বোলপুর: নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকে (Amartya Sen) জমি ফেরতের চিঠি দেওয়ার পরই বিস্ফোরক বিশ্বভারতীর (Visva-Bharati) উপাচার্য অধ্যাপক বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। নাম না করেই উপাচার্য বিঁধেছেন নোবেলজয়ীকে। বুধবার উপাসনাগৃহে উপাসনার প্রাসঙ্গিকতার উদাহরণ দিতে গিয়ে উপাচার্য বলেন, শান্তিনিকেতনে জমি দখল করে রাখলেই তিনি রাবীন্দ্রিক। উপাচার্যকে গালিগালাজ দিতে পারলে তিনি রাবীন্দ্রিক। অন্যায় করলে রাবীন্দ্রিক। বিশ্বভারতীকে (Visva-Bharati) অপমান করতে পারলে তিনি রাবীন্দ্রিক।
পাশাপশি এদিন ‘রাবীন্দ্রিক’ শব্দের ব্যাখ্যাও দিয়েছেন উপাচার্য। শান্তিনিকেতনে উপাসনা গৃহে প্রতি বুধবার বিশেষ প্রার্থনা করা হয়। সেই সভাতেই উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য। সেখানে বিদ্যুৎ দাবি করেন, তিনি না এলে পড়ুয়ারা উপাসনা গৃহে আসেন না বিশ্বভারতীতে (Visva-Bharati) উচ্চশিক্ষিত মানুষ যেমন আছেন, সেরকমই অশিক্ষিত মানুষও আছেন। অল্পশিক্ষিত মানুষ তো সবথেকে বেশি ক্ষতিকারক। তাই এ সমস্ত মানুষের কাছে রাবীন্দ্রিক কথার আসল অর্থ পাবেন না। তাঁর কথায়, শান্তিনিকেতনে বসবাসকারী রাবীন্দ্রিক মানেই স্বার্থসিদ্ধির সোপান। যদি উপাসনা গৃহে কেউ না আসেন, তাহলে ঐতিহ্যবাহী শান্তিনিকেতনের উপাসনা গৃহ বন্ধ করে দেওয়া হবে বলেও হমকি দেন উপাচার্য।
আরও পড়ুন:Kanthi: কাঁথির ধর্ষণ মামলায় ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ অভিযুক্ত তৃণমূল ছাত্র নেতা
কলকাতা থেকে শান্তিনিকেতনে ফিরেই বিশ্বভারতীর (Visva-Bharati)সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খোলেন অমর্ত্য । সাত পড়ুয়াকে সাসপেন্ড এবং এক অধ্যাপককে বরখাস্তের তীব্র নিন্দা করেন তিনি। তারপর ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই বিশ্বভারতী জমি ফেরত দেওয়ার জন্য চিঠি দেন। জবাবে অমর্ত্য বলেন, এটা মিথ্যা। আগেও ওরা এমনটা বলেছিল। গতবারের মতো এবারও আবার আইনজীবী চিঠির জবাব দেবেন।
বিশ্বভারতী এর আগেও লিখিত অভিযোগে জানিয়েছিল, অমর্ত্য সেন (Amartya Sen) বিশ্বভারতীর জমি দখল করেছেন। সেই সময় ওই অভিযোগ ঘিরে রাজ্যে ব্যাপক আলোড়ন পড়ে। অমর্ত্যর পাশে দাঁড়ান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নোবেলজয়ীকে চিঠি লিখে মমতা জানিয়েছিলেন, অমর্ত্যবাবুর মতো মনীষীকে নিয়ে যে জমি বিতর্ক তৈরি করা হয়েছে, তাতে তিনি আহত, মর্মাহত এবং বিস্মিত। একইসঙ্গে দেশের ‘বিস্তারবাদী এবং অসহিষ্ণুতার’ বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য তাঁকে ‘বোন এবং বন্ধু’ হিসেবে বিবেচনাও করারও আর্জি জানিয়েছিলেন মমতা।
মঙ্গলবারই উপাচার্য বলেছিলেন, অধ্যাপক সেন বিশ্বভারতীর বেশ কিছুটা জমি দখল করেছেন। সেই জমি ফেরতের জন্য আগেও চিঠি দিই। যেহেতু উনি শান্তিনিকেতনে আছেন, তাই হাতে হাতে চিঠি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরা আলোচনা করতে রাজি। এই বিষয়টির সমাধান করতে চাই। আমরা চাই না, ভবিষ্যতে উনি কোনও সমস্যায় পড়েন।
শান্তিনিকেতনের আশ্রমিকরা মনে করছেন, অমর্ত্য সেন বিজেপি এবং বিশ্বভারতীর বিরুদ্ধে খোলাখুলি কথা বলেন বলেই তাঁকে নানা ভাবেই হেনস্তা করা হচ্ছে। সেই কারণেই জমি ফেরত চেয়ে আবারও চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, তাঁর সম্পর্কে বিজেপির নানা খোঁচা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে অমর্ত্য মন্তব্য করেন, একটাই কথা বলব। চুপ করুন।