AIFF | Kalyan Chaubey | এআইএফএফ সভাপতি কল্যাণ চৌবের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে অভিযোগ দায়ের

দুর্নীতি (Corruption), ব্যক্তিগত সুযোগ-সুবিধালাভ (Personal Gain and Benefits) এবং দলবাজির (Groupism) মতো গুরুতর অভিযোগ সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কল্যাণ চৌবের বিরুদ্ধে (Kalyan Chaubey, All India Football Federation – AIFF)। গত ১ মে তাঁর বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে (Prime Minister Office – PMO) চিঠি দিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন অন্ধ্রপ্রদেশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি গোপাল কৃষ্ণ কোসারাজু (Gopala Krishna Kosaraju, Andhra Pradesh Football Association – APFA President)। শুধু সভাপতি নয়, চিঠিতে নালিশ জানানো হয়েছে অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শাজি প্রভাকরণের (Shaji Prabhakaran, General Secretary of AIFF) বিরুদ্ধেও। প্রধানমন্ত্রীর দফতরে গোপাল কৃষ্ণের হয়ে অভিযোগ (Complaint) দায়ের করেছেন আইনজীবী শ্রবণ কুমার (Sravan Kumar)। পিএমও’কে তিনি বলেছেন, আমার মক্কেলের (Client) অভিযোগ, অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনে অনিয়ম (Irregularities) হয়েছে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যেন আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয় (Take Actions According to the Law)।

আরও পড়ুন: SC | LGBTQIA+ | সমকামী যুগলদের সমস্যা সমাধানে প্রশাসনিক পদক্ষেপ, সরকার কমিটি গড়তে রাজি, সুপ্রিম কোর্টকে কেন্দ্রের জবাব 

২০২৭ সালে এএফসি-এশিয়ান ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের (AFC-Asian Football Championship) আসর বসবে। টুর্নামেন্ট আয়োজনের জন্য দৌড়ে ইরান (Iran), সৌদি আরব (Saudi Arabia) এবং কাতারের (Qatar) সঙ্গে ভারতও ছিল। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে টুর্নামেন্ট আয়োজনের সেই বিডিং (Biding) থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছে সর্বভারতীয় ফুটবল সংস্থা। আর তার করা হয়েছে এআইএফএফ জেনারেল বডি বা কার্যনির্বাহী কমিটির অনুমোদন ছাড়াই অবৈধ ও একতরফাভাবে। এমনটাই অভিযোগ করেছেন এএপিএফএফ সভাপতি গোপাল কৃষ্ণ। তাঁর আরও অভিযোগ, যেভাবে বিডিং থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে, তাতে আন্তর্জাতিক আসরে দেশের বদনাম হয়েছে। ভবিষ্যতে এর জের পোহাতে হতে পারে ভারতকে। অলিম্পিক্স, ফুটবল সহ বিভিন্ন খেলার এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজনের ক্ষেত্রেও বিডিংয়ে ভারতের সম্ভাবনাও বাধা পাবে আগামী দিনে। গোপাল কৃষ্ণের সরাসরি অভিযোগ, সৌদি আরব ফুটবল ফেডারেশনের (Saudi Arabian Football Federation – SAFF) কর্তাদের সঙ্গে আঁতাঁত রয়েছে এআইএফএফ প্রেসিডেন্ট ও বিজেপি নেতা কল্যাণ চৌবের। 

গত মার্চে সন্তোষ ট্রফির ২টি সেমিফাইনাল ও ফাইনাল ম্যাচ দেশের মাটিতে আয়োজন না করে সৌদি আরবের রাজধানী কিং ফাদ স্টেডিয়ামে (King Fahd Stadium, Riyadh, Saudi Arabia) অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এর জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে ১০০ জন ফুটবলার ও ১০০ জন অফিসিয়ালদের নিয়ে গঠিত চারটি সেমিফাইনালিস্ট টিমকে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল রিয়াধে। বিদেশের মাটিতে প্রথমবার সন্তোষ ট্রফির মতো ঐতিহ্যবাহী টুর্নামেন্টের আয়োজন চমক হলেও, এর জন্য যেমন প্রচুর অর্থ হয়েছে, তেমনই দেশের মানুষও ঘরের মাটিতে সন্তোষ ট্রফির সেমিফাইনাল ও ফাইনাল ম্যাচ (Semifinal and Final Matches of Santosh Trophy) দেখা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। গোপাল কৃষ্ণের অভিযোগ, সন্তোষ ট্রফির সেমিফাইনাল ও ফাইনাল ম্যাচ ভারত থেকে সরিয়ে রিয়াধে আয়োজন করা হয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার, কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রক এবং এআইএফএফ-এর জেনারেল বডির অনুমোদন ছাড়াই। এখান থেকেই প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে, সৌদি আরব ফুটবল ফেডারেশনের (Saudi Arabia Football Federation) সঙ্গে যোগসাজোশ রয়েছে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন সভাপতির। সৌদি আরবের মাটিতে সন্তোষ ট্রফির সেমিফাইনাল ও ফাইনাল ম্যাচ সরিয়ে নিয়ে গিয়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক লাভবান হলেও, ফেডারেশনের উপর বিপুল পরিমাণ আর্থিক বোঝা চেপেছে।

