কলকাতা: কসবায় ব্যবসায়ী অপহরণ-কাণ্ডের তদন্তে নেমে পুলিসের হাতে আসছে একের পর এক তথ্য। বুধবার রাতে পুলিসের পোশাক পরে পুলিসের স্টিকার মারা গাড়িতে করে বসিরহাটের ওই ব্যবসায়ী শেখ কুতুবউদ্দিন গাজিকে অপহরণ করে দুষ্কৃতীরা। দেড় কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয় পরিবারের কাছে। তবে একরাতের মধ্যেই ওই ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করে লালবাজার ও কসবা থানার পুলিস। ৬ জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেই পুলিসের হাতে এসেছে বেশ কিছু তথ্য।
ওই ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে যে বাড়িতে এনে রাখা হয়েছিল সেখানে হানা দেন পুলিস অফিসাররা। জানা যাচ্ছে, টালিগঞ্জের ওই বাড়িটি রেজ্জাক মোল্লা নামে এক ব্যক্তি ভাড়া নিয়েছিলেন। দুবছর আগে ওই বাড়ি ভাড়া নিয়ে সেখানে ফিল্ম স্টুডিও বানানো হয়েছিল। রেজ্জাককে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, অপহরণ-কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত অরিজিৎ চ্যাটার্জি একজন প্রোডাকশন ডিরেক্টর। বুধবার মিটিং করার বাহানায় ওই ভাড়া বাড়ির চাবি চায় অরিজিৎ। কোনও সন্দেহ না করে রেজ্জাক চাবিটি তাকে দিয়ে দেন। রেজ্জাকের দাবি, ওই বাড়িতে এরকম কিছু ঘটনার পরিকল্পনা চলছিল তা তিনি ঘুণাক্ষরেও টের পাননি।
টালিগঞ্জের ওই বাড়ির মালিক জানান, এর আগে একাধিকবার অরিজিৎ ও তার সঙ্গীরা পুলিস লেখা গাড়ি নিয়ে আসত ওই স্টুডিয়োতে। বুধবার সন্ধের পর বেশ কিছু লোক স্টুডিয়োতে আসে। বৃহস্পতিবারও প্রচুর পুলিস দেখে সন্দেহ হয় তাঁদের। তিনি কৌতূহলবশত জিজ্ঞাসা করলে তাঁকে বলা হয়, একটি শর্ট ফিল্ম-এর শুটিং চলছে। সেখানে পুলিসের ভূমিকা থাকায় পুলিস এসেছে স্টুডিয়োতে। তিনি এও জানান, এই বাড়িতে কাউকে অপহরণ করে রাখার খবর তিনি কলকাতা টিভির পর্দা থেকেই প্রথম জানতে পারেন।
বুধবার কসবার এক নামি শপিং মলের সামনে থেকে এক ব্যবসায়ীকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় কয়েকজন। শেখ কুতুবউদ্দিন গাজি নামে ওই ব্যবসায়ী বসিরহাটের ইঁটভাটার মালিক। বুধবার ব্যবসার কাজে কলকাতায় আসেন তিনি। ওইদিন রাত ৮টা নাগাদ মল থেকে বাইরে বেরোনোর সময় ঘটনাটি ঘটে। রাতের দিকে দেড় কোটি টাকা মুক্তিপণ চেয়ে ফোন যায় পরিবারের কাছে। ফোনের ওপার থেকে পুলিসের পরিচয় দিয়েই মুক্তিপণ চায় দুষ্কৃতীরা। পুলিসের দ্বারস্থ হয় পরিবার।
আরও পড়ুন: Sukanta-Dilip on Congress: কংগ্রেসকে পিকের দাওয়াই নিয়ে কটাক্ষ সুকান্ত-দিলীপের
অপহরণের ঘটনা কিনারা করতে রাতেই তৎপরতা শুরু হয়ে যায় লালবাজারে। পুলিশ কমিশনার (CP) বিনীত গোয়েল নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু করেন। অপহরণকারীদের সঙ্গে মুক্তিপণের দর কষাকষি শুরু করে পুলিস। দেড় কোটি থেকে ৩ লাখে নামিয়ে আনা হয় মুক্তিপণ। একাধিক সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করা হয়। শেষমেশ লালবাজার ও কসবা থানার যৌথ উদ্যোগে রাতভর তদন্তের পর বৃহস্পতিবার সকালে টালিগঞ্জ থেকে উদ্ধার করা হয় ওই ব্যবসায়ীকে।