Thursday, June 26, 2025
HomeScrollহাসিনাকে দেশে ফেরত পাঠানো উচিত? নাকি এই দেশেই রাখা উচিত?
Aditir Songe Sada Kalo

হাসিনাকে দেশে ফেরত পাঠানো উচিত? নাকি এই দেশেই রাখা উচিত?

মোদিজির অ্যাগ্রেসিভ ফরেন পলিসি অন্তত এই ক্ষেত্রে ব্যুমেরাং হয়ে ফিরতেই পারে

Follow Us :

যেমনটা রোজ করে থাকি, একটা বিষয়ের অবতারণা আর সেই বিষয়কে নিয়ে অন্তত দুটো ভিন্ন মতামতকে এনে হাজির করা, যাতে করে আপনারা আপনার মতটাকে শানিয়ে নিতেই পারেন আবার আপনার বিরুদ্ধ মতটাকেও শুনে নিতে পারেন। পৃথিবীর সব্বাই যদি এক মতের হত, সব্বাই একই সুরে কথা বলত, কী বোরিং হত সেই পৃথিবী। কাজেই তর্ক বিতর্কে সাদা কালোর দ্বন্দ্বে নানান রং ভেসে উঠুক, মাও সেতুং বলেছিলেন শত ফুল বিকশিত হোক, যত আগাছা নির্মূল হোক। তো ভনিতা ছেড়ে শুরু করি আজকের বিষয়, হাসিনাকে দেশে ফেরত পাঠানো উচিত? নাকি এই দেশেই রাখা উচিত? বাংলাদেশের বিদেশ সংক্রান্ত উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, “প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে বিচারের সম্মুখীন করার জন্য বাংলাদেশ ফেরত চেয়েছে। ভারতকে এই বিষয়ে জানানো হয়েছে।” এর আগে মহম্মদ ইউনুস সাহেবও জানিয়েছিলেন শেখ হাসিনাকে ফেরত দেওয়া হোক। কেন ফেরত চাইছেন ওঁরা? কারণ হিসেবে জানিয়েছেন ওনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, মানুষ হত্যার, হত্যার ষড়যন্ত্রের, দেশের অর্থ বিদেশে পাচারের অভিযোগ আছে। কাজেই তাঁকে ফেরত দেওয়া হোক। ভারত বংলাদেশের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তি আছে, সেই চুক্তি বাতিলও করা হয়নি, কাজেই এই চিঠির জবাবে ভারত সরকার কী বলে সেটা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সমস্যা হল তাঁরা মুখ বন্ধ করে বসে আছেন। আমাদের দেশের বিদেশ নীতিতে সাফ জানানো হয়েছে আমরা কোনও দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাব না, কাউকে গলাতেও দেব না।

আমাদের বিদেশনীতি বলছে আমাদের দেশের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য যদি কোনও দেশের, মানে বিদেশের মাটি ব্যবহার করা হয় তাহলে আমরা তার বিরোধিতা করব। এই তত্ত্ব মেনেই ভারতবর্ষ কানাডাতে খলিস্তানপন্থীদের বিরোধিতা করেছে, সে দেশের সঙ্গে তো বিরোধিতার এটাই মূল কারণ। যে কানাডার ভূমিকে ব্যবহার করে ভারত বিরোধী কাজকর্ম হচ্ছে। বারবার কানাডা সরকারকে এ নিয়ে চিঠি লেখা হচ্ছে, বিদেশ মন্ত্রক বিবৃতি জারি করছেন। ধরুন পাকিস্তান, তাদের আশ্রয়ে থেকে কাশ্মীরি টেররিস্টরা ভারত বিরোধী কাজকর্ম করছে, এ অভিযোগ তো নতুন নয়, ভারতবর্ষ লিস্ট দিয়ে জানিয়েছে কাদের কাদের প্রত্যর্পণ তারা চায়, জানিয়েছে আপনাদের দেশে মাসুদ আজহার সমেত এই এই লোকজন ভারত বিরোধী কাজ করছে, তাদের নামে আমাদের এখানে মামলা চলছে, বহু মামলাতে তারা দোষী সাব্যস্ত হয়েছে, আমাদের সেই সব লোকজনদের ফেরত দিন, আমরা আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী তাদের বিচার করব, শাস্তি দেব। এবং এই দাবি তো সঠিক দাবি। ভারতবর্ষ চিরটাকাল আমরা নাক গলাব না, কাউকে নাক গলাতে দেব না এই নীতি নিয়েই চলেছে। অন্য দেশ, অন্য দেশের কোনও সংস্থা যখন ভারতবর্ষের সংখ্যালঘু অত্যাচার নিয়ে কথা বলে, দেশের কোনও অবিচ্ছেদ্য অঙ্গের স্বাধীনতার দাবি নিয়ে কথা বলে, তখন ভারতবর্ষ কী বলে? আমাদের দেশ স্বাধীন, সার্বভৌম, আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে বাইরের কোনও কথা আমরা শুনব না। যখন বিভিন্ন জায়গা থেকে কাশ্মীরে ইউনাইটেড নেশনস-এর হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়, সেই দাবি ওঠে, তখন তার তীব্র বিরোধিতা করে ভারতবর্ষ, আমার দেশ। আর ঠিক সেই কারণেই আজ শেখ হাসিনা প্রসঙ্গে ভারতবর্ষের বৈদেশিক দফতর কথা বলতে পারছে না, বা চাইছে না। কিন্তু আজ হোক বা কাল হোক এই সমস্যার সমাধান করতে হবে, না হলে অন্য দেশের প্রত্যক্ষ সহায়তায় ওই বাংলাদেশ উলফা জঙ্গি, কাচেন মিলিট্যান্টদের আশ্রয় দিলে নতুন সমস্যা তৈরি হবে সেটাও আমাদের বিদেশ দফতর জানে। মোদিজির অ্যাগ্রেসিভ ফরেন পলিসি অন্তত এই ক্ষেত্রে ব্যুমেরাং হয়ে ফিরতেই পারে।

