ওড়িশা এফ সি-৬ এস সি ইস্ট বেঙ্গল–৪
(হেক্টর রোডাস-২, জ্যাভি হার্নান্ডেজ, আরিদাই-২, আইজ্যাক) (ড্যারেন সিডিওল, হাওকিপ, ড্যানিয়েল চিমা–২)
ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের সত্যিই শনির দশা চলছে। না হলে তেত্রিশ মিনিট পর্যন্ত এগিয়ে থাকে কোনও টিম চয় গোল খায়? গত বছর এই ওড়িশা এফ সি-র কাছে ৫-৬ গোলে হেরেছিল ইস্ট বেঙ্গল। এবারও ছয় গোল খেল। তবে হারার ব্যবধান আরও বাড়ল।
তেত্রিশ মিনিট অবধি ইস্ট বেঙ্গলের গোলকিপার শুভম সেন একটা বলও ধরেননি। তার আগে তেরো মিনিটে একটা চমৎকার গোল করে লাল হলুদকে এগিয়ে দিয়েছিলেন ডাচ ফুটবলার ড্যারেন সিডিওল। রাজু গায়কোয়াড়ের থ্রো ইন এক ডিফেন্ডারের কাছ থেকে ফেরত এলে সুন্দর ভলিতে গোল করেন ড্যারেন। ৩৩ মিনিট পর্যন্ত এক গোলে এগিয়ে থাকা ইস্ট বেঙ্গল বিরতির সময় ১-৩ পিছিয়ে পড়ল। আগের মোহনবাগান ম্যাচে ইস্ট বেঙ্গল এগারো মিনিটে তিন গোল খেয়েছিল। আর মঙ্গলবার ওড়িশার কাছে বারো মিনিটে তিন গোল খেয়ে গেল ইস্ট বেঙ্গল। গত বার এগারো দলের লিগে ইস্ট বেঙ্গল নয় নম্বর জায়গায় ছিল। আর এবার প্রথম তিনটে ম্যাচে তাদের যা হতশ্রী পারফরম্যান্স তাতে এগারো নম্বর জায়গাটা, মনে হচ্ছে, তাদের জন্যই অপেক্ষা করছে। বিরতির আগে তিন গোল খাওয়া টিম বিরতির পরেও তিন গোল খাচ্ছে। এটা কোন ইস্ট বেঙ্গল? এই তৃতিয় শ্রেণীর ফুটবলারদের নিয়ে ইস্ট বেঙ্গলের দশা কী হবে তা ভাবতেও শিউরে উঠতে হয়।
এবারের ওড়িশা গত বছর এগারো নম্বরে ছিল। এবার তারা সুন্দরভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। প্রথম ম্যাচেই তারা হারিয়ে দিয়েছে বেঙ্গালুরু এফ সি-কে। আর এদিন ইস্ট বেঙ্গলকে হারাবার পর তাদের দুই ম্যাচে ছয় পয়েন্ট। আর ইস্ট বেঙ্গল তিন ম্যাচে দশ গোল খেয়ে এখন এমন একটা জায়গায় যেখান থেকে তাদের উদ্ধার করার মতো কাউকে দেখা যাচ্ছে না। ইস্ট বেঙ্গলের না আছে অ্যটাক, না আছে ডিফেন্স। এত নিকৃষ্ট মানের বিদেশি ফুটবলার নিয়ে আই এস এল খেলতে নামলে যা দশা হয় তাই হচ্ছে। আর তাদের পাশে ভারতীয় ফুটবলাদের কথা যত কম বলা যায় ততই ভাল। মোহনবাগানের কাছে তিন গোল খাওয়ার পর লাল হলুদ কোচ ম্যানুয়েল দিয়াজ দলকে ঢেলে সাজিয়েছিলেন। গোলে শুভম সেন প্রত্যাশিতই ছিলেন। চার ডিফেন্ডার ছিলেন জয়নার, রাজু গায়কোয়াড় , ফ্রাঞ্জিও পার্সে এবং হীরা মণ্ডল। মাঝ খানে বিকাশ জাইরু, আমির ডেরভিসেভিচ, নাওরম সিং এবং মহম্মদ রফিক। সামনে দুই বিদেশি ড্যারেন সিডিওল এবং আন্তোনিও পেরোসেভিচ। এই পেরোসেভিচকে নিয়ে লাল হলুদ সমর্থকদের প্রচুর আশা ছিল। প্রথম ম্যাচে তাঁকে খারাপ লাগেনি। কিন্তু পরের দুটো ম্যাচে এই ক্রোয়েশিয়ার স্ট্রাইকারকে দেখে মনে হচ্ছে তিনি জেনুইন স্ট্রাইকার নন। তাঁকে বলা যেতে পারে সাপোর্টিং স্ট্রাইকার। কিন্তু ইস্ট বেঙ্গল টিমে তো স্ট্রাইকারই নেই।
শুধু স্ট্রাইকারই নয়, ইস্ট বেঙ্গলে আছে কী? এদিন ম্যানুয়েল দিয়াজের টিম হাফ ডজন গোল খেয়েছে। প্রথম চারটে গোলই সেট পিস মুভমেন্ট থেকে। সেরা বলতে হয়ে চার নম্বর গোলটাকে। বক্সের বাইরে থেকে সরাসরি ফ্রি কিক থেকে মিডফিল্ডার আরদাই পুরো দেওয়ালের উপর দিয়ে বল তুলে দিলেন। ঝাঁপিয়ে পড়ে বলটাকে গোলে ঢুকতে দেখা ছাড়া শুভমের কিছু করা ছিল না। প্রথম দুটি গোল করলেন সেন্টার ব্যাক হেক্টর রোডাস। ফ্রি কি থেকে তাঁর থিক মাথায় বল ফেললেন জাভি হার্নান্ডেজ। আলতো হেড এবং গোল। দ্বিতীয় গোলটার সময় রাজু গায়কোয়াড় হেক্টরের গায়ে লেগেছিলেন। কিন্তু তাঁকে হেড করা থেকে আটকাতে পারেননি। তিন নম্বর গোলটা জাভির নিজের। কর্নার থেকে গোল করে। বিরতির সময় ৩-১ থেকে বিরতির পর ৪-১ হয়ে গেল। এর পর নাওরেম হাওকিপ একটা সুন্দর গোল করলেন হেডে। বলটা বাড়িয়েছিলেম মহম্মদ রফিক। ২-৪ হওয়ার পর আবার ইস্ট বেঙ্গল গোল খেল। আবার গোল করলেন আরিদাই। এর পর পরিবর্ত ড্যানিয়েল চিমা পর পর দুটো গোল করায় (দ্বিতীয়টা পেনাল্টি থেকে) স্কোর সিট ছিল ৪-৫। কিন্তু সেটাই ৪-৬ হয়ে গেল ইনজুরি টাইমে ইস্ট বেঙ্গল গোল খাওয়ায়।
কোনও টুর্নামেন্টের প্রথম তিন ম্যাচে ইস্ট বেঙ্গল দশ গোল খেল। এবারের ইস্ট বেঙ্গলের পারফরম্যান্স সত্যিই ঐতিহাসিক!