ওয়েবডেস্ক: ‘টেলিকম ডিপার্টমেন্ট থেকে বলছি। আপনার নামে ভুয়ো সিম তোলা হয়েছে। সেখান থেকে বেআইনি কাজ হয়েছে’। শুনেই চমকে যান ৮২ বছরের অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী দিওগজেরন সন্তান নাজারেথ। তারপরই ফোনের অপর প্রান্ত থেকে কল অন্যজনকে ট্রান্সফার করা হয়। সে বলে, ‘ক্রাইম ব্রাঞ্চ থেকে বলছি। আপনার সম্পত্তি, টাকা পয়সার নথি দেন। আইনি সমস্যায় পড়বেন’। তারপরেই টাকা চেয়ে চাপ। হেনস্তা থেকে বাঁচতে ভয়ে সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে দেন। শেষে স্ত্রীর সোনা বন্ধক দিয়ে ঋণ নিয়ে সাড়ে সাত লক্ষ টাকা দেন। সব মিলিয়ে ৫০ লক্ষ টাকা দেন। তারপরও চাপ আসতে থাকে। রেহাই মেলেনি। অবশেষে সাইবার প্রতারণার মর্মান্তিক পরিণতি। শেষে আশির কোঠার প্রবীণ দম্পতি আত্মঘাতী হলেন। দুই পাতার সুইসাইড নোটে প্রতারকদের নাম লিখে গেলেও মৃত্যুর জন্য কাউকে দায়ী করতে চাননি ওই দম্পতি। চাঞ্চল্যকর বিষয় হল, তাঁরা বোধহয় জানতেও পারেননি প্রতারকের খপ্পরে পড়েছেন। তাই সুইসাইড নোটেও বন্ধক রাখা সোনা বিক্রি করে বাকি ঋণ শোধ করার কথা বলেছেন। কর্নাটকের (Karnataka) বেলাগাভি (Belagavi) জেলার খানাতালুকের বিড়ি গ্রামের ঘটনা। বৃহস্পতিবার ডিওগজেরন সন্তান নাজারেথ (Diogjeron Santan Nazareth) (৮২) ও ফ্লাভিয়ানা (Flaviana) (৭৯) নামে নিঃসন্তান দম্পতির দেহ উদ্ধার হয়েছে। ঘটনায় আত্মহত্যায় প্ররোচনা ও সাইবার প্রতারণার অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে পুলিস।
প্রতিবেশীরা সংজ্ঞাহীন বৃদ্ধার দেহ বিছানার মধ্যে দেখতে পান। প্রাথমিকভাবে অনুমান, তিনি বিষ পান করেছেন। তারপরই বাড়ির নীচে ভূগর্ভস্থ ট্যাঙ্কের জলের মধ্যে বৃদ্ধের দেহ পাওয়া যায়। তাঁরা শরীরে ছুরির আঘেতের চিহ্ন ছিল। উদ্ধার হওয়ায় নোটে অমিত বিররা ও অনিল যাদবের নাম রয়েছে। অমিত টেলিকম ডিপার্টমেন্টের আধিকারিক পরিচয়ে প্রথম ফোন করেছিল। তারপর অনিল ক্রাইম ব্রাঞ্চের পরিচয় দেয় নিজেকে। পুলিস ঘটনাস্থল থেকে ছুরি, মোবাইল ও সুইসাইড নোট বাজেয়াপ্ত করেছে। বেলাগাভির এসপি ভীমাশঙ্কর গুলেদ বলেন, সুইসাইড নোট ও প্রাথমিক তদন্তের পর নোটে থাকা দুজনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন: মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা করতে পুলিশ সাংবিধানিকভাবে বাধ্য, সুপ্রিম নির্দেশ
বৃদ্ধ লিখেছেন, আমি ৮২ বছরের বৃদ্ধ। আমার স্ত্রীর বয়স ৭৯। আমাদের সমর্থন করার কেউ নেই। কারও দয়ায় আমরা বেঁচে থাকতে চাই না। তাই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কোনও মেডিক্যাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দেহ দান করে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন তিনি। ডিজিটাল অ্যারেস্টের মতো সাইবার প্রতারণা দিন দিন মহামারীর আকার ধারণ করছে। ডিজিটালে বন্দি জীবনে সতর্ক হতে সাইবার সচেতনতার প্রয়াজনীয়তা বাড়ছে।
দেখুন অন্য খবর: