Placeholder canvas

Placeholder canvas
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar | কংগ্রেস এক জলসাঘরের জমিদার   

Fourth Pillar | কংগ্রেস এক জলসাঘরের জমিদার   

Follow Us :

জলসাঘরের বিশ্বম্ভর রায়ের কথা না পড়লে সত্যজিৎ রায়ের জলসাঘর আবার দেখে নিন। এক জমিদার সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব খুইয়েছে, কিন্তু তাঁর মেজাজ এখনও সেই পুরনো দিনের মতো রয়ে গিয়েছে। যখন প্রজাদের কারওর বিয়ে, উপনয়ন, অন্নপ্রাশনে সোনার গিনি উপহার দেওয়া হত, যখন জমিদারের সঙ্গে ঘুরত পাইক বরকন্দাজ, যখন জমিদারবাবুই ছিলেন এলাকার দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। কংগ্রেসকে দেখলে আমার সেই জলসাঘরের বিশ্বম্ভর রায়ের কথাই মনে হয়। কর্নাটকে জয়, আচ্ছা মেনেই নিলাম বিরাট জয়, কিন্তু তারপর, নিজের অন্তঃসারশূন্য কঙ্কালটা না দেখালেই নয়। রাজ্যের সেবা, দেশের সেবা, নফরতকা বাজার মে মহব্বত কা দুকান ইত্যাদি বাওয়ালের পর আপাতত ডি কে শিবকুমার আর সিদ্দারামাইয়ার মধ্যে যে আকচা আকচি চলছে তা তো নতুন কেনা ক্যাম্বিজ বল নিয়ে বাচ্চাদের লড়াইকেও হার মানাবে। কী চলছে? নাটকের পর নাটক। এবং পর্দার আড়ালে নয়, প্রকাশ্যেই। ঘটনাগুলো দেখুন। ডি কে শিবকুমার চলে গেলেন লিঙ্গায়েত মঠে, আশীর্বাদ নিয়ে জানিয়েই দিলেন লিঙ্গায়েত মঠ আমার পিছনে। সিদ্দারামাইয়া ততক্ষণে জানিয়েই দিয়েছেন, গরিষ্ঠাংশ এমএলএ নাকি তেনার সঙ্গেই আছেন। ওমনি ডি কে শিবির, হ্যাঁ, দেশ পি কে র পরে এক ডি কে-কে পেয়েছে, তাঁর শিবির থেকে বলা হল, আদতে অকংগ্রেসি সিদ্দারামাইয়াকে কেন আবার মুখ্যমন্ত্রিত্ব দেওয়া হবে? এসবের মধ্যেই দিল্লির ডাক। কে দেখা করবেন? খাড়্গে সাহেব। ডি কে শিবকুমারের প্রেসার বেড়ে গেল, তিনি জানালেন দিল্লি যাব না। এরপরের দিনই তিনি দিল্লিতে, অসুস্থতা? জানা নেই। কর্নাটকের বিধায়করা নাকি দলের সভাপতিকেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব দিল। মানে নির্বাচিত বিধায়করা তাঁদের নেতা বেছে নিতে পারছেন না, বা পারলেও তা দুজনের অন্তত একজন মেনে নিচ্ছেন না। এরই মধ্যে হালকা স্পিন দিলেন ডি কে শিবকুমার, কর্নাটকের জয়ের পরেই আবার জোটের কথা বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, এবং বললেন কংগ্রেসকে সমর্থন করব, কিন্তু বদলে কংগ্রেসকেও সমর্থন করতে হবে। কংগ্রেসের কেউ বলার আগেই ডি কে শিবকুমার এই বক্তব্যকে সমর্থন করলেন, অতএব তড়িঘড়ি সেই সমর্থন এল খাড়্গে সাহেবের কাছ থেকেও। 

