নাকি স্বরাষ্ট্র দফতর থেকে মানে অমিত শাহের দফতর থেকে আমাদের রাজ্যের দুই পুলিশকর্তার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ করা হয়েছে। তাঁরা কারা? আমাদের পুলিশ কমিশনার আর আমাদের কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার সেন্ট্রাল, এই দুই পদে আসীন বিনীত গোয়েল আর ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় নাকি শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছেন বলে ছোটা মোটা ভাইয়ের দফতর জানিয়েছে। মাঝেমধ্যে মনে হয় দেশটা যেন দুই গুজরাতির হাতেই চলে গেছে, দেশে গণতন্ত্র নেই, সংবিধান নেই, সকালবেলায় উঠে ধোকলা খেতে খেতে দুটি মানুষ যা ভাবিবেন, যা করিবেন তাহাই আইন তাহাই কানুন। এবং সুধী দর্শকবৃন্দ খেয়াল করুন যে দুই সিনিয়র আইপিএস অফিসার শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক এমন এক নির্দেশ রাজ্যের কারও কাছে পৌঁছনোর আগেই তা দিল্লির সংবাদমাধ্যমের কাছে চলে গেল এবং খবরও হয়ে গেল। সেই কনসার্নড অফিসারেরা এখনও কোনও চিঠিই পাননি, জানা নেই নবান্নের কোন তলাতে সেই চিঠি গেছে। এ তো গড়াগাছা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পিওনের শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ নয়, আইনরক্ষক হিসেবে সর্বোচ্চ স্তরে কর্মরত দুই আইপিএস অফিসারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাই জানার চেষ্টা করছিলাম যে কেসটা কী ভাই? ওঁরা ঠিক কীভাবে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছেন? তো জানা গেল যে ওঁরা নাকি রাজ্যপালের বিরুদ্ধে যে শ্লীলতাহানির অভিযোগ এসেছে তা নিয়ে তদন্ত করছিলেন যা নাকি করা যায় না। তাই এরকম এক নির্দেশ এসেছে। সেটাই বিষয় আজকে, উল্টা চোর কোতোয়াল কো ডাঁটে?
কোনও রাজ্যে আইনের শাসন এক্কেবারে ভোগে চলে গেলেই একমাত্র চোর উল্টে মন্ত্রী কোতোয়ালদের বকাবকি করে। তো আমাদের দেশে তো প্রায় সেরকম এক অবস্থা। দোষী আমাদের পয়সায় গগলস পরে হিল্লি দিল্লি ঘুরে আমাদের রাজ্যের খরচে দেখরেখ হওয়া বাসভবনে বসে চোখ রাঙাচ্ছেন, দেখে নেব, বুঝিয়ে দেব। হ্যাঁ, আমাদের রাজ্যপালের কথাই বলছি, তিনি আমাদের নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীকে রাজভবনে ঢুকতে দেবেন না বলেছেন, তারপর থেকে ওঁর হুঁকোপানি বন্ধ হওয়া উচিত তা নয়, তিনি অভিযোগ করছেন আর সেই অভিযোগের ভিত্তিতে আমাদের রাজ্যের সিনিয়রমোস্ট দুই পুলিশ অফিসারকে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে জড়ানো হচ্ছে। আসুন একবার বিষয়টা খতিয়ে দেখা যাক।
আরও পড়ুন: Aajke | বিধায়করা শেষ পর্যন্ত বিধায়ক হলেন
