Placeholder canvas

Placeholder canvas
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar | টিকিট না পাওয়া এ বাংলার অভিমানী ও অভিমানিনীরা?
Fourth Pillar

Fourth Pillar | টিকিট না পাওয়া এ বাংলার অভিমানী ও অভিমানিনীরা?

মোট ২২৫ জন রাজ্যসভা সদস্যের মোট সম্পদের পরিমাণ ১৮২১০ কোটি টাকা

Follow Us :

নির্বাচন আসলে বোঝা যায়, দেশের সেবা করার জন্য, আমার আপনার সেবা করার জন্য কত মানুষের কত সাধ আছে। আমার আপনার নশ্বর জীবনে এতটুকু সুখ এনে দেওয়ার জন্য কত মানুষের কী আকুলতা তা একমাত্র নির্বাচন এলেই জানা যায়। ধরুন এমনি সব দিনে আপনার নুন আনতে পান্তা ফোরানোর দিনে, আপনার সন্তানের সবল হাত চাকরির প্রতীক্ষায় অসাড় হয়ে যাওয়ার দিনে, বাজারে ব্যাগ ভর্তি টাকা নিয়ে গিয়ে লেডিজ রুমালে বেঁধে সবজি আনার দিনগুলোতে এঁরা কোথায় থাকেন? কোথায় ছিলেন? সেই দম আটকানো সময়ে একটা অক্সিজেন সিলিন্ডারের জন্য আপনি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সিকি আধুলিও খরচ করতে রাজি থাকলেও জোটাতে পারেননি। সেদিন এঁরা কোথায় ছিলেন কে জানে? জীবনের প্রতিটা নামাওঠার দিনগুলোতে ক্ষতবিক্ষত আপনার সামনে বোরোলিন নিয়েও যাঁরা হাজির ছিলেন না, সেই তাঁরা আজ কেঁদে ককিয়ে মুষড়ে, হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ ছেড়ে, স্ট্যাটাস পালটে, বিবৃতি দিয়ে কিংবা ইয়ে কেয়া হুয়া, কব হুয়া, ক্যায়সে হুয়া গান বাজিয়ে রিল পোস্ট করে উদাসী বাবা বা বিবি সেজে অঝোরে কাঁদছেন, তাঁরা সেদিন কোথায় ছিলেন? একবারও ভাববেন না যে উনি বা তিনি নিজের স্বার্থের চিন্তায় বিমর্ষ, আসলে উনি আপনার, মানে জণগণের সেবা করতে চান, আপনার জীবনের প্রতিটা সমস্যার পাশে থাকতে চান, তিনটে নির্বাচন পার করার পরে তিনি বুঝতে পারেন নদী বন্যা থামাতে মাস্টার প্ল্যান অতীব প্রয়োজনীয়, বুঝতে পারেন হুগলিতে মহিলাদের চাকরি নেই, বুঝতে পারেন রাজ্যে মহিলাদের উপর অত্যাচার হচ্ছে, বুঝতে পারেন আপনার ঘরে বেকার ছেলেমেয়ে আছে, তাদের চাকরি দরকার, বুঝতে পারেন যে জিনিসপত্রের দাম সত্যিই বেড়েছে আর তাই তিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন। আপনার সেবায় বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে, নির্বাচনের বহু আগে থেকেই তদ্বির চলতে থাকে।

