Thursday, June 26, 2025
HomeScrollঅদিতির সঙ্গে সাদা কালো | হ্যাঁ চুমু, না চুমু
Aditir Songe Sada Kalo

অদিতির সঙ্গে সাদা কালো | হ্যাঁ চুমু, না চুমু

সারা বাংলা আড়াআড়ি ভাবে ভাগ হয়ে গিয়েছে। হ্যাঁ চুমু, না চুমু।

Follow Us :

যেমনটা রোজ করে থাকি, একটা বিষয়ের অবতারণা আর সেই বিষয়কে নিয়ে অন্তত দুটো ভিন্ন মতামতকে এনে হাজির করা, যাতে করে আপনারা আপনার মতটাকে শানিয়ে নিতেই পারেন আবার আপনার বিরুদ্ধ মতটাকেও শুনে নিতে পারেন। পৃথিবীর সব্বাই যদি এক মতের হত, সব্বাই একই সুরে কথা বলত, কী বোরিং হত সেই পৃথিবী। কাজেই তর্ক বিতর্কে সাদা কালোর দ্বন্দ্বে নানান রং ভেসে উঠুক। মাও সেতুং বলেছিলেন শত ফুল বিকশিত হোক, যত আগাছা নির্মূল হোক। তো ভনিতা ছেড়ে শুরু করি আজকের বিষয়— হ্যাঁ চুমু, না চুমু। কলকাতা মেট্রোর এক স্টেশনে এক যুগল প্রকাশ্যেই চুমু খাচ্ছিল, তো ব্যস তাই নিয়ে কলকাতা কেন? সারা বাংলা আড়াআড়ি ভাবে ভাগ হয়ে গিয়েছে। হ্যাঁ চুমু, না চুমু।

তো প্রথমে ওই হ্যাঁ চুমুর কথায় আসি। দু’জন সাবালক মানুষ, অনাবৃত তাদের ঠোঁটকে কাছাকাছি নিয়ে গেছে, এই তোমারি পরশরাগে চিত্ত হল রঞ্জিত। এরকম এক সময়ে একজন সেই দৃশ্য দেখে রোমাঞ্চিত হলেন না, তাঁর প্রেমিক বা প্রেমিকা বা সঙ্গীর কথা ভাবলেন না, মোবাইল বার করলেন, ভিডিও করলেন, ভাইরাল করে দিলেন। যৌন ক্ষুধায় অতৃপ্ত আত্মারা দেখেছ, দেকেচো, কী কাণ্ড, বলে চিল চিৎকার করেই চলেছেন। এমনটা কি অস্বাভাবিক কিছু? এই দেশ এই রাজ্য বা এই শহরের যত্রতত্র এক পুরুষ অনায়াসে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়েই হিসু করতে পারেন, এই শহরেই রাস্তার ধারে কলের পাশে বসে গা হাত পা মায় কুঁচকি সমেত রগড়ে রগড়ে চান করতে পারেন, সেই শহরে দুটো মানুষ চুমু খেলেন তার এই প্রতিক্রিয়া। তাঁদের মনে হয়েছে এই সেই মুহূর্ত যাকে চলে যেতে দেওয়া যায় না, মনে হয়েছে এই সেই মুহূর্ত যা আমাদের ফেলে দেওয়া উচিত নয়। এবং তাঁরা প্রকাশ্যে তেরি মা কি, তেরি বহেন কি বলে চিৎকার করে সর্বসমক্ষে গালিগালাজ করেননি, চুমু খেয়েছেন মাত্র, অমনি গেল গেল রব। আমি নিশ্চিত যিনি এই ভিডিও তুললেন, যিনি এই ভিডিও ভাইরাল করলেন তিনি অনায়াসে এক কান দিয়ে ওই সব কাঁচা খিস্তি শোনেন এবং বের করে দেন, এই চুমু কি তার থেকেও বেশি অশ্লীল? অথচ এই দেশের মানুষ প্রকাশ্যে তাঁদের ভালবাসা জানাত, কেবল এমনটাই নয়, সর্বসমক্ষে সেই রমণের দৃশ্য পাথরে খোদাই করে রেখে গেছেন, সে তো কেবল চুম্বন নয়, আরও কিছু। কই তা নিয়ে তো গেল গেল রব ওঠে না, মেট্রো রেলের বদলে তা মন্দিরে বলেই কি? তাহলে ওনাদের বললেই হত যে আপনারা কাছাকাছি শিবমন্দিরে গিয়ে যত ইচ্ছে চুমু খান, কলকাতাতে কি মন্দির কম পড়িয়াছে? আসলে কোথাও এক প্রবল যৌন অতৃপ্তিতে ভোগা মানুষজনের জ্যাঠামশাইপনা দেখতে দেখতে আমরা হেঁদিয়ে পড়ছি। এর আগে সেই জ্যাঠার কথা মনে আছে যিনি এই মেট্রোতেই জামাকাপড়ের সহবত শেখানোর চেষ্টা করেছিলেন, এক প্রকাণ্ড বাম অধ্যাপক সালোয়ার কামিজে আপত্তি জানিয়েছিলেন, এক বিজেপির নেত্রী স্বাধ্বী ঋতাম্ভরা জানিয়েছিলেন ছোট কাপড় পরলে কু-দৃষ্টি তো পড়বেই। আমরা আমাদের শর্তে বাঁচব বলা মানুষের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে, অতএব হে জ্যাঠামশাই, জেঠিমা এবং বুটুনের মা, তৈরি হন, এরকম আরও বহু দৃশ্য আপনাদের বিচলিত করবে, মোবাইলের ব্যাটারি এবং স্টোরেজ অনেক অনেক বাড়াতে হবে, মাথায় রাখুন।

