এই আরজি কর ধর্ষণ আর হত্যা তদন্ত তখনও কলকাতা পুলিশের হাতে। কিন্তু যেহেতু বড় কিছু হলেই বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা সিবিআই তদন্তের দাবি করেন, সম্ভবত সেই কারণেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগ বাড়িয়েই সিবিআই নিয়ে সেই দিনই দুটো কথা বলেছিলেন। ১) মৃতা ধর্ষিতার বাবা মা যদি চান তাহলে এই তদন্তের ভার সিবিআইকে দিতে আমার কোনও আপত্তি নেই। ২) সাতদিনের মধ্যে যদি কলকাতা পুলিশ তদন্ত শেষ না করতে পারে তাহলে রাজ্য সরকার তদন্তের ভার তুলে দেবে সিবিআই-এর হাতে। বিরোধী দলনেতাদের মাথায় মগজে সামান্যতম বোধবুদ্ধি থাকলে ছেড়ে রাখতেন সুতোটা। কারণ এই ধর্ষণ আর হত্যাকে ঘিরে সরকার তো সেই তখনই ব্যাকফুটে চলেই গিয়েছিল, বিরাট সংখ্যক মানুষের বিশ্বাস যে কোনও কারণেই হোক তো পুলিশের উপরে নেই। কাজেই তারা তাদের তদন্তে যাই বার করত, মানুষ তার বিরোধিতা করত এবং সেই সময়ে আসরে আনাই যেত আর এক ভিলেন সিবিআইকে। কিন্তু তাড়াহুড়ো করলেন বিরোধী দলগুলো। আদালতে গেলেন যিনি আদালতে রোজ যান সেই বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, গেলেন মাথা ন্যাড়া কৌস্তভ বাগচি এবং আর এক আইনিজীবী ফিরোজ এডুলজি যিনি কামদুনি মামলাতে অভিযুক্ত ধর্ষকদের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। হে ধর্মাবতার, কলকাতা পুলিশ আসল অপরাধীকে আড়াল করার জন্য একটা স্কেপগোটকে খুঁজে বার করেছে, আমাদের এবং মানুষের তাদের তদন্তে কোনও আস্থাই নেই, কাজেই এই মামলার দায়িত্ব দেওয়া হোক সিবিআই-এর হাতে। তো আমাদের রাজ্যের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যা হয়ে থাকে, আদালত সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিলেন। ইতিমধ্যে কী কী হয়েছিল? মূল অভিযুক্ত হিসেবে সঞ্জয় রায়, একজন সিভিক ভলান্টিয়ারকে এই ধর্ষণ আর খুনের জন্য গ্রেফতার করা হয়েছিল। এবং সেই ১৩ তারিখের রায় থেকে আজ ৩০ আগস্ট, ১৬টা দিন পার হয়ে গেছে, মানুষ ইতিমধ্যেই হতাশ, আর সেটাই আজকের বিষয়, সিবিআইকে চেপে ধর, জাস্টিস ফর আরজি কর।
সিবিআই-এর হাতে তদন্ত দেওয়ার কথা আদালত জানায় ১২ তারিখে, ১৩ তারিখে সমস্ত তথ্যপ্রমাণ সহ সব ডকুমেন্ট কলকাতা পুলিশ তুলে দেয় সিবিআই আধিকারিকদের হাতে। সিবিআই-এর দুটো দায়িত্ব ছিল, এই ধর্ষণ খুনের প্রকৃত অপরাধীকে চিহ্নিত করা, এই খুনের পিছনে কোনও ষড়যন্ত্র থাকলে সেটা বের করে আনা, সেই সব লোকজনদের চিহ্নিত করা গ্রেফতার করা এবং যেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সেটা হল এক তদন্তকারী সংস্থা, কলকাতা পুলিশ যদি কারও নির্দেশ মেনে তথ্যপ্রমাণ লোপাট করার চেষ্টা করে তাহলে তাকেও সামনে আনা, সেক্ষেত্রেও অপরাধীদের চিহ্নিত করা, গ্রেফতার করা।
আরও পড়ুন: Aajke | মমতা ব্যানার্জির বাড়ি ভাঙচুর করো, এটাই দাবি?
১৬ তারিখ থেকে গতকাল অবধি প্রতিদিন সিবিআই অফিসারেরা সন্দীপ ঘোষ, প্রাক্তন অধ্যক্ষকে ডেকেছেন, ৮-৯-১০ ঘণ্টা ধরে জেরা করেছেন, তারপর? কোনও নতুন অপরাধীকে চিহ্নিত করেছে সিবিআই? একজনও এই ষড়যন্ত্রে জড়িত আছে এমন অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে? সন্দীপ ঘোষকে গ্রেফতার করা হয়েছে? কলকাতা পুলিশ যে সমস্ত তথ্যপ্রমাণ লোপ করার চেষ্টা চালাচ্ছিল, তা কোথাও প্রমাণিত হয়েছে? ৪ দিনের তদন্তের পরেই যে মহাবিজ্ঞরা বুঝেই ফেললেন যে কলকাতা পুলিশ সব ধামাচাপা দিচ্ছে, সেই তারা এখন সিবিআই নিয়ে এক্কেবারে চুপ, একটা কথাও বলছেন না। এঁরা সিবিআই-এর ট্র্যাক রেকর্ড জানতেন না? জানেন দেশের গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলো সব লটকে পড়ে আছে ওদের আলমারিতে। নাকি জেনেশুনেও যাতে দেরি হয়, যাতে এই মামলার সুরাহাই না হয়, তার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন সেদিন, আপাতত সেই কাজে এরা সফল। কিন্তু পাবলিক? তার মাথায় এসব আছে, আছে বলেই এবারে আড় ভেঙে উল্টো প্রতিবাদে নেমেছে তৃণমূল, তার নেতৃত্ব আর সমর্থকেরা। সাধারণ মানুষ এমনকী বিরোধী দলের সেন্সিবল মানুষজন, তাঁরা বলছেন সিবিআইকে চেপে ধর, জাস্টিস ফর আরজি কর। আমরা সেই প্রশ্নই করেছিলাম দর্শকদের কাছে, আর কতদিন এভাবেই চলবে? এবারে আমাদের প্রত্যেককেই কি রাস্তায় নেমে বলা উচিত নয় যে ১৭ দিন হয়ে গেল সিবিআই, আমাদের জাস্টিস চাই? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
কলকাতা পুলিশের কাছে তদন্তের দায়ভার থাকলে যদি রাস্তায় নেমে আন্দোলন হয় খুনি ধর্ষক কেন গ্রেফতার হল না কলকাতা পুলিশ জবাব দাও। তাহলে সিবিআই-এর কাছে মামলা, আর ১৭ দিন পরেও তার কোনও কিনারাই হয়নি, তাহলে আমাদের কি রাস্তায় নেমে এই সিবিআই, দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক যার নির্দেশে এরা কাজ করে বা দেশের প্রধানমন্ত্রীকে কি আমরা প্রশ্ন করতে পারি না যে অনেক তো হল নৌটঙ্কি, এবারে জবাব দিন, সামনে আনুন সত্যিটাকে। না পারলে সেটাও তো মানুষের জানার অধিকার আছে।