সেই কবে জগদ্ধাত্রী পুজো, সেই তখন তাবত বিজেপি মাথাদের ডেকে ভক্তিভরে প্রসাদ খাইয়েছিলেন যে অভিনেত্রী তিনি কি তা এমনি এমনি খাইয়েছিলেন? সেই প্রসাদের গায়েই কি লেখা ছিল না তাঁর মনের প্রাসাদের মধ্যে রাখা সুপ্ত চিন্তা, জনগণের সেবার কথা? ছিল তো। বা সেই অভিমানিনী, চোখের জল আটকে সেদিন দেখেছিলেন র‍্যাম্পে সবাই আছে তিনি নেই। আমি নেই, আমি নেই… তাই ব্যথায় ব্যথায় মন ইত্যাদি গাইতে গাইতে সেদিন নেমে গিয়েছিলেন মঞ্চ থেকে বা সেই অভিমানী খোকা, যিনি এখনও সটান চোখ রেখেছেন বাকি চারটে আসনের দিকে, বেড়ালের ভাগ্যে শিকে যদি ছেঁড়ে। আগে দিদিকে মা বলতেন, এখন ফকিরকে বাবা বলছেন। কেন? যদি আপনার আমার, জনগণের একটু সেবার সুযোগ পাওয়া যায়, সেটাই একমাত্র কারণ। সমস্যা হল দেশে নির্বাচিত সাংসদের সংখ্যা মাত্র ৫৪২ আর এ বাংলাতেও মাত্র ৪২। এদিকে সেবা করিতে ইচ্ছুকের সংখ্যা কিছু কমসম করে বললেও শ’ পাঁচেকের কম নয়, কাজেই চক্ষু হইতে অবিরাম জল পড়িতেছে, সে বারিধারা থামিবার নহে, আহা এ জনমে বুঝি জনগণের সেবা করিবার সুযোগ মিলিল না। ছিলেন সাংবাদিক, ইংরিজি খাসা বলেন, দিল্লিতেই আবাস নিবাস, কিন্তু স্বপন দাশগুপ্তের ইচ্ছা দেশের মানুষের সেবা করিবেন। যতবার দাঁড়িয়েছেন, মানুষ মুখের উপর বলেই দিয়েছে, আসুন দাদা। কিন্তু উনি ছাড়িবার পাত্র নহেন, এবারেও তীর্থের কাকের মতো দৃষ্টি নিয়েই বসে ছিলেন, মিলিল না। আর যে সব আসনে টিকিট দেওয়া বাকি সেখানে ওনার প্রোফাইল মেলার কোনও সম্ভাবনাই নেই। আসানসোলে শত্রুঘ্ন সিনহার বিপরীতে সুললিত ইংরিজিতে বা আরও ভালো বাংলায় প্রচার করা সম্ভব নয়। ঝাড়গ্রাম তো আদিবাসীদের জন্য সংরক্ষিত, বাকি ডায়মন্ডহারবারে জামানত নিয়ে টান পড়বে আর বীরভূমে ওঁর নাম নেই। কাজেই শোনা গেল ঘনিষ্ঠ মহলে ব্যথায় ব্যথায় মন ভরে যাওয়ার গল্প করেছেন।

আরও পড়ুন: কেজরিওয়ালের গ্রেফতারি ইন্ডিয়া জোটকে ২৫০-র উপরে নিয়ে যাবে?

ওদিকে চোখে আঙুল দাদা রুদ্রনীল ঘোষ, সেই কবে নীল বাতি লাগানো গাড়ি চড়েছেন, কতদিন হয়ে গেল, সেবা করার জন্য মন আকুলি বিকুলি, আর কিছু না হোক জব্বর প্রচারের জন্যও দক্ষিণ কলকাতা আসনও কি ছাড়া যেত না? এখন একমাত্র আশা জেতা নয় আবারও সেই প্রচারের শিরোনামে থাকা। চোখ পড়ে আছে ডায়মন্ডহারবারের দিকে, একদা মায়ের ভাইপোর আসনে যদি একটু জায়গা পাওয়া যায়। ওদিকে বাঁকুড়াতে গিয়ে মাঝেমধ্যেই সমাজসেবা করেছেন, বিধানসভাতে হেরেও হাল ছাড়েননি, সেবার সুযোগ পেতেই চোখ রেখেছিলেন বাঁকুড়া আসনের দিকে, সেই সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। কালো চশমার আড়ালে অভিমানিনী মনকে বেঁধে রাখতে না পেরেই দু’চার কথা বলেই আবার সেবার সুযোগ পাওয়ার আশায় বসে থাকলেন। মঞ্চে ছিলেন, ক’দিন আগে পর্যন্ত দিদিই আমার নেত্রী গোছের কথা বলছিলেন বটে, কিন্তু বুঝতে পারছিলেন তাঁর পায়ের তলা থেকে মাটি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। চোখের সামনেই দেখলেন র‍্যাম্পে তাঁর এলাকার মানুষের সেবা করার জন্য অন্য আরেকজন হাত নাড়িয়ে ঘুরছেন, কাজেই ঘণ্টাখানেক পরেই বাড়ি পৌঁছেই ফোন লাগিয়েছেন কাঁথিতে, ছুটেছেন দিল্লি। এবং এ দলে সেবার সুযোগ না মিললে কী হবে, ও দলে সেবার সুযোগ তো মিলেছে। কত ধরনের সেবা হয় বলুন, আপনি কি জানতেন, আপনি যাঁকে ভোট দেবেন তিনি আপনাকে টিভির অন্যতম জনপ্রিয় অনুষ্ঠানে সশরীরে হাজির থাকার সুযোগ করে দিতে পারেন? হ্যাঁ, হুগলির প্রার্থী বলেই দিয়েছেন, জিতে গেলেই ব্যস, রেডি থাকুন দিদি নম্বর ওয়ানে হাজির থাকার জন্য। এদিকে একবার হেরেছেন, হারার পরে হারার জন্য নয়, সাধারণ মানুষের, আমজনতার সেবা না করতে পারার মনোকষ্ট নিয়ে কিছুদিন অন্তরীণ ছিলেন অঞ্জনা বসু, তারপর আবার সময় দেখেই জগদ্ধাত্রী পুজোয় বাড়িতেই ডেকেছিলেন তাঁদের যাঁরা ওই সেবা করা সুযোগ দিতে পারেন। কিন্তু মনে হচ্ছে তাঁদের কানে সে মনোকষ্টের কথা পৌঁছয়নি, এবারেও মিটিল না সাধ।

