আছে মাত্র ৪২টা আসন, ডিলিমিটেশন হলেও আসন সংখ্যা বাড়ার কোনও সম্ভাবনাই নেই। কিন্তু সেই ৪২টার পিঠে ভাগ কিন্তু শুরু হয়ে গেছে। একমাত্র তৃণমূলের ঘোষিত লক্ষ্য ৪২, হ্যাঁ, তাঁরা বলছেন ৪২টা আসনই চাই, সেটার জন্যই কোমর বাঁধছেন তাঁরা। রাজ্যে যা যা চলছে, কী সরকারে থাকা তৃণমূলের, কী বিরোধিতায় থাকা বিজেপি বা বাম-কংগ্রেসের, সবই আপাতত ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই চলছে। প্রতিটা রাজনৈতিক দলের অদল বদল, নেতৃত্বে পরিবর্তন বা নতুন কর্মসূচি, এসবের প্রত্যেকটাই কিন্তু ওই নির্বাচনকেই পাখির চোখ, মাথায় রেখেই করা। অমন বিপ্লবী সিপিএম-এর ইনসাফ যাত্রা বা রাজ্য কমিটিতে নতুন মুখ বা দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকের পরিবর্তন তো জনগণতান্ত্রিক বিপ্লব করা জন্য নয়, আগামী লোকসভা আসনে লড়ে কিছু আসন জোটানোর জন্য। ব্যতিক্রম এ বাংলার কংগ্রেস দল, ওনারা হলেন সেই ছোট্টবেলার ডিং ডং পুতুল, নাড়ালে নড়বেন, তা সে যেই নাড়াক, তার হাত নেই পা নেই, কিন্তু ঠেলে দিলে ডিং ডং শব্দ করে খানিক দুলতে পারেন। ওনাদের দোলাবে সেলিম, না হলে সুজন না হলে দিল্লির হাই কমান্ড। আপাতত ওঁদের কথা বাদ থাকুক। আমরা বরং বাকিদের লক্ষ্য নিয়েই কিছু কথা বলি। তৃণমূলের এখনও পর্যন্ত ঘোষিত লক্ষ্য ৪২, কেন বললাম এখনও পর্যন্ত? বললাম কারণ যদি রাহুল সোনিয়া মমতা অভিষেক কোনও বোঝাপড়া হয় তাহলে ৩-৪টে আসন তৃণমূল কংগ্রেসকে ছেড়ে দেবে, যখন দেবে তখন দেবে। কিন্তু আপাতত ঘোষণায় ৪২টাই চাই বলে মাঠে নামছেন। কিন্তু দলের ভেতরের খবর কী? পাখির চোখে ক’টা আসন? জানা গেছে ৩৭টা আসনের দিকে তাঁরা তাকিয়ে, বিজেপি প্রার্থী তো দেবে ৪২টা তেই, কিন্তু ঘোষিত লক্ষ্য হল ৩৫টা। বামেরা এখনও বুঝেই উঠতে পারছে না, কংগ্রেস কোন পথে হাঁটবে, আইএসএফ-এর নৌশাদ সিদ্দিকি আসলে কী চাইছেন। দলের অনেকেই মনে করেন নৌশাদ বিজেপির সঙ্গে এক বোঝাপড়ায় গেছেন, দলের রাজ্য কমিটিতেও এই প্রসঙ্গ উঠেছে, কাজেই জোট ছেড়ে তাঁরা বামেদের জোটের কথাও ভাবছেন। সেখানে এসইউসিআই বা সিপিআই এমএল লিবারেশনের সঙ্গে কী শর্তে জোট হবে তাও জানা নেই। সব মিলিয়ে বহু প্রশ্ন আছে কিন্তু তাও তাদের চোখ ১৬টা আসনের দিকে। সেটাই আমাদের বিষয় আজকে।
২০২৪-এর নির্বাচনে তৃণমূলের কাছে জরুরি হল তার আসনসংখ্যা বাড়ানো। যদি স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকে তাহলে জাতীয় রাজনীতিতে ৩৫-৩৭ আসন নিয়ে তৃণমূল এক বিরাট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে এ কথা সবার জানা। কংগ্রেস এবং বিরোধী জোটের সরকার তৈরি করার সম্ভাবনায় তৃণমূলের এই সংখ্যা জরুরি এমনকী বিজেপিও যদি সংখ্যা গরিষ্ঠতা থেকে খানিক দূরে থাকে, তাহলে নিতিন গড়করি বা রাজনাথ সিংকে নিয়ে নতুন সম্ভাবনা খুঁজে দেখা হবে সে ক্ষেত্রেও তৃণমূল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।
আরও পড়ুন: Aajke | কালীপুজোয় মুড়ি মুড়কির মতো বাজি ফেটেছে, এল কোথা থেকে?
বিজেপি নেতৃত্ব জানে এত কিছুর পরেও বিহার, মহারাষ্ট্র, কর্নাটক, তেলঙ্গানাতে আসন কমবে, বাংলার আসন অন্তত ধরে না রাখতে পারলে অনিবার্য বিপদ। কাজেই ওসব ৩৫ ইত্যাদির গল্প ছেড়েই দিন, অন্তত আগেরবারের ১৬-১৭ টা আসন ধরে রাখার জন্য নামছেন তাঁরা। কিন্তু দলের ভেতরের খবর হল অন্তত ৯টা আসন হুগলি, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, বিষ্ণুপুর, বর্ধমান দুর্গাপুর, পুরুলিয়া, রানাঘাট, রায়গঞ্জ আর আলিপুরদুয়ার নিয়ে বিজেপি আশাই ছেড়ে দিয়েছে। দার্জিলিংয়ে নিজেদের জোরে জেতা অসম্ভব তাও বিজেপি জানে, এবং এই মুহূর্তে সেই সমীকরণও তৃণমূলের পক্ষে। রইল বাকি ৬টা আসন। সেটাই যদি জিতে আসা যায় তাহলেও খানিক স্বস্তি, রাজ্যের এক নেতা ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় এরকমই বললেন। তাঁর বক্তব্য আমরা নিজেদের চেয়ে দল ভেঙে বেরিয়ে আসা নেতাদের ওপর নির্ভর করেছি, তার মূল্য আমাদের চোকাতে হবে। বামেরা ছিল শূন্য, তাঁরা যে এই বাংলার রাজনীতিতে এখনও আছেন, তার জন্যই তাঁদের অন্তত একটা দুটো আসনও জেতাটা খুব জরুরি। কিন্তু কোনও অঙ্কেই তা সম্ভব নয়, বিজেপি যেমন লড়াইটাকে তৃণমূলের বিরুদ্ধেই নিয়ে যেতে চায়। সেই চাহিদা তৃণমূলেরও, রাজ্যে লড়াইটা যদি বিজেপি বনাম তৃণমূলেই দাঁড়ায় তাহলে আবার সংখ্যালঘু ভোটের সিংহভাগ গিয়ে পড়বে মমতার ঝোলায়, তৃণমূলের বাক্সে, তাদের জয় সুনিশ্চিত হবে। বামেদের যাবতীয় তৃণমূল বিরোধিতার ফায়দা অবশ্যই কিছুটা হলেও বিজেপিই পাবে, কাজেই ঠিক এই মুহূর্তে এই বাংলার রাজনৈতিক ছবিতে বামেদের সংসদে যাওয়ার জন্য কোনও আসন নেই। রইল বাকি নৌশাদ সিদ্দিকির আইএসএফ, তারা যে বিজেপির ঘুঁটিই চালছে, তা স্পষ্ট। আরও স্পষ্ট হবে নির্বাচন কাছে এলেই। আমরা আমাদের দর্শকদের কাছে কেবল একটাই প্রশ্ন করেছিলাম, এই রাজ্য জুড়ে আগামী লোকসভা ভোটের লড়াই কাদের কাদের মধ্যে? কোন দলের সঙ্গে কোন দলের লড়াই? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
বাংলায় বিজেপি ছিন্নভিন্ন, নেতৃত্বের মধ্যে বোঝাপড়া নেই। তাদের ভরসা ইডি আর সিবিআই সবটা করে দেবে। কংগ্রেস জানেও না হাই কমান্ড কোন সিদ্ধান্ত নেবে, কাজেই তারা আপাতত সাইডলাইনের বাইরে বসে আছে। সিপিএম-এর নেতৃত্বে বাম এখনও বাংলায় বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরে পায়নি। তারা সৎ, তাদের আমলে মন্ত্রীসান্ত্রীরা এভাবে জেলে যায়নি, এখনও বহু ছাত্র যুবক তাঁদের সঙ্গে আছে, কিন্তু তাঁরা আসন জিততে পারবেন বা তৃণমূলকে হারাতে পারবেন এই কথাটা মানুষ বিশ্বাস করে না। কাজেই তাঁদের হাজার প্রচেষ্টার পরেও তৃণমূল বিরোধী ভোট কিন্তু বিজেপিতেই যাবে। আর নৌশাদ সিদ্দিকির দল ক্রমশ বিজেপির হয়ে ভোট কাটার কাজে নেমেছে এমন একটা ধারণা ছড়িয়ে পড়ছে, যার ভিত্তিও আছে, আর তাদের পক্ষে একটা সংসদীয় আসন জেতা অসম্ভব। অন্যদিকে বিভিন্ন চুরি আর দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়েও এ রাজ্যে বিজেপি বিরোধী ভোট এখনও মমতার দিকেই, তৃণমূলের দিকেই।