মনে আছে লালমোহনবাবুর সেই বিখ্যাত ডায়ালগ, উট কি কাঁটা বেছে খায়? আজ থাকলে নির্ঘাত লালমোহনবাবু জিজ্ঞেস করতেন, মোদিজি কি কাঁটা বেছেই খান? উত্তর হ্যাঁ, মোদিজি কাঁটা বেছেই খান, উনি সেটা নিয়েই কথা বলেন যা নিয়ে ওনার সমস্যা নেই, ওনার দলের সমস্যা নেই। আজ আপনি হাজার প্রার্থনা করলেও, হাজার মিনতি করলেও উনি এয়ারপোর্ট উদ্বোধন নিয়ে একটা কথাও বলবেন না, হরগিজ নহি। কারণ চারপাশ থেকে খবর আসছে ভেঙে পড়ার, এখানে চাল ভাঙছে তো সেখানে মাথার ছাদ, মোদিজি আপাতত এই কাঁটা পাশে সরিয়ে রেখে অন্য ঘাসপাতার দিকে নজর দেবেন, এটাই স্বাভাবিক। ইতিমধ্যে সব্বাই জেনে ফেলেছেন যে সন্দেশখালির ঘটনার পিছনে ছিল এক্কেবারে টাকাপয়সা দিয়ে কিছু কুৎসিত প্রচার, সেই সন্দেশখালির বিদ্রোহিনী এখন সন্দেশখালিতে ঢুকছেনও না, শুভেন্দু অধিকারীর পরামর্শে তিনি আপাতত মামলা করছেন। কিন্তু মোদিজী সেই সন্দেশখালির কথা তুললেন সংসদে, তুললেন চোপড়ার কথা, অত্যন্ত জঘন্য ঘটনা, নিন্দা নয় ঘৃণা জাগে এমন ঘটনায় কিন্তু তারপরেও এটা তো ঠিক যে মূল অভিযুক্ত সমেত দুজনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে, এলাকার স্থানীয় বিধায়ককে শোকজ করেছে ওই তৃণমূল দল। এক্কেবারে নির্ভেজাল মাৎসন্যায়ের বদলে অন্তত আইনের শাসনের খানিকটা তো দেখাই যাচ্ছে, কিন্তু সংসদের বিরোধী আসনে বসা প্রত্যেক সদস্য যখন মণিপুর নিয়ে মুখ খুলতে বলেছেন তখন উনি মুখ খোলেননি আর বিরোধীরা ওয়াক আউট করার পরে তাঁর ইচ্ছেমতো কিছু কথা বলেছেন। আজ সেটাই বিষয় আজকে, মোদিজি উট নন, তাই কাঁটা বেছেই খান।
খানিক অরণ্যদেব আর খানিক উটের মতোই মোদিজি যা নিয়ে কথা বলবেন মনে করেন সেটাই বলেন, বাকি বিষয়ে তিনি মৌন থাকেন, প্রশ্ন করার ব্যাপার নেই কারণ কিছু কোলেচাপা সংবাদমাধ্যম ছাড়া আমাদের মাদার অফ ডেমোক্রেসির ফাদার কারও উত্তর দেন না। সবটাই ওয়ান ওয়ে ট্রাফিক। এখনও জোর গলাতেই বলে চলেছেন জিরো টলারেন্স টু করাপশন মানে এক ছটাক দুর্নীতিও নাকি সহ্য করা হবে না।
আরও পড়ুন: Aajke | জায়গায় জায়গায় এই জেসিবি, শেখ শাহজাহান, দেবাশিসদের উত্থান
এই ক’দিন আগে চন্দ্রবাবু নাইডুকে দুর্নীতির মধ্য থেকে জন্ম নেওয়া রাজনীতিবিদ বলেছেন, অজিত পাওয়ার তখন শরদ পাওয়ারের সঙ্গে তাঁকে স্ক্যাম মাস্টার বলেছেন, প্রফুল্ল প্যাটেলের বিরুদ্ধে দাউদ গ্যাংয়ের সম্বন্ধ আছে, সিবিআই কেস চলছে, হিমন্ত বিশ্বশর্মার উপর সারদা মামলা আছে, কিন্তু এরা সব এখন কেন বিজেপিতে উনি তার জবাব দেবেন না। কারণ ওই যে, উট কাঁটা বেছে খায়। বলেছিলেন কেবল ৫০ দিন সময় দাও, নোটবন্দি যদি সফল না হয়, তাহলে দেশের যে কোনও চৌরাস্তার মোড়ে দাঁড় করিয়ে জিন্দা জলা দে না। আমরা তো মধ্যযুগের বাসিন্দা নই, জ্যান্ত জ্বালানোর প্রশ্নই নেই কিন্তু অন্তত এই প্রশ্নের উত্তর তো দিন যে কেসটার হল কী? কেন করেছিলেন ওই নোটবন্দি? উনি উত্তর দেবেন না। যদি জিজ্ঞেস করেন ওই যে থালা বাজানো দিয়া জ্বালানো এগুলোর পিছনে কোন কারণ ছিল? উনি বলবেন না। ওনাকে প্রশ্ন করুন কেন আজ পর্যন্ত দেশের টাকা নিয়ে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া ওই শিল্পপতিদের একজনকেও দেশে ফেরানো গেল না কেন? উনি উত্তর দেবেন না। যদি তথ্য দিয়ে প্রশ্ন করা হয় যে আমাদের দেশে ধনী আর গরিবের বৈষম্য বেড়েই চলেছে কেন? উনি উত্তর দেবেন না। ওনার সেই প্রতিশ্রুতি কৃষকের আয় তিন গুণ করে দেওয়া হবে, কেন আজ তা দেড় গুণও নয়, প্রশ্ন করলে উনি উত্তর দেবেন না। কেন কৃষ বিল এনেছিলেন, কেনই বা তা ফিরিয়ে নিলেন? এ প্রশ্নের উত্তর তিনি দেবেন না। আপনার কথায় দেশ বিশ্বগুরু অথচ আমাদের দেশের ফ্রিডম ইনডেক্স, ব্যক্তি স্বাধীনতার সূচক কেন তলানিতে? প্রশ্ন করুন, উনি উত্তর দেবেন না। অথচ তিনি বলেই চলেছেন, অনর্গল বকে যাচ্ছেন, যা মনে হয় বলে যাচ্ছেন। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, যে মোদিজি হাথরস, কাঠুয়া, উন্নাও, মণিপুর নিয়ে মৌন, তিনিই কেন চোপড়া নিয়ে এত কথা বলেই চলেছেন? শুনুন দর্শকেরা কী বলেছেন।
এ এক আশ্চর্য মানুষ, এক নার্সিসাস মেগালোম্যানিয়াক আত্মরোমাঞ্চতে ভুগতে থাকা মানুষ, এখন নার্সিসিজম বা মেগালোম্যানিয়া তো দোষের নয়, এগুলো অসুখ, চিকিৎসা করলে ঠিকঠাক ওষুধপত্র খেলে বা ডাক্তারের কথা মেনে চললে সেরেও যায়। সমস্যা সেটা নয়, সমস্যা হল তেমন এক মানুষ যদি দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদে বসেন তাহলে দেশের ক্ষতি, সমাজের ক্ষতি।