ওদিকে হুমায়ুন কবীর, মুর্শিদাবাদের হুমায়ুন কবীর, সব দল করেছেন, ওঁর জন্মলগ্ন থেকে একটাই প্রতিজ্ঞা, মানুষের সেবা করব। রবি ঠাকুর বলেছিলেন নামে কী এসে যায়, ওঁর বক্তব্য হল দলে কী এসে যায়, উনি ইতিমধ্যে সবক’টা স্বীকৃত দলের হয়ে নির্বাচনে নেমেছেন, শেষমেশ তৃণমূলের এমএলএ। তো সেই তিনি এবারে বিদ্রোহ ঘোষণা করলেন, কোনও পাঠানকে মেনে নেবেন না, নিজেই লড়বেন। ক’দিন পরেই বুঝেছেন অন্যধারে সাড়াশব্দ নেই, উনি নিজেকে সামলিয়ে জানালেন, প্রচারে নামব না, সর্বশেষ খবর উনি প্রচারেও নামছেন, আসলে ওই যে মানুষের সেবা করতে হবে। দেশজুড়ে ছবিটা আলাদা নয়, নির্বাচন এলেই সুইচ ওভার, নতুন মাঠ খোঁজা, নতুন নতুন তত্ত্ব তুলে ধরে দল পাল্টানো। ধরুন না নবনীত সিং বিট্টুর কথা। ২০২১-এ অধীর বাবুকে সাময়িকভাবে সরিয়ে যাঁকে কংগ্রেসের দলনেতা করা হল, সেই দলনেতা আরও বেশি করে সেবা করার জন্য বিজেপিতে চলে গেলেন, সেরকম বুঝলে ফিরেও আসতে পারেন।

