Tuesday, May 20, 2025
HomeফিচারGyanvapi Mosque: জ্ঞানবাপী মসজিদ বিতর্কে কংগ্রেসের অবস্থান কী?

Gyanvapi Mosque: জ্ঞানবাপী মসজিদ বিতর্কে কংগ্রেসের অবস্থান কী?

Follow Us :

(দ্বিতীয় পর্ব)

অনেকেই মনে করছেন, বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদ নিয়ে আবার দেশে অভিনীত হতে চলেছে সেই পুরনো নাটক, যাকে আমরা বাবরি মসজিদ রামজন্মভূমি (Ram janmabhoomi Babri Masjid Debate) বিতর্ক বলে জানি। ইতিমধ্যে উত্তাপ বাড়তে শুরু করেছে বারাণসী (Varanasi) জেলা আদালতের সাম্প্রতিক রায়ের পরে, হিন্দুত্ববাদীরা প্রকাশ্যেই স্লোগান তুলছেন, অযোধ্যা তো ব্যস ঝাঁকি হ্যায়, কাশী মথুরা বাকি হ্যায়…। কিন্তু ঢাকঢোল বাজিয়ে রাহুল গান্ধিরা (Rahul Gandhi) যে ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ করছেন, সেখানে জ্ঞানবাপী নিয়ে স্পষ্ট অবস্থান না নিয়েও কী ভারত জোড়া যাবে? অতি সংক্ষেপে একবার দেখে নেওয়া যেতে পারে কাশী বিশ্বনাথ মন্দির লাগোয়া প্রাচীন জ্ঞানবাপী মসজিদের বিচিত্র ইতিহাসের টুকরো টুকরো ঘটনা।

বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদ একটি কয়েক শতাব্দী প্রাচীন মুসলিম উপাসনাস্থল। এ পর্যন্ত জানা তথ্য অনুযায়ী ১৬৬৯ সালে মুঘল বাদশা আওরঙজেব-এর নির্দেশে মুসলিমদের এই উপাসনাস্থল নির্মিত হয়। মসজিদটি কাশীর বিখ্যাত বিশ্বনাথ মন্দিরের (Kashi Viswanath Temple) ঠিক পাশেই, বাম দিকে অবস্থিত। কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের ইতিহাস অবশ্য অনেক প্রাচীন। বারবার এই মন্দির বিদেশি আক্রমণকারীদের হামলায় পড়েছে, যেমন, ১১৯৪ সালে মহম্মদ ঘোরির সৈন্যরা মন্দিরটি পুরো বা আংশিক ভাবে ধ্বংস করেছিল। এর কয়েক বছর পরে ওই মন্দিরের জায়গাতেই রাজিয়া মসজিদ গড়া হয়েছিল। কিছুকাল পরে ১২৩০ খ্রিস্টাব্দে প্রাচীন মন্দিরের অবস্থান থেকে খানিকটা দূরে অভিমুক্তেশ্বর মন্দিরের কাছে কাশী বিশ্বনাথ মন্দির পুনর্নিমাণ করেন একজন গুজরাতি ব্যবসায়ী। তখন দিল্লিতে ক্ষমতায় ছিলেন সুলতান ইলতুতমিশ (১২১১ – ১২৬৬ খ্রিস্টাব্দ)। দুই শতাব্দীর বেশি সময় নতুন মন্দিরটি থাকার পরে আবার তা ভাঙা হয়। তখন শাসক ছিলেন হুসেন শাহ শারকি (১৪৪৭ – ১৪৫৮ খ্রিস্টাব্দ) অথবা সিকন্দর লোদি (১৪৮৯ – ১৫১৭ খ্রিস্টাব্দ)।