আরও পড়ুন: অদিতির সঙ্গে সাদা কালো | হ্যাঁ চুমু, না চুমু

আসুন এবারে উল্টোদিকের মতামতটাও শোনা যাক। শেখ হাসিনা যখন আমাদের দেশে পা রাখলেন তখনও তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী, তিনি পদত্যাগ করেছেন এমন কোনও ডকুমেন্ট আজ অবধি দেখা যায়নি। কাজেই তিনি ডিপ্লোম্যাটিক ইমিউনিটি পাওয়ার যোগ্যতা রাখেন। এবং এমন পলিটিক্যাল অ্যাসাইলাম এই প্রথম নয়, এর ঢের আগে স্বয়ং নেহরু বিজু পট্টনায়েককে অনুরোধ করেছিলেন ইন্দোনেশিয়ার প্রথম প্রধানমন্ত্রী সুতান শাহজির আর উপরাষ্ট্রপতি মহম্মদ হাত্তাকে জাকার্তা থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসতে, কারণ ডাচ বাহিনী আবার ইন্দোনেশিয়া আক্রমণ করেছিল। নেহরুর অনুরোধে বিজু পট্টনায়েক এবং তাঁর স্ত্রী একটা ডাকোটা বিমানে জাকার্তা যান এবং ওই দুজনকে নিয়ে ভারতে ফেরেন। এই নেহরুর আমলেই চীন থেকে পালিয়ে আসা বৌদ্ধ ধর্মগুরু দলাই লামাকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল, ১৯৭১-এ তাজুদ্দিন মহম্মদ সমেত বাংলাদেশের নেতারা এই ভারতে বসেই প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার তৈরি করেন। কাজেই এই রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়াটা নতুন কিছু নয়, বৈদেশিক নীতি যাই থাকুক না কেন, সময়ে সময়ে তার ব্যতিক্রম হয়েছে, একবার নয় বহুবার। কেবল তফাৎ হল সেই ১৯৪৭-এ ইন্দোনেশিয়ার শাহজির বা ১৯৬২-তে দলাই লামা বা ৭১-এ বাংলাদেশের নেতাদের রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়াটা গোপন করেনি ভারত সরকার, তা গোপন রাখা হয়নি, বরং তার কারণও ব্যাখ্যা করা হয়েছিল। আজকের পরিস্থিতিতে এটাই দেখার যে এই আশ্রয় দেওয়াটাকে কীভাবে জাস্টিফাই করবে ভারত সরকার নাকি শেখ হাসিনাকে ভারত ছাড়তে হবে।

শীত এসে গেছে সুপর্ণা। কেক, পেস্ট্রি, বড়দিন, সার্লাস, চিড়িয়াখানায় পরিযায়ী পাখি, জিঙ্গল বেল, বইমেলা এমনকী এক বড়দিনের দ্রোহের কার্নিভালও হাজির। কাজেই আমিও ক’দিন ছুটি নেব, দেখা হবে নতুন বছরে, তাই আগাম নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের অনুষ্ঠান শেষ করছি।

RELATED ARTICLES

Most Popular