skip to content
Friday, February 7, 2025
Homeফিচারশঙ্খ ঘোষের সঙ্গে আর আড্ডা মারার বাধা রইল না বুদ্ধদেব গুহের

শঙ্খ ঘোষের সঙ্গে আর আড্ডা মারার বাধা রইল না বুদ্ধদেব গুহের

Follow Us :

বুদ্ধদেব গুহ চলে গেলেন।

রেখে গেলেন তাঁর সাহিত্য, গান, শিকার, ছবি আঁকা এবং অবশ্যই চার্টার্ড অ্যাকাউন্টের হিসেবনিকেশ। একটা মানুষ এতগুলো কাজ কী করে করতে পারে,  জিজ্ঞেস করায় বলেছিলেন, “আমাদের মস্তিষ্কে অনেকগুলো কোষ আছে। বেশির ভাগ মানুষই সেগুলো জানে না বা জানলেও তা নিয়ে ভাবে না। আমি অনেকগুলো কোষকে নিয়ে কাজ করেছি, সফল হয়েছি কি না, জানি না। তবে চেষ্টায় কোনও ফাঁকি দিইনি।“

হয়তো সেজন্যই দক্ষিণী এবং দেবব্রত বিশ্বাসের কাছে গান শিখলেও পরিণত বয়সে পুরাতনী কিংবা টপ্পা গাওয়া শিখেছিলেন চণ্ডীদাস মালের কাছে, রীতিমতো নাড়া বেঁধে। এমনকী রামকুমার চট্টোপাধ্যায়কে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে শিখেছিলেন নিধুবাবুর টপ্পা। হয়তো সেজন্য শেষ দিকে বিভিন্ন আসরে তাঁকে দেখলেই তাঁর গুণগ্রাহীরা তাঁর কাছে গান শুনতে চাইতেন। এবং তিনিও দু’খিলি পান মুখে দিয়ে মনের আনন্দে গান গাইতেন। এই রকমই এক দিন এক আসর থেকে ফেরার পথে লালাদাকে বলেছিলাম, এখন তো দেখছি আপনার পাঠক-পাঠিকারা আপনার সাহিত্যের থেকে গানের বেশি ভক্ত হয়ে উঠেছে। তখন তিনি দ্রব্যরসে জারিত। জানালা দিয়ে পানের পিক ফেলে বললেন, “কী আর করবে বলো? তোমরা তো আমার সাহিত্যকে স্বীকৃতি দিলে না। তবু যদি গান শুনিয়ে তোমাদের মনে রেশ রেখে যাই ক্ষতি কী?”

কথাসাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহকে বাঙালি স্বীকৃতি দেয়নি? তা হলে বুদ্ধদেব গুহের নামে যে লক্ষ লক্ষ বই বিক্রি হয় সেটা কোন বুদ্ধদেব গুহ? লালাদা বললেন, “না, না। আমি পাঠকদের কথা বলছি না। ওদের জন্যই তো আমি বুদ্ধদেব গুহ। ওদের জন্যই তো আমি যেখানে যাই মানুষ আমাকে ছেঁকে ধরে। ও নিয়ে আমার কোনও আক্ষেপ নেই। কিন্তু তোমাদের সাহিত্য সমাজের ব্রাহ্মণরা তো আমাকে পাত্তাই দেয় না। বলে আমি যা লিখি তার কোনও মূল্য নেই৷’’ বুঝলাম উনি বলতে চাইছেন তাঁর উপন্যাস এবং গল্পের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না পাওয়ার কথা। তাঁর চেয়ে লেখক জীবনে অনেক অনুজ অ্যাকাডেমি পুরস্কার পেয়ে গেছেন। কিন্তু আমৃত্যু যিনি ওই পুরস্কারটির জন্য তীর্থের কাকের মতো বসে রইলেন তাঁর ভাগ্যে সেই শিকেটা ছিঁড়ল না। এ দুঃখ বুদ্ধদেবের অনুরাগীদেরও বহুদিন বহন করতে হবে। এই কথাটা যখন দিনের আলোর মতো সত্যি, পাশাপাশি এ কথাটাও সত্যি যত দিন বাংলা সাহিত্য থাকবে তত দিন সেই আকাশে জ্বলজ্বলে জ্যোতিষ্কের মতো উজ্জ্বল হয়ে থেকে যাবেন বুদ্ধদেব গুহ।

আরেকটা আফসোস ছিল তাঁর। বাংলাদেশে তাঁর লক্ষ লক্ষ ভক্ত আছে। ওই বাংলায় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার ও বুদ্ধদেব গুহের অগুন্তি ভক্ত। বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে তিনি ভীষণ জনপ্রিয়। কিন্তু কোনও দিন ও বাংলায় যাওয়া হয়নি তাঁর। এক দিন বলেও ছিলেন, “ ওদেশ থেকে কত চিঠি আসে, ফোন আসে। কিন্তু কখনও যাওয়া হল না। আর এখন শরীরের যা অবস্থা যাওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই।“ প্রসঙ্গত, তাঁর জন্ম কলকাতায় হলেও লালাদারা ছিলেন ঢাকার বাঙাল। একবার তো ঢাকা থেকে তাঁর এক অনুরাগী চারটে বড় ইলিশ পাঠালে তিনি দুটো ইলিশ পাঠিয়ে দিয়েছিলেন তাঁরই নামধারী পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে, জন্মদিনের উপহার হিসেবে।

ইদানীং চোখে দেখতে পেতেন না ভালমতো। বাঁ চোখে তো একেবারেই নয়। লিখতে গেলে হাত কাঁপত। তবু এ বছরেও একটি শারদ সংখ্যায় তাঁর শেষ উপন্যাসটা লিখে গেছেন। মুখে বলে যেতেন। শ্রুতিলিখন করতে হত কাউকে। আসলে ২০১১ সালের ২৪ ডিসেম্বর তাঁর স্ত্রী কিংবদন্তি গায়িকা ঋতু গুহ চলে যাওয়ার পর তিনি মনে মনে বড্ড একা হয়ে গিয়েছিলেন। মাঝে মাঝে বলতেন, “ঋতু চলে গিয়ে আমাকে বড্ড একা করে দিয়ে গেছে৷’’ বাইরে অবশ্য তাঁর কোনও প্রকাশ ছিল না। সাহিত্য সমাবেশ তো বটেই, অন্য আসরেও তাঁর উপস্থিতি ছিল অনিবার্য। তবে গত বছরের মার্চের শেষ থেকে আর রবিবার রাতে চলে যাওয়ার আগে পর্যন্ত তাঁর বাড়িতে প্রবেশাধিকার ছিল না কারুর। দুই মেয়েই অবিবাহিতা। বড় মেয়ে মালিনীই থাকতেন বাবার সঙ্গে। ছোট মেয়ে সোহিনী থাকেন দিল্লিতে। বড় মেয়ের কড়া অনুশাসনের জন্য তাঁর জীবনের শেষ দেড় বছর খুবই একাকিত্বে কেটেছে। এত ভালবাসতেন বিদেশি হুইস্কি খেতে এবং খাওয়াতে। কিন্তু শরীর খারাপ হয়ে যাবে এই ভয়ে মালিনী তাঁকে হুইস্কির ধারেকাছে যেতে দিতেন না। এমনকী এ বছরে তাঁর জন্মদিনে (২৯ জুন) তিনি অনুরাগীদের ফোনও ধরতে পারেননি। জন্মদিনের সপ্তাহখানেক পরে যখন ফোন ধরলেন জানতে চাইলাম সেদিন ফোনে না পাওয়ার কারণ। এক রাশ অভিমান নিয়ে বললেন, “জানি না। আমার মোবাইলটাকে ওরা কী করে রেখেছিল যে কেউই আমাকে ফোনে পায়নি৷’’