মুঘল আমলে কাশী বিশ্বনাথ মন্দির আবার গড়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। বাদশাহ আকবরের অন্যতম সেনাপতি রাজা মান সিংহ মন্দিরটি আবার গড়েন, পরে ১৫৮৫ খ্রিস্টাব্দে রাজা তোডরমল মন্দির নির্মাণ সম্পূর্ণ করেন। রাজা মান সিংহের কন্যাকে মুসলিম শাসকের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়েছে, এই অভিযোগে গোঁড়া হিন্দুরা ওই মন্দিরে যেতেন না। বাদশাহ জাহাঙ্গিরের আমলে বীর সিংহ দেও পুরনো মন্দিরটি পুননির্মাণ করেন বা সংস্কার করেন। কিন্তু এই মন্দিরের আশ্চর্য ইতিহাসে আবার পাল্টা ঢেউ আসে। ১৬৬৯ সালে বাদশাহ অওরঙজেবের আমলে মন্দিরটি ভেঙে ফেলা হয়, সেই জায়গায় গড়ে ওঠে বর্তমান জ্ঞানবাপী মসজিদ। জ্ঞানবাপীর নানা স্থানে পুরনো মন্দিরটির নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায়।

১৭৮০ সালে মারাঠা শাসক অহল্যাবাই হোলকার মসজিদের ঠিক পাশে বর্তমান কাশী বিশ্বনাথ মন্দির গড়ে তোলেন। এর পরে মন্দিরটিতে আরও সম্প্রসারণ ও অন্যান্য অংশ যুক্ত হয়। মসজিদ ও মন্দির, উভয় ধর্মস্থানেই উপাসনা চালু থাকে। তা ছাড়াও জ্ঞানবাপী মসজিদের পশ্চিম দিকের দেওয়াল লাগোয়া স্থানে মা শৃঙ্গার গৌরী মন্দিরেও পুজো অর্চনা হতে থাকে। ১৯৩৬ সাল থেকেই জ্ঞানবাপী মসজিদ নিয়ে হিন্দুদের দাবি জোরদার হতে থাকে। এই প্রেক্ষাপটে তিন জন মুসলিম স্থানীয় আদালতে আর্জি পেশ করে যে ওই মসজিদের সব অংশে মুসলিমদের উপাসনা করার অধিকার দেওয়া হোক। আদালত সেই অধিকার দেয়, পরে এলাহাবাদ হাইকোর্টেও নিম্ন আদালতের রায় সঠিক বলে বিবেচিত হয়। দেশের স্বাধীনতার পর ১৯৫৯ সালে শিবরাত্রি উপলক্ষে হিন্দু মহাসভা জ্ঞানবাপী সংলগ্ন এলাকায় রুদ্রাভিষেক অনুষ্ঠান করেছিল। এর পরে ধীরে ধীরে জ্ঞানবাপী মসজিদের ব্যাপারে হিন্দুদের দাবি নিয়ে হিন্দুত্ববাদীরা সারা দেশে প্রচার বাড়াতে থাকে।

বাবরি মসজিদ ভাঙার উদ্যোগ তীব্র হয়ে ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের সংসদ প্লেসেস অফ ওরশিপ আইন, ১৯৯১ (Places of Worship Act, 1991) পাশ করে। ওই আইন অনুসারে রামজন্মভূমি বাবরি মসজিদ বিতর্ক ছাড়া অন্য সব ধর্মস্থান দেশের স্বাধীনতার দিনটিতে যেমন ছিল, তা-ই থাকবে, তার চরিত্র বদল করা যাবে না। আদালতে মামলা থাকায় আইনে রাম জন্মভূমি বাবরি মসজিদ বিতর্কের বিষয়টি ব্যতিক্রম হিসেবে ওই আইনে বর্ণনা করা হয়েছে। 

ওই ১৯৯১ সালেই বারাণসীর সিভিল আদালতে শিব, শৃঙ্গার গৌরী ও গণেশ, এই তিন দেবতার পক্ষে মামলা রুজু করা হয় (টাইটেল স্যুট)। ওই মামলায় বলা হয়েছিল, ১৯৯১ সালের আইন জ্ঞানবাপীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, কারণ প্রাচীন মন্দির ধ্বংস করেই মসজিদ তৈরি করা হয়েছিল। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঠিক পরে দেশের নানা জায়গায়, কাশী সহ, ব্যাপক দাঙ্গার পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় মা শৃঙ্গার গৌরী মন্দিরে পুজো বন্ধ করে প্রশাসন।

