মিলটা কোথায়? দুজনেরই চোখে ২৪ ঘণ্টা। হ্যাঁ, রাতেও কালো চশমা, মাথায় ইন্দ্রলুপ্ত, বুঝতে অসুবিধে হলে ডিকশনারি দেখে নিন। রাজ্যপাল গলাবন্ধ কোট পরেন, এই গরমেও পরেন। অঞ্জন দত্ত পরেন না, জিজ্ঞেস করে জানলাম উনি এমনকী কোনও চরিত্রের জন্যও অমন বিচিত্র কালারের গলাবন্ধ কোট পরেননি। অঞ্জন দত্ত একজন বড় মাপের এন্টারটেনার, মানুষকে আনন্দ দেন, ছবির পরিচালক আর আমাদের এই চিত্রম বিচিত্রম আনন্দ বোসও একজন এন্টারটেনার তবে আমরা বাংলায় এই স্তরের এন্টারটেনারদের ভাঁড় বলে থাকি। তো সেই চিত্রম বিচিত্রম গতকাল মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন আলোচনা চাই, আসুন। বয়ানটা কি এইরকম যে মাননীয়া আসুন এক কাপ কফি খেতে খেতে আমরা কিছু জমে থাকা জরুরি আলোচনাগুলো সেরে ফেলি? জানি না, কিন্তু এরকমটাই তাঁকে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি। কিছুদিন আগে উনিই বলেছিলেন শ্যাস দেকে ছারবোওওওও। এখন চিঠি দিয়ে বলছেন, মাননীয়া আসুন, আলোচনা করব। শুনে আমার দিদিমার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। উনি বলতেন সেই তো মল খসালি, তবে কেন লোক হাসালি? জ্ঞানীগুণী মানুষজন সেই কবে থেকেই বলছেন অ্যাক্রস দ্য টেবিল খিদে ছাড়া সমস্ত সমস্যার সমাধান সম্ভব। খিদের সমস্যায় টেবিলে খাবার থাকাটা অনিবার্য, কেবল কথাতে তো চিঁড়ে ভেজে না। তো আমাদের রাজ্যে খিদে নিয়ে সমস্যা নেই তেমন নয় কিন্তু তা নিয়ে রাজ্যপালের কিচ্ছুটি করার নেই। তিনি ইন ফ্যাক্ট কোনও কিছুরই দায়িত্বে নেই। কিন্তু নির্দেশ অনুযায়ী আপাতত উনি রাজ্যের বিজেপি নেতাদের খানিক গাইড করছেন। খানিক ওনাদের হয়ে রাজ্য সরকারের বিরোধিতা করছেন এবং রাজ্যের প্রায় ধসে যাওয়া শিক্ষা কাঠামোটাকে পুরোটাই মাটিতে মিশিয়ে দেওয়ার প্রতিজ্ঞা নিয়ে মাঠে নেমেছেন। সেটাই আমাদের বিষয় আজকে, আমাদের রাজ্যপাল বোস এবং অঞ্জন দত্তের কিসসা।
রাজ্যপাল এক সাংবিধানিক পদ, সংবিধানের প্রণেতারা এক স্টেপনি হিসেবেই এই পদকে রেখেছেন। যদি একান্ত কোনও কারণে রাজ্য সরকার পড়ে যায়, ভেঙে দিতে হয়, সেই সব ক্ষেত্রে একজন অন্তত প্রশাসক থাকুন, যিনি রাজ্যের সাধারণ কাজ কারবার কিছুদিনের জন্য সামলাতে পারবেন, যেরকম স্টেপনি তে হয় আর কী। তো প্রায় শুরুর থেকেই এই রাজ্যপালকে রাজনৈতিক কাজেই ব্যবহার করেছেন দিল্লির প্রভুরা। প্রত্যেক বিরোধী দল কখনও না কখনও এই রাজ্যপাল পদের সমালোচনা করেছেন, সেই সমালোচনার সব থেকে কঠিন বাক্য এসেছিল আন্নাদুরাইয়ের কাছ থেকে। তিনি বলেছিলেন, রামছাগলের দাড়ি আর রাজ্যপাল পদ, দুটোই অপ্রয়োজনীয়। পদ্মজা নাইডু বলেছিলেন সাদা হাতি, হোয়াইট এলিফ্যান্ট।
আরও পড়ুন: দলীয় কোন্দলে বেসামাল বিজেপি নেতাদের প্রাণ বাঁচাতে পুলিশ ডাকতে হচ্ছে?
