কলকাতা: প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত (Ex-envoy) অজয় বিসারিয়া তাঁর নতুন একটি বইয়ে জানিয়েছেন, ২০১৬ সালে উরিতে ভারতীয় সেনা ঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলার পরেই, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (ISI)-এর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। সেই সময় ইসলামাবাদে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত ছিলেন অজয় বিসারিয়া (Ajay Bisaria)। সম্প্রতি, ভারত-পাকিস্তান কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে একটি বই লিখেছেন তিনি। আর সেখানেই জানিয়েছেন পুলওয়ামা হামলার পরবর্তী সময়ে ভারতের দমনমূলক কূটনীতির চাপে, কীভাবে ভয়ে গুটিয়ে গিয়েছিল পাকিস্তান।
বিসারিয়া ‘অ্যাংগার ম্যানেজমেন্ট’-এ লিখেছেন, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ঘটনার পর পাকিস্তানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত শরীফের সাথে দেখা করেছিলেন। তাঁকে উরি হামলার পরিকল্পনায় আইএসআই-এর জড়িত থাকার তথ্য সম্বলিত একটি ফাইল হস্তান্তর করা হয়েছিল। ১৯ জন ভারতীয় সৈন্যের মৃত্যুর জন্য পাকিস্তানি সন্ত্রাসীবাদী সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদ (JeM) দায়ী ছিল। উরি হামলা নিয়ে শরীফের মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার কথা এর আগে জানা যায়নি। যদিও বিসারিয়া পাকিস্তানে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের নাম উল্লেখ করেননি যিনি শরীফের সাথে দেখা করেছিলেন। তবে সেই সময় পদটি ডেভিড হেলের হাতে ছিল।
২০১৬-র জানুয়ারিতে পাঠানকোটে ভারতীয় বিমান বাহিনীর ঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলার জন্যও জেইএমকে দায়ী করা হয়। ২০১৪-র উরি হামলার ফলে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের উন্নতির সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে যায়। শরীফ, উরি হামলায় আইএসআই-এর ভূমিকার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া তথ্যে হতাশ হয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বেসামরিক ও সামরিক নেতাদের নিয়ে একটি বৈঠক করেন। ভারতের দাবি নিয়ে বিদেশী রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন তৎকালীন আইএসআই-এর ডিজি অসিম মুনির (বর্তমান পাক সেনা প্রধান) এবং পাকিস্তানের তৎকালীন বিদেশ সচিব তেহমিনা জানজুয়া। বৈঠকের মধ্যেই, সকলকে থামিয়ে সেনার থেকে পাওয়া এক বার্তা পড়ে শুনিয়েছিলেন জানজুয়া। তিনি জানান, ভারত ৯টি ক্ষেপণাস্ত্র তাক করে আছে পাকিস্তানের দিকে। আর এই বার্তাই বদলে দিয়েছিল পরিস্থিতি।
আরও পড়ুন: ৪ বছরের ছেলেকে খুন, গ্রেফতার এআই কোম্পানি মালকিন
বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা জানাজুয়াকে বলেন, ভারতের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার চেষ্টা করতে। আর, তারপরই অজয় বিসারিয়াক ফোন করে জানানো হয়েছিল, ইমরান কথা বলতে চান মোদীর সঙ্গে। তিনি জানিয়েছেন, দুই মাস পরের সেই রাতে, রাত ২টোর সময় ফোন এসেছিল আইএসআই-এর এক ঘনিষ্ঠ সূত্র থেকে। অবিলম্বে আল কায়েদার হামলা চালাতে চলেছে ভারতে বলে ভারতীয় হাইকমিশনকে সতর্ক করেছে সূত্র। অসিম মুনিরের আইএসআই শুধু সেনা স্তরেই নয়, ভারতীয় হাইকমিশনের মাধ্যমে এই খবরটি ভারত সরকারের কাছেও পৌঁছে দিতে চেয়েছিল। সেই খবরের ভিত্তিতে হামলাটি ব্যর্থ করে দিয়েছিল ভারত। বিসারিয়ার মতে, পাকিস্তান হয়তো আরও একটা পুলওয়ামা হোক তা চায়নি, অথবা এসসিও শীর্ষ সম্মেলনের আগে পাকিস্তানের মুখ রক্ষা করতে চেয়েছিল। কূটনৈতিক স্তরে এই যোগাযোগ বজায় রাখতে চেয়েছিলেন পাকিস্তানের প্রাক্তন সেনা প্রধান কামার বাজওয়া। কিন্তু, রাজনৈতিক স্বার্থের কারণে সেই পতে হাঁটতে চায়নি পাকিস্তান। বাধা দিয়েছিল, আইএসআই এবং পাক সেনা কর্তাদের একাংশও।
আরও খবর দেখুন