১৯৯৮ সালে জ্ঞানবাপী মসজিদের পরিচালনকারী ব্যক্তিরা পাল্টা দরখাস্ত করে আদালতে, তাঁদের দাবি ছিল, ১৯৯১ সালের ধর্মস্থান আইন অনুসারে হিন্দুদের মামলা খারিজ করা হোক। দাবি, পাল্টা দাবির পরিস্থিতিতে ১৯৯৮ সালেই নিম্ন আদালত রায় দেয় যে, জ্ঞানবাপী মসজিদের সব অংশ থেকে সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করা হোক। কিন্তু পরে এলাহাবাদ হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের ওই রায় স্থগিত করে দেয়।

এর পরে গড়িয়ে যায় দু’টি দশক। ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর বাবরি মসজিদের বিতর্কিত জমি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ঠিক পরে বারাণসী জেলা আদালতে কয়েকজন হিন্দু ব্যক্তি মামলা রুজু করেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, জ্ঞানবাপী মসজিদে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে-কে দিয়ে ক্ষেত্র সমীক্ষা করানো হোক। ২০২০ সালে জ্ঞানবাপী মসজিদ পরিচালন সংস্থা অঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া ২০১৯ সালের হিন্দুদের আবেদনের বিরোধিতা করে। অন্যান্য মুসলিম ধর্মীয় সংগঠনও মামলায় যুক্ত হয়। ২০২১ সালে বারাণসীর আদালত আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে-কে দিয়ে ক্ষেত্র সমীক্ষা করানোর পক্ষে রায় দেয়। মামলাটি এলাহাবাদ হাইকোর্টে এলে উচ্চ আদালত নিম্ন আদালতের ওই রায়ের উপর স্থগিতাদেশ দেয়।

২০২১ সালের ১৮ এপ্রিল পাঁচ জন হিন্দু মহিলা (রাখী সিংহ, লক্ষ্মী দেবী, সীতা সাহু, মঞ্জু ব্যাস ও রেখা পাঠক) জ্ঞানবাপী মসজিদের অন্তর্ভুক্ত অঞ্চলে প্রত্যহ শৃঙ্গার গৌরী, গণেশ ও হনুমানের পুজো করার আর্জি জানিয়ে স্থানীয় আদালতে পিটিশন জমা দেয়। আবেদনে এ-ও বলা হয়, বিবাদি পক্ষ যেন মসজিদের ভিতরের কোনো মূর্তি বা প্রত্নবস্তুর চরিত্র বদল না করে। এর পরেই জল দ্রুত গতিতে গড়াতে থাকে। চলতি বছর (২০২২)-এর ২৬ এপ্রিল বারাণসী জেলা আদালতের বিচারক রবি কুমার দিবাকর জ্ঞানবাপী মসজিদ ও কাশী বিশ্বনাথ মন্দির চত্বর ও লাগোয়া এলাকায় শৃঙ্গারগৌরী মন্দিরের ভিডিওগ্রাফি করার অর্ডার দেন। ৬ মে ভিডিওগ্রাফি শুরু হলেও মাঝপথে থেমে যায়, যখন একদল আইনজীবীকে মসজিদে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। ১২ মে বারাণসী জেলা আদালত আরেকটি রায়ে বলে অবিলম্বে ভিডিওগ্রাফি শুরু করে ১৭ মে-র মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে হবে। সেই সময় পাঁচ হিন্দু মহিলা আবেদনকারীদের তরফে পরে বলা হয়, মসজিদ চত্বরে একটি পুকুরের জল বের করে দিলে শিবমূর্তির দেখা মিলেছে।

মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে এলে ২১ জুলাই বিচারপতি চন্দ্রচূড় একটি অন্তবর্তী রায়ে বলেন, মুসলিমদের আবেদনের ব্যাপারে বারাণসী জেলা আদালতের রায়ের অপেক্ষা করবে শীর্ষ আদালত। যদি জ্ঞানবাপী মসজিদ পরিচালন সংস্থা অঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া পক্ষের বক্তব্য মেনে নেওয়া হয়, তবে পাঁচ হিন্দু মহিলার মামলা স্বাভাবিক ভাবেই খারিজ হয়ে যাবে। যদি তা না হয়, তবে মুসলিমরা বিচার চেয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ করতে পারবেন।

