ওসব পিরিতির আঠা লাগলে পরে ছাড়বে না ইত্যাদি শুনেছেন তো? বা শুনেছেন বিজ্ঞাপনে দারুণ শক্ত আঠা, চেয়ারে লাগানো থাকলে এবং সেই চেয়ারে বসলে আর ছাড়ে না। কিন্তু বলি আপনাদের, ওসবের চেয়ে ঢের ঢের পাওয়ারফুল আঠা হল ক্ষমতা। ক্ষমতা থাকলে দূর-দূরান্ত থেকে বহু ধান্দাবাজেরা এসে সেঁটে বসে। ক’দিন আগে ইনকিলাব বলে গলা ফাটিয়েছে তারা এখন জয় শ্রীরাম বলে গলা ফাটায়। ক’দিন আগে মমতা ব্যানার্জির উন্নয়নের কথা বলতে গিয়ে চোখে জল আসত তারা এখন দিল্লির সরকারের অনুদান পেতে ছক বদলেছে আবার ঠিক উল্টোটাও আছে, বাম জমানার তাবত ধান্দাবাজ মাস্তানেরা আরামসে তৃণমূলে সেঁধিয়েছে। ফারাকটা হল আগে এক রাজনৈতিক নেতার পিছনে আড়ালে মাস্তানেরা কাজ করত, এখন তারাই নেতা বনে গেছে, সঙ্গে জুটেছে আরও নয়া নয়া মাস্তান। ক্ষমতার সঙ্গে থাকলে মাস্তানিতে যে কী সুখ তা বলে বোঝাবার নয়, পুলিশ স্যালুট দেয়, জন্মদিন পালন করে থানায়, বাজার থেকে মাছ যায় বাড়িতে। রবীন মুখার্জি সিপিএম নেতা, ব্রুকবন্ড-এর ট্রেড ইউনিয়ন নেতা ছিলেন, ওনার ঘরে গেলেই চা আসত, সেই জমানায় দার্জিলিংয়ের ফার্স্ট ফ্লাশ। এরকম এখন আরও বড় মাপের হয়, এবং সেই সিঁড়ি বেয়েই বিভিন্ন এলাকাতে নানান গুল্টে, বল্টে, শাহজাহান, জেসিবি, ট্রাক্টর, ভাল্লুক, উল্লুকদের জন্ম হচ্ছে। তাঁরা নিরাপত্তা দিচ্ছেন, নিরাপত্তা কাড়ছেন, এদের কেউ কেউ অত্যাচারী, কেউ কেউ আবার রবিনহুড, কিন্তু এদের প্রত্যেকেই আইন, পুলিশ, নিয়মকানুনকে নিজেদের কবজায় নিয়ে ফেলেছেন এবং এলাকায় একেক জন খাঞ্জা খাঁ। এই সর্বত্র মোবাইল আর মিডিয়ার জমানায় হঠাৎই একটা ফুটেজ বেরিয়ে আসছে এদের কীর্তিকলাপের, তারপরে একটার পর একটা। বোঝাই যায়, দল, প্রশাসন, পুলিশ, সরকার সব নিয়ে এক জবরদস্ত নেক্সাস ছিলই কিন্তু ঘটনা জানাজানির পরেই সব্বাই হাত তুলে নিচ্ছে। আর সেটাই বিষয় আজকে, জায়গায় জায়গায় এই জেসিবি, শেখ শাহজাহান, দেবাশিসদের উত্থান।
শেখ শাহজাহানের নাম কখনও আগে শুনেছিলেন? জাহাঙ্গিরের ছেলে শাহজাহান তো পাঠ্যবইতে ছিল, কিন্তু ইনি তো ছিলেন না। কিন্তু জানা গেল ইনি নাকি দু’ আড়াইশো কোটি টাকা করে ফেলেছেন। টাকার দাম যতই কমুক না কেন, দু’ আড়াইশো কোটি টাকা? সে তো কম নয়। আর ইনিই যদি এটা কামিয়ে থাকেন তাহলে লোকাল থানার বড়, মেজ, সেজবাবু, এলাকার প্রধান, উপপ্রধানেরা কত কামিয়েছেন। ওই এলাকা কি সাংবাদিক বর্জিত? কেউ তো খবর করেননি? তাহলে কি তাঁরাও? এলাকার বিরোধী দলের নেতারা? হঠাৎ সিবিআই গেল, আমরা শাহজাহান বৃত্তান্ত জানতে পারলাম।
আরও পড়ুন: Aajke | এ এক আজব রাজ্যপাল, নিজের পিঠ বাঁচাতে ব্যস্ত
একইভাবে ওই শিলিগুড়ির দেবাশিস প্রামাণিক, ইনি নাকি বিরাট জমি মাফিয়া, কোটি কোটি টাকা করেছেন, এনাকে নাকি সব্বাই সমঝে চলে, ইনি স্থানীয় তৃণমূল নেতা তো বটেন। তার মানে সব্বাই জানতেন, কেউ কিচ্ছুটি বলেননি। কেন? কেন বলেননি? এখন একের পর এক কেলেঙ্কারি বের হয়ে আসছে। এই যে জেসিবি, এরকম নামের যে একজন কেউ আছে তাই তো জানা ছিল না, ওনার বাবা-মারও জানা ছিল না যে তাজিমুল ক্রমে জেসিবি হয়ে যাবেন। হয়েছেন, এবং সক্কালে উঠেই উনি মানুষ পেটাতে বসেন, কবে জানা যাচ্ছে? প্রথম ভিডিওটা ভাইরাল হওয়ার পরে। এখন জানা যাচ্ছে যে উনি নাকি কয়েকটা খুনও করেছেন ইত্যাদি। এই আপদেরা যে কোনও দলের আদতে বোঝা, আজ না হলে কাল, এবং এরাই সবথেকে প্রথমে দল পাল্টায়, কারণ এঁরা তো রাজনীতি করতে আসেননি, এঁরা এসেইছেন এলাকার দাদা হতে, ধান্দাবাজিটা যাতে চালিয়ে রাখতে পারেন, তার ব্যবস্থা করতেই রাজনৈতিক দলে আছেন। জমানা পাল্টালে এঁরা বিজেপি করবেন, আরজেডি করবেন, কমিউনিস্ট পার্টি করবেন, কোনও বাছবিচার এনাদের নেই। সমস্যা হল এঁরাই কিছুদিনের মধ্যেই দলের সম্পদ হয়ে ওঠেন। আজ সর্বব্যাপী মোবাইল আর মিডিয়ার যুগে এঁদের ছবি বেরিয়ে আসছে মাত্র। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম যে এই জমি মাফিয়া দেবাশিস, মাস্তান তাজিমুল বা শেখ শাহজাহানের মতো মানুষজনকে রাজনৈতিক দলের নেতারা দলে ঢুকতে দেন কেন? কেন আদৌ তারা রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়াতেই বেড়ে ওঠে? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
এ রাজ্যে নির্বাচন আর মাত্র বছর দেড়েক পরে। দুর্নীতির ইস্যু এমনিতেই এখন জোলো হয়ে গেছে, কে যে দুর্নীতি করে আর কে যে দুর্নীতিতে জড়িয়ে নেই তা নিয়ে মানুষ আর চিন্তিত নয়। সাধারণ গরিব মানুষজন সরকারের বিভিন্ন ডায়রেক্ট বেনিফিশিয়ারি প্রজেক্টগুলো নিয়ে আশাবাদী, কিন্তু এই খুদে নবাবেরা এক বিরাট সমস্যা, এদের বাড়বাড়ন্ত সরকারে থাকা দলের কাছে অত্যন্ত বিপজ্জনক। দিদিমণি এটা জানেন?