Sunday, June 29, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar | প্রতিটা রাজ্যেই বিজেপিতে ধুন্ধুমার
Fourth Pillar

Fourth Pillar | প্রতিটা রাজ্যেই বিজেপিতে ধুন্ধুমার

হয়, ধস নামার আগে এরকমই হয়

Follow Us :

বিজেপির জন্য উত্তরপ্রদেশ থেকে ক্রমাগত খারাপ খবর আসছে। আদিত্যনাথ যোগীর সঙ্গে দু’ দুজন উপমুখ্যমন্ত্রীকে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল, কেশবপ্রসাদ মৌর্য আর ব্রজেশ পাঠক। একজন আরএসএস-এর কাছের লোক, কেশবপ্রসাদ মৌর্য, হেরেছিলেন বিধানসভা ভোটে, কিন্তু মূলত আরএসএস-এর চাহিদাতেই এমএলসি থেকে জিতিয়ে এনে তিনি উপমুখ্যমন্ত্রী। আর অন্যজন আবার আমাদের ছোটা মোটা ভাই অমিত শাহের লোক ব্রজেশ পাঠক, কিন্তু এই দু’জনের সঙ্গে আপাতত যোগীজির যাকে বলে ছত্তিশ কা আঁকড়া, চূড়ান্ত খারাপ সম্পর্ক। কেশব মৌর্য তো সরাসরি বিদ্রোহ করছেন, এবং যোগীজি উঠে পড়ে নেমেছেন, এই দুজনকেই শিক্ষা দিতে। কাজেই উত্তরপ্রদেশ আপাতত এই মহারথীদের লড়াইয়ের মধ্যে আটকে আছে। দু’ দু’বার অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করেছেন কেশব মৌর্য আর এরই মধ্যে রাজ্যের বিভিন্ন অফিসার আমলাদের যোগীজি ট্রান্সফারের নির্দেশ দিয়েছেন, এদের মধ্যে বেশিরভাগই নাকি কেশব মৌর্যের ঘনিষ্ঠ। যে কোনও দিন একটা শো ডাউনের দিন গুনছে উত্তরপ্রদেশ। কিন্তু এটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ? আসলে মাথার ঘায়ে কুত্তা পাগল, কেবল কুকুর নয়, মাথায় ঘা পড়লে সবারই একই দশা হয়। আর সেই ১৯৫২ থেকে ভারতের শাসকদলের মাথা বা প্রাণভোমরাও বলা যায়, সেটা হল উত্তরপ্রদেশ। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে স্টেবল সরকার হয়েছে, এমন প্রত্যেক সরকারের বড় সমর্থন এসেছে ওই উত্তরপ্রদেশ থেকে। একটা সময়ে উত্তরাখণ্ড, হিমাচলও ওই উত্তরপ্রদেশের মধ্যেই ছিল, সেসব বাদ দিয়েও এখনও উত্তরপ্রদেশের মোট আসন ৮৮।

কাজেই উত্তরপ্রদেশ দরকার, এবং সেই দলকে টিকতে হলে উত্তরপ্রদেশের বিধানসভাও দরকার। বিধানসভা সরে গিয়েছিল, হেরে গিয়েছিল কংগ্রেস, একইসঙ্গে তারা জাতীয় রাজনীতিতেও পিছোচ্ছিল। কাজেই দেশের শাসকদলের এক প্রাণভোমরা থাকে ওই উত্তরপ্রদেশে, আমি জানি, আপনি জানেন, জে পি নাড্ডা জানেন, জানেন মোদি-শাহ। আর সেটাই ঘা, সেটার জ্বালাতেই বিজেপির নাভিশ্বাস উঠছে। ঠিক কতটা খারাপ উত্তরপ্রদেশের অবস্থা? লোকসভার নির্বাচনে বিজেপির এই খারাপ ফলাফল তো মূলত তিনটে রাজ্যে তাদের ব্যর্থতার জন্য, মহারাষ্ট্র, ৪৮টা আসন আছে, পশ্চিমবঙ্গ ৪২টা আসন, আর উত্তরপ্রদেশ যেখানে মোট ৮৮টা আসন আছে, মোট ১৭০টা আসন। বাংলায় টার্গেট ছিল কম করে ২৫-২৮, এসেছে ১২টা, মহারাষ্ট্রে বিজেপির ১৪টা আসন কমেছে, পেয়েছে ৯টা, আর উত্তরপ্রদেশে ৬২ থেকে কমে ৩৩। ইন্ডিয়া অ্যালায়েন্স ৪৩ আর এনডিএ ৩৭। এটাকে যদি বিধানসভার আসন ভিত্তিক হিসেবে দেখা যায় তাহলে ২২৪টা আসন পেয়েছে ইন্ডিয়া জোট, এনডিএ ১৭৪টা আর ৫টা আসনে ওই চন্দ্রশেখর আজাদের দল, যারা কোনওদিনও বিজেপির সঙ্গে যাবে না। তো এবারে একটা যুক্তি আসতেই পারে যে বিধানসভার রেজাল্ট কি এরকমই হবে? না, হবে না, এর থেকে অনেক খারাপ হবে। মোদিজির ভোট মানে দেশের সরকার গড়ার জন্য ভোট চাইলে মোদিজির প্রধানমন্ত্রিত্বের জন্য ভোট চাইলে ৬-৮-১০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি ভোট পড়ে, মানে এই ভোট ছিল মোদি-যোগীর ভোট। সেখানেই যদি ১৭৪ হয় তাহলে রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনে ১৪০ পার করা অসম্ভব। আর বিধানসভা হেরে গেলে তারপরের লোকসভাতে দিল্লি দূর অস্ত।

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | বাজেটে বাংলার হাতে পেনসিল

এটাই হল সেই মাথার ঘা, যার জ্বালায় ছটফট করছে বিজেপি। এবং এটা হঠাৎ হয়েছে তাও নয়। ধরুন ২০১৭-র বিধানসভা, ৩১২টা আসনে জিতেছিল বিজেপি একাই, ২০২২-এ? ৬৭টা আসন কমে ২৫৫টাতে জিতেছিল, শরিক অপনা দল ইত্যাদিদের নিয়ে ২৭৩। সমাজবাদী দল ২০১৭তে মাত্র ৪৭টা আসন, ২০২২-এ ৬৪টা বেড়ে ১১১টা আসনে। এবারে সেই বৃদ্ধিই আরও এগিয়েছে। এবং এর উপরে যোগ হয়েছে দলের ভিতরে বিরাট গোলযোগ। ২০২২-এ সিরাথু থেকে দাঁড়িয়েছিলেন কেশবপ্রসাদ মৌর্য, তিনি ২০১৭তেই মুখ্যমন্ত্রী পদের হকদার ছিলেন, হয়েছেন আদিত্যনাথ যোগী আর ২০২২-এ তিনি হেরে গেলেন অপনা দল কামেরাবাদীর ডঃ পল্লবী প্যাটেলের কাছে। এই দলে আদত অপনা দলের থেকে বেরিয়ে তৈরি হয়েছে, জোট আছে সমাজবাদী দলের সঙ্গে এখন ইন্ডিয়া অ্যালায়েন্সের সদস্য। এই হার যে আসলে যোগীজির কারসাজি, সেটাই তিনি মনে করেছেন, যদিও তাঁকে পরে উপমুখ্যমন্ত্রী করা হয়েছে, এমএলসি হিসেবে জেতানো হয়েছে। কিন্তু হারের জ্বালা বড় জ্বালা, তিনি এবার মাঠে ফুল ফোর্স নিয়ে। আমাদের বাংলার চুলচেরা বিশ্লেষণের লাইভ স্ট্রিমিং হয়েছে, সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিল, কিন্তু ক’দিন আগে লখনউয়ে নির্বাচনী পর্যালোচনার বৈঠক ছিল। সে বৈঠকে সাংবাদিকদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি, এই কেশব মৌর্য সেখানে বলেছেন সংগঠন সরকার সে বড়া হ্যায়, কার্যকর্তাও কা দর্দ মেরা দর্দ হ্যায়, সংগঠনসে বড়া কোই নহি, কার্যকর্তা হি গৌরব হ্যায়। কেবল বলেননি টুইটও করেছিলেন, পরে চাপ খেয়ে সেটা ডিলিট করেছেন কিন্তু অন্তর্জালে তা উপস্থিত। এদিকে এই কেশবপ্রসাদ মৌর্য ওবিসি, উত্তরপ্রদেশের ৫০ শতাংশের বেশি ওবিসি, ওদিকে যোগী রাজপুত, আপার কাস্ট ব্রাহ্মণ মিলিয়ে উত্তরপ্রদেশে ১৫ শতাংশ থেকে ১৮ শতাংশ। কাজেই এই কেশব মৌর্য তাঁর দাবেদারি সাফ জানিয়েছেন দিল্লির কাছে, দু’ দু’বার নাড্ডাজির সঙ্গে বৈঠকও হয়ে গেছে। ওদিকে ইউপিতে রাজ্য সভাপতি ভূপেন্দ্র চৌধুরি, তাঁকে সরাতেই হবে, তিনি সরবেন না, স্বয়ং মোদিজি তাঁকে ডেকে বৈঠক করলেন, সভাপতির পদে কে আসবেন, কেশব মৌর্য? সভাপতি আর মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে ক্যাচালটা জমবে ভালো, কিন্তু একটা লবি এখনই যোগীকে সরাতে চায়, ওদিকে কেশব মৌর্য পুরনো আরএসএস নেতা। সব মিলিয়ে খেলা জমে ক্ষীর।