সেই যে চার্টার্ড প্লেনে চেপে মানুষের সেবা করার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ মানুষের দল দিল্লি চলে গেল, তারপরে তাদের অনেকেই তো ঘরের ছেলে ঘরে ফিরেছেন। ছিলেন সাংবাদিক হলেন এমএলএ কিন্তু মনে সাধ জেগেছিল মন্ত্রী হয়েই জনগণের সেবা করার, সেই প্রবীর ঘোষাল এখন ঘরে বসে তৃণমূলের সমর্থনে প্রবন্ধ রচনা করেন, কত অভিমান তাঁর মনে জমে আছে বলুন তো। এই যে এত সেবা করার ইচ্ছা, বদলে কী পান এই নেতারা? কেন আমাদের সেবার করার জন্য তাঁদের এত হাঁ-পিত্যেশ, কেন এত উতলা তাঁরা? কেন এত কান্নাকাটি? তাহলে একটু হিসেবের দিকে চোখ রাখা যাক। ৫৩৬ জনের হিসেব পাওয়া যাচ্ছে, ৫৩৬ জন সাংসদের মধ্যে ৪৪০ জন কোটিপতি, বিজেপির ২৭৭ জনের মধ্যে ২৩৫ জন কোটিপতি, তৃণমূলের ৩৪ জনের মধ্যে ২১ জন কোটিপতি, আপ-এর ৪ জনের মধ্যে ৩ জন কোটিপতি, সিপিএম-এর ৯ জনের মধ্যে ৩ জন কোটিপতি, সিপিআই-এর লোকসভাতে একজন সাংসদ, তিনি কোটিপতি। কংগ্রেসের ৪৪ জনের মধ্যে ৩৫ জন কোটিপতি, আরএসপি-র একজন, তিনিও কোটিপতি, আরজেডির তিনজনের তিনজনই কোটিপতি। ২০১৪-তে যাঁরা দ্বিতীয়বারের জন্য সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁদের সম্পত্তি বেড়েছে দ্বিগুণ, হ্যাঁ এটাই হিসেব বলছে। দেশের মানুষের রোজগার কমছে, আদানিদের বাড়ছে, সাংসদদের বাড়ছে, ৮২ শতাংশ সাংসদ কোটিপতি কোন দেশের? যে দেশের নীচের ৫০ শতাংশ মানুষের বছরের আয় ৬০ হাজার টাকার কম, মানে মাসে ৫০০০ টাকা। এবার বুঝলেন তো আমাদের সেবা করার জন্য এই যে এত আকুলি বিকুলি, এত কান্না এত অভিমান, তা আসলে কোন কারণে। এই হিসেবটা ২০১৪ সালের। আর এই সেবার রাজত্বে যাঁরা জামাই, যাঁদের কষ্ট করে প্রচারেও নামতে হয় না, সেই রাজ্যসভার সাংসদদের হিসেব বলছে ১২ শতাংশ রাজ্যসভার সাংসদ বিলিওনিয়ার, মানে? মানে তাদের ১০০ কোটি টাকা আছে। মোট ২২৫ জন রাজ্যসভা সদস্যের মোট সম্পদের পরিমাণ ১৮২১০ কোটি টাকা। তাই এঁরা টিকিট না পেলে অভিমান করেন।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
আমার শহর (Amar Sahar ) | ডাক্তার না থাকায় বন্ধ ইউএস জি বিভাগ
02:14
Video thumbnail
Sandeshkhali | ভাইরাল সন্দেশখালির নতুন ভিডিও, রাষ্ট্রপতির কাছে যাওয়া মহিলাদের পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন
16:22
Video thumbnail
Dilip Ghosh | বুধবার দিলীপকে আটকানো নিয়ে তুলকালাম
03:53
Video thumbnail
Dilip Ghosh | কলকাতা টিভিতে এক্সক্লুসিভ দিলীপ ঘোষ, "শুভেন্দু যা বলেছেন, খারাপ কিছু বলেনি"
02:36
Video thumbnail
Suvendu Adhikari | শুভেন্দুর উদ্দেশে 'চোর' স্লোগান, মেজাজ হারিয়ে বিতণ্ডায় বিরোধী দলনেতা
01:18
Video thumbnail
Suvendu Adhikari | মহিলাকে অশালীন ভাষায় আক্রমণ শুভেন্দুর
02:16
Video thumbnail
পায়ে পায়ে ধর্মযুদ্ধে | ঘাটালে জোর কদমে প্রচার বামেদের
05:43
Video thumbnail
Bankura | দুই তৃণমূল নেতাকে ঘরছাড়া করার হুঁশিয়ারি, ফের বিতর্কে বিজেপি বিধায়ক
02:30
Video thumbnail
Rajbhawan | শ্লীলতাহানির অভিযোগে এবার সিসি ক্যামেরা ফুটেজ প্রকাশ্যে আনার ঘোষণা রাজভবনের
04:01
Video thumbnail
Dilip Ghosh | 'অচেনা জায়গাকে চেনা করাই আমার কাজ' -দিলীপ ঘোেষ
02:40