Tuesday, June 24, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar | সিনেমা রিলিজ, গায়কদের জলসা হবে, গড়িয়াহাট হাতিবাগানে হকার আন্দোলন...
Fourth Pillar

Fourth Pillar | সিনেমা রিলিজ, গায়কদের জলসা হবে, গড়িয়াহাট হাতিবাগানে হকার আন্দোলন আর প্রতিবাদ দেখবে?

বিচার যেন এই অসংখ্য মানুষের চোখের জলে ভেসে না যায়

Follow Us :

কেউ কেউ কিছু বলার আগেই ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি তো কলা খাইনির মতনই বলে উঠছেন, আমরা রাজনীতিতে নেই, আমরা অরাজনৈতিক। ধর্ষণ খুন হয়েছে, দেশের সর্বোচ্চ আদালত নিজের থেকেই তা হাতে নিয়েছে, সিবিআই-এর তদন্তের দেখরেখ করছে, সিবিআই তদন্ত করছে, আর আপনি কলকাতার রাস্তা দখল করে বসে আছেন, কিন্তু এটা নাকি অরাজনৈতিক? কী চাইছেন রাস্তায় বসে? তদন্তের কোন কাজে লাগবে আপনার অবস্থান? রাজ্য সরকার এই ধর্ষণ আর হত্যায় মূল দোষী, মূল ষড়যন্ত্রী? তদন্ত করছে তো সিবিআই। তদন্ত হচ্ছে না? সেটা দেখার জন্যই তো আছে সুপ্রিম কোর্ট। আপনি রাস্তায় বসে চাইছেনটা কী? বিচার? কাঁঠাল আম নাকি, পেড়ে নিলেই হবে? একটা যুক্তি হল, রাজ্য সরকার সব প্রমাণ ইতাদি লোপাট করে দিয়েছে, দিচ্ছে, তাহলে রাত দখল করে না থেকে নবান্ন দখলের ডাক দিন, বিচার চাই বিচার চাই বলে প্রতিবাদের রাজনীতির ধুনি না জ্বালিয়ে পদত্যাগের ডাক দিন। শুভেন্দু অধিকারী রাজনৈতিক দল করেন উনি দিয়েছেন, কিন্তু এই অরাজনৈতিক খ্যামটা নাচের যাচ্ছেতাই ব্যাপারটা হল আমরা গা বাঁচিয়ে প্রতিবাদের রাজনীতিটা করব। কারা সঙ্গে? এক তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ, পদত্যাগ করুন, ইমিডিয়েট, পদত্যাগ করুন তারপর বিবেকের ভূমিকায় নামুন আমরা হাততালি দেব। আজ বাস্তিল দুর্গ কাল আর্টিকল টোয়েন্টি ওয়ান এসব বলে আপনার জাহাজভরা বিদ্যে জাহির না করে আগে নিজের নৈতিক জায়গাটা ঠিক করুন। ৪ অগাস্ট ২০২১-এ জহর সরকার তৃণমূলের রাজ্যসভার সদস্য হলেন। আহা রে তিনি জানতেন তৃণমূল দল পুরোটাই দেবশিশুতে ভরা, কোনও দুর্নীতি ইত্যাদি কিছুই জানতেন না, পার্থ চ্যাটার্জি গ্রেফতার হচ্ছেন, কবে? জুলাই ২৩, ২০২২-এ, উনি তখন বোধহয় কানে তুলো আর চোখে কুলো দিয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনছিলেন। তারও অনেক পরে ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪-এ গ্রেফতার হলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, উনি তখনও কী গাব আমি কী শুনাব আজি অনন্ত ধামে শুনছেন, বগটুই, কেষ্ট মোড়লের গ্রেফতার, বালি চুরি, গরু চুরি, আমাদের জহরবাবু কিচ্ছু জানেন না। কমেডিয়ান জহর রায়ও এত হাসির কথা বলেননি, কিন্তু এখন যেই রাস্তায় দেখেছেন কিছু মানুষ, মানববন্ধন, এবং যেহেতু সবটাই ওনার বেরাদরির লোকজন, প্রেসিডেন্সি যাদবপুর, ব্যস ঝটকা, উনি পদত্যাগ করলেন।

