বাঁকুড়া : ১৩ সেন্টিমিটারের স্টোন চিপসের দুর্গা, তার সঙ্গে যোগ হয়েছে ৩ সেন্টিমিটারের ছৌ শিল্পের আদলে দুর্গা। দুই শিল্পীর দুই দুর্গা এবার নজর কেড়েছে। এক মহিলার হাতে তৈরি পুরুলিয়ার ছৌ শিল্পের আদলে দেবী দশভুজা একেবারেই সপরিবারে ৩ সেমি সাইজের মধ্যেই শিল্পকর্মে তুলে ধরেছেন শিল্পী। আর ইঞ্জিনীয়ারিং ছাত্রের হাতে ফুটে উঠেছে বিভিন্ন সাইজের স্টোন চিপস সাজিয়ে ১৩ সেমির দুর্গাপ্রতিমা। বাঁকুড়ার দুই শিল্পীর ছোট্ট নিখুঁত শিল্প কর্ম এরই মধ্যে নজর কেড়েছে। পুজো মানেই নতুন কিছু ভাবনা সেই ভাবনা থেকেই দুই শিল্পীর দুই শিল্প কর্মে দেবী দশভুজার ছোট্ট অভিনব রূপ তুলে ধরেছেন তাঁরা। এই শিল্পকর্ম জেলা, রাজ্য, দেশ, বিদেশ সকলের কাছে ছড়িয়ে পড়ুক, চান বাংলার এই দুই শিল্পী।
বাঁকুড়া শহরের ভকত পাড়ার গৃহবধু অর্পিতা সরকার। সংসারের কাজের মাঝেই অবসর সময় বের করে নিজেকে যুক্ত রাখেন ক্রিয়েটিভ শিল্প কর্মে। সংসারের কাজের ভিড় সামলেও সময় করে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন নানান হস্তশিল্পের সঙ্গে। গয়না, ঘরসাজানোর রকমারি জিনিসপত্র, উপহারের নানান আইটেম সহ নানান হস্তশিল্পের কাজ করেন সারাবছর। তবে পুজো এলেই নতুন কিছু করে দেখানোর ঝোঁক থেকেই অভিনব দুর্গা বানিয়ে চমক আনেন শিল্পী। এর আগেও খবরের কাগজ দিয়ে জেলার প্রাচীন শিল্প ডোকরা শিল্পকে তুলে ধরেছিলেন দেবীদুর্গা বানিয়ে। রসুনের খোসা থেকেও দেবীদুর্গার সুন্দর রূপ বানিয়ে সকলের নজর কেড়েছিল। এমন নানান ফেলে দেওয়া জিনিসপত্রকে মূলত হাতিয়ার করে এই অভিনব শিল্প কর্মের মাধ্যমে পুজোর সময় দেবী দুর্গা বানান শিল্পী অর্পিতা সরকার। তাঁর শিল্পকর্ম এবারেও ব্যাতিক্রম হয়নি। এবারও নিজের ছোট্ট শিল্প কর্মের মাধ্যমে আর এক প্রাচীন লোকশিল্পকে তুলে ধরেছেন শিল্পী। পুরুলিয়ার প্রাচীন লোকশিল্প ছৌ । যার খ্যাতি বিশ্বজোড়া। সেই শিল্পের অনুকরণ করে এবার দেবী দশভুজার রূপ তুলে ধরেছেন তিনি। প্রতিবেশী জেলা পুরুলিয়ায় সেই জেলার এক প্রাচীন ছৌ শিল্পকে তুলে ধরতেই বাঁকুড়ার গৃহবধূর এই চেষ্টা। কাগজ, পুথি, জরি, চুমকি, সুতো এমন নানান উপকরণ দিয়ে প্রায় ১০ দিনের পরিশ্রমে ৩ সেমি আকারের দেবী দশভুজার রূপ ফুটিয়ে তুলেছেন শিল্পী। ছৌশিল্পের আদলে অতিক্ষুদ্র এই শিল্প কর্মে নিখুঁত ভাবে দেবীদুর্গা অভিনব এই শিল্প শৈলী যা ইতিমধ্যেই মন ছুয়েছে অনেকের। শিল্পী অর্পিতা সরকার জানান, ছোট বেলা থেকেই ছোট্ট ছোট্ট কিছু বানানোর নেশা ছিল।সেই কাজের নেশার থেকেই সাংসারিক কাজের ভীড় সামলেও অবসর সময় ব্যয় করি এইসব কাজের মধ্য দিয়ে। এবার পুরুলিয়া ছৌ শিল্পকে বেছে নিয়ে দুর্গা বানিয়েছে। এই ধরণের শিল্পকর্মের মাধ্যমে মানুষের মন জয়ের পাশাপাশি জেলা, রাজ্য, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সুনামও লক্ষ্য রয়েছে বলেও দাবি শিল্পীর।

আরও পড়ুন : সিংহ নয়, চট্টোপাধ্যায় জমিদার বাড়ির দুর্গা আসেন বাঘের পিঠে
শুধু অর্পিতা নয় বাঁকুড়া এক ইঞ্জীনিয়ারিং ছাত্রও অভিনব দুর্গা বানিয়ে সাড়া ফেলেছে। বাঁকুড়ার ওন্দার বাসিন্দা ইঞ্জিনীয়ারিং ছাত্র অঙ্কুর সামন্ত। অতি সূক্ষ্ম হাতের কাজ যার সবথেকে বড় নেশা। দেশলাই কাঠি, চাল এবং পেনসিলের শিশে শিল্পীর হাতের ছোঁয়াই ফুটে উঠছে নানান মডেল। এমনি নানান শিল্প কর্মের সাথে যুক্ত হয়ে এগিয়ে চলেছে শিল্পী অঙ্কুর। নামের সাথে তাঁর শিল্প কর্মের এক দারুন মিলও রয়েছে। ছোট বেলা থেকেই আঁকা তাঁর বেশ পছন্দের। আঁকার সঙ্গে সঙ্গে সে জড়িয়ে পড়ে সুক্ষ সুক্ষ হাতের শিল্প কর্মে। তার কাজের নমুনা চক পেন্সিল কেটে ভারতের মানচিত্র থেকে নানান মডেল, উড পেন্সিলের সিস কেটে নানান দেব দেবীর মূর্তি থেকে মডেল, দেশলাই কাঠি কেটে পাখি, সংখ্যা। দেশলাই কাঠির ছোট্ট বারুদের অংশে তুলি দিয়ে আঁকা রবিন্দ্রনাথ থেকে দেবদেবী। চাল কেটে গনেশ আবার ছোট্ট মসুর কলাইয়ের মধ্যেও তাঁর শিল্প প্রতিভার ছোঁয়া। এই সব সৃষ্টির শিল্পকর্ম অঙ্কুরের। পুজো মানেই নতুন কিছু তাই মাথায় আসে স্টোন চিপস দিয়ে দেবীদুর্গা বানানো। যেমন ভাবনা ঠিক তেমন কাজ। ৩ দিনের চেষ্টায় বিভিন্ন ধরণের স্টোন চিপস থেকেই মহিষাসুরমর্দিনী রূপ তুলে ধরল শিল্পী। ১৩ সেমি সাইজের মধ্যে সিংহের পিঠে চড়ে দেবীদুর্গার মহিষাসুর বধের দৃশ্য ফুটিয়ে তুলেছেন শিল্পী। ছোট্ট এই শিল্প কর্ম বানিয়ে জেলাবাসীকে চমকে দিয়েছেন অঙ্কুর।