আরও পড়ুন: অদিতির সঙ্গে সাদা কালো | এক দেশ এক ভোট, দেশ জুড়বে? নাকি দেশ ভাঙবে?

এবারে চলুন উল্টোদিকেও যে যুক্তি আছে তা শুনে নেওয়া যাক। না চুমুর গল্প। কেউ কি মানা করেছে চুমু খেতে, কিন্তু তা ভাদ্র মাসের কুকুরের মতো প্রকাশ্যেই হতে হবে কেন? মানে চুমু তো দুজন মানুষের অনুভূতি, তার সাক্ষী থাকুক উজ্জ্বল আকাশ, বইতে থাকা বাতাস, অঝোর বৃষ্টি, কিংবা প্রখর তপন। কিন্তু তা জনারণ্যে কেন? এইটা দেখানো যে দেখো আমরা কেমন আধুনিক হয়ে গেছি? দেখো কলকাতা লন্ডন হয়ে গেছে? দেখো আমি বাড়ছি মাম্মি? সব পাখি ঘরে ফেরে, সব নদী, থাকে শুধু অন্ধকার, আর তখনই হাজির মুখোমুখি বসিবার জন্য বনলতা সেন। হ্যাঁ, চুম্বন এক গোপন ইচ্ছে, তা খিদে নয়, চিৎকার করে খিদের জানান দেওয়া যায়, সেটা স্বাভাবিক, কিন্তু চুম্বন, না তার উদারা মুদারা তারা আছে, তার আরোহন অবরোহণ আছে, অন্য কোনও শব্দে, অন্য কোনও বিচ্ছুরণে তা ভেঙে যেতেও পারে, তা একান্ত নিজের আর তাই তা প্রকাশ্য অনুভূতি নয়। আঙুল তুলে দেখাবেন ইউরোপকে? আমেরিকাকে? বলবেন সভ্য সমস্ত দেশেই তো হয়। তা ওনাদের দেশে যা যা হয় তাই তাই করতে পারবেন? করবেন? আমাদের নিজস্ব বলে কিছুই থাকবে না, সবটাই এক বিরাট গ্লোবালাইজেশন? এক বিশ্বায়ন? ভালবাসার বিশ্বায়ন হবে? আমাদের দেশে বাবা-মা পরিবার আত্মীয়স্বজনের কাঠামো আর ইউরোপ আমেরিকার কাঠামো এক? আমাদের দেশের খাদ্যাভ্যাস, ইউরোপ আমেরিকার কাঠামো এক? সংস্কৃতি এক? তাকে পিটিয়ে এক করতে হবে? ওদেশে তো প্রকাশ্যেই চুমু খায় বলেই আমরাও প্রকাশ্যে চুমু খাব, সেটাই আধুনিকতা? মা মেয়েকে ১৩-১৪ বছর থেকে জন্ম নিরোধক বড়ি দেওয়া শুরু করে, কে জানে কখন…। এটাই ইউরোপ আমেরিকা, আমরাও করব? এমন নির্বিচার অনুকরণে আপনার সংস্কার, আপনার সংস্কৃতি হারিয়ে যাবে না তো? শেষমেশ আবার ঠাকুরকেই ডাকি,

