skip to content
Sunday, February 9, 2025
HomeScrollAajke | সরকারকে ব্ল্যাকমেল করার চেষ্টা করছেন জুনিয়র ডাক্তারবাবুরা?
Aajke

Aajke | সরকারকে ব্ল্যাকমেল করার চেষ্টা করছেন জুনিয়র ডাক্তারবাবুরা?

জুনিয়র ডাক্তারেরা মনে করছেন যে তাঁরা চোখ রাঙিয়েই সরকারকে যা বলবেন তাই করাতে বাধ্য করবেন

Follow Us :

ছোটবেলায় নানান অজুহাত দিতাম, সে সব অজুহাত হঠাৎই মুখে মুখে বানানো অজুহাত, এখন ভাবলে বেশ লাগে। হোম টাস্ক করিনি কারণ হাত নাড়াতে পারছি না, তো মাস্টারমশাইয়ের পাল্টা প্রশ্ন, কী করে লাগল? তো সেই আচমকা প্রশ্নের মুখে মুখে বানানো উত্তরটা ছিল এই রকম, আমি, অমুক আর অমুক রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম, ওদিক থেকে একটা সাইকেল, এদিক থেকে একটা বাইক, দুম করে ধাক্কা আর বাঁ হাতটা এইরকম করে পড়ল, বলতে বলতে বা হাঁতটা কীভাবে পড়েছিল তা দেখাচ্ছিলাম। মাস্টারমশাই সঙ্গে সঙ্গেই জিজ্ঞাসা করলেন, বাঁ হাতে লাগল তো ডান হাতে ব্যথা হল কী করে, আমার চটজলদি উত্তর ছিল বাঁ হাতটা ওই ভাবে পড়ল তো, তারপরে টাল সামলাতে না পেরে পড়ে গেলাম, আর ডান হাতে প্রচণ্ড জোরে লাগল। মাস্টারমশাই মুচকি হেসে বললেন, এবারে এই পিরিয়ডের মধ্যেই আস্তে আস্তে হোম টাস্কটা করে ফেল, না হলে বাঁ হাতটা আর নাড়াতেই পারবি না। মিথ্যে অজুহাত দেওয়ার এই এক বিপদ, আগে কী বলেছি, পরে কী বলছি, দুইয়ের মধ্যে কোনও মিল থাকে না, আগেরটা একরকম পরেরটা একরকম হয়ে যায়। মিথ্যেবাদীরা জানেন, এটাই মিথ্যে বলার এক বড় সমস্যা, মিথ্যের পর মিথ্যে, তারপরে আরও মিথ্যে বলেই যেতে হয়। ধরুন এই ডাক্তারবাবুরা, সেই আরজি কর ঘটনার পরেই বলেছিলেন, একটা ঘটনা ঘটলে তদন্তের স্বার্থেই তো যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে তাদের সাসপেন্ড করা উচিত, তাঁদেরকে রেখে তো তদন্ত হতে পারে না। একদম ঠিক কথা। সরকার সেদিন আরজি করের অধ্যক্ষকে কেবল মাত্র ট্রান্সফার করে খুব ভুল করেছিল, আমার তো তাই মনে হয়। কিন্তু প্রবলেমটা হল মেদিনীপুরেও এক জঘন্য ঘটনা ঘটেছে, একজন প্রসূতি, একজন শিশু ইতিমধ্যেই মারা গেছে, আরও তিনজনের যমে মানুষে টানাটানি চলছে। সেই অবস্থাতে সংশ্লিষ্ট ১২ জনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে, ব্যস, ডাক্তারবাবুরা রেগে আগুন। আগে তদন্ত করুন, তারপরে সাসপেন্ড করুন, এই দাবিতে কর্মবিরতিতে গেছেন মেদিনীপুরের জুনিয়র ডাক্তারবাবুরা। ওই যে আগের অজুহাত, আগের মিথ্যে ভুলে মেরে দিয়েছেন তাই সেটাই আমাদের বিষয় আজকে। সরকার কাজ করলেই এত রেগে যাচ্ছেন কেন জুনিয়র ডাক্তারবাবুরা?

আরজি করের ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই সেদিন আরজি করে থাকা সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকের সাসপেনশন, প্রত্যেককে সরিয়ে দেওয়ার দাবি তুলেছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। দাবি তুলেছিলেন বর্ধমান, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের সেসব সন্দীপ ঘোষ ঘনিষ্ট ডাক্তারদের সরিয়ে দেওয়ার, তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত করার, তাঁদের সাসপেন্ড করার। আর আজ?