জলসাঘরের আরেক জমিদার, অধীর চৌধুরী ইতিমধ্যেই বলে দিয়েছেন, কর্নাটকে আমরা চোরেদের বিরুদ্ধে লড়ে জিতেছি, এ রাজ্যেও দুর্নীতিবাজ তৃণমূলের বিরুদ্ধে জিতব, বিধানসভায় সবেধন নীলমণি বায়রন বিশ্বাস। এবং কর্নাটকের জটিলতা খাড়্গে, কে সি ভেনুগোপাল, সব সেরে এবার বাবার থানে হাজির। সেই শেষমেশ রাহুল গান্ধী, মানুষের সামনে আবার পরিষ্কার করে দেওয়া ওই খাড়্গে সাহেব দলের সভাপতি এসব ফাঁকা বুলি, আই ওয়াশ, বকওয়াস। আদতে দল চলছে রাহুল-সোনিয়ার কথায়, তাঁদের নির্দেশে। অতএব রাহুলের সঙ্গে বৈঠক, সোনিয়ার ফোন, শেষে ফুলের বোকে, দুজনের সঙ্গে ছবি, তুমি কি কেবলই ছবি? সারা দেশের বিজেপি বিরোধী মানুষজন একটু হাঁফ ছেড়ে ভাবছিলেন, এবার ঘুরে দাঁড়াবেন বিশ্বম্ভর রায়, থুড়ি কংগ্রেস। কোথায় কী? ইতিমধ্যে রাজস্থানে শচীন পাইলট নেমে পড়েছেন পদযাত্রায়। রাজ্য সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কেন কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না? শচীন পাইলটের প্রশ্ন। তিনি কোন দলের? ওদিকে গেহলটও কি ছেড়ে দেওয়ার পাত্র? তিনিও আরেক বিশ্বম্ভর রায়, যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ, দেহত্যাগের আগে পদত্যাগ নয়, প্রায় এটাই জানিয়ে দিয়েছেন। তাঁর সপক্ষে এমএলএদের তৈরি রাখা হচ্ছে, যে কোনও মুহূর্তে যেতে হবে রিসর্টে। বিপদটা কি বিজেপির তরফ থেকে আসছে? না, আপাতত শত্রু শচীন পাইলট। আর সেই শচীন পাইলট আপাতত শচীন তেন্ডুলকর হওয়ার চেষ্টায়, তিনিই হবেন কাপ্তান জানিয়েই দিয়েছেন। দল ভেঙে কবে বের হবেন, তা সম্ভবত সময়ের অপেক্ষা। 

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | ডাবল ইঞ্জিন সরকার, বিজেপির হাতিয়ার     

রাহুল গান্ধী যাচ্ছেন আমেরিকাতে সেমিনারে ভাষণ দিতে আর কে সি ভেনুগোপাল, এই সমস্যার মধ্যে অনেক সম্ভাবনাও নাকি খুঁজে পাচ্ছেন। যে সম্ভাবনা কংগ্রেস খুঁজে পেয়েছিল পঞ্জাবের মাটিতে। বনা কে কিউ বিগাড়া রে, বিগাড়া রে নসিবা, উপরওয়ালে, উপরওয়ালে। জঞ্জির ছবিতে গেয়েছিলেন নায়িকা জয়া বচ্চন। ভাগ্য বিপর্যয়ের জন্য প্রশ্ন করছিলেন ভগবানকে, সব দিয়েও কেন সব কেড়ে নিলে ভগবান। কিন্তু কংগ্রেসের সে সুযোগও নেই, ভগবানের কোনও হাতই নেই নিজলিঙ্গাপ্পার দল নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য বিপর্যয় ডেকে এনেছে বহুবার। পঞ্জাবে কংগ্রসের জেতাটা ছিল সময়ের অপেক্ষা। অমরিন্দর সিংয়ের বিরুদ্ধে মানুষের তেমন বিরাট অভিযোগ ছিল না। মাঠে নামলেন সিধু পাজি এবং রাহুল গান্ধী। ব্যস, বনা বনায়া খেল ভোগে চলে গেল। আগামী ১০ বছরেও পঞ্জাবে কংগ্রেস কিছু করে উঠতে পারবে? মনে হয় না। সিধু পাজি জেল থেকে বেরিয়ে কপিল শর্মা শোতে আবার যাতে বসা যায় তার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। একই রাজনীতি এর আগে মধ্যপ্রদেশে আমরা দেখেছি, মাধব রাও সিন্ধিয়া আর কমলনাথের লড়াই, শরিকি লড়াই, কে বসবেন গদিতে তার লড়াই এবং শেষমেষ সিন্ধিয়া-পুত্র গেলেন বিজেপিতে। টিম রাহুলের একখানা জ্যোতিষ্কই শুধু খসল না, মধ্যপ্রদেশ বিজেপির হাতে। গুজরাতে টিম রাহুলে ছিলেন হার্দিক প্যাটেল, তিনি বিজেপিতে, ক্ষত্রিয় ঠাকোর সেনার অল্পেশ ঠাকুর হতেই পারতেন কংগ্রেসের সম্পদ, ছিলেনও। তিনি চলে গেছেন, টিম টিম করে জ্বলছেন জিগনেশ মেওয়ানি। এ বাংলায় বিধান ভবনে রোজ ঝাড়ু পড়ে? আমার তো সেটাই মাঝেমধ্যে জানতে ইচ্ছে হয়। অধীরবাবু কথা বলার সময় তাঁর দুটো হাতকে যেভাবে নাড়ান সেভাবে যদি বাংলা কংগ্রেসকে নাড়ানো হয়, তাহলে দু’ চারজন প্রবীণ নেতা এবং কিছু খুচরো পয়সা ছাড়া ঝরে পড়ার আছেটা কী? 

