কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে প্রাণ বাঁচানোর লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন ভারতীয়রা। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন এ রাজ্যের বেশ কিছু পড়ুয়া। সর্বশেষ পাওয়া খবরে জানা গিয়েছে, ভারতীয় দূতাবাসের পক্ষ থেকে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। সমস্ত কিছু গুছিয়ে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যে কোনও মুহূর্তে সুযোগ পেলেই তাঁদের ভারতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে বলে দূতাবাস জানিয়ে রেখেছে।
পরিবারের আর্থিক হাল ফেরাতে চার মাস আগে ইউক্রেনে পারি দেন নদিয়ার শান্তিপুরের বাসিন্দা সুমন অধিকারী। ইউক্রেনের বর্তমান পরিস্থিতিতে ছেলের জন্য আতঙ্কিত অধিকারী পরিবার। সুমনের বাড়িতে রয়েছেন তাঁর স্ত্রী, এক সন্তান এবং বৃদ্ধা শাশুড়ি। বাবা-মা মারা গিয়েছে আগেই। কোনওরকমে সংসার চলত তাঁদের। গত চার মাস আগে ইউক্রেনে ডেলিভারি বয় হিসেবে কাজে গিয়েছিলেন সুমন। সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু হঠাৎই এই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ঘুম কেড়েছে সুমনের স্ত্রী সহ তাঁর পরিবারের সদস্যদের। সুমনের স্ত্রী জানান, তাঁর সঙ্গে ফোনে ইতিমধ্যে যোগাযোগ হয়েছে। ইউক্রেন ছেড়ে আপাতত পোল্যান্ডে আছে সুমন।
এদিকে, নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের মাজদিয়ার বাসিন্দা অরিন্দম বিশ্বাস ২৮ তারিখ বিমানের টিকিট কাটেন। যুদ্ধের দামামা বাজতেই জানতে পারেন বিমান বাতিল হয়েছে। তারপর থেকেই উদ্বিগ্ন অরিন্দমের পরিবার। অরিন্দম ইউক্রেনে ন্যাশানাল প্রিয়গোভ মোমোরিয়াল মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। ভারত সরকারের কাছে পড়ুয়ার মা জিনিয়া বিশ্বাসের আবেদন, ছেলে যাতে দেশে ফিরে আসতে পারে। তার ব্যবস্থা করা হোক। অরিন্দমের বাবা অর্জুন বিশ্বাস বিএসএফ কর্মী। মা জিনিয়া বিশ্বাস ও তাঁর ভাই অনির্বাণ বিশ্বাস। এই পরিস্থিতিতে যথেষ্টই আতঙ্কিত পরিবার।
আরও পড়ুন: Russia-Ukraine Conflict: যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ব্রিটেনের সঙ্গে সামরিক মহড়ায় পিছিয়ে এল দিল্লি
অন্যদিকে, জলপাইগুড়ি জেলার ধূপগুড়ি ব্লকের প্রত্যন্ত গ্রাম কাজীপাড়ার বাসিন্দা আশিস বিশ্বাস। আর্থিক বাধা কাটিয়ে আশিস ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় বেশ ভাল। চার বছর আগে আশিস ইউক্রেনে মেডিক্যাল নিয়ে পড়ার সুযোগ পায়। তারপর থেকে ইউক্রেনে রয়েছে সে। লকডাউনে বাড়িতেও এসেছিলেন আশীষ। দীর্ঘদিন বাড়িতে থাকার পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতেই গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ফের ইউক্রেনে যান তিনি। ইউক্রেনে থাকলেও আশীষের সঙ্গে ফোনে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল তাঁর মা-বাবার।
আরও পড়ুন: Russia-Ukraine Conflict: রুশ হামলায় গুঁড়িয়েছে আটশোর বেশি ইউক্রেনের সামরিক পরকাঠামো
ছেলের সঙ্গে তাঁদের ফোনে কথা হয়েছে বেশ কয়েকবার। আশিস জানিয়েছেন, তাঁদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসবে সে। আশিসের বাবা বাবন বিশ্বাস বলেন, ছেলে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে ইউক্রেনে রয়েছে। তাই খুব চিন্তা হচ্ছে। যদিও ছেলে জানিয়েছে যেখানে আছে সেখানে নিরাপদেই আছে। তবুও আমরা চাই দ্রুত সুস্থ ভাবে বাড়ি ফিরে আসুক। আশীষ যাতে সুস্থ ভাবে ফিরে আসে সেই দিকেই তাকিয়ে পরিবার সহ আশীষের বন্ধু ও গ্ৰামবাসীরা।
ইতিমধ্যেই আশিসের একটি ভিডিয়ো সামনে এসেছে। যেখানে সে জানিয়েছেন, সে ইউক্রেন বর্ডারের কানকিভ এলাকায় রয়েছেন। খুবই আতঙ্কে রয়েছেন তাঁরা। চারিদিকে বোমা পড়ছে। এই কারণে মাটির নিচে বাঙ্কারে আশ্রয় নিয়েছেন আশীষ সহ তাঁর বন্ধুরা। ভারত সরকারের কাছে আবেদন, তাঁদের যেন সেখান থেকে উদ্ধার করে দেশে ফেরানো হয়।