আরও পড়ুন: Aajke | কুণাল বনাম অভিষেক

এই মুহূর্তে সাফ জানা যাচ্ছে যে একরাশ গরমিল ছিল সেদিনের অপারেশনে, যাকে হিউম্যান এরর বলা হয়। জানা যাচ্ছে যে সিনিয়র ডাক্তারেরা ছিলেন না, এঁদের মধ্যে একজন ডাঃ দিলীপ পাল তো সেদিন প্রাইভেট নার্সিং হোমে অপারেশন করছিলেন, জানা গেছে সিনিয়র আনেস্থেটিস্ট ছিলেন না, জানা গেছে অস্বাভাবিক বেশি সময় লেগেছে, জানা গেছে একই টিম পাশাপাশি দুজন রোগীর সিজার করেছেন একই সময়ে যা ভয়ঙ্কর অন্যায়। জানা গেছে যে রোগীদের অবস্থা যখন খারাপ হচ্ছে তখন তাদেরকে দিয়ে মুচলেকা লেখানো হয়েছিল, জানা গেছে যে এই পাঁচ জনের সিজার অপারেশন হবে তার কোনও এমারজেন্সি নোট নেই, মানে নর্মাল বেবি ডেলিভারি সম্ভব না হলে, কিছু কমপ্লিকেশনস, জটিলতা থাকলে তবেই সিজার অপারেশন করা হয়, কিন্তু এই পাঁচজনের ক্ষেত্রে ঠিক কোন কোন কমপ্লিকেশন ছিল তার এমারজেন্সি নোট নেই। এবং এত কিছু জানার পরে তাঁদের পত্রপাঠ বিদেয় করা হয়নি কারণ এ বিষয়গুলোর আরও তদন্ত দরকার, কিন্তু ততদিন এনাদেরকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। আর সাসপেনশন শাস্তি নয়, এটা এক সাময়িক ব্যবস্থা মাত্র, জানিয়ে রাখি সাসপেনশন চলাকালীন কর্মচারী ৫০ শতাংশ মাইনে পান, তিন মাসের মধ্যে চার্জশিট, মানে তদন্তের পরে চার্জশিট দেওয়া না হলে তাঁকে ৭৫ শতাংশ মাইনে দিতে হয়। এক্ষেত্রে ১২ জনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে, ব্যস, কর্মবিরতিতে যাওয়ার ডাক দিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা, এই সেদিন যাঁরা আরজি করে ধর্ষণ আর মৃত্যুর পরে সাসপেনশনের দাবি জানাচ্ছিলেন। তার মানে সরকার কিছু করবে না? রোগী মারা যাবে, সরকার বসে বসে দেখবে? একজন ডাক্তার এমবিবিএস পাশ করে এমএস পড়ছে, পাশ করার আগেই সে এমএস ডিগ্রি ঝুলিয়ে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করছে, তার বিরুদ্ধে তদন্ত করা যাবে না? সার্চ ওয়ারেন্ট নিয়ে তার বাড়িতে পুলিশ যেতে হলে তাকে জানাতে হবে? না জানালেই সেটা ভয় দেখানো? ওই অনিকেত, কিঞ্জল, দেবাশিসদের বলি, একটা ব্যানার হাতে নিয়ে নির্বাচনে নামুন, সরকার গড়ুন, তারপর করে দেখান কিছু, আর না হয় একটা সঠিক পথ বলুন যা সরকারের মানা উচিত, যখন যেমন তখন তেমন বলার মতো এক সুবিধেবাদী রাজনীতি করার জন্য তো ডাক্তারি পড়ার দরকার নেই। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে একজন প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে, তিনজন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে সিনিয়র ডাক্তারেরা অপারেশনের সময়ে ছিলেন না, জুনিয়র ডাক্তারেরা নিয়ম মেনে অপারেশন করেননি, তাই তাদের ১২ জনকে সরকার সাসপেন্ড করেছে, আপনাদের কী মনে হয় সরকারের এই কাজ করা ঠিক হয়েছে? শুনুন মানুষজন কী বলছেন?

কোথাও একটা ব্ল্যাকমেল করার খেলা চলছে, জুনিয়র ডাক্তারেরা মনে করছেন যে তাঁরা চোখ রাঙিয়েই সরকারকে যা বলবেন তাই করাতে বাধ্য করবেন। হ্যাঁ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় তাঁরা খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, তাঁদের কর্মবিরতি এক বিরাট অস্ত্র, তাঁদের কর্মবিরতি বিরাট সংখ্যক মানুষকে এবং সরকারকেও বিপদে ফেলার শক্তি রাখে, এটাও সত্যি, কিন্তু তাঁদের মনে রাখা উচিত যে খুব উচ্চ ক্ষমতার অস্ত্রও বারবার প্রয়োগে তার কার্যকারিতা হারায়। ওনারা যেভাবে প্রত্যেক ক্ষেত্রে কর্মবিরতির হুঙ্কার দিচ্ছেন, তা কিন্তু খুব শিগগির ব্যুমেরাং হয়ে ফিরবে, বুঝতে পারবেন যে গণতান্ত্রিক আন্দোলনেরও একটা নিয়ক কানুন আছে, সবটাই ধমকে চমকে সম্ভব নয়।

RELATED ARTICLES

Most Popular