এই ক’দিন আগে এই তৃণমূলের স্টার প্রচারকদের তালিকাতে ছিলেন এক চলচ্চিত্র পরিচালক, ভাবা যায়, তখন উনি জানতেন তৃণমূল মানে কপিলা গাভী, পুণ্য গাভি, আজ প্রতিবাদে ফেটে পড়েছেন। সেই তাঁরাই যাঁরা এই মাননীয়ার কোলে কাঁকালে বেড়ে উঠেছেন এই সময়ে। এইটা হচ্ছে এক প্রতিবাদের রাজনীতি। আজব এই প্রতিবাদের রাজনীতি। এই প্রতিবাদের রাজনীতি কত সিলেকটিভ, এক চলচ্চিত্র পরিচালক বক্তৃতায় বলছেন এত জাতীয় পতাকা প্রতিবাদের মিছিলে এর আগে কখনও ছিল না। আসলে উনি সেই সময়ে অন্য কোনও কাজে ব্যস্ত ছিলেন, সিএএ-এনআরসির বিরুদ্ধে সারা দেশ, এই কলকাতাও রাস্তাতে ছিল এক হাতে জাতীয় পতাকা অন্য হাতে সংবিধান নিয়ে। সেই সময়ে আপনি রাস্তায় ছিলেন না স্যর, রাস্তায় থাকলে জাতীয় পুরস্কার জোটে না, আজ হঠাৎ শহরের এই প্রতিবাদী চেহারা দেখে নিজের প্রতিবাদী স্বরটাকে ঝালিয়ে নিতে চান ভালো। কিন্তু সেই দম আছে তো, এই লড়াইটা চু কিৎ কিৎ নয়, আর রাজনৈতিক পালাবদল অন্যধারেও হতেই পারে। এগুলো হচ্ছে প্রতিবাদের রাজনীতি। ঘোমটার আড়ালে খ্যামটা নাচার এক নির্লজ্জ নিদর্শন। সম্ভবত সময় এসেছে এই ভণ্ডামিটাকে ভাঙার। এই ভণ্ডামির বিরুদ্ধে কিছু কথা বলার। সবার সাহস থাকতেই হবে সেই অগাস্ট ল্যান্ড মেজার বা গান্ধীর মতো, ম্যান্ডেলার মতো বা মার্টিন লুথার কিং-এর মতো? হয় নাকি? কিন্তু ভণ্ডামি বন্ধ করুন প্লিজ। একটা রাজনৈতিক জায়গা থেকেই রাজনৈতিক আন্দোলন হোক, যদি মমতার পদত্যাগই চাইতে হয় তাহলে বিচার চাই বিচার চাই বলে খামোখা না হেঁদিয়ে রাস্তায় নামুন সেই দাবি নিয়েই, আর সেই ধক না থাকলে ঘরে বসে কবিতা লিখুন, শিল্প করুন। কে মানা করেছে? এবং এরই মধ্যে এল সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ। অনেকের, হ্যাঁ অনেকের ধারণা ছিল আজ সুপ্রিম কোর্টে তিলোত্তমা ধর্ষণ আর হত্যা মামলার শুনানি হবে, আদতে এটা ছিল সিবিআই-এর তদন্তের অগ্রগতি জানানোর দিন, এবার সে পক্ষে আমাদের বিকাশ ভট্টাচার্যও ছিলেন, ছিলেন, ছিলেন ফিরোজ এডুলজি, ছিলেন বিজেপি নেতা কৌস্তভ বাগচী, এনারা ছিলেন রাজ্য সরকার বা কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পক্ষের হয়ে, স্বাভাবিকভাবেই রাজ্য সরকার তো মামলাতে একজন কাউকে দাঁড় করাবে। এ তো ভালো মজা, রাজ্য সরকার কপিল সিব্বলকে কেন দাঁড় করাবে এটা একটা প্রশ্ন? রাজ্য সরকার আদালতে কিছু বলবেই না? তো যাই হোক প্রথমে দীর্ঘক্ষণ যেমনটা বলেছিলাম আগেই, পাত্রাধারে তৈল না তৈলাধারে পাত্র ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা হল, তারপর হুবহু কলকাতার মিডিয়া যা যা বলে যাচ্ছে সেগুলো বলা হল এবং স্বাভাবিকভাবেই সরকার পক্ষের কথা বললেন কপিল সিব্বল এবং বাকি উকিলরা। ওমা তাইতে কি গোঁসা একজন বিপ্লবীর, কপিল নাম নিয়ে এরকম কাজ? মানে? উনি আসলে সেই দলে যাঁরা বিচার করে ফেলেছেন, কাজেই উনি খুনিদের বিরুদ্ধে, এদিকে ওধারের উকিল ফিরোজ এডুলজি ক’দিন আগেই কামদুনি মামলায় অভিযুক্তদের হয়ে লড়েছেন, ফাঁসি আটকেছেন।

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | সুপ্রিম কোর্টের দিকে তাকিয়ে ছিলেন? কী হল সেখানে?