ওড়িশায় কংগ্রেসকে পিছনে ফেলে বিজেপি চলে আসছে দ্বিতীয় স্থানে। কেবলমাত্র হাই কমান্ড রাজনীতির জন্য, ওয়াই এস আর রেড্ডির মতো নেতার ছেলে জগন রেড্ডি এখন কংগ্রেসের বিরুদ্ধে, কংগ্রেস মুছে গিয়েছে। তেলঙ্গানা রাজ্য তৈরি হল কংগ্রেসের উদ্যোগে, তাদেরই সময়কালে। কিন্তু ক্ষীর? খেলেন কে চন্দ্রশেখর রাও। উত্তর পূর্বাঞ্চলে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে কংগ্রেস। গোয়াতেও সেই একই ব্যর্থতা। কেরলে বামেদের সঙ্গে লড়াই, উত্তরপ্রদেশে অমেঠি তাদের হাতে নেই, টিমটিম করে জ্বলছে রায়বেরিলি। দিল্লি তো এখন বেসন কা লাড্ডু। তাহলে? তাহলে ওই সিনেমার দিকে আবার চোখ রাখুন, খুঁটিয়ে দেখুন জমিদার বিশ্বম্ভর রায়ের চরিত্রটাকে। হাত কাঁপছে, গলা শুকিয়ে গেছে, দৃষ্টি ঘোলাটে, কিন্তু মেজাজ বড়করার। তিনি এখনও জমিদার। কংগ্রেসের সঙ্গে বড্ড মিল। কিন্তু অমিলও আছে, বিশ্বম্ভর রায়ের কোনও ভবিষ্যৎ ছিল না, দৃশ্যতই তাঁর পাশে কেউ নেই, তিনি একলা, তাঁর শেষ হয়ে যাওয়াটাই ডেস্টিনি, তাঁর উত্থান সম্ভব নয়। কিন্তু কংগ্রেসের? এখনও দেশের ২২-২৫ শতাংশ মানুষ তাঁদের সমর্থন করেন, এখনও মানুষ কংগ্রেসের উদার গণতান্ত্রিক অবস্থানের অপেক্ষায় বসে আছেন। এই তীব্র সাম্প্রদায়িক আবহ, এই জঙ্গি জাতীয়তাবাদের বিরদ্ধে রুখে  দাঁড়াবেন তাঁরা, মানুষ সেটাই চাইছে। খুব স্পষ্ট যে তাঁরা একটু ধরে খেললেই তাঁদের উত্থান সম্ভব। এতকিছুর পরেও সেটাই সত্যি। একটা জাতীয় দল হিসেবে তাঁদের নেতৃত্ব দেওয়ার অধিকার আর ক্ষমতা দুটোই রয়েছে, কেবল ওই জমিদারি মেজাজ ছাড়তে হবে। থামাতে হবে এই কোন্দল। কেবল পাঁচ গ্যারন্টি সে কাম নহি চলেগা। ফ্রি র‍্যাশন, বাসে মহিলাদের ফ্রি টিকিট, ২০০ ইউনিট বিদ্যুৎ ফ্রি, বেকার ভাতা আর মহিলাদের ৩০০০ টাকা দিলে আপাতত গরিবের ভোট পাওয়া যায়, কিন্তু এই কোন্দল চলতে থাকলে সরকার চালানো তো যায়ই না, তৈরি করা সরকারও পড়ে যায়। আর ঠিক সেই দিকেই তাকিয়ে আছে বিজেপি, কড়া নজর তাদের আছে প্রত্যেক উচ্চাকাঙ্ক্ষীর দিকে। যে কোনও মুহূর্তে উইকেট পড়ে যাবে, আজ যাঁকে দেখে মনে হতেই পারে, ইনি? ইনি যোগ দেবেন বিজেপিতে? ঘুরিয়ে দেবেন খেলা? ধ্যাত তা হতেই পারে না। সেই তিনিই এক সকালে টুপ করে ঝরে পড়বেন বিজেপির কোলে, পাকা আমের মতো। তারপর আম কেটে, চুষে, চেটে খাওয়ার সব তরিকা বিজেপির, মোদি-শাহের জানাই আছে। যা দিয়ে শুরু করেছিলাম সেখানেই ফিরি, কর্নাটকের এ ঝামেলা আপাতত জোড়াতালি দিয়ে মিটেই গেল, কিন্তু দুটো জিনিস তো থেকেই যাবে। প্রথমটা হল মানুষের অবিশ্বাস, মানুষ মনেই করছে এখনও এই শতাব্দী প্রাচীন কংগ্রেস দল এক পরিবারের নেতৃত্ব ছাড়া এক পাও চলতে পারে না, এবং নেতারা গদির জন্য আকচা আকচি করেন। দ্বিতীয়ত, যে ফাটল রয়ে গেল যা ধামাচাপা দেওয়া হল, যে ফুটো বস্তা দিয়ে আপাতত ঢাকা হল তা যে কোনও মুহূর্তে আবার বিরাট আকার নিতে কতক্ষণ। বিভীষণকে চিহ্নিত করা আর তার কাছে উপযুক্ত উপঢৌকন নিয়ে হাজির হওয়া, ব্যস, যুদ্ধ জয় আর আটকায় কে? তখনও জমিদার বিশ্বম্ভর রায় ভেলভেটের বটুয়া হাতড়াবেন, গিনি মোহরের কথা ভাববেন, গুনবেন আর বলেই যাবেন।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments