skip to content
Sunday, February 9, 2025
HomeScrollঅদিতির সঙ্গে সাদা কালো | ভারত বাংলাদেশের কাঁটাতারের গল্প
Aditir Songe Sada Kalo

অদিতির সঙ্গে সাদা কালো | ভারত বাংলাদেশের কাঁটাতারের গল্প

শ্রদ্ধা আর ভালবাসা দিয়ে এক ভালো প্রতিবেশীর মতো থাকার কথা কি আমরা ভাবাই ছেড়ে দেব?

Follow Us :

যেমনটা রোজ করে থাকি, একটা বিষয়ের অবতারণা আর সেই বিষয়কে নিয়ে অন্তত দুটো ভিন্ন মতামতকে এনে হাজির করা, যাতে করে আপনারা আপনার মতটাকে শানিয়ে নিতেই পারেন আবার আপনার বিরুদ্ধ মতটাকেও শুনে নিতে পারেন। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বেশ কিছুদিন ধরেই নানান ঝামেলার খবর পাচ্ছি আমরা। মূলত সীমান্তে বিএসএফ-কে কাঁটাতার দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির বিরুদ্ধে। সীমান্ত নিয়ে আরও নানা দ্বন্দ্বের ঘটনা ঘটেছে, ঘটেই চলেছে মাস দুই তিন আগে থেকে। এই আবহেই ভারতের বিদেশমন্ত্রক সোমবার ডেকে পাঠিয়েছিল বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশনার নুরুল ইসলামকে। আগের দিনই অর্থাৎ রবিবার, এই একই বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী সেই দেশে ভারতের হাই কমিশনার প্রণয় ভার্মাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। এরপর ভারতের বিদেশ মন্ত্রক ডেকে পাঠাল বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশনারকে। মানে তুই ডেকেছিস, দ্যাখ আমিও ডাকতে পারি। সেই কবেই তো হাঁড়ি আলাদা হয়েছে, যৌথ পরিবার ভেঙেছে, কারও খেলার স্কুল পড়ে আছে বেড়ার ওধারে, তো কারও জায়নমাজের জমিন এখন বিদেশ। কিন্তু হাজার ঝামেলার মধ্যে ভাষা এক, খাদ্য এক, এক সুরে গাই গান, আমাদের দুজনের চেতনায় নজরুল, জীবনানন্দ, রবীন্দ্রনাথ। তাই যখনই বেড়ার কথা ওঠে, কাঁটাতারের কথা ওঠে তখন মন খারাপ হয়।

আসলে দিল্লির কর্তারা তো বাংলায় কথা বলেন না, তাঁরা তো অবাক চোখে তাকিয়ে থাকা ছোট্ট ছেলেটাকে বলেন না, দ্যাখ ওইখানে আছিল আমাদের বাড়ি, ওই মাঠ পারালেই তগো মামার বাড়ি। এখন পাসপোর্ট দেখিয়ে মামার বাড়ি, খালার বাড়িতে যেতে হয়। হ্যাঁ, দেশের মাথায় বসে থাকা দুলাভাই ইউনুস সাহেবকেও বর্ধমানে শালির বাড়িতে আসতে গেলে পাসপোর্ট দেখাতেই হবে। মনে আছে এক বৃদ্ধ তার অশক্ত শরীরে আমার হাত ধরে বলেছিল আমারে একবার দ্যাশে নিয়ে যাবি। তার সেই স্বপ্ন পূরণ তো হয়ইনি, এখন সেই স্বপ্ন আরও ঝাপসা হচ্ছে প্রতিদিন। সীমান্তে আরও কঠিন কাঁটাতারের বেড়া লাগানো হবে। আগে ঢাকা অভিযোগ করেছিল ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের অন্তত ৫ জায়গায় কাঁটাতার দেওয়ার চেষ্টা করছে ভারত। এবং এই কাজ করে ভারত দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ভাঙছে এবং ওই এলাকায় সমস্যা তৈরি করছে। এর আগে বাংলাদেশের আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনার সময় প্রণয় ভার্মা জানিয়েছিলেন, দুই দেশেরই তাদের সীমান্তে কাঁটাতার দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে ভারতের সম্যক জ্ঞান রয়েছে। সীমান্তে অপরাধ কমাতে ভারত ধারাবাহিকভাবে চেষ্টা করে চলেছে বলেও জানানো হয়েছিল। সংবাদমাধ্যমে প্রণয় ভার্মা জানিয়েছিলেন, “এই বিষয়টা নিয়ে বিএসএফ ও বিজিবির মধ্যে কথা চলছে। আমরা আশা করছি সমস্যা মিটে যাবে। দু’ দেশের সীমান্তে অপরাধ কমানো নিয়ে সমন্বয়ের ভিত্তিতে কাজ করা যাবে।” এদিকে মালদায় শুকদেবপুর, কোচবিহারের মেখলিগঞ্জে বিএসএফ-কে কাঁটাতার দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিজিবির বিরুদ্ধে। সেই আবহেই এবার বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশনারকে ডেকে পাঠাল বিদেশ মন্ত্রক। কিন্তু আলোচনা কী হল? দু’ পক্ষের তরফে তা জানা যায়নি।

