Tuesday, June 24, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar | আরজি কর কাণ্ড, তদন্ত আর প্রতিবাদের শেষ কোথায়?     
Fourth Pillar

Fourth Pillar | আরজি কর কাণ্ড, তদন্ত আর প্রতিবাদের শেষ কোথায়?     

সেই কবে থেকেই আমরা বলি, আ নোন ডেভিল ইজ বেটার দ্যান আননোন

Follow Us :

সমস্ত কিছুরই তো একটা এক্সপায়ারি ডেট থাকে, শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই এক নির্মম সত্যি। সেই কবেই নাজিম হিকমত লিখেছিলেন, বিংশ শতাব্দীতে মানুষের শোকের আয়ু বড়জোর এক বছর, তারপর ছবির উপরে পরানো মালা শুকনো হয়, ধুলো জমে। নতুন ছবি আসে দেওয়ালে। এক ঘটনা ভুলে মানুষ অন্যদিকে রওনা দেয়, কিন্তু নিয়ম ভাঙা, রীতিনীতির ঊর্ধ্বে, চলতি ধারণার বাইরে কিছু হলে তা নিয়ে মানুষের কৌতূহল থাকে অনেকদিন। এক ধর্ষণ আর হত্যার পরে তেমনই এক পরিচিত ছন্দের বাইরে আন্দোলিত হয়েছিল আমাদের সমাজ। মনে করে দেখুন না, মিডিয়ার সামনে শেষ কথা বলেছিলেন মমতা সেই ১৫ অগাস্ট রাতে, তারপর গত পরশু গান্ধীমূর্তির পাদদেশে টিএমসিপির সভায়। ক’দিন সবটা বুঝে নেওয়ার পরে এদিন ছিল প্রতি আক্রমণের দিন। সঙ্গতে ছিলেন অভিষেক, তিনি যখন দাবি তুলছেন সন্দীপ ঘোষকে কেন গ্রেফতার করছে না সিবিআই, তখন মমতা মঞ্চে এলেন। যে আন্দোলন চলে গিয়েছিল এক সামাজিক চৌহদ্দিতে, বা বলা ভালো সামাজিক জঠর থেকেই উঠে আসছিল যে স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন, সেখান থেকে তাকে বিচারালয়ে পাঠিয়েছিলেন বিকাশ ভট্টাচার্য এবং আরও কয়েকজন, আর তারপর শেষমেশ তাকে রাজনৈতিক ময়দানে এনে ফেললেন শুভেন্দু অধিকারী। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিক এই মুহূর্তটার জন্য বসে ছিলেন, উনি জানতেন এবার খেলা হবে পরিচিত কোর্টে। আজ নয় সেই কবে থেকেই আমরা বলি, আ নোন ডেভিল ইজ বেটার দ্যান আননোন। পরিচিত শত্রুর ঘোঁতঘাত আমরা জানি, আমাদের সেই লড়াইয়ের প্রস্তুতিও থাকে, কিন্তু অপরিচিত হলেই সমস্যা। আজ নয়, প্রত্যেক প্রতিবাদের সময়েই রাষ্ট্র খোঁজে নোন ডেভিল, পরিচিত শত্রু। সেই কবে শ্রমিকদের কেউ কেউ এখানে সেখানে যন্ত্রপাতি ভেঙে দিচ্ছে, ম্যানেজার মালিককে পিটিয়ে দিচ্ছে, মালিক নিজে উদ্যোগী হয়েই ট্রেড ইউনিয়ন তৈরি করার পরামর্শ দেয়, সরকার বিপ্লবী ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের জন্য কত ব্যবস্থা রাখে। এক ইংরেজ রীতিমতো চিঠিপত্র লিখে কংগ্রেস নামে একটা মঞ্চ গড়ে উঠুক তার উদ্যোগ নিয়েছিলেন, ভাইসরয় সাহায্য করেছিলেন, কেন? ওই যে নোন ডেভিল ইজ বেটার দ্যান আননোন।