এ খানিক হিংসুটে দৈত্যের গল্প। প্রকাশ কারাত সস্ত্রীক আমেরিকা যাবেন, বিলেতে যাবেন, পার্টি হোলটাইমার, পার্টির পয়সাতেই, মানে সেই কৌটো ঝাঁকিয়ে মানুষের পয়সাতেই যাবেন, আসবেন। সেসব ভ্রমণও আবার বেশিরভাগই সিজন দেখেই হয়, গরম আর কার ভালো লাগে, সিপিএম বিপ্লবীদের তো নয়ই। বচ্ছরান্তে বিলেত যেতেন জ্যোতিবাবু, কিসের আমন্ত্রণে? কার নিমন্ত্রণে? এসব নিয়ে কে-ই বা প্রশ্ন করবে? প্রশ্ন করলেই জল তামাক বন্ধ, সে ভয় তো ছিলই। সেই তেনারা এখন মাঠে নেমেছেন মমতা ব্যানার্জি কেন বিলেতে যাচ্ছেন? বিলেত হলেও নয় হত, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে যাচ্ছেন শুনে মোক্ষম জায়গাতে দাদ হাজা চুলকুনি সবার বাড়ে, ওনাদেরও বেড়েছে। এমনিতে সর্বহারার দল হলে কী হবে, সে দলের সদম্ভ ঘোষণা এই কিছুদিন আগেও শুনেছি, আমাদের সব জেএনইউ, প্রেসিডেন্সি বা যাদবপুর। তাঁদের একজনও তারাসুন্দরী বালিকা উচ্চবিদ্যালয় বা হরপ্রসাদ জানা কলেজ অফ কমার্সের নয়, এটাই গর্ব করে তাঁরা জানিয়েছিলেন। জানিয়েছিলেন, তাঁদের বেশিরভাগই ড-এর পরে বিসর্গ, ডঃ। আমরাও অবাক হয়ে দেখেছিলাম সেই জেএনইউ আর প্রেসির দল কীভাবে টুম্পা সোনা গাইতে গাইতে প্রচারে নেমেছিল। আসলে এই পেডিগ্রি যে কুত্তাদেরও হয় সেটাই ওনাদের জানা নেই, নিজেদের পেডিগ্রি নিয়ে গর্বিত ডালমেশিয়ানদের খিল্লি মুখ্যমন্ত্রী কেন গরমেন্ট বলেন? মুখ্যমন্ত্রী কেন এপাং ওপাং ঝপাং কবিতা লেখেন? মুখ্যমন্ত্রী ইংরিজি বলতে পারেন না, মুখ্যমন্ত্রী জীবনানন্দ পড়েননি ইত্যাদি ইত্যাদি। সেই পেডিগ্রিওলা সর্বহারারা আবার মাঠে, এবারে তাঁদের প্রশ্ন নয়, এক্কেবারে ঘোড়ার মুখের খবর, অক্সফোর্ড ডাকেইনি মমতাকে, মুখ্যমন্ত্রী কারও বৈঠকখানায় বসে আড্ডা দিতে যাচ্ছেন, মিথ্যে বলছেন। আর সেসব কথা পাড়ার মোড়ে আলোচনা করছেন, এখনও বচাখুচা দলীয় কার্যালয়ে গাবজাল দিতে দিতে বলছেন এমনও নয়, এসব কথা লেখা হয়েছে মেহনতি মানুষের মুখপত্র গণশক্তিতে। সেটাই বিষয় আজকে, অক্সফোর্ডে যাচ্ছেন মমতা, আপনাদের এত চুলকোচ্ছে কেন কমরেড?
কোনও এক আরটিআই অ্যাকটিভিস্ট কমরেড নাকি চিঠি লিখেছিলেন অক্সফোর্ডে, আচ্ছা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে যাচ্ছেন, তার জন্য কি বকায়দা নেমন্তন্ন ছিল? নাকি উনি বা রাজ্য সরকার মিথ্যে বলছেন? আসুন বিষয়টা বোঝা যাক, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় মূলত ৪৩টি কলেজ ও চারটি ডিভিশন নিয়ে গঠিত বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যশালী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই ৪৩টি কলেজের মধ্যে ৩৬টি সেমি-অটোনমাস কলেজ, চারটি স্থায়ী প্রাইভেট হল এবং তিনটি সোসাইটি আছে।
আরও পড়ুন: Aajke | শুভেন্দু অধিকারীর জেলে থাকা উচিত, বাইরে কেন?
