Monday, June 2, 2025
HomeScrollAajke | বোমার ভয়ে কলকাতা
Aajke

Aajke | বোমার ভয়ে কলকাতা

সা রে গা মা পা ধা নি, বোম ফেলেছে জাপানি, বোমের ভেতর কেউটে সাপ, ব্রিটিশ বলে বাপ রে বাপ

Follow Us :

সা রে গা মা পা ধা নি, বোম ফেলেছে জাপানি, বোমের ভেতর কেউটে সাপ, ব্রিটিশ বলে বাপ রে বাপ। হ্যাঁ, এরকমই ছিল ছড়াটা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এক্কেবারে শেষের দিকে বোমারু বিমান চক্কর দিচ্ছে কলকাতার মাথায়, সেদিনও এরকম ড্রিল হত, বোম পড়লে কী করতে হবে তা শেখাতেন ব্রিটিশ আর্মিতে ট্রেনিং নেওয়া কিছু বাঙালি। সে দিন ছিল রবিবার। ১৯৪৩ সালের ৫ ডিসেম্বর। বেলা এগারোটা পনেরো মিনিটে বিমান হানার সঙ্কেত দিয়ে কলকাতায় বেজে উঠল সাইরেন। এগারোটা সাতাশ মিনিটে বাজল লাল সাবধানী সাইরেন, মানে রেড অ্যালার্ট। ‘স্টেটসম্যান’ পত্রিকার বিশিষ্ট সম্পাদক আয়ান স্টিফেন্স লিখেছেন, “ঠিক কুড়ি মিনিট পরে আকাশ থেকে ভেসে এল গুড়গুড় শব্দ। আড়াইশো জাপানি বোমারু বিমান তিন ঝাঁকে বিভক্ত হয়ে হানা দিল কলকাতার উপর। কুড়ি হাজার ফুট উপর থেকে তারা নেমে এল কলকাতার ডক অঞ্চলে। ঠিক তার আগের দিন ভাইসরয় কলকাতায় এসে এআরপি-র মহড়া পরিদর্শন করে গিয়েছিলেন। বলাই বাহুল্য সে মহড়া বাঙালি মনে খুব একটা দাগ কাটতে পারেনি। টেনিদা সুলভ অবজ্ঞায় বাঙালি ভেবেছিল, এসব সার্কাস। তারপর সেদিন গোটা কলকাতায় ও কলকাতা সংলগ্ন শিল্পাঞ্চলে সাইরেন বেজে উঠল। সবাই ভেবেছিল মহড়ার নকল সাইরেনে। ঘণ্টাখানেক পরে আকাশে দেখা দিল জাপানি বোমারু বিমান। তারা বোমা ফেলল কলকাতার বিভিন্ন স্থানে এবং মফস্‌সলের শিল্পাঞ্চলে। বোমার আঘাতে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত তথ্য প্রকাশ করতে দেওয়া হল না সেন্সর করে। ‘দ্য স্টেটসম্যান’ পত্রিকা ২২ ডিসেম্বর বিমানহানার ক্ষয়ক্ষতির বর্ণনা দিতে গিয়ে লিখল, বোমার আঘাতে নিহত ও আহতের সংখ্যা নাকি খুবই কম। বিমানহানা হল প্রায় পর পর পাঁচ রাত— ২০, ২১, ২৩, ২৪ ও ২৮ ডিসেম্বর— বড়দিনের আগের রাতে বোমা পড়ল শহরের মাঝখানে। সে রাতের বিমান হানার ব্যাপকতা ছিল পাঁচ রাতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। সেই কাহিনিই আজ আমাদের বিষয় আজকে, বোমার ভয়ে কলকাতা।