একবার বিজেপির দিকে তাকান, মাত্র ক’মাস আগে এক ইনভিন্সিবল পাওয়ার মোদি-শাহ, যা করছেন করে যাচ্ছেন কেউ কোনও প্রশ্নও করছে না, যাকে ইচ্ছে তাকে মুখ্যমন্ত্রী করছেন, যাকে ইচ্ছে তাকে সরিয়ে দিচ্ছেন, আজ নীতি আয়োগের কমিটিতে অপনা দলের প্রতিনিধিকে রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। মোদিজির স্লোগান সবকা সাথ সবকা বিকাশ চ্যালেঞ্জড হচ্ছে, শুভেন্দু ক্লারিফিকেশন দিয়েছেন কিন্তু এরপর থেকে যতবার বলবেন ওই সবকা সাথ সবকা বিকাশ তত বার ওই প্রশ্নটা তো উঠবেই। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী দলের নেতাকে বলছেন উতনা কুদো মৎ, সব ঠিক হ্যায়। অসমের মুখ্যমন্ত্রী বলছেন অসমের ডেমোগ্রাফি বদলে যাচ্ছে, ১০ বছর বিজেপির শাসন চলছে। উত্তরপ্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রী সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন, সংগঠন সরকারের চেয়ে বড়, ব্যক্তির চেয়ে বড়, মানে যোগীজি সংগঠনকে গিলে খেতে চাইছিলেন, চলবে না। বাংলার বিরোধী নেতা বলছেন, আমি সংগঠন দেখি না, সভাপতি বলছেন সংগঠন তো মাত্র ২৫ শতাংশ। উত্তরপ্রদেশে শুরু হয়েছে পহলে আপ পহলে আপ, লখনউ বলছে দিল্লি দায়ী, দিল্লি বলছে লখনউ। এবং আক্ষরিক অর্থেই খিল্লি করছেন সমাজবাদী নেতা অখিলেশ যাদব, উনি টুইট করেছেন, মনসুন অফারস লাও সরকার বানাও, বিহার কো দেখকর শিখো, মানে মৌর্যবাবু ১০০ জন এমএলএ নিয়ে আলাদা হন আমরা সমর্থন দিয়ে দেব। ওদিকে বিজেপি রাজ্যের নেতারা দৌড়াচ্ছেন দিল্লি, নাড্ডা-শাহ আপাতত সেটা সামাল দিতে ব্যস্ত। জগৎপ্রসাদ নাড্ডার জায়গায় কে? ধুন্ধুমার চলছে। আর সেই সময়ে এই বঙ্গে ক্যাচাল, মহারাষ্ট্রে অজিত পাওয়ার জোটে থাকলে নাকি বিরাট হার নিশ্চিত, ওধারে অজিত পাওয়ার ৭০-৮০টা আসন দাবি করেছে, বিজেপি এনসিপি অজিত গোষ্ঠীকে ঝেড়ে ফেলতে চায়, দিল্লি এখনও সিগন্যাল দেয়নি, তারা অঙ্ক কষছে। বিহারে সম্রাট চৌধুরি মাথার পাগড়ি খুলেছেন বটে কিন্তু নীতীশ কুমারের বিরুদ্ধে বিহার বিজেপির ক্ষোভ তুঙ্গে। রাজস্থানে কিরোড়ি লাল মিনা পদত্যাগ করে তাঁর ক্ষোভ জানিয়ে দিয়েছেন, রাজমাতা তাঁর ঘুঁটি চালছেন। সব মিলিয়ে বিভিন্ন রাজ্য থেকে বড্ড খারাপ খবর আসছে। হয়, ধস নামার আগে এরকমই হয়।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Good Morning Kolkata | সকালের গুরুত্বপূর্ণ খবর, দেখুন একনজরে সরাসরি
00:00
Video thumbnail
Donald Trump | কে এই মামদানি? যাকে ভ/য় পান ট্রাম্প, যু/দ্ধ আবহে এল বড় খবর
00:00
Video thumbnail
Iran-Israel | America | ইরানকে কী কী কারণে ভ/য় পাচ্ছে আমেরিকা-ইজরায়েল?
00:00
Video thumbnail
India-Pakistan | ফের ভারতের ভয়ে কাঁপছে পাকিস্তান, দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
00:00
Video thumbnail
Kunal Ghosh | TMC | তৃণমূল ভবনে CCTV ফুটেজ দেখালেন কুণাল, তোলপাড় বাংলার রাজনীতি
00:00
Video thumbnail
America | China | India | আমেরিকা, চিন, সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দাদাগিরি বন্ধ করবে ভারত?
00:00
Video thumbnail
Donald Trump | কে এই মামদানি? যাকে ভ/য় পান ট্রাম্প, যু/দ্ধ আবহে এল বড় খবর
11:09:57
Video thumbnail
India-Pakistan | ফের ভারতের ভ/য়ে কাঁ/পছে পাকিস্তান, দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
11:05:55
Video thumbnail
India | European Union | আমেরিকা, চিন সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দাদাগিরি বন্ধ করবে ভারত?
10:54:31
Video thumbnail
জনতা যা জানতে চায় | বদলে যাওয়া বিদেশ নীতি, নেহেরু থেকে মোদি
08:58:16

Deprecated: Automatic conversion of false to array is deprecated in /var/www/ktv/wp-content/themes/techinfer-child/functions.php on line 39