এ ছাড়াও আছে তিনটি বিভাগ যাদের অধীনে আছে বিভিন্ন বিষয়। এখন এই অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কলেজ, প্রাইভেট হল এবং সোসাইটি এমন সেমিনার/বক্তৃতা/আলোচনাসভা/বিতর্কের আয়োজন প্রায়শই করে থাকে। এবং এই বিশাল ছড়িয়ে থাকা শিক্ষা প্রাঙ্গণে প্রতিদিন বিভিন্ন অনুষ্ঠান হয়, একটু খেয়াল করলে এ পাশে ওপাশে ডজন দুয়েক নোবেল লরিয়েট থেকে শুরু করে দুনিয়ার হুজ হু-রা আসেন। এক জমানাতে সিপিএমের লোকজনেরাও তেমন আসরে ছিলেন, কংগ্রেসের বহু নেতারা গেছেন, যান, নতুন কিছু নয়। তো সেহেন অক্সফোর্ডে চিঠিটা পাঠিয়েই গণশক্তিতে খবর ছাপা হয়ে গেল, অক্সফোর্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন যে সেরকম কোনও সেমিনার আলোচনা সভার কথা তাঁরা জানেন না। হ্যাঁ, ঠিক এটাই গণশক্তিতে লেখা হল। কিন্তু সেই চিঠিতে আদতে কী লেখা ছিল? সাফ লেখা হয়েছিল যে অক্সফোর্ডের বিভিন্ন কলেজ, সোসাইটি, বিভাগ ইত্যাদিতে যে সমস্ত সেমিনার বা বক্তৃতা সভার আয়োজন করা হয় তার কোন কেন্দ্রীয় তালিকা বা Central Log উপাচার্যের দফতরে রাখা হয় না তাই ওই দফতরের পক্ষে বলা সম্ভব নয় কে কাকে কোথায় আমন্ত্রণ জানিয়েছে। ব্যস, অমনি গণশক্তির সেই মোক্ষম চুলকুনি জেগে উঠল, আর চুলকুনি এমন রোগ যা গোপন করা যায় না, তাঁরা মেতে উঠলেন কন্ডুয়নে। এবারে মূল তথ্যে আসি, গণশক্তি লিখেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমন্ত্রণ জানিয়েছে কেলগ কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং কোবরা বিয়ার কোম্পানির মালিক তথা ভারতীয় বংশোদ্ভূত গুজরাটি ব্রিটিশ নাগরিক শিল্পপতি করণ বিলিমোরিয়া। ১৫০ গ্রাম বীর্যের মতো, এটাও ফেক। বলে রাখা ভালো যে কেলগ কলেজ অক্সফোর্ডের অধীনে যে ৩৬টি সেমি-অটোনমাস কলেজ আছে তাদেরই একটি। এই কলেজটিও রয়্যাল চার্টার দ্বারা স্থাপিত। এই কেলগ কলেজ জানাচ্ছে, যে আগামী ২৭ মার্চ জিএমটি ১৭:৩০ -১৮-৩০ অক্সফোর্ডের কেলগ কলেজে একটি আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছে এবং তারা আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতী মমতা ব্যানার্জিকে কলেজের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক জনাথন মিশি এবং এই কেলগ কলেজেরই কৃতী ছাত্র বাইনাম টুডর ফেলো লর্ড করণ বিলিমোরিয়ার সঙ্গে একটি আলোচনা সভায় যোগদানের জন্য। এই লর্ড করণ বিলিমোরিয়া শুধু শিল্পপতিই নন, এখনকার অক্সফোর্ডের সর্বোচ্চ সম্মান, ‘টুডর ফেলোশিপ’ পেয়েছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো উনিও ওই সভায় আমন্ত্রিত। যা আমাদের গণশক্তির সেই পেডিগ্রিধারী ডালমেশিয়ানেরা জানে না তা হল অক্সফোর্ডের বেলিয়ল কলেজ, ক্রাইস্ট কলেজ, সেন্ট অ্যান্টনিজ কলেজ, সেন্ট ক্যাথেরিনস কলেজ বা কেলগ কলেজ -যে কেউ আমন্ত্রণ জানাক, তাকে অক্সফোর্ডের আমন্ত্রণ হিসেবেই গণ্য করা হয়। এটাই দস্তুর। আইজ্যাক নিউটন কেম্ব্রিজের ট্রিনিটি কলেজের হওয়ায় কেম্ব্রিজের কেউ নন, অমর্ত্য সেনও ওই ট্রিনিটি কলেজের ছাত্র অতএব উনিও কেম্ব্রিজের কেউ নন, এরকম আবাল বচন অবশ্য সিপিএম ছাড়া অন্য কারও মুখে মানায়ও না। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আলোচনা সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, সিপিএম মুখপত্র গণশক্তিতে তা নিয়ে এক প্রবল কুৎসা শুরু হয়েছে, মিথ্যে খবর ছাপা হচ্ছে, এই প্রবল মমতা বিরোধিতার কারণেই কি সিপিএম তার বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে? শুনুন মানুষজন কী বলছেন।
আসলে কালীঘাট বস্তি এলাকার এক খাপরার চালের বাড়ির থেকে এক মহিলা বেরিয়ে এসে মুখ্যমন্ত্রী হয়ে গেছেন শুধু নয়, তাঁদেরকে মহাশূন্যে পাঠিয়ে দিয়েছেন। কাজেই এক অসম্ভব মনোকষ্টে, সাইকোলজিস্টরা যাকে বলে ডিপ্রেশনে ভুগছে গোটা দল, এক আধজন ছাড়া জামানতও বাঁচাতে না পেরে সেই ডিপ্রেশন দিনকে দিন আরও গভীর হচ্ছে। তারই বহিঃপ্রকাশ এই কুৎসা আর মিথ্যে খবর, পাত্তা দেওয়ার খুব একটা কিছু নেই, তবুও বলব, সিপিএমবাবুরা লরির দিকে তাকাবেন না, তাকালেই মনোকষ্ট আরও বাড়বে, কারণ আমি দেখেছি ওই লরির পিছনেই লেখা থাকে, দেখবি আর জ্বলবি, লুচির মতো ফুলবি। চোখ বন্ধ করে থাকুন, মনোকষ্ট কমবে।