জাপান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোগ দিলেও ভারতের ইংরেজ সামরিক কর্তৃপক্ষ মনে করেছিল, জাপান যতক্ষণ না পর্যন্ত সিঙ্গাপুর দখল করতে পারছে, তাদের পক্ষে ভারত বা শ্রীলঙ্কায় অভিযান চালানো অসম্ভব। আর ব্রিটিশ-অধিকৃত সিঙ্গাপুরের পতন ঘটানো জাপানিদের পক্ষে সহজ হবে না, এটাই ছিল তাদের বিশ্বাস। সামরিক কর্তৃপক্ষ এক অদ্ভুত আত্মতুষ্টির শিকার হয়েছিল ভারতের প্রতিরক্ষার ব্যাপারে। ফলে ১৯৩৯-এর আগে পূর্ব-সীমান্তের প্রতিরক্ষা নিয়ে গড়ে তোলা হয়নি কোনওরকম নিখুঁত পরিকল্পনা।

আরও পড়ুন: Aajke | ছাল ছাড়িয়ে নুন মাখিয়ে, বিজেপির কালাপাহাড় এখন দিলীপ ঘোষ

সরকারি নথিতে দেখা যায়, ১৯৪২-এর ২০ ডিসেম্বর জাপানিরা যখন প্রথম বোমা ফেলে কলকাতায়, তখনও কলকাতার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এক্কেবারে নড়বড়ে। কলকাতার প্রতিরক্ষার দায়িত্ব ছিল প্রায় ব্যবহার-অযোগ্য কয়েকটা ‘হ্যারিকেন’-এর হাতে। খানকয়েক বিমান-বিধ্বংসী কামান শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানো হলেও সেগুলির পরমায়ু তখন শেষ হওয়ার মুখে। ১৯৪১-এর আগে কলকাতায় ছিল না কোনও রাডার, বিমান-বিধ্বংসী কামান। রয়্যাল ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্সের হাতে ছিল মাত্র আটখানা ‘মোহক’ বিমান। কাজেই জাপানিরা এল, পরপর পাঁচ ছদিন ধরে বোমাবর্ষণ করে ফিরে গেল, আসলে এসবই ছিল আজাদ হিন্দ বাহিনীর কাজ খানিকটা এগিয়ে রাখা, যাতে খানিকটা বাধা এমনিই সরে যায়। সে তো হলই না বরং এলোপাথাড়ি বোমা ফেলে জাপানিরা চলে যাওয়ার পরে ঘর গুছিয়ে নিল ইংরেজ-ভারতীয় সেনাবাহিনী। কিন্তু এই বোমাবাজির ফলে কলকাতা থেকে এক্সোডাস, পালানো শুরু করলো মানুষ। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তাঁর বন্ধু অরুণাচল বসুকে চিঠিতে লিখেছিলেন, “চিঠিতে আমার ব্যক্তিগত অনেক কিছু বলার থাকলেও আজ আমি শুধু আমার পারিপার্শ্বিকের বর্ণনা দেব। প্রথমে দিচ্ছি কলকাতার বর্ণনা- কলকাতা এখন আত্মহত্যার জন্যে প্রস্তুত, নাগরিকরা পলায়ন-তৎপর। নাগরিকরা যে পলায়ন-তৎপর তার প্রধান দৃষ্টান্ত তোমার মা, যদিও তিনি নাগরিক নন, নিতান্ত গ্রামের। তবু এ থেকে অনুমান করা যায় যে, কত দ্রুত সবাই করছে প্রস্থান আর শহরটি হচ্ছে নির্জন। তবে এই নির্জনতা হবে উপভোগ্য— কারণ এর জনাকীর্ণতায় আমরা অভ্যস্ত, সুতরাং এর নব্য পরিচয়ে আমরা একটা অচেনা কিছু দেখার সৌভাগ্যে সার্থক হব। আর কলকাতার ভীষণতার প্রয়োজন এই জন্যে যে, এত আগন্তুকের স্থান হয়েছিল কলকাতায়, তার ফলে কলকাতা কাদের তা নির্ণয় করা দুঃসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। একজন বিদেশি এলে সে বুঝতেই পারবে না, যতক্ষণ না তাকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে দেশটা কাদের। কারণ, যা ভিড়-তাতে মনে হয় দেশটা সকলের না— হোক, শহরটা সর্বজনীন। আজকাল রাত একটায় যদি কলকাতা ভ্রমণ করো তাহলে তোমার ভয়ঙ্কর সাহস আছে বলতে হবে। শুধু চোর-গুণ্ডার নয়, কলকাতার পথে এখন রীতিমতো ভূতের ভয়ও করা যেতে পারে। সন্ধ্যার পর কলকাতায় দেখা যায় গ্রাম্য বিষণ্ণতা। আজ আমার ভাইয়েরা চলে গেল মুর্শিদাবাদ— আমারও যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু আমি গেলাম না মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়াবার এক দুঃসাহসিক আগ্রহাতিশয্যে, এক ভীতি-সংকুল, রোমাঞ্চকর, পরম মুহূর্তের সন্ধানে।” আজ আবার মহড়ার আগে মনে করালাম সেই দিনটার কথা। আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, ৪৩ এর স্মৃতি তো থাকা সম্ভব নয়, কিন্তু তাঁদের কি আছে সেই ৭১-এর যুদ্ধ মহড়ার কোনও স্মৃতি? শুনুন মানুষজন স্মৃতি হাতড়ে কী বলছেন।

ভারত-পাক সংঘাত নয়, এই জাপানি বোমের ইতিহাস আবার ফিরে এসেছিল মাত্র বছর সাত আট আগে, কলকাতা ডক অঞ্চল থেকে উদ্ধার হয়েছিল বিরাট বোমার খোল, সে দেখতে কী ভিড়, কত মানুষ, বাচ্চাদের হইচই, এক তামাশা। হ্যাঁ এক সময়ের যুদ্ধ অন্য আর এক কালচক্রে তামাশাই হয়ে দাঁড়ায়। আজ জাপানি কনসুলেটের কোনও অফিসারকে যদি বলা হয়, কেন তোমরা আমাদের শহরে বোমা ফেলেছিলে? কী জবাব দেবে সে? হ্যাঁ যুদ্ধ, হিংসা তেমনই এক কাজ যা নিয়ে পরে লজ্জা পায় লোকে, এক জার্মান পর্যটককে দেখেছিলেম ভলগোগ্রাদে, সে অবাক হয়ে বোঝার চেষ্টা করছিল তার মাতৃভূমি থেকে এতদূরে এসে যুদ্ধ করে কী পেতে চেয়েছিল সৈনিকেরা?

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
বাংলা বলছে (Bangla Bolche) | 'সিঁদুর' বনাম 'লক্ষ্মী', 'অর্ধেক আকাশ', ভোটের টার্গেট ২৬-শে কী হবে?
00:00
Video thumbnail
Bangladesh Money | এক দেশ, ২ রকম টাকা, জিনিসপত্র কিনতে গিয়ে বিরাট মুশকিলে বাংলাদেশের মানুষ
00:00
Video thumbnail
Russia | Ukraine | হা/ম/লা, পাল্টা হা/ম/লা, রাশিয়া-ইউক্রেনের ইস্তানবুলে বৈঠক, আদৌ থামবে যু/দ্ধ?
00:00
Video thumbnail
Covid 19 | ভয় ধরাচ্ছে করোনা, আ/ক্রান্তের সংখ্যা বাড়ল ১৩০০%, এবার কী হবে? আবার কী লকডাউন?
00:00
Video thumbnail
OBC List|বহু প্রতীক্ষিত OBC তালিকায় ২৫ সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব,অনুমোদন মন্ত্রিসভার বৈঠকে
00:00
Video thumbnail
Chirag Paswan | কী খেলা চলছে বিহারের বিজেপি জোটে? চিরাগের এই কথায় কীসের ঈঙ্গিত?
00:00
Video thumbnail
Bangla Bolche | ছাব্বিশে ভাইপো মুখ্যমন্ত্রী হবে
00:50
Video thumbnail
Bangla Bolche | নামকরনের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হতে হবে
01:41
Video thumbnail
Fourth Pillar | যু/দ্ধ জয়ী প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীরা, সৈন্যের পোষাকে কেউ সাজেননি তারা
01:01
Video thumbnail
Fourth Pillar | বিজেপি ব্যর্থ সরকার, তাই করে মিথ্যে প্রচার
00:59