লুকানো প্রাণের প্রেম পবিত্র সে কত!
আঁধার হৃদয়তলে মানিকের মতো জ্বলে,
আলোতে দেখায় কালো কলঙ্কের মতো।
ভাঙিয়া দেখিলে ছিছি নারীর হৃদয়!
লাজে ভয়ে থর্‌থর্‌ ভালোবাসা-সকাতর
তার লুকাবার ঠাঁই কাড়িলে নিদয়!

হ্যাঁ, এরকম ভাবেই চিন্তা, তা চুমু নিয়েই হোক বা রাবড়ি, তা কখনওই একরৈখিক নয়। বহুধার থেকে সত্য উন্মোচিত হয়, কিন্তু আমরা সত্য বলি তাকে যা আমাদের মনে ধরে, মাথায় বসে যায়। অতএব দু’ধারের কথাই শুনুন, তারপর যাচাই করে নিন আপনার নিজের সত্যিটাকে, মন্দ-ভালোর দ্বন্দ্ব চলুক, সাদা-কালোর যুদ্ধ চলুক, সঙ্গে থাকুন, সুস্থ থাকুন।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Good Morning Kolkata | সকালের গুরুত্বপূর্ণ খবর, দেখুন একনজরে সরাসরি
00:00
Video thumbnail
Iran-Israel | ছি: ছি: ছি:, এ কি করল ইজরায়েল? রাগে ফুঁসছেন খামেনি, এবার ইজরায়েলকে কী করবে ইরান?
00:00
Video thumbnail
Donald Trump | ট্রাম্পের আচরণে NATO জোটে বিভেদের ছায়া, কী হতে চলেছে? দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
00:00
Video thumbnail
Iran-Israel | নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ইজরায়েলের দূতকে দেখে ক্ষেপে আ/গুন রাশিয়ার দূত কেন?
00:00
Video thumbnail
Iran-America | যে ৭টি কারণে আমেরিকার সাহায‍্য নিয়েও ইরানের সঙ্গে এঁটে উঠতে পারল না ইজরায়েল
00:00
Video thumbnail
BRICS | Iran | ইরানের পাশে BRICS, কী হবে এবার?
00:00
Video thumbnail
Donald Trump | ট্রাম্পের আচরণে NATO জোটে বিভেদের ছায়া, কী হতে চলেছে? দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
11:54:57
Video thumbnail
Iran-America | যে ৭টি কারণে আমেরিকার সাহায‍্য নিয়েও ইরানের সঙ্গে এঁটে উঠতে পারল না ইজরায়েল
11:55:01
Video thumbnail
Iran-Israel | নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ইজরায়েলের দূতকে দেখে ক্ষেপে আ/গুন রাশিয়ার দূত, কেন?
11:55:01
Video thumbnail
বাংলা বলছে (Bangla Bolche) | ছাব্বিশে ধর্ম-যু/দ্ধ?
11:05:45

Deprecated: Automatic conversion of false to array is deprecated in /var/www/ktv/wp-content/themes/techinfer-child/functions.php on line 39