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো সেই ২০১১-তে হারিয়েছেন বামেদের, হারিয়েছেন কংগ্রেস-বাম ঐক্য এবং বিজেপিকে, প্রতিটা নির্বাচনে, মধ্যে ২০১৯-এ একটা ঝটকা, সামলে নিয়েছেন। কাজেই এই বাম, এই কংগ্রেস, এই শুভেন্দু, দিলীপ আর সুকান্তের বিজেপি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়রের চেনা শত্রু, কিন্তু সম্পূর্ণ অচেনা ওই সামাজিক কণ্ঠস্বর। ওই সামাজিক চৌহদ্দি যেখান থেকে এক নির্ভেজাল প্রতিবাদ, দ্বিধাহীন এক স্পষ্ট বক্তব্য বেরিয়ে আসছে, বিচার চাই শাস্তি চাই, যেখানের প্রতিবাদ ক্রমশ মাটি খুঁড়ে বের করে নিয়ে আসছে আরও আরও অনেক দুর্নীতির ইতিহাস, আরও অনেক দিনের ক্ষোভ, যন্ত্রণা, বঞ্চনার ডায়রি, আর কার্বাঙ্কলের ফোঁড়ার মতো অজস্রমুখে সেই কথাগুলো বেরিয়ে আসছে। এদের এক আধজনকে ম্যানেজ করা যেতেই পারে, কিন্তু সবাইকে, নামুমকিন। যে কোনও রাষ্ট্র একে ভয় পায়, যে কোনও প্রতিষ্ঠান একে ভয় পায়। এরাই ভিত নড়িয়ে দিয়েছিল জারের অত বছরের শাসনের, এই এরাই সঙ্গে ছিল বলে লং মার্চ হয়েছিল চীনে, এই এরাই দেশে দেশে বহু সফল আর অসফল বিদ্রোহের ইতিহাস লিখেছে। এদেরই হাতে ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে গেছে বাস্তিল দুর্গ। এবারে মজার কথাটা হল এই যে সামাজিক আন্দোলন, বা বলা ভালো সামাজিক প্রেক্ষিত থেকে পড়ে ওঠা আন্দোলন, ইতিহাস বলছে তা সফল হয়েছে পিছনের খুঁটির জোরে, কখনও সেটা কমিউনিস্ট পার্টির সংগঠন, কখনও সেটা মার্কিনি সাম্রাজ্যবাদের ঢেলে দেওয়া টাকা আর চূড়ান্ত অসফল হয়েছে সেরকম সংগঠন না থাকলে, সেই অর্থবল আর লোকবলই কেবল নয়, স্বতঃস্ফূর্ততা থেকে জন্ম নেওয়া আন্দোলনেরও একটা দিশা নির্ধারণের ব্যাপার থাকে, কিন্তু সামাজিক চৌহদ্দি থেকে উঠে আসা আন্দোলনের তেমনটা থাকে না। ফলে রোবসপিয়েরকে গিয়ে গিলোটিনের তলায় মাথা পেতে দিতে হয়, সিধু কানহুকে শহীদ হতে হয়, তিয়েন আন মেন স্কোয়ারে লাশ হয়ে পড়ে থাকে প্রতিবাদীরা। ৭০-এর ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের গুমখুন করেই আন্দোলনকে মায়ের ভোগে পাঠিয়ে দেওয়া যায়। আবার এই ক’দিন আগেই পিছনে শক্তপোক্ত মার্কিনি সাহায্য ছিল বলেই বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ ক্ষমতায় এসেছে, এসেই নির্দেশমতোই জামাত, জামাতের ছাত্র শিবিরকে আইনি করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, চীন আর ভারত থেকে সমদূরত্বে এক নতুন বাংলা গড়ার প্রথম শর্ত হিসেবেই ইউনিভার্সিটিতে আর ছাত্র আন্দোলন করা যাবে না, তার ফতোয়া জারি করেছে। তাদের মন্ত্রিসভার অন্যতম এক মন্ত্রী বলছেন, লালন আবার কে? রবি ঠাকুর কে? উদীচী চলবে না, ছায়ানট চলবে না, মানে শর্ত আসছে, শর্ত পালন করা হচ্ছে। ওসব থাক, ও নিয়ে আবার পরে একদিন।

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | সিবিআই-এর ২০ দিন, বিচার চাই বিচার দিন

