মাথায় তিলক কেটে খোল করতাল বাজালেই মনে করার কোনও কারণ নেই যে সেই মানুষটা চৈতন্য ভক্ত। কেবল বাংলা ভাষায় কথা বললেই সে বাঙালি নয়, এই বাংলায় থাকলেই সে বাংলার স্বার্থে কথা বলবে এমনও নয়, মিরজাফর তো দিব্য বাংলা বলতেন, ওনার বংশধরের লেখা ইতিহাসেই পড়েছি। তো সেরকম এক ক্যারেক্টার হলেন আমাদের কাঁথির খোকাবাবু, আমাদের বিরোধী দলনেতা টাচ মি নট শুভেন্দু অধিকারী। সম্ভবত আগের দিন বা তার আগের দিনেই তিনি তাঁর বাজেটের পরে সাংবাদিকদের কাছে কী বলবেন সেটা লিখেই রেখেছিলেন, বাজেট শেষ হওয়ার পরেই সেটা ঝপ করে বলে দিলেন মাত্র। ধরাবাঁধা গৎ, এ বাজেট জনবিরোধী বাজেট। কেন ভাই? কারণ ডিএ কেন মাত্র ৪ শতাংশ বেড়েছে। ডিএ মোদি সরকারের হারে যেহেতু বাড়েনি তাই এটা জনবিরোধী বাজেট। এই শুভেন্দু অধিকারীর মুখ তখন বন্ধ থাকে যখন ওই মোদি সরকার রাজ্যের প্রাপ্য টাকা দেয় না। ১০০ দিনের কাজের টাকা দেয় না তখন উনি মুখে তালা দিয়ে বসে থাকেন। যখন স্পেশ্যাল প্যাকেজের নামে কোটি কোটি টাকার বরাদ্দ চলে যায় বিহারে, অন্ধ্রপ্রদেশে, তখন ওনার মুখে বোবা ধরে, তখন ওনার মনে হয় বাজেট জনমুখী। রাজ্যের মানুষের স্বার্থে রাজ্যের বিরোধী নেতা একটা কথাও বলেন না কিন্তু তস্য গরিব মানুষের বরাদ্দ কেটে ডিএ দেওয়া হয়নি বলে রেগে আগুন তেলে বেগুন। আজ সেটাই বিষয় আজকে, ভাত দেওয়ার মুরোদ নেই কিল মারার শুভেন্দু।
মাত্র ক’দিন আগেই ইউনিয়ন বাজেট পেশ হয়েছে। বাজেটের ইনকাম ট্যাক্স ইত্যাদি বাদ দিলে বাকিটা হল স্পেশাল প্যাকেজ ইত্যাদি না বলেও নজরানার থালি তুলে দেওয়া হল নীতীশ কুমার আর চন্দ্রবাবু নাইডুর হাতে। দুটো খুব সোজা কারণে। ১) এই মোদি সরকার এই দুই দলের সমর্থন ছাড়া একদিনও ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। ২৪০ দিয়ে আর যাই হোক সরকার চলে না। ২) সামনেই আছে বিহারের নির্বাচন, সেখানে এখনও তারা নীতীশকে বসিয়ে রেখেছে, কিন্তু তারা নিজেরাই সংখ্যাগরিষ্ঠতা চায়, পেয়ে গেলে শিন্ডের মতো নীতীশকে কুর্সি থেকে সরিয়ে দেবে, নীতীশের কাছের এমএলএ-দের ভাঙিয়ে নিয়ে যাবে। এই গ্র্যান্ড প্ল্যানের অংশ হিসেবেই তারা বিহারে টাকা পাম্প করছে। হিসেবটা দেখুন, ৯২৫০ কোটি টাকা বিহারের ১৫০০ কিলোমিটার রাস্তার জন্য, ৮৫০৫ কোটি টাকা বিহারের রেলপথের জন্য, ৩৯০০ কোটি টাকা বিহারের ৩.