এক মহিলা যিনি রাজভবনে কাজ করেন তিনি কাঁদতে কাঁদতে রাজ্যপালের দফতর থেকে বেরিয়ে এসে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করছেন, তা রাজ্যপাল কোন নাড়ুগোপাল যে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা যাবে না? সংবিধানের কোথায় একথা বলা হয়েছে? তিনি অভিযোগ করলেন এবং সেই এফআইআর দায়ের হল, কোথায় বলা আছে যে একজন মহিলা শ্লীলতাহানির অভিযোগ করছেন এবং তাঁর অভিযোগ রাজ্যপালের বিরুদ্ধে হলে নেওয়াই যাবে না? সংবিধান রাজ্যপালকে একটা রক্ষাকবচ দিয়েছে, কী সেটা? সেটা হল তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ দায়ের করার আগে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন লাগবে। কোথাও বলাই নেই যে কেউ তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর করলে সেই এফআইআর নেওয়া হবে না, একজন মহিলা বলছেন শ্লীলতাহানি হয়েছে, পুলিশ বলবে না আমরা অভিযোগ নিতেই পারব না? এটাই বরং আইন বিরুদ্ধ। তো এখানে কী হয়েছে? একজন মহিলা শ্লীলতাহানির অভিযোগ করেছেন, তাঁর অভিযোগ নেওয়া হয়েছে, তার তদন্তও চলছে, সেটাই তো স্বাভাবিক। সংবিধান কি কোথাও অপরাধের অভিযোগ এলে তদন্ত করতে মানা করেছে? সেরকম কোনও নিষেধাজ্ঞা আছে নাকি? মহিলা অভিযোগ করবেন, তাঁকে বলা হবে রাজ্যপালের সাংবিধানিক রক্ষাকবচ আছে, তারপর রাষ্ট্রপতিকে চিঠি লেখা হবে, আচ্ছা কী লেখা হবে? সেই মেয়েটির বয়ান? তাই তো নেওয়া হয়েছে, এরপরে আর কী থাকতে হবে? থাকবে যে এই অভিযোগের প্রাইমা ফেসি ভিত্তি আছে কি না, তো সেটা তদন্ত না করে কীভাবে বোঝা যাবে? স্বাভাবিক বোধবুদ্ধিই বলে দেয় যে অভিযোগ নেওয়া হবে, তদন্তও চলবে, কেবল রাজ্যপালের বিরুদ্ধে কোনও মামলা রুজু করে যাবে না, শ্লীলতাহানির অভিযোগ এলেই যেমন ঘাড়ধাক্কা দিয়ে লক আপে ঢোকানো হয়, সেটা হবে না, এই পর্যন্ত। আর হ্যাঁ, সেটাই হবে যদি সাংবিধানিক রক্ষাকবচটা উঠে যায়। সেটা নিয়েই নার্ভাস আর তাই চোরের মায়ের বড় গলা। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম, যাঁর বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ তাঁকে অবিলম্বে রাজ্যপালের পদ থেকে না সরিয়ে যাঁরা সেই শ্লীলতাহানির অভিযোগ নিলেন, সেই দুই সিনিয়র আইপিএস অফিসারের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ তোলা হচ্ছে, আপনারা কী মনে করেন? শুনুন কী বলেছেন তাঁরা।
এ এক আজব নোংরামি চলছে। দু’ দু’জন মহিলা শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনেছেন এই রাজ্যপালের বিরুদ্ধে, অন্য কোনও মানুষ হলে আমি নিশ্চিত যে কোনও কথা না বলে পদত্যাগ করতেন, তারপর তদন্ত হত। কিন্তু এক্ষেত্রে কেবলমাত্র সাংবিধানিক কবচ হারানোর ভয়ে তিনি পদত্যাগ করছেন না, যা কোথাও না কোথাও তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তি বাড়াচ্ছে। অন্যদিকে আর এক সরকার যারা এক্ষুনি এই মানুষটাকে অন্য কোনও রাজ্যে পাঠিয়ে দিয়ে অন্তত মুখরক্ষা করতে পারতেন তাঁরা উল্টো কাজ করেই চলেছেন। সুবিধে কার? অবশ্যই সেই রাজ্য সরকারের, তৃণমূল দলের, তৃণমূল নেত্রী এই বিষয়টাকে ব্যবহার করবেন, করছেন। গেলেন না তো বিধায়করা রাজভবনে, রাজ্যপালকে ছাড়াই শপথগ্রহণও তো হল। এবার আরও ভুল চাল দিচ্ছেন ছোটা মোটা ভাই, দুই মহিলার শ্লীলতাহানির মতো সংবেদনশীল ব্যাপারে আবার উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে আসলে বঙ্গ বিজেপিকেই গাড্ডায় ফেলছেন অমিত শাহ।