চলতি বছরের (২০২২)-এর ২৪ আগস্ট পর্যন্ত উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনে বারাণসী জেলা আদালতের বিচারপতি এ কে ভিশেষ জানান, ১২ সেপ্টেম্বর তিনি রায় দেবেন। ১২ সেপ্টেম্বর অঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া পক্ষের বক্তব্য খারিজ করে দেন বিচারপতি ভিশেষ। এর অর্থ হলো, পাঁচ হিন্দু মহিলার করা সিভিল মামলাটি শোনা হবে, ভিডিওগ্রাফি ও অন্য সাক্ষ্য প্রমাণ খতিয়ে দেখার প্রক্রিয়া শুরু হবে। ২২ সেপ্টেম্বর পরবর্তী শুনানির তারিখ ঠিক হয়।

খুব স্বাভাবিক ভাবেই দেশের মুসলিম সমাজ বিরক্ত হচ্ছেন, এমনকী ক্রুদ্ধও। সাংসদ আসাউদ্দিন ওয়েইসি এক সপ্তাহ আগে বলেছেন, আদালতের রায় ত্রুটিপূর্ণ। যদি ১৯৯১ সালের আইন এক্ষেত্রে লাগু না করা হয়, তবে সে আইনের যৌক্তিকতা কি, প্রশ্ন রেখেছেন তিনি। দেশের বিরোধী দলগুলির, বিশেষ করে কংগ্রেস, উত্তরপ্রদেশের বড় বিরোধী দল সমাজবাদী দলের ভূমিকা আতশকাচের নীচে। দেশের সংখ্যালঘুদের বিপন্নতার দিকে চোখ বুজে রেখে সাধু-সন্তদের মন্দিরে গেলেই দেশ জোড়া লাগে না, সেটা কংগ্রেসের গত তিন দশকের ইতিহাস থেকে বোঝা উচিত ছিল। কিন্তু ভারতের বামপন্থীরা ছাড়া আর কেউই জোর দিয়ে কথাটা বলছেন না। এসব প্রসঙ্গে পরের পর্বে কিছু কথা বলা যাবে।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Sheikh Hasina | এই প্রথম সরাসরি বক্তব্য রাখছেন শেখ হাসিনা, দেখুন Live
00:00
Video thumbnail
Sheikh Hasina | ফের সরাসরি বক্তব্য রাখছেন হাসিনা, কী বলছেন শুনুন
00:00
Video thumbnail
বাংলা বলছে (Bangla Bolche) | নজরে ২৬, তৃণমূলের 'উত্তরের' স্ট্র্যাটেজি
00:00
Video thumbnail
SSC | ৩২ হাজার চাকরি বাতিল মামলা, নিয়ম না মানলে দুর্নী/তি নয়, হাইকোর্টে আজব সওয়াল পর্ষদের
00:00
Video thumbnail
Mamata Banerjee | উত্তরবঙ্গে দিদির পরেই মোদি, নির্বাচনের বাজনা কি বেজেই গেল? দেখুন বিশেষ প্রতিবেদন
00:00
Video thumbnail
Mamata Banerjee | লক্ষীরভাণ্ডার প্রকল্প নিয়ে বিরাট ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর
00:00
Video thumbnail
WAQF Board | ওয়াকফ মামলা সুপ্রিম কোর্টে কী হল? এই ভিডিয়োতে জেনে নিন আপনিও
00:00
Video thumbnail
Stadium Bulletin | কোন সমীকরণে ইডেন থেকে আইপিএল ফাইনাল সরে গেল আমেদাবাদে?
17:48
Video thumbnail
Aajke | ঠ্যালায় পড়েছে এইবার, বিরোধীদের ডাকছে সরকার
01:04
Video thumbnail
Aajke | সৌজন্য নেই কেন্দ্রের, জানালেন মমতাই ফের
00:28