দাদার হাতে কলম ছিল, ছুড়ে মেরেছে, উঃ দাদা বড্ড লেগেছে। হ্যাঁ, কাল রাত থেকেই একটা ভিডিও দেখার পরে সেটাই মনে হচ্ছিল। দেখুন ভিডিওটা। দেখে মনে হচ্ছে না যে মাথায় পাহাড় ভেঙে পড়েছে, উনি চিৎকার করছেন, কী বলছেন তাও স্পষ্ট নয়, ঘটি হারানোর আগে এরকম হয়েই থাকে, উনিও তেমন এক অবস্থায় আছেন, ওনার এক অনুগামীর ভাষায় বড্ড প্রেশার। তা তো থাকবেই, দল ভাঙার পরে দলের মাথায় বসানোর শর্ত তো এবারের নির্বাচনে বাড়তি ১০-১২টা আসন জোগাড় করার, এখন যা হিসেব তাতে ৬-৮টা কমার দিকেই যাচ্ছে বিজেপির সাংসদ সংখ্যা, কাজেই মাথা তো খারাপ হবেই। একই দশা হিরো হিরণের, সেখানেও মুখে মাছি পড়েছে, এমন একটা হাবভাব। শুভেন্দু কেবল রাস্তাতে নামলেন আর চিৎকার করলেন তাই নয়, সবার সামনেই বললেন ওসিকে দেখে নেবেন, ওনার ভাষায় বড্ড বাড় বেড়েছে। এখনও দু’ দফার ভোট বাকি, ষষ্ঠ দফাতে দুয়ারে ভোট, সেখানে একজনকে দাঁড় করানো হয়েছে যিনি প্রথম দিন থেকেই সেমসাইড গোল করেই চলেছেন। শুভেন্দু জানেন, বিজেপি জানে, তৃণমূল জানে এমনকী সিপিএমও জানে বিজেপির ভোটের সিংহভাগ এসেছিল বামেদের কাছ থেকে। আমাদের কাঁথির খোকাবাবু দল ছেড়ে বিজেপিতে ৪ শতাংশের সামান্য বেশি ভোট নিয়ে গিয়েছিলেন, এখন বামেদের যদি ভোট বাড়ে, তাহলে সর্বনাশ। কিন্তু এই রাজনৈতিক প্রজ্ঞা তো সবার থাকার কথা নয়, জাস্টিস গাঙ্গুলির তো আরও বেশি করেই থাকার কথা নয়। উনি পাড়ার কালোদা, মন্টুদার কাছে আগামী পাঁচ বছর রাজনীতি শেখার পরে মাঠে নামলে তবু কিছুটা হত। তিনি বলেই যাচ্ছেন, তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএম, মানে সিপিএমকে গুরুত্ব দিচ্ছেন, তাদের ভোট বাড়লে যে ওনার খিড়কি দুয়ারে আগুন লাগবে তা না জেনেই। কিন্তু শুভেন্দু তো জানেন, কিন্তু তিনিই বা কতদিক সামলাবেন, ওদিকে ভাই লড়ছে কাঁথিতে, সে আসন দুলছে ঝড়ে, সেদিকে ওনার পরিচিতা বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পলকে মেদিনীপুরে দাঁড় করিয়েছেন দিলু ঘোষকে সরিয়ে, সে আসন হাতের বাইরে চলে গেছে উনি জানেন, সব মিলিয়ে ঘটি? হ্যাঁ ডুবেছে। কাজেই উনি রাস্তায় চিৎকার করছে, খেয়াল করুন উন্মাদের মতো চিৎকার করছেন একথা কিন্তু আমি বলিনি। আর সেটাই বিষয় আজকে, আহা রে কাঁথির খোকাবাবুর বড্ড লেগেছে।
বাড়ি নয়, ভাড়া নেওয়া একটা গেস্ট হাউস, সেটাই সব্বাই জানে, তার আড়ালে অন্য কোনও রহস্য থাকলে মাফ করবেন। একটা গেস্ট হাউস, সেখানে উনি ভাড়া নিয়েছেন, ওখানেই থাকেন, বেরিয়েছিলেন প্রচারে, পুলিশ এসেছে, তাদের কাছে খবর ছিল এক দুষ্কৃতী এসেছে, ওইখানেই আশ্রয় নিয়েছে, পুলিশ তার খোঁজে এসেছে। কাজেই সেই গেস্ট হাউস সার্চ করেছে। অন্তত পুলিশের বয়ান এটাই। এখানেও মাফ করবেন, তলায় যদি অন্য কোনও চিত্রনাট্য থাকে তা আমার জানা নেই। কিন্তু এই সার্চের খবর শুভেন্দুবাবুর কাছে যেতেই ওনার মাথা গরম, দেখে নেব, আমার ঘরে পুলিশ পাঠিয়েছে?
আরও পড়ুন: Aajke | অধীর, খাড়্গে, বাংলা আর জাতীয় রাজনীতি
গত চার সাড়ে চার বছর ধরে যে লোকটি এমনকী বিধানসভাতেও ঘরে সিবিআই রেড করিয়ে দেব, ইনকাম ট্যাক্স রেড করিয়ে দেব, ভাইপোকে জেলে পুরে দেব বলেই গেলেন তিনি আজ বলছেন আমাকে হ্যারাস করছে, দেশজুড়ে মোদি–শাহ সরকার কী করছে? এক নিরবিচ্ছিন্ন ইডি, সিবিআই, ইনকাম ট্যাক্স, এনআইএ রেজিম চালিয়ে যাচ্ছে, মাঝরাতে হানা দিচ্ছে সেই বাহিনি, তিন দিন চারদিন ধরে আটকে রেখে তল্লাশি চলছে, মামলার পর মামলায় মানুষকে গ্রেফতার করে জেলে পুরছে যে সরকার, সেই সরকারি দলের একজন সামান্য পুলিশের সার্চে এত মাথা গরম করছেন কেন? ওনার তো উচিত ছিল হাসতে হাসতে পুলিশকে বলা যা দেখার আছে দেখুন, আমার কিছু লুকনোর নেই। তার বদলে উনি রাস্তা জুড়ে মত্ত হস্তির ন্যায় নাচন কোঁদন করিলেন। কেন? ওই যে আসল কারণ তো এইটুকু রেড নয়, যে ঘটি এই বাংলায় হারাচ্ছে, তা যদি গোটা দেশে হয়, তখন এই রেড আর মামলার কথা ভেবেই সম্ভবত নার্ভাস, আর নার্ভ ফেল করলে এরকম করা তো স্বাভাবিক। আমরা আমাদের দর্শকদের প্রশ্ন করেছিলাম, এক দুষ্কৃতির খোঁজে পুলিশ গিয়েছিল এক গেস্ট হাউসে, ঘটনাচক্রে সেখানে শুভেন্দুবাবুও ডেরা পেতে আছেন, কিন্তু পুলিশি তদন্তে এত উত্তেজনা দেখালেন কেন? উনি কি চাপে আছেন? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
আমরা এর আগে বহুবার এ নিয়ে আলোচনা করেছি, বলেছি যে এক রাষ্ট্র যদি তার যাবতীয় এজেন্সিগুলোকে বিরোধীদের হ্যারাস করার, তাদের জেলে পাঠানোর জন্য, প্রতিবাদীদের মুখ বন্ধ করার জন্য কাজে লাগায়, তাহলে কিছুদিন পরে সেই বিরোধীরাও তাদের সীমিত ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করবেই, তুমি ইডি পাঠাবে? আমি পুলিশ পাঠাব, তোমার কাছে বড় ফৌজ আছে, আমার কাছেও যা আছে তাই ব্যবহার করব। বিজেপি আসলে দেশকে এক অরাজকতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। গত চার বছর ধরে ইডি আর সিবিআই-এর অভিযানে যাঁরা খুব খুশি ছিলেন, তাঁরাই এখন রাস্তায় উন্মাদের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে, চিরদিন কাহারও সমান নাহি যায়।