Placeholder canvas

Placeholder canvas
HomeআজকেAajke | দিলীপ ঘোষ কি শুভেন্দু অধিকারীর পাকা ঘুঁটি কাঁচিয়ে দেওয়ার চেষ্টা...
Aajke

Aajke | দিলীপ ঘোষ কি শুভেন্দু অধিকারীর পাকা ঘুঁটি কাঁচিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন?

আমাদের দিলু ঘোষ জানতেন দলও তাঁর এমন কথাবার্তা নিয়ে ফাঁপরে পড়বে

Follow Us :

আপাতত দেশের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর বাবা কে? তাঁর নাম কী? এরকম কথাও বলে ফেললেন দিলীপ ঘোষ। এমনিতে উনি বড় মুখ, ইংরিজিতে যাকে বলে লাউড মাউথ, সবাই জানে। বহু কথা বহু সময়ে বলেছেন যা নিয়ে সোশাল মিডিয়াতে হইচই হয়েছে, বঙ্গ সমাজে আলোচিত হয়েছে। সেসব কথা কখনও সখনও নেহাতই হাসির খোরাক, কখনও সখনও অর্বাচীন কথাবার্তা, কখনও বা অশালীন, কুরুচিকর। উনি যে আরএসএস-এর ছত্রছায়াতেই বেড়ে উঠেছেন, ওনার পিতৃ মাতৃ কুল নয়, ওনার আপ ব্রিঙ্গিং, ওনার বেড়ে ওঠার যে আশ্রম, সেখানেই নিশ্চিত এই শিক্ষা উনি পেয়েছেন কারণ কেবল উনি তো নন, ওনার দলের, ওনার পাশাপাশি অনেকেই এমন কথাবার্তা বলে থাকেন। এখন যে সংগঠন মনুবাদে বিশ্বাস করে, তাদের কাছে নারী তো নরকের দ্বার, তাদের কাছে নারী তো সন্তানের জন্ম দেওয়ার এক যন্ত্র, রান্নাঘর সামলানোর এক ব্যবস্থা মাত্র। সেখানে তো বলাই আছে, নারী জন্মের পরে তার পিতার, বিবাহের পরে তার স্বামীর, বৈধব্যের কালে তার পুত্রের কথা শুনে চলবে। সেই মনুবাদী আরএসএস-এর ছায়ায় লালিত পালিত দিলু ঘোষ যে কোনও মহিলার পিতৃপরিচয় নিয়ে টান দিতেই পারেন, এ হক তাঁকে মনুসংহিতা জুগিয়েছে। তাঁর সমাজ দর্শন এই মনুবাদের ছাতার তলাতেই গড়ে উঠেছে। কাজেই তিনি গরুর কুঁজে সোনা পাবেন, বুদ্ধিজীবীদের চামড়া তুলে নেবেন বা মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর পিতৃপরিচয় জানতে চাইবেন এ তো স্বাভাবিক, এক আজন্ম অনুগত আরএসএস প্রচারকের স্বাভাবিক কাজ। কিন্তু সময়টা ঠিক বাছলেন? নাকি জেনেশুনেই কারও পাকা ঘুঁটি কেঁচে দেওয়ার জন্যই এটা করলেন? এই আলোচনা আপাতত বাংলার বিভিন্ন মহলে। আর ঠিক তাই সেটাই বিষয় আজকে, দিলীপ ঘোষ কি শুভেন্দু অধিকারীর পাকা ঘুঁটি কাঁচিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন?

কাউকে কাউকে দেখলেই উন্মাদ বলে মনে হয়, মনে হয় এনাদের মুখ থেকে যে সব কথা বের হচ্ছে, এনারা যা বলছেন তা এলোমেলো আচমকা মুখ থেকে বেরিয়ে যাওয়া কথাবার্তা, মনে হবে যে এনারা হিসেব করে কথা বলতে পারেন না, তাই এনাদের কথা নিয়ে এত আলোচনা হয়, হাসাহাসি হয়, বিতর্ক হয়, ছিছিক্কার ওঠে। কিন্তু একটু ভালো করে খেয়াল করলে দেখবেন, এদের অনেকেরই এসব কথা বার্তা বলার একটা স্টাইল আছে, অনেক ভেবেচিন্তেই তাঁরা এরকম একটা কথা বলেন। মনে হতেই পারে যে আচমকা তিনি এই কথাটা বলে ফেলেছেন কিন্তু আসলে এই বলার পিছনে অনেক সময়েই থাকে অনেক পরিকল্পনা, সাদা বাংলাতে অনেক ছক থাকে।

আরও পড়ুন: বাংলার বিজেপিতে অধিকারী যুগের শুরুয়াত কি ২৫-৩০টা আসনে জয় এনে দেবে?

