথায় একমত হবেন। এবার আসুন, বিচার বা জাস্টিস নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক। হোয়াট ইজ জাস্টিস? বিচার কী? জাহাঙ্গীরের সময় যমুনার ধারে ৬০টা ঘন্টা ঝোলানো ছিল। যে কেউ, যে কেউ সেই ঘন্টা বাজালেই ধরে নেওয়া হত সে বিচার চাইছে, সে দেশের নাগরিক হতে পারে, অন্যদেশের নাগরিক হতে পারে। তাঁকে হাজির করা হত সম্রাটের দরবারে, শুনানি হতো। তারমানে কি মধ্যযুগীয় বিচার ব্যবস্থা খুব ভালো ছিল? রাজা রাজরাদের দরবারে সব্বাই বিচার পেতেন? না পেতেন না। আমরা জানি সে কথা। বিচার ব্যবস্থাও ছিল অমানবিক, প্রকাশ্যে ফাঁসি, হাত পা, আঙুল কেটে নেওয়া, বেত্রাঘাত এসব তো আধুনিক সমাজ ব্যবস্থার সঙ্গে খাপ খায় না। তাহলে জাহাঙ্গীরের প্রসঙ্গ উঠল কেন? একটাই কারণে, যে বিচার চাইবে, সে যেন বিচার পায়। জাস্টিসের, বিচারের প্রথম কথা। গ্রিক দার্শনিক প্লেটো, তাঁর রিপাবলিক বইয়ে লিখছেন, ব্যক্তি মানুষ আর রাষ্ট্রের সুসম্পর্ককেই জাস্টিস, বিচার বলা হয়। অর্থাৎ এক মানুষ ব্যক্তি হিসেবে তার অধিকার নিয়ে রাষ্ট্রে বসবাস করবে, যদি তা না করতে পারে, তাহলেই সেটাকে ইনজাস্টিস, অবিচার বলা হবে। আর ন্যায় বিচারের মূল ভিত্তি হল, অন্যায়ের স্বরূপ, অন্যায়ের কারণ ও অন্যায়কারীকে চিহ্নিত করা, এবং সেই অন্যায়ের প্রতিবিধান, শাস্তির ব্যবস্থা করা। যাতে সেই ব্যক্তি সেই নগরে, সেই রাষ্ট্রে তাঁর অধিকার নিয়ে বসবাস করতে পারে। লক্ষ করুন, বিচার কিন্তু কেবল অন্যায়ের স্বরূপ বার করা নয়, কেবল অন্যায়কারীকে খুঁজে বার করা নয়, কেবল অন্যায়ের শাস্তি বিধান করা নয়, তার এক বিরাট উদ্দেশ্য অন্যায়ের কারণ খুঁজে বের করা, তার প্রতিবিধান করা।

খুব সহজ উদাহরণে আসা যাক, কেউ একজন খাবারে বিষ দিয়ে এক রাজ কর্মচারীকে হত্যা করেছে। অপরাধ চিহ্নিত, অপরাধীও চিহ্নিত হল, কিন্তু কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা গেলো, ওই রাজ কর্মচারী তাঁর অস্ত্র শস্ত্র আর লাঠির জোরে, অপরাধীর বাসস্থান ভেঙে তাঁকে ভিটেমাটি ছাড়া করেছে। অপরাধী তার প্রতিক্রিয়ায় এই খুন করেছে। এখন আগের অপরাধ যদি ছাড় পেয়ে যায়, তাহলে পরের অপরাধ চলতেই থাকবে, এক রাজকর্মচারীর রক্ষক থেকে ভক্ষক হওয়া চলতে থাকলে, এই ধরণের ঘটনা চলতে থাকবে। ঠিক সেই কারণেই ন্যায় বিচারে আগের অপরাধেরও বিচার হওয়া উচিত। আগের অপরাধের ভিত্তিতেই বর্তমান অপরাধের বিচার হওয়া উচিত, এবং একজন সাধারণ নাগরিকের চেয়ে, যেহেতু এক রাজকর্মচারীর দায় দায়িত্ব অনেক বেশি, তাই সেই ঘটনার বিচার না হওয়াটা আরও বড় অবিচার। তাই বিচার কেবল অপরাধের নয়, বিচার করতেই হবে অপরাধের কারণের, সেই কারণকে খুঁজে বের করতে হবে। সেই প্রেক্ষিতে নির্বাচন পরবর্তী হিংসাকে একটু খতিয়ে দেখা যাক, এবং কখনই তা নির্বাচন পরবর্তী হিংসাকে সমর্থন না করে, কারণ আগেই বলেছি, এই গণতান্ত্রিক কাঠামোতে যে কোনও হিংসা সমান নিন্দনীয়, সমান অপরাধ। নির্বাচনের পরে হিংসা তো হয়েছে, ঘর ভাঙা হয়েছে, আগুন লাগানো হয়েছে, ধর্ষণের অভিযোগ এসেছে, এমন কি খুনের ঘটনা এবং অভিযোগও আছে। কিন্তু প্রেক্ষিতটা কী? তৃণমূল জিতেছে বলে হিংসা হয়েছে? বিজেপি জিতলে পাড়ায় পাড়ায় চৈতন্যদেবের পালা সংকীর্তন হতো? কী তীব্র বিষ সেদিন শুভেন্দু, দিলীপ, সায়ন্ত্বন, যোগী, অমিত শাহ, মোদি এবং মিঠুন চক্রবর্তী ছড়াচ্ছিলেন? উল্টোদিকে তৃণমূলের গলাতেও কি শোনা যায়নি, ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝে নেব? সাকুল্যে একজন বিধায়ক যাদের, সেই আব্বাস ভাইয়ের গলায় কী মধু ঝরছিল, তা কি আমরা শুনিনি? মোদিজি এসে রাস্তার লোফারের মত, মঞ্চ থেকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে দিদি ও দিদিইই বলে টিটকিরি কাটছিলেন, জনতা হাততালিতে জবাব দিচ্ছিল, সেই জনতাই ফিরে গিয়ে ওই দিদির পরে আরও চোখা বিশেষণ বসিয়ে মহল্লাতে প্রচার করেননি? কনফট যোগী আদিত্যনাথ বলেননি? বাবরের বাচ্চাদের বুঝে নেব? মুর্শিদাবাদের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গরীব দিনমজুরের ছেলে শোনেনি সে কথা? তাঁর পাড়ায় দেখেনি মাথায় গেরুয়া ফেট্টি বেঁধে, আদিত্যনাথ যোগী জিন্দাবাদ বলা গেরুয়া বাহিনীকে? মিঠুন চক্রবর্তী আরামবাগের সভায় গিয়ে বলেছে, এক ছোবলেই ছবি, সেই একই কথা ছড়ায়নি মুখে মুখে? মারবো এখানে লাশ ফেলবো শশ্মানে? বলে বেড়ায়নি ভক্তের দল? ফেসবুকে বুঝিয়ে দেবার হুমকি দেয়নি বিজেপির আইটি সেল? পা নয় মাথা লক্ষ করে গুলি চালানোর কথা বলেনি সায়ন্ত্বন বসু? সেই কথা মুখে মুখে ছড়ায়নি গেরুয়া বাহিনী? রগড়ে দেবো, এই ভাষায় কথা বলেননি দিলীপ ঘোষ? শুনে আতঙ্কিত হইনি আমরা? অমিত শাহ, দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেননি এনআরসি’র কথা? শুনে আতঙ্কিত হননি মানুষ? ভিটেমাটি ছেড়ে কোন চুলোয় আবার যেতে হবে, সেই কথা ভাবেনি মানুষ? মানে তলায় আগুন রাখা হল, ওপরে জলের পাত্র, জল ফুটতে শুরু করলেই তদন্ত হবে? হোক তদন্ত, শুভেন্দু অধিকারী সংবিধানের বিপরীতে দাঁড়িয়ে বলেছিল, ওই ৩০% এর ভোট চাই না, জেলে থাকা উচিত ছিল এই ঘৃণ্য লোকটার, সে আজ বিচার চাইছে? আগে তার বিচার হোক। আর সেসবের বিচার না করে, কেবল ভোট পরবর্তী হিংসার কথা বলা হাস্যকর, নির্বাচন চলাকালীন যে তীব্র সাম্প্রদায়িক বিষ ঢালা হয়েছে, বাংলার মানুষের কানে, যে তীব্র ঘৃণা ছড়ানো হয়েছে পরিকল্পিতভাবে, কেবলমাত্র ভোট মেরুকরণের জন্য, তার বিচার হবে না?

শিতলকুচিতে যে ঘটনা ঘটেছে, ভোটের লাইনে দাঁড়ানো গ্রামের মানুষের বুকে গুঁজে দেওয়া হল, ইনসাস রাইফেলের গুলি? কারা দায়ী? কী হয়েছিল? কে জবাব দেবে? মোদি সরকারের হাতের আর এক পুতুল নির্বাচন কমিশন, আজ পর্যন্ত তার জবাব দেয়নি, কে দায়ী তো ছেড়েই দিলাম, সেদিন কী হয়েছিল? তাও আমরা জানি না, সেদিন বুথের দায়িত্বে থাকা প্রিসাইডিং অফিসারের ডায়রি? কোথায়? এখনও আমরা জানি না। অথচ ভোটের পরে হিংসা নিয়ে বিচারকদের সিদ্ধান্ত এসে গেলো, সিবিআইয়ের হাতে দেওয়া হল দায়িত্ব!

যে সিবিআই, ছোট আঙারিয়ার হত্যা নিয়ে এখনও একটা কথাও বলেনি, যে সিবিআই হাজার কোটি টাকা মেরে দেওয়া চিট ফান্ডের অপরাধীদের তদন্ত শেষ করে উঠতে পারেনি, যে সিবিআই কেবল কেন্দ্রীয় সরকারের হুমকি দেওয়ার, ভয় দেখানোর যন্ত্র হিসেবেই থেকে গেছে, সেই সিবিআইয়ের হাতে আবার একটা দায়িত্ব। সময়ে অসময়ে বিরোধী নেতাদের ডেকে এনে, চমকানোর দায়িত্ব তাঁদের আছে, সে দায়িত্ব তাঁরা আন্তরিকভাবেই পালন করছেন, কেবল জানা উচিৎ তাঁদের, জানা উচিৎ বিচারকদের যে অন্যায় বা অপরাধের শেকড়ে না পৌঁছতে পারলে, সে বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কেবল কাঁদে না, আরও বড় অপরাধের ক্ষেত্র তৈরি হয়, সে বিচার মানুষের চোখে হয়ে ওঠে হাস্যকর এক তামাশা, সে বিচার আসলে জাস্টিস নয়, ইনজাস্টিস।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Samik Bhattacharya | রাজ্য সভাপতি হয়ে প্রথম কী বললেন শমীক ভট্টাচার্য? দেখুন Live
00:00
Video thumbnail
American Economy | মার্কিন অর্থনীতিতে মন্দার ছায়া, ক্ষমতা হারাচ্ছেন ট্রাম্প? কী অবস্থা আমেরিকার?
00:00
Video thumbnail
Samik Bhattacharya | Dilip Ghosh | শমীকের সংবর্ধনা মঞ্চেও নেই দিলীপ ঘোষ, কারণ কী? দেখুন বড় খবর
00:00
Video thumbnail
TMC | Election Result | ২৬-এর আগে ফের বিরাট জয় তৃণমূলের, বিরোধীরা কোথায়?
00:00
Video thumbnail
Samik Bhattacharya | বিজেপির নয়া রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য, কী বললেন শুভেন্দু-সুকান্ত?
17:40
Video thumbnail
Kasba Incident | কসবা কাণ্ডে মনোজিতের হু/মকির অডিও ক্লিপ কলকাতা টিভির হাতে, দেখুন EXCLUSIVE রিপোর্ট
49:55
Video thumbnail
Kasba Incident | কলেজে দাদাগিরি চালাত মনোজিৎ, চলত মানসিক-শারীরিক নির্যাতন, বি/স্ফো/রক দাবি পড়ুয়ার
07:27
Video thumbnail
Justice Verma | টাকা উদ্ধার কাণ্ডে বিচারপতি ভার্মার বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়ার জন্য প্যানেল গঠন
03:36
Video thumbnail
Kasba Incident | কসবা কাণ্ডে রাজ্যের কাছে রিপোর্ট তলব হাইকোর্টের, কী কী নির্দেশ? দেখুন বড় আপডেট
04:49
Video thumbnail
Kasba Incident | অ্যাডমিন মনোজিতের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের ছবি কলকাতা টিভির হাতে, কী আছে সেই গ্রুপে?
06:22

Deprecated: Automatic conversion of false to array is deprecated in /var/www/ktv/wp-content/themes/techinfer-child/functions.php on line 39