ভারতীয় ফুটবলের নিয়ামক সংস্থায় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শাজি প্রভাকরণের নিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন গোপাল কৃষ্ণ। তাঁর অভিযোগ, ফেডারেশনের বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা এবং শীর্ষস্থানীয় পরিচালক কর্মীদের নিয়োগ ও অপসারণ করা হয়েছে। প্রায় ৬০ শতাংশ কর্মীকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এআইএফএফ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিল। তাঁদের জায়গায় যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে নতুন ব্যক্তিদের নিয়ে আসা হয়েছে। গোপাল কৃষ্ণের বক্তব্য, এর আগে যিনি এআইএফএফ-এর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, সেই কুশল দাস একজন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ছিলেন, তিনি ফেডারেশনের দৈনন্দিন বিষয় এবং পরিচালনার দেখভাল করতেন। কিন্তু বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শাজি প্রভাকরণ পুরোপুরি ফেডারেশনের অভ্যন্তরীণ ব্যক্তি এবং সভাপতি কল্যাণ চৌবের সমর্থক হিসেবে পরিচিত। অন্ধপ্রদেশ ফুটবল সংস্থার সভাপতির অভিযোগ, বর্তমান এআইএফএফ সভাপতি কল্যাণ চৌবের প্রস্তাবক এবং নির্বাচনী এজেন্ট ছিলেন শাজি। তাঁকে উচ্চ পারিশ্রমিক এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সহ সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। অথচ কোনও তথ্যই প্রকাশ করা হয়নি। 

প্রধানমন্ত্রীর দফতরে দেওয়া চিঠিতে দলবাজি করার গুরুতর অভিযোগ এনেছেন গোপাল কৃষ্ণ। তাঁর দাবি, বর্তমান এআইএফএফ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সর্বভারতীয় ফুটবল সংস্থার অভ্যন্তরে এবং দেশের সমস্ত রাজ্যের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনগুলিতে গোষ্ঠীবাদকে উৎসাহিত করছেন৷ যে অ্যাসোসিয়েশনগুলি তাঁদের দলে নেই, তাদের বিনা কারণে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, নতুন ব্যক্তিদেরও তাঁদের দলে টানার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে। 

কেন্দ্র সরকার এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক ও দফতরের কাছে তিনি অনুরোধ জানিয়েছেন, এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজনের বিডিং থেকে নাম প্রত্যাহার এবং অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন ওসৌদি আরব ফুটবল ফেডারেশনের মধ্যে যোগসাজশের ইস্যুর তদন্ত করা হোক। এআইএফএফে আর্থিক অনিয়মের বিষয়েও তিনি সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। পিএমও’র কাছে তাঁর অনুরোধ, ডিরেক্ট কম্পট্রলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল অব ইন্ডিয়াকে (Direct Comptroller and Auditor General of India) দিয়ে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের সমস্ত আর্থিক বিষয়ের অ্যাকাউন্টিং ও অডিটিং (Accounting And Auditing) পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হোক। আর কোনওরকম আর্থিক অনিয়ম পাওয়া গেলে, দায়ী ব্যক্তিদের কাছ থেকে তা আদায় করা হোক। 

প্রসঙ্গত, ২০২২ সালে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। গত নির্বাচনে কোষাধ্যক্ষ পদে প্রার্থীও হয়েছিলেন গোপাল কৃষ্ণ কোসারাজু। কিন্তু এক বিজেপি সাংসদের হস্তক্ষেপে ও চাপে নাম প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। ক্রীড়ামহলের একাংশের অভিযোগ, নিজেদের লবির লোকজনকেই বেছে বেছে সর্বভারতীয় ফুটবল সংস্থায় নিয়ে এসেছেন কল্যাণ চৌবে। এক্ষেত্রে পূর্ণ সমর্থন রয়েছে কেন্দ্রের ক্ষমতসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির (Bharatiya Janata Party – BJP)। বারবারই অভিযোগ উঠেছে, দেশের সর্বভারতীয় ও সমস্ত রাজ্যের ক্রীড়া সংস্থাগুলিতে নিজেদের প্রতিনিধি বসিয়ে নিয়ন্ত্রণে আনতে চাইছে বিজেপি।