হ্যাঁ, ওই পাগলামির মধ্যেও এক শৃঙ্খলা থাকে, দেয়ার ইজ আ মেথড ইন দ্য ম্যাডনেস। দিলু ঘোষ হলেন তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। উনি জানেন এই কথা বলার পরে ছিছিক্কার উঠবে, উনি ভালো করেই জানেন যে রাজ্য জুড়ে প্রতিটি আসনে বিশেষত যে যে আসনে বিরোধী মহিলা প্রার্থী আছেন তাঁদের কেন্দ্রে এই কথা উঠে আসবে বার বার। তার চেয়েও ভালো জানেন যে বিজেপির যে সব মহিলা প্রার্থীরা এই বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে দাঁড়িয়েছেন, সেই লকেট চ্যাটার্জি, অগ্নিমিত্রা পল বা দেবশ্রী চৌধুরী কিন্তু ফাঁপরে পড়বেন এই কথা বলা নিয়ে। সম্ভবত উনি এটাও জানতেন যে ওনার এই উক্তি অস্বস্তিতে ফেলবে বাংলার নেতৃত্বকে। তাহলে কি তিনি সেটাই চেয়েছিলেন? আচমকাই বলেননি, বলেছেন আপাতত বাংলা বিজেপির মাথায় চড়ে বসা শুভেন্দু অধিকারীর পাকা ঘুঁটিগুলো কাঁচিয়ে দিতে। কেনই বা দেবেন না? উনিই তো সেই রাজ্য সভাপতি যাঁর আমলে বিজেপি তার সর্বোচ্চ শিখরে চেপেছে, ১৮টা এমপি, ৭০-এর বেশি এমএলএ, ভোট পার্সেন্টেজ কমবেশি ৪২ শতাংশ, এ কি কম কথা? মেদিনীপুর আসনের কথাই ধরুন না, সেই কবে ১৯৫২তে সাধারণ নির্বাচনে এই আসন জিতেছিলেন জনসঙ্ঘের প্রার্থী দুর্গাচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, তারপর থেকে কি জনসংঘ কি বিজেপি, আসন তো এল ২০১৯-এ দিলু ঘোষের হাত ধরে। সেই দিলু ঘোষকে রাজ্য নেতৃত্ব থেকে সরানো হয়েছে, রাজ্য দফতরে তাঁর চেম্বারে তালা ঝুলিয়ে তাঁর বসা বন্ধ করা হয়েছে। প্রার্থী চয়নের সময় একটা কথাও তাঁর সঙ্গে বলা তো হয়ইনি উল্টে তাঁর জেতা আসন শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ অগ্নিমিত্রা পলের হাতে তুলে দিয়ে ফাঁকতালে সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়ার আসন বর্ধমান উত্তর পূর্বে তাঁকে দাঁড় করানো হয়েছে, তাঁর দ্বিতীয় পছন্দ দমদমও তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যাওয়া শীলভদ্র মজুমদারকে দেওয়া হয়েছে। দিলু ঘোষ ছোটবেলা থেকেই আরএসএস-এর প্রচারক, কিন্তু তাঁর মন থেকে রাগ দ্বেষ, হিংসা, ঘৃণা সব বেরিয়ে গিয়ে উনি একজন অচিন্ত্য পুরুষ, এমনটা ভাবার কি কোনও কারণ আছে? তিনি যথেষ্ট ভেবেই এই গুগলিটি ছুড়েছেন, এবং মিলিয়ে নেবেন এটাই শেষ নয়, উনি এরকম আরও ছড়াবেন। তাঁর তূণীরে এখনও রয়েছে যথেষ্ট বিষবাণ, উনি আমাদের কাঁথির খোকাবাবুর থেকে যথেষ্ট বুদ্ধিমান, সুযোগের অপেক্ষাতে আছেন, কামড় দেবেন, দিলে জ্বলবে। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, এই যে কুকথা তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে বললেন, তা কি ভেবেচিন্তেই শুভেন্দুর পাকা ঘুঁটি কাঁচিয়ে দিতেই বললেন? এর ফলে কি দল, দলের প্রার্থীরা বিড়ম্বনায় পড়ল না? শুনুন মানুষ কী বলেছেন।

আমার বদ্ধমূল ধারণা আমাদের দিলু ঘোষ জানতেন দলও তাঁর এমন কথাবার্তা নিয়ে ফাঁপরে পড়বে এবং দলের তরফে একটা আনুষ্ঠানিক বিরোধিতা করা হবে। এইজন্য নয় যে এই সব কথা বলা বিজেপির সংস্কৃতি বিরোধী। না, তা কখনও নয় কারণ এই তো ক’দিন আগেই বিজেপি এমপি রমেশ বিধুরি সংসদে বসেই এক সংখ্যালঘু সাংসদকে যে ভাষায় কথা বললেন তা সভ্য সমাজে বলা হয় না। তিনি বললেন এবং বাকি বিজেপি সাংসদরা তা শুনে হ্যা হ্যা করে হেসেওছিল। তাই এসব কথা বিজেপির সংস্কৃতির মধ্যেই পড়ে, কিন্তু এটা নির্বাচনের সময়, কিন্তু এটা বাংলা এবং দিলু ঘোষ এই কথা এক সুচিন্তিত পরিকল্পনা নিয়েই বলেছেন, তাই দলের সভাপতির নির্দেশে দিলু ঘোষকে সতর্ক করা হল। মানে যে কথা বলার জন্য কানের গোড়ায় একটা সপাটে থাপ্পড় মারার কথা সেখানে আলতো করে দুষ্টু বলা হল। কিন্তু আমাদের বিশ্বাস উনি যা করার করেছেন, বাংলার মানুষ যা করার তা করবেন।

RELATED ARTICLES

Most Popular