২ লক্ষ নতুন বাড়ি তৈরির জন্য, ৫৫০০ কোটি টাকা বিহারের ১০০ শতাংশ গ্রামে পানীয় জল পৌঁছনোর জন্য, ৩০০০ কোটি টাকা বিহারের ছাত্রদের স্কিল ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের জন্য, ২২০০ কোটি টাকা বিহারের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতির জন্য, ৮৪০৬ কোটি টাকা অন্ধ্রের রেল ব্যবস্থার জন্য, ১০০০ কোটি টাকা অন্ধ্রের জলবন্দর গড়ে তোলার জন্য, ৮৫০ কোটি টাকা চেন্নাই ইন্ডাস্ট্রিয়াল করিডোরের জন্য, নতুন আইআইটি ওঙ্গল-এর জন্য ১২৮ কোটি টাকা, স্কিল ইন্ডিয়া ইনিশিয়েটিভ-এর জন্য ৩০০০ কোটি টাকা, অন্ধ্রপ্রদেশের মোট বরাদ্দ: ৫৮,০০০ কোটি টাকা
পোলাভরম সেচ প্রকল্প: ₹6,946 crore
রাজস্ব ঘাটতি খাতে: ₹5,527 crore এটা ওই অন্ধ্র-তেলঙ্গানার ভাগাভাগির ফলে যে ক্ষতি হয়েছে তার জন্য।
অমরাবতী রাজধানী তৈরির জন্য: ₹2,000 crore, অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্য পুনর্গঠন এই বাবদ
₹1,050 crore পিছিয়ে পড়া এলাকার জন্য.
₹500 crore দুর্যোগ মোকাবিলা করার জন্য।
মানে ঢেলে দেওয়া হল বিহার আর অন্ধ্রের জন্য, তৃণমূল সাংসদরা চিৎকার করে প্রতিবাদ জানালেন, বাংলা থেকে নির্বাচিত বিজেপি সাংসদরা চুপ করে বসে রইলেন আর আমাদের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এই বাজেটকে স্বাগত জানালেন, সেই বাজেট নাকি জনস্বার্থের বাজেট ছিল। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, মোদি সরকারের ২৪-২৫ এর বাজেটে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে বিহার আর অন্ধ্রপ্রদেশের জন্য, এদিকে বাংলার ১০০ দিনের বকেয়া টাকাও দেওয়া হয়নি, দিল্লির সরকার বাংলাকে হাতে না মারতে পেরে ভাতে মারতে চায়। এদিকে সেই বাজেটকেই দু’ হাত তুলে সমর্থন জানাচ্ছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। কী বলবেন? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
এই বাংলা যাদের মুখে অন্ন জোগাল, এই বাংলা যাদের মুখে ভাষা জোগাল, এই বাংলার মানুষ যাদেরকে নির্বাচিত করে তাঁদের স্বার্থ রক্ষার জন্য সংসদে বিধানসভাতে পাঠালেন, সেই তাঁরাই বাংলার এই কদর্য বঞ্চনা দেখেও চুপ করে আছেন, তাঁরা এই বঞ্চনার প্রতিবাদ করছেন না। উল্টে তাঁদের এক নেতা, তাঁদের বিধানসভাতে বিরোধী দলনেতা সেই বাজেটকে দু’ হাত তুলে সমর্থন জানাচ্ছেন, রাজ্যের টাকা আটকে রেখেছে দিল্লির সরকার সেটা জেনেও মানুষকে উসকাচ্ছেন, কেন ডিএ দিল না প্রশ্ন তুলছেন। একটা সহজ উপায়ের কথা কিন্তু বলেছেন আমাদের মুখ্যমন্ত্রী, বলেছেন আমাদের পাওনা টাকা ইউনিয়ন গভর্নমেন্ট মিটিয়ে দিন, আমরা ডিএ মিটিয়ে দেব। ভাত দেওয়ার মুরোদ নেই, কিল মারার গোঁসাই শুভেন্দু অধিকারীর মুখে তালা কেন?