Wednesday, June 18, 2025
Homeদেশসীমান্তে কেন্দ্রীয় বাহিনীর এলাকা সম্প্রসারণ বিতর্ক: প্রশাসনিক নাকি রাজনৈতিক আগ্রাসন

সীমান্তে কেন্দ্রীয় বাহিনীর এলাকা সম্প্রসারণ বিতর্ক: প্রশাসনিক নাকি রাজনৈতিক আগ্রাসন

Follow Us :

বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী জেলার বিশাল ভূখণ্ড বস্তুত চলে যেতে বসেছে কেন্দ্রের হাতে।
শুনতে অস্বস্তিকর হলেও কতকটা তেমনই ঘটতে চলেছে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সীমান্ত রক্ষা বাহিনীর (বি এস এফ) এক্তিয়ার ভুক্ত এলাকা এক লাফে পঁয়ত্রিশ কিলোমিটার বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে বাংলার সীমান্তবর্তী জেলাগুলির একটা বিশাল অংশের নিয়ন্ত্রণ কার্যত কেন্দ্রীয় বাহিনীর স্থায়ী নিয়ন্ত্রণে চলে গেল। ইতিমধ্যে কংগ্রেস,বামসহ অবিজেপি দলগুলি কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে তৃণমূলও । অর্থাৎ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এই সিদ্ধান্ত কতটা প্রশাসনিক আর কতটা রাজনৈতিক এই নিয়ে সংগত কারণেই শুরু হয়েছে বিতর্ক।

নানাভাষা,নানা সংষ্কৃতির আঠাশটি অঙ্গরাজ্য ও আটটি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল নিয়ে ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র। সংবিধান রাজ্য ও কেন্দ্রের মধ্যে ভারসাম্য রেখেই প্রশাসনিক ক্ষমতার বিন্যাস ঘটিয়েছে। সপ্তম তফসিলিতে কেন্দ্র ও রাজ্য এবং যৌথ তালিকায় কী কী ক্ষমতা থাকবে তা স্পষ্ট বলা আছে। তা সত্ত্বেও স্বাধীন ভারতে বিভিন্ন সময়ে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত মাথা চাড়া দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় তা খুব অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু যেহেতু সাড়ে সাত দশকের সংসদীয় রাজনীতিতে কেন্দ্রে সর্বাধিক সময় ক্ষমতায় ছিল সর্ব ভারতীয় দল কংগ্রেস। ফলে শাসক দলের অতিরিক্ত ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার প্রবণতা কংগ্রেস আমলেও ছিল। এই প্রশ্নে বাংলার সঙ্গে কেন্দ্রের শাসকের সংঘাত সুবিদিত। দীর্ঘ বাম আমল থেকে বর্তমানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনকালেও কেন্দ্র-রাজ্য বিরোধের সেই ট্র্যাডিশন অব্যাহত। তবে মোদি জমানায় সেই সংঘাতের একটা গুনগত পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রাজ্যগুলির ক্ষমতা খর্ব করার প্রশ্নে মোদি প্রশাসন অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে গিয়েছে। প্রশাসনিক বাধ্যবাধকতা নয় দলীয় রাজনীতির স্বার্থই অগ্রাধিকার পেয়ে চলেছে।

শুধুমাত্র সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে মোদি সরকার গণতান্ত্রিক রীতিনীতি বস্তুত লাটে তুলে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রীয় ভাবনা আজ বিপণ্ন। পদে পদে রাজ্যের ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ হচ্ছে, স্রেফ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার লক্ষ্যে। শিক্ষা বা শ্রম যৌথ তালিকাভুক্ত হলেও রাজ্যগুলির মতামত উপেক্ষা করে কেন্দ্রের একচেটিয়া আগ্রাসন মোদি জমানার অবদান। নতুন শিক্ষানীতি থেকে শ্রম বিধি প্রণয়ন হয়েছে একতরফা। বিরোধী মতের কোনো অস্তিত্ব স্বীকার করেনি বিজেপি প্রশাসন। কৃষি সংস্কারের নামে রাজ্যগুলিকে উপেক্ষা করে (সংসদের দুই কক্ষে আলোচনা ছাড়া) আইন এনে এখন চরম বিতর্কে এনডিএ সরকার। রাজ্যের হাতে থাকা আইন-শৃঙ্খলায় কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ এক বেনজির পর্যায়ে পৌঁছেছে মোদির আমলে।