আরও পড়ুন: অদিতির সঙ্গে সাদা কালো | মোদিজির ডিজিটাল জোচ্চুরি

এবারে আসুন সমস্যাটাকে আর একটা দিক থেকে দেখা যাক। ভারত-বাংলাদেশের সীমান্ত নিয়ে এমন ছোটখাটো ঘটনা আজকের নয়, মাঝেমধ্যেই গরু পাচার, বিনা পাসপোর্ট ভিসায় এদেশ থেকে ওদেশে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এক দেশ থেকে অন্য দেশে খুচরো বাণিজ্যের অভিযোগ তো সেই শুরু থেকেই, যেদিন র‍্যাডক্লিফ সাহেবের টানা লাইন ধরে দেশভাগ হয়েছিল, সেদিন থেকেই এইসব অভিযোগ আছে। ৭১-এর পরে সে অভিযোগ তো কমেনি, বেড়েছে, আর তা মেটাতে মাঝেমধ্যেই দু’ দেশের কর্তারা বৈঠক করেছেন। কিন্তু এমন হুকুমজারি করে ডেকে পাঠানোটা বেশ নতুন। আসলে দু’ দেশের সরকার এই কাজের ভিতর দিয়ে কিছু প্রমাণ করতে চায়, তাদের মানুষজনের কাছে কিছু মেসেজ পৌঁছে দিতে চায়। না হলে ভাবুন না ঠিক এই সময়েই, যখন দু’ দেশের সম্পর্ক এক অবনতির দিকে যাচ্ছে, সেই সময়েই এই কাঁটাতারের বেড়া নিয়ে এই গেল গেল রবই বলে দেয়, কহি পে নজারা, কহি পে ইশারা। আসলে যা বলছেন, সেটা উপলক্ষ, আসলে যা বলতে চাইছেন সেটা জরুরি। ভারতের সরকার কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে বোঝাচ্ছেন যে আমরা আমাদের দেশের মানুষজন, ধন সম্পত্তি সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা করছি, কাদের কাছ থেকে? ওই যে বাংলাদেশ, এক ইসলামিক কান্ট্রি, তাদের হাত থেকে, সরকারে বসে থাকা দল, মাঝেমধ্যেই হিন্দু খতরে মে হ্যায় বলে যে স্লোগান দেয়, তার সঙ্গে এটা ভারি মানানসই। হিন্দু রাষ্ট্রবানানেওলারা হঠাৎ কাঁটাতারের বেড়া নিয়ে নেমে পড়েছেন।

অন্যদিকে ইউনুস সরকার তড়িঘড়ি হাইকমিশনারকে তলব করে তাঁর দেশের মানুষকে বোঝাতে চাইছেন যে আমরা হাসিনাকে যে দেশ শেল্টার দিয়েছে তার বিরোধিতা করছি, এতে করে দেশের মধ্যে সেই বিরোধিতার ইস্যুকে জিইয়ে রাখা যাবে। কারণ সে দেশের মানুষ অগাস্টের পর থেকে জানুয়ারিতে পা দিয়েছে, মূলত দুটো বিষয় নিয়ে তাদের প্রশ্ন এখন রাস্তাঘাটে শোনা যাচ্ছে। ১) অর্থনীতির এই হাল কেন? জিনিসপত্রের দাম কমছে না কেন? চাকরি কোথায়? মাথা পিছু রোজগার কমছে কেন? ২) নির্বাচন কবে হবে? ভোট না দিতে দিয়ে হাসিনা এক স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা যদি করে থাকে, তাহলে এখন আমাদের নির্বাচিত সরকারের দাবি জায়জ। কবে হবে নির্বাচন। আর এইসব অস্বস্তিকর প্রশ্নকে আপাতত সরিয়ে কাঁটাতারের বেড়ার উত্তেজনা দিয়ে ঢাকার চেষ্টা করছে ইউনুস সরকার। খুব সহজে বিষয়টা একবার বুঝে নিন। দু’ দেশের সীমান্তরেখার থেকে বেশ কিছুটা দূরে তৈরি হয় দু’ দেশের কাঁটাতারের বেড়া, সেটাই আন্তর্জাতিক নিয়ম। আমাদের সঙ্গে ৪০৯৬ কিলোমিটার এই সীমান্ত আছে। বহু জায়গাতেই আন্তর্জাতিক সীমান্ত লাইন বা জিরো লাইনেই ওই কাঁটাতারের বেড়া আছে। কেন? কারণ খুব সোজা। ওই ৪০৯৬ কিলোমিটার জমির বেশিরভাগ জায়গাতেই দু’ পাশেই রয়েছে কৃষিজমি, বসতবাড়ি, স্কুল, পুকুর, মন্দির, মসজিদ। কাজেই সেখানে আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী ৪৫০ ফুট জমি ছেড়ে দু’ ধারের কাঁটাতারের বেড়া বানানো হলে দু’ দেশেরই বহু মানুষের বহু অসুবিধে হবে। তাদের খেত, ঘর, পুকুর, মন্দির মসজিদ সব নিয়েই ঝামেলা হবে তাদের দেশের সরকারের সঙ্গে। সেটা এড়াতেই ওই জিরো লাইন বর্ডারের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু ওই যে, দু’ দেশের সরকারের আসলে লক্ষ্য অন্য কিছু, তাই সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া নিয়ে এত হইচই। আমরা এক হব না জানি, খুব নিকট ভবিষ্যতে তো নয়ই, কিন্তু একে অন্যকে শ্রদ্ধা আর ভালবাসা দিয়ে এক ভালো প্রতিবেশীর মতো থাকার কথা কি আমরা ভাবাই ছেড়ে দেব?

RELATED ARTICLES

Most Popular