যা বলছিলাম, এই যে সামাজিক প্রেক্ষিত থেকে এক প্রবল প্রতিবাদের স্বর আমরা শুনছিলাম, এর সামনে হঠাৎই তৃণমূল, তাদের নেতৃত্ব বেসামাল হয়ে পড়েছিলেন, জনে জনে ফোন করে জল মাপা শুরু করেছিলেন, আয় আরও বেঁধে বেঁধে থাকি বলে গান গাইছিলেন, মিহি সুরে। আর কার্বাঙ্কলের ফোঁড়ার মতোই এখান থেকে পুঁজ, ওখান থেকে রক্ত বের হওয়া শুরু হয়েছিল। কিন্তু ওই অ্যালান অক্টাভিয়ান হিউমের মতো প্রাজ্ঞ মানুষ তো সর্বত্র আছেন। এখানে সেই দায় নিয়ে প্রথম কাজটা করলেন বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, মামলা চলে গেল কলকাতা পুলিশের হাত থেকে সিবিআই-এর কাছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ভরা জনসভার থেকে ডাক দিয়েছেন, বিচার চাই সিবিআই, কেন এখনও সন্দীপ ঘোষকে গ্রেফতার করা হল না। মানে ওটাই তো ছিল সবচেয়ে বড় ফল্টলাইন। ওই যে সন্দীপ ঘোষকে ক্যালকাটা মেডিক্যালের অধ্যক্ষ করে পাঠানো সেখান থেকেই তো খেলাটা ঘুরেছে। কী অনায়াসে সেই পিচেই দাঁড়িয়ে এবারে ব্যাট আর পা এক লাইনে রেখে কেতাদুরস্ত ডিফেন্সে নামলেন যুবরাজ, আপনারা জবাব চাইছেন সন্দীপ ঘোষকে আড়াল করা হচ্ছে কেন? উনিও চাইছেন জবাব, বলছেন ২০ দিন হয়ে গেল, এখনও সিবিআই সন্দীপ ঘোষকে গ্রেফতার করল না কেন? সোজা কথা, সামাজিক চৌহদ্দি তো কোনও দল নয়, মুরলীধর লেন বা আলিমুদ্দিনে তো তাদের অফিস নেই, তাদের মতামত তো কোনও দলীয় কর্মসূচির ভিত্তিতে চলে না, কাজেই সেখানে এই প্রশ্ন গিয়েছে, উঠেছে বইকী? তাহলে আমরা বিচার চাইব কার কাছে? মামলা তো সিবিআই-এর হাতে, বিচার চাইব তাদের কাছে, লালবাজারের কাছে বিচার চাওয়ার জায়গা কি আর আছে? লালবাজার যাবতীয় প্রমাণ তথ্য সব লোপাট করেছে? সেটাও তো সেই সিবিআই জানাবে। অতএব সামাজিক চৌহদ্দিতে যে স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন দানা বেঁধেছিল তার প্রথম সংশয় এল ওই কে বিচার দেবে সেখান থেকে। এরপরে সুপ্রিম কোর্ট সুয়োমোটো মামলা নিজেদের কাছে নিয়ে গেল, তৃণমূল সর্বোচ্চ নেতৃত্বের বুঝদারেরা হাঁফ ছেড়ে বসলেন। এবং এই সময়ে ভগ্নদূতের মতো মঞ্চে প্রবেশ বিরোধী দলনেতার আর তাঁর কাঁধের আড়াল থেকে সেদিন উঁকি দিচ্ছে ওই ছাত্রসমাজ, নবান্ন অভিযান। পুলিশ জানত না যে এদের সাধ্যই নেই হাজার দশ কি কুড়ির বেশি লোকজন জোগাড় করার? ভালো করেই জানত, কিন্তু ওরা একটা স্পেকট্যাকল দিতে চাইছিল, মানুষ দেখুক, পুলিশ মার খাচ্ছে, পুলিশকে ফেলে পেটানো হচ্ছে, মানুষ দেখুক কিছু লুম্পেনদের হাতে উই ওয়ান্ট জাস্টিস চলে গেছে।

হলও তাই, অন্তত ৪ জন পুলিশ গুরুতর আহত, একজনের চোখ চলে গেছে, আইপিএস অফিসারেরা তাদের সোশ্যাল মিডিয়ার প্রোফাইলে সেই পুলিশকর্মীর ছবি দিয়েছেন, ঠিক যেভাবে আপনি প্রোফাইল ব্ল্যাক করেছেন বা করেছিলেন। এবং না বুঝেই গর্তে পা দিল বিজেপি, কোনও প্রস্তুতি ছাড়াই নেট পরীক্ষার দিনে তারাও একটা বনধের ডাক দিয়ে বসলেন। হ্যাঁ, তোল্লাই ক্যাচ, মমতা ধরার জন্যেই বসে আছেন, বাউন্স ব্যাক করলেন মমতা অভিষেক দুজনেই, একদিনের ব্যবধানে সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্ট খুলে দেখুন, উল্টে দেখুন পাল্টে গেছে। যে তৃণমূল দল আর কর্মীরা ডিমরালাইজড ফোর্সের মত কী করিতে হইবে ভাবছিলেন, গালে হাত দিয়ে, তারা উজ্জীবিত। আর সামাজিক আন্দোলনের ময়দানে বাজে বিদায় সুর, সামাজিক চৌহদ্দিতে আন্দোলনের চৌহদ্দিতে আপাতত রাশি রাশি ফেক নিউজ, মিথ্যের থেকে সত্যি বেছে ওঠা যাচ্ছে না, চরম কুৎসা চলছে সমাজ মাধ্যমে আর জোর পাচ্ছে নিয়মমাফিক রাজনৈতিক দলের প্রতিবাদ আর আন্দোলন, যা মানুষের মনে দাগ কাটা বন্ধ করেছে আজ নয়, সেই কোণ কালেই। কাজেই সেই সময়টা এসে হাজির, সৃষ্টিছাড়া স্বতঃফূর্ত আন্দোলনের বদলে অত্যন্ত প্রেডিকটিভ, নিয়মমাফিক রাজনৈতিক আন্দোলনে সময়ের দাগ পড়বে দ্রুত। ফুটপাথে পুজোর কেনা বেচা শুরু, বিশ্বকর্মার অরন্ধনের চালতার চাটনি হবে, খুঁটির পাশে বাঁশ দাঁড়াবে, আলোর বরাত যাবে। আকাশে সেই অনির্বচনীয় আলো, মা আসছে। মন কেমন করবেই আমাদের তিলোত্তমার জন্য, কিন্তু এই হয়, চলে যায়, চলে যেতে দিতে হয়, শোক নিয়ে মানুষ বাঁচে না, শোক চিরটা কাল বাঁচে না। সকালের রোদের দিকে তাকান, এই ভারী মনটা খানিক হালকা হবে।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Kaliganj | Mamata Banerjee | কালীগঞ্জে বো/মাবা/জি, মৃ/ত্যু নাবালিকার, শোকপ্রকাশ মুখ্যমন্ত্রীর
02:21:41
Video thumbnail
Kaliganj By-Election | কালীগঞ্জে জয় সময়ের অপেক্ষা আলিফার
03:46:56
Video thumbnail
By-Election | Alifa Ahmed | আলিফা জিততেই কালীগঞ্জে এ কি অবস্থা? দেখুন এই ভিডিও
57:46
Video thumbnail
Alifa Ahamed | Mamata Banerjee | কালীগঞ্জে জয়ের পর বিরাট বার্তা মমতার
01:15:50
Video thumbnail
Kaliganj By-Election | হু হু করে ব্যবধান বাড়াচ্ছে তৃণমূল, কালীগঞ্জে আবীর খেলা শুরু তৃণমূলের
02:08:51
Video thumbnail
Iran-America | ইরানে আমেরিকার হা/ম/লার ২৪ ঘন্টা পার, বিরাট সিদ্ধান্ত খামেনির, কী সিদ্ধান্ত ইরানের?
03:00:00
Video thumbnail
Kaliganj By-Election | কালীগঞ্জ উপনির্বাচনে ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছেন 'লাল-সাহেবে’র মেয়ে
02:47:40
Video thumbnail
Kaliganj By-Election | কালীগঞ্জে পোস্টাল ব্যালটে বিরাট জয় তৃণমূলের, বিরোধীরা কোথায়?
03:23:31
Video thumbnail
Vidhan Sabha | BJP | বিধানসভায় ৪ বিজেপি বিধায়ক সাসপেন্ড, দেখুন কী অবস্থা
38:20
Video thumbnail
Dilip Doshi | প্রয়াত কিংবদন্তি ক্রিকেটার দিলীপ দোশি
03:52