সাহিত্যিকদের মধ্যে তাঁর অনুরাগীদের মধ্যে ছিলেন সমরেশ মজুমদার। তার একটা বড় কারণ সমরেশ যখন খুব অল্প বয়সে অ্যাকাডেমি পুরস্কার পেয়েছিলেন তখন থিয়েটার রোডের এক সংবর্ধনা সভায় কোনও প্রথিতযশা সাহিত্যিক উপস্থিত হননি। ব্যতিক্রম বুদ্ধদেব গুহ। এদিন তাঁর প্রিয় লালাদার চলে যাওয়ার খবর শুনে অসুস্থ শরীরেও সমরেশ বললেন, “ আমি এখন গৃহবন্দি। লালাদাকে শেষ দেখাটাও দেখতে পারলাম না।“ বুদ্ধদেবের আরও এক অনুরাগী ছিলেন এ বছরেই প্রয়াত শঙ্খ ঘোষ। একদিন আমাকে বললেন, “আমার খুব ইচ্ছে করে শঙ্খবাবুর সঙ্গে একটু আড্ডা মারতে। ওঁর বাড়িতে একদিন গেলে হত। ওঁর বাড়িতে ওঠার পথে কি লিফট আছে?” বললাম না। নেই। বেশ হতাশ গলায় বললেন, “ তা হলে তো আমার যাওয়া হবে না। আমি সিঁড়ি দিয়ে উঠতে পারি না।’’ শঙ্খবাবুকে ব্যাপারটা বলাতে উনি বললেন, “ওকে আসতে হবে না। উনি যদি রাজি হন, আমি যেতে পারি।“ লালাদাকে বললাম ব্যাপারটা। উনি বললেন, “দাঁড়াও আমি মেয়েকে জিজ্ঞেস করি।“ শেষ পর্যন্ত অবশ্য লালাদার সানি টাওয়ার্সের ফ্ল্যাটে প্রবেশ করার অনুমতি পাননি শঙ্খ ঘোষ।

সোমবার থেকে অবশ্য আর সে সবের দরকার পড়বে না। এখন থেকে শঙ্খবাবু আর বুদ্ধদেব গুহ কারও অনুমতির তোয়াক্কা না করে নিজেদের মধ্যে আড্ডা মারতে পারবেন। দিনভর, রাতভর।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Sonu Sood | অভিনেতা সোনু সুদের বিরুদ্ধে গ্রে*ফ*তারি পরোয়ানা! কোন মামলায় নাম জড়িয়েছে?
00:00
Video thumbnail
Weather Update | রাজ্যে ফিরল শীত? এক ধাক্কায় নামল পারদ, দেখুন আবহাওয়ার লেটেস্ট আপডেট
00:00
Video thumbnail
Delhi Election 2025 | দিল্লিতে কেজরির জাদু নাকি মোদি ম্যাজিক? বুথ-ফেরত সমীক্ষায় চমক
02:49
Video thumbnail
BGBS 2025 | বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে নতুন দিশা, শিল্পপতিদের বিনিয়োগ প্রস্তাব
04:43
Video thumbnail
BGBS | বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের ইতিহাসে সর্বোচ্চ লগ্নি প্রস্তাব
04:00
Video thumbnail
Good Morning Kolkata | এক নজরে দেখে নিন আজ সকালের গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলি
14:58
Video thumbnail
বাঙালিরাই ঠিক করবে বাংলায় কি হবে! কেন্দ্রের বিরুদ্ধেই কড়া সুর কার্তিক মহারাজের, নীরব কেন শুভেন্দু?
03:57:36
Video thumbnail
Eco ইন্ডিয়া | Eco ইন্ডিয়া দেখুন প্রতি রবিবার সকাল সাড়ে ১০ টায়
00:31
Video thumbnail
Weather Update | রাজ্যে ফিরল শীত? এক ধাক্কায় নামল পারদ, দেখুন আবহাওয়ার লেটেস্ট আপডেট
02:00
Video thumbnail
America | India | বিদেশী সেনারা প্লেন ওড়ালো কীভাবে? সঞ্জয় সিংয়ের প্রশ্নে, কী জবাব জয়শঙ্করের?
01:03:57