এসবের পরে আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, তখন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তখন এক ডেলিগেশন দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে। তাতে মোদিজি বলেছিলেন যে রাজ্যপালকে রাজ্যের রাজনীতিতে নাক গলানোর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে, তা উচিত নয়। উনি জানিয়েছিলেন সারকারিয়া কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী রাজ্যপাল পদটিতে রাজনীতির মানুষজনকে বসানো উচিত নয়। বাস্তবে মোদিজির শাসন ক্ষমতায় ৯৫ শতাংশ রাজ্যপাল কেবল রাজনীতিবিদ নয়, বিজেপি দলেরই রাজনীতিবিদ। এবং যে দু’ একজন ব্যতিক্রম আছেন, তাঁরা আবার আমলা, ভয়ঙ্কর প্রভুভক্ত। আমাদের চিত্রম বিচিত্রম বাবু সেই দ্বিতীয় শ্রেণিভুক্ত। এসেই কিছুদিনের মধ্যে খোলস ছেড়ে রাজ্যজুড়ে বিজেপি নেতাদের আনফিনিশড ওয়ার্ক, অসমাপ্ত কাজের দায়িত্ব নিয়েছেন। আজ এখানে যাচ্ছেন, কাল সেখানে যাচ্ছেন, শেইষ দেকে ছারবো বলে হুঙ্কার দিচ্ছেন। উপাচার্য ধরে আনছেন, বসাচ্ছেন, সরিয়ে দিচ্ছেন, এক কেয়স চলছে। কিন্তু কেয়সের একটা নিশ্চিত প্যাটার্নও আছে, এই সরকারকে অপদস্থ করো, এটাই লক্ষ্য। বেশ কিছুদিন ধরে এক অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে অন্তত উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে, আইন আদালত সবই হচ্ছে। এবং সেই আদালতই জানিয়েছেন, এসব বিচার করে কিছু হবে না, আপনি বরং মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়গুলোর সমাধান বার করুন। সুপ্রিম ধমক খেয়ে উনি চিঠি লিখেছেন, মাননীয়া আসুন আমি আলোচনা চাইছি। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম, এতদিন ধরে আলোচনা না করে নিজের ইচ্ছেমতো উপাচার্য নিয়োগ করে, কারও সঙ্গে আলোচনা না করে শিক্ষা ব্যবস্থাকে প্রায় পঙ্গু করার পরে সুপ্রিম কোর্টের আদেশে আমাদের রাজ্যপাল আবার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা চাইছেন। এই আলোচনা আগেই হলে কি এই অচলাবস্থা এড়ানো যেত না? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
যে কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম, অঞ্জন দত্ত এবং আমাদের রাজ্যপাল, সম্ভবত কেউ কাউকে দেখেননি, চেনেন না। কিন্তু দুজনের কালো চশমা আর মাথার ইন্দ্রলুপ্ত দুজনকে আজ এই আলোচনায় এনেছে। অঞ্জন দত্ত পরিচয় গোপন করেননি, নিজেকে এন্টারটেনার বলেছেন, মানুষকে আনন্দ দিয়েছেন। সমস্যা হল এই চিত্রম বিচিত্রম কিন্তু নিজের ভাঁড়ের পরিচয়টা গোপন করে হাজির হয়েছিলেন। বাংলা শিখব, হাতেখড়ি দেব, ইত্যাদি বলার সময়ে বলেননি যে শেষ দেকে ছারবো। এখন শেষ দেখার চেষ্টায় মগ্ন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে একটা চিঠি লিখেছেন, আদতেই সমস্যার সমাধান উনি চান বলে মনেই হয় না। কারণ এ সমস্যা তো উনি প্রভুর নির্দেশেই তৈরি করছেন, কাজেই কোনও না কোনও অছিলায় সমস্ত আলোচনা প্রক্রিয়াকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই উনি আবার নেত্য করতে বের হবেন। মিলিয়ে নেবেন। তবে উনি জানেন না সেই ধরমবীর, ধনখড় হয়ে অনেক রাজ্যপাল বাংলা দেখেছে, তাঁরাও বাংলা দেখেছেন, বাংলার মানুষকে দেখেছেন। এ রাজ্যপালকে অনুরোধ, সেসব ইতিহাসের পাতা একটু উল্টেপাল্টে দেখে নিন। এমনিতেই ৩১ অক্টোবরের পরে আবার বাংলা উত্তাল হবে, আপনার চৌহদ্দিতেই হবে, সেটাও মাথায় রাখবেন।