আরও পড়ুন  ফের বাংলাদেশ সীমান্তে উদ্ধার রূপো, বাইকের ইঞ্জিনের ভেতরে রাখা ৮ কেজি রূপোর গয়না
বাংলায় রাজ্যের শাসক দলের সঙ্গে রাজনৈতিক স্তরে এঁটে উঠতে ব্যর্থ পারেনি বিজেপি। বাংলা দখলের ডাক দিয়েও রাজ্যবাসীর কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহের দল। কিন্তু কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে দিয়ে রাজ্যের এক্তিয়ারে নাক গলানোর প্রবণতা তাতে কমেনি,বরং বেড়ে চলেছে। নানা ছুঁতোয় রাজ্যের আইন -শৃঙ্খলার বিষয়ে হস্তক্ষেপে রাজভবনকে নজিরবিহীন ভাবে ব্যবহার করার রেকর্ড গড়েছে মোদি জমানা। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হলো বিএসএফের সাম্প্রতিক বিজ্ঞপ্তি। যা আদতে যুক্তরাষ্ট্রীয় ধারণার পরিপন্থী। আপাতভাবে এটা প্রশাসনিক পদক্ষেপ হলেও তাকে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের ক্ষমতা খর্ব করার এক রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সিদ্ধান্ত বলা চলে।

এতদিন সীমান্ত থেকে ভারতীয় এলাকায় পনের কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত ছিলো বিএসএফের কর্মকান্ড। সীমান্ত নজরদারি থেকে তদন্ত ও আটক করার ক্ষমতা ছিল বিএসএফের হাতে। এবার সেই এলাকা ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ানো হলো। এর ফলে পাকিস্তান লাগোয়া পাঞ্জাব, এবং বাংলাদেশ লাগোয়া পশ্চিমবঙ্গ ও অসমের রাজ্যের এক বিশাল এলাকা কেন্দ্রীয় আধসেনার হাতে চলে যাবে। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ কে চিঠি দিয়েছেন,ওই বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে।

আরও পড়ুন সীমান্তে বিএসএফের ক্ষমতা বাড়ানো নিয়ে বিক্ষোভ মহিলা তৃণমুল কর্মীদের

জনতার রায়ে পর্যুদস্ত বিজেপি, পিছনের দরজা দিয়ে রাজ্যে প্রশাসনিক ক্ষমতায় ভাগ বসাতে তৎপর হয়ে উঠেছে। একটি নির্বাচিত সরকারের পক্ষে এটা অবমাননাকর। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের এমন দেউলিয়াপনার দৃষ্টান্ত মোদির আমলে বিরল নয়। কিন্তু রাজ্যের অভ্যন্তরে বিএসেফের এই আগ্রাসন ও তাকে আইনি বৈধতা দেওয়া আদতে যুক্তরাষ্ট্রীয় ধারণার মূলে আঘাতের নামান্তর। বহুত্ববাদ নয়, এক দেশ,এক বিধান তত্বের প্রবক্তা হিন্দুত্ববাদী সরকার ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করাকেই আদর্শ শাসন পদ্ধতি বলে মনে করে। তারই সর্বশেষ নমুনা রাজ্যগুলির অভ্যন্তরে বিএসএফের ক্ষমতা বৃদ্ধি।

বিজ্ঞপ্তি কার্যকর হলে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী জেলাগুলির ভিতর ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকায় বি এস এফ ফৌজদারি দণ্ডবিধি মোতাবেক পদক্ষেপ করতে পারবে। এতদিন এই অধিকারের এলাকা সীমিত ছিল ১৫ কিলোমিটারে। অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট এলাকায় তল্লাশি,আটক দরকার গুলিচালনায় রাজ্য পুলিশকে জানানোর প্রয়োজন হবে না বিএসএফের। দক্ষিণের সুন্দরবন থেকে উত্তরে কোচবিহার পর্যন্ত বিস্তৃত ভূখণ্ড ওই নির্দেশিকার জেরে কার্যত দ্বিখন্ডিত হতে চলেছে। জলপাইগুড়ি ডিভিশনের চার, মালদহ ডিভিশনের চার ও প্রেসিডেন্সি ডিভিশনের তিন জেলার একটা বড় অংশ বি এস এফের কব্জায় চলে যাবে।

এমনিতেই বাংলাদেশ সীমানা সংলগ্ন জেলাগুলির বাসিন্দাদের সঙ্গে বিএসএফ বাহিনীর দ্বন্দ্ব নতুন কিছু নয়। অনুপ্রবেশ,গরু পাচার ,মাদক পাচার,জাল নোট ও হরেক কিসিমের চোরা চালানকে কেন্দ্র করে গ্রামবাসীদের সঙ্গে জওয়ানদের সংঘাতে প্রায়শই অশান্ত হয়ে ওঠে সীমান্ত ঘেঁষা জনপদ। রাজ্য পুলিশের সঙ্গে আধাসেনা বাহিনীর বিরোধও নিত্যদিনের ঘটনা। আর এই পাচার ঘিরে বিএস এফের অন্দরের আর্থিক দুর্নীতি এখন প্রকাশ্য। যার জেরে এইসব এলাকার আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হয়। যার দায় বর্তায় রাজ্য পুলিশ-প্রশাসনের উপর। সব মিলিয়ে, বিএসএফ মোতায়েন থাকলেও সীমান্ত এলাকায় চোরা কারবারী-মাফিয়ার দাপট অব্যাহত। যেটা বিএসএফের উঁচুতলার মদত ছাড়া অসম্ভব। এই অবস্থায় নতুন করে রাজ্যের অভ্যন্তরে আরও বড় এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাপট বৃদ্ধি পক্ষান্তরে রাজ্যের এক্তিয়ারে হস্তক্ষেপ ঘটার আশঙ্কা প্রবল। যাকে কেন্দ্র করে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত রাজনৈতিক মাত্রা পেতে বাধ্য।

আরও পড়ুন লাগামছাড়া বাড়ছে সংক্রমণ,টানা তিন দিন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৮০০-র ওপরে

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুক্তি, গোটা দেশেই সীমান্ত এলাকায় বিএসএফ এর সীমানার অভিন্ন নীতি প্রণয়নে এই উদ্যোগ। গুজরাটে এতকাল ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিএসএফের এক্তিয়ার ছিল। বাংলা, পাঞ্জাব,অসমের সঙ্গে সেখানেও তা কমিয়ে ৫০কিলোমিটার করা হয়েছে। কিন্তু সেই যুক্তিতে অবিজেপি শাসিত দুটি রাজ্যে (বাংলা ও পাঞ্জাব) এই কেন্দ্রীয় পদক্ষেপের উদ্দেশ্য নিয়ে সংশয় জাগবেই। একটি নির্বাচিত সরকারের এলাকায় কেন্দ্রের এই আগ্রাসনের নেপথ্যে মোদি-শাহের রাজনৈতিক অভিসন্ধি নিয়ে তাই প্রশ্ন ওঠাটা খুবই স্বাভাবিক।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Iran-India | ইরান থেকে ভারতীয়দের উদ্ধার কাজ শুরু, কী কী সিদ্ধান্ত ভারতের? দেখুন এই ভিডিও
00:00
Video thumbnail
FATTAH-1 | কী এই FATTAH-1? প্রথমবার আ/ঘা/ত করে ইজরায়েলকে চ/রম বার্তা, মাথায় হাত আমেরিকার?
00:00
Video thumbnail
FATTAH-1 | বিগ ব্রেকিং, তেল আভিভে FATTAH-1 হা/ম/লা ইরানের, কার্যত শেষ ইজরায়েল!
00:00
Video thumbnail
Mamata Banerjee | নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী, দেখুন সরাসরি
00:00
Video thumbnail
Weather Update | বুধবার তোলপাড় হবে কোন কোন জেলা? বর্ষা আসার পরই বিরাট খবর
00:00
Video thumbnail
100 Days Work | ১০০ দিনের কাজ নিয়ে বিরাট নির্দেশ হাইকোর্টের, দেখুন বড় খবর
00:00
Video thumbnail
TMC | Election | ২৬-এর আগে বাংলায় ফের সবুজ ঝড়, বিরাট জয় তৃণমূলের বিরোধীরা কোথায়?
00:00
Video thumbnail
Iran-Israel | পুতিনের সমর্থনে চাঙ্গা খামেনি, ট্রাম্পকে চরম হু/ঙ্কার, ইজরায়েলের কী অবস্থা করবে ইরান?
03:29
Video thumbnail
Iran-Israel | পুতিনের সমর্থনে চাঙ্গা খামেনি, ট্রাম্পকে চরম হু/ঙ্কার, ইজরায়েলের কী অবস্থা করবে ইরান?
00:00
Video thumbnail
Iran-Israel | Indian | ইরান থেকে ভারতীয়দের উদ্ধার কাজ শুরু, কী কী সিদ্ধান্ত ভারতের?
03:25