তো সেসব কথা থাক মোদ্দা কথায় আসি। সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে ডাক্তারদের কাজে যোগ দিতে বিকেল ৫ টার মধ্যে, আর রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে তাদের সুরক্ষার ব্যাপারটা নিশ্চিত করতে। এরপরেই মাঠে নেমেছিলেন ওই কৌস্তভ বাগচী, যাঁকে চিফ জাস্টিস বললেন শুনুন, এটা গলা তোলার জায়গা নয়, আপনি তিনজন বিচারপতির সামনে কথা বলছেন, গ্যালারি গরম করবেন না। মানে বলা হল থেমে থাক। এবং শেষে জানানো হল আগামী মঙ্গলবার আবার এই শুনানি হবে, আবার সিবিআই তাদের তদন্তের গতিপ্রকৃতি জানাবে, রাজ্য সরকার এর মধ্যে একটা কাগজ জমা দিতে পারেনি সেটা দেবে আর স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ডাক্তার স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষার জন্য কিছু ব্যবস্থা নেবেন, যেগুলো আগামী বুধবারে সুপ্রিম কোর্টকে জানাতে হবে। এসব আগেই বলেছিলাম, ধর্ষণ খুন তো খুব সহজ মামলা নয়, এটা চলবে, এর তিনটে পার্ট, এক) কে বা কারা ধর্ষণ বা খুন করেছে আর যদি কেউ তাকে আড়াল করে থাকে, আড়াল করার চেষ্টা করে থাকে তাহলে তারা কারা? এখন এগুলো তদন্ত আর বিচারে সময় নেবে। পরেরটা হল ওই আরজি করের দুর্নীতি আর সেই দুর্নীতির সঙ্গে যদি এই খুনের সম্পর্ক থাকে তা বের করা। তিন নম্বর বিষয় হল মহিলা নির্যাতন, নারী অবমাননা, জেন্ডার ইকুয়ালিটি বা লিঙ্গসাম্যের লড়াই। তিনটেই আজ বলতে কাল হয়ে যাবে না, তিনটের জন্যই দম ধরে লড়তে হবে। আর তিনটেকে একটা লড়াই ধরে নিয়ে নামলে সবটাই ঘেঁটে যাবে। কাজেই ধর্ষণ হত্যার বিচার চাই, দুর্নীতির বিচার চাই আর সমাজে রাষ্ট্রে লিঙ্গসাম্যের দাবি, মহিলা নির্যাতনের বিরুদ্ধে লড়াই, নারী সমানতার লড়াই একসঙ্গে চালাতে হবে। রাত দখল এক প্রতীকী ব্যাপার, মানববন্ধন তাও একইভাবে প্রতীকী, লাগাতার লড়াইয়ের প্রতিটা দিন রাতদখল হবে এমনটা ভাবা ভুল। হ্যাঁ, ছ’ মাস একবছর সময় লাগতেই পারে, আবার পথে নামব আমরা, আবার বৃত্তকে বড় করব, আরও মানুষ আসুক আমাদের সঙ্গে, আরও মানুষ সমানতার কথা বলুন, বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলুন, শিক্ষার আরও প্রসারের কথা বলুন। এবং তারই মাঝে আমরা বাঁচতে ভুলে যাব সেটাই বা কেমন কথা?

মানুষের জীবন জীবনকে খুঁজে নেয়, জীবন মৃত্যুর সঙ্গে বেশিদিন ঘর করতে পারে না। বিংশ শতাব্দীতে মানুষের শোকের আয়ু বড়জোর একবছর বলেছিলেন নাজিম হেকমত। কে শোকাহত নয়, এক তরুণীর কত স্বপ্ন, জীবনের কত উল্লাস হঠাৎই থেমে গেছে, কার ব্যথা হবে না? যার হবে না সে তো ক্রিমিনাল। কিন্তু সেই ব্যথার সঙ্গেই জীবনযাপন? হয় নাকি? সম্ভব নাকি? সামনে উৎসব, হ্যাঁ ম্লান হবে, মনে পড়বেই তার কথা, সেই উৎসবের মধ্যেও কোথাও কোথাও হোক না প্রতিবাদ। জলুক আগুন ধিকি ধিকি করে, আবার সুলকে নেব, কিন্তু তাই বলে উৎসব বাতিল এ বড় মূঢ় প্রস্তাব। যাঁরা রাস্তায় নামছেন তাঁদের জীবনে অনেক কিছু আছে, এই আন্দোলনে শামিল নেতার পুজোসংখ্যায় লেখা আছে, সেসব বার হবে, তাঁদের নিজেদের শারদীয় পত্রিকা আছে বার হবে, বড় বড় সিনেমা রিলিজ হবে যার শুটিং আগেই হয়ে গেছে, তার প্রোমোশন হবে, বড় বড় গায়কদের জলসা হবে, তার কিছু বুকিং হয়ে গেছে, আরও বুকিং আসবে। পুজো থেকে সেসব জলসা মাচা চলবে সেই হোলির আগে পর্যন্ত। কিন্তু অসংখ্য মানুষ তো বসে আছে পুজোর পশরা নিয়ে হাতিবাগান গড়িয়াহাট বেহালা হকার্স কর্নারে, বসে আছে আরও কত মানুষ, পুজোর এই ক’টা দিন রোল বিক্রি করবেন, বিরিয়ানি বিক্রি করবেন, তাঁরা শুকনো মুখে এই প্রতিবাদ দেখছেন, দেখছেন সামনের খরিদ্দার নেই দিনগুলোকে, সারা বছরের রোজগার বন্ধ হবে, সেই চিন্তায় তাঁদের ঘুম নেই। এ কেমন সংবেদনশীলতা? এ কেমন প্রতিবাদ? যা এই অসংখ্য গরিবস্য গরিব মানুষদের কথাই ভাবে না। এঁদের কথা ভেবেই উৎসবে ফিরুন, থাক না প্রতিবাদ, মণ্ডপে বা তার পাশে, যাঁদের আরও কষ্ট তাঁরা থাকুন না ঘরে এই ক’টা দিন, আবার পথে নামা যাবে। আমরা তো বলেইছি ন্যায়বিচার ছিনিয়ে আনব, সেই বিচার যেন এই অসংখ্য মানুষের চোখের জলে ভেসে না যায়।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Iran | ইরানকে সমর্থন উত্তর কোরিয়ার, যেকোনও মুহূর্তে ইরানে হা/মলা,সৌদি থেকে উড়ল যু/দ্ধবিমান
00:00
Video thumbnail
Alifa Ahamed | Mamata Banerjee | কালীগঞ্জে জয়ের পর বিরাট বার্তা মমতার
01:15:50
Video thumbnail
Kaliganj By-Election | হু হু করে ব্যবধান বাড়াচ্ছে তৃণমূল, কালীগঞ্জে আবীর খেলা শুরু তৃণমূলের
02:08:51
Video thumbnail
Iran-America | ইরানে আমেরিকার হা/ম/লার ২৪ ঘন্টা পার, বিরাট সিদ্ধান্ত খামেনির, কী সিদ্ধান্ত ইরানের?
03:00:00
Video thumbnail
Kaliganj By-Election | কালীগঞ্জ উপনির্বাচনে ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছেন 'লাল-সাহেবে’র মেয়ে
02:47:40
Video thumbnail
Kaliganj By-Election | কালীগঞ্জে পোস্টাল ব্যালটে বিরাট জয় তৃণমূলের, বিরোধীরা কোথায়?
03:23:31
Video thumbnail
Vidhan Sabha | BJP | বিধানসভায় ৪ বিজেপি বিধায়ক সাসপেন্ড, দেখুন কী অবস্থা
38:20
Video thumbnail
Dilip Doshi | প্রয়াত কিংবদন্তি ক্রিকেটার দিলীপ দোশি
03:52
Video thumbnail
Stadium Bulletin | লিডসে শেষ হাসি হাসবে কে?
20:09
Video thumbnail
Iran-America | যে কোনও মুহূর্তে হা/ম/লা হতে পারে, ইরানের ভয়ে কাঁ/পছে আমেরিকা, কী করবেন ট্রাম্প?
02:05:15