নয়াদিল্লি: ‘জব তক সামোসে মে আলু, তবতক বিহার মে লালু।’ একসময় বিহারে (Bihar) আরজেডির (RJD) স্লোগান ছিল এটাই। সেই পাটলিপুত্রও নেই, নেই সেই ‘গরিবোঁ কি মসিহা’র প্রভাব-প্রতিপত্তি। রাজপাট নেই, সেই রাজাও নেই। কিন্ত, লালু অদম্য। এটাই তাঁর রাজনৈতিক চাণক্যগিরি। মঙ্গলবারও তা করে দেখালেন এককালের ডাকাবুকো নেতা। এদিন দুদফায় প্রায় ৬ ঘণ্টা সিবিআই (CBI) অফিসারদের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার পরেও তাঁদের আনন্দভরে হোলির মিষ্টি গুজিয়া খাওয়ালেন বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ।
সরকারি কাজে এসেও ভদ্রতাবশত ও সৌজন্য প্রদর্শনে সিবিআই আধিকারিকরাও তাঁকে হ্যাপি হোলি (Happy Holi) জানান। লালু এগিয়ে দেন গুজিয়া ভরা থালা। যদিও সিবিআই কর্তারা এ বিষয়ে সরকারিভাবে কিছু বলেননি। তবে যাদব চূড়ামণির দিল্লির বাড়ি থেকে বেরনোর আগে তাঁদের যে হোলির মিষ্টিমুখ করিয়েছেন লালু তা পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে।
লালু-পত্নীকে জিজ্ঞাসাবাদের পরদিনই মঙ্গলবার খোদ বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদবকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই। ‘চাকরির বদলে জমি’ দুর্নীতি মামলায় অসুস্থ লালুপ্রসাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন সিবিআই আধিকারিকরা। সম্প্রতি সিঙ্গাপুর থেকে কিডনি অস্ত্রোপচার করে দেশে ফিরেছেন তিনি। বাইরের লোকের সঙ্গে দেখা করা বারণ। তা সত্ত্বেও তাঁকে রেয়াত করেনি সিবিআই। যদিও তাঁর অসুস্থতা সম্পর্কে সিবিআই আধিকারিকদের নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে মাস্ক পরে ঢুকতে বলে দেওয়া হয়েছিল।
একটি সূত্র জানিয়েছে, লালু যাদবের কিছুদিন আগেই কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছে। এই অবস্থায় বাইরের লোকের সংস্পর্শে এলে তাঁর সংক্রমণ ঘটতে পারে। অ্যালার্জি হতে পারে। তাই তদন্তকারীদের বলে দেওয়া হয়েছিল, তাঁরা যেন নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখেন এবং মাস্ক পরে থাকেন। পাণ্ডারা পার্কের বাড়িতে প্রায় ৬ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের শেষে চলে যায় সিবিআই।
সিবিআইয়ের আচমকা তৎপরতার প্রতিক্রিয়ায় লালু-রাবড়ি পুত্র তথা বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব বলেন, আমি তো ছোটবেলা থেকে বাড়িতে এ ধরনের তদন্ত দেখে দেখে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। আসলে বিহারে এখন আরজেডি-সংযুক্ত জনতা দলের সরকার ভালোভাবে চলছে, সেটা সহ্য হচ্ছে না বিজেপির।
প্রসঙ্গত, ‘চাকরির বদলে জমি’ (Land for Job Scam) মামলায় বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী (Former Bihar chief minister Rabri Devi) তথা আরজেডি (RJD) নেত্রী রাবড়ি দেবীর বাড়িতে সিবিআই (CBI) আসে। সোমবার সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ সিবিআইয়ের ১২ সদস্যের একটি দল চারটি গাড়িতে চেপে লালুপ্রসাদ যাদবের (Lalu Prasad Yadav) বাড়িতে পৌঁছে যায়। বাড়িতে ছিলেন পুত্র তেজস্বী যাদব (Tejaswi Yadav) এবং তেজপ্রতাপ যাদবও। এর আগে লালুপত্নী রাবড়ি দেবীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিস দিয়েছিল সিবিআই। তারপর আচমকাই সোমবার সকালে লোকলস্কর নিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হাজির হয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
বিরোধীদের পিছনে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা লেলিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে রবিবারই অ-বিজেপি, অ-কংগ্রেসি দলগুলি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে একটি প্রতিবাদপত্র পাঠায়। ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছিলেন আরজেডি নেতা তথা বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব। দলের নেত্রীর বাড়িতে সিবিআই ঢোকার খবর চাউর হওয়া মাত্রই দলে দলে কর্মীরা লালু-রাবড়ির বাড়ির সামনে এসে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। উল্লেখ্য, গত মে মাসে নতুন একটি দুর্নীতি মামলায় সিবিআই বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদব এবং তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল। লালুপ্রসাদ ছাড়াও তাঁর স্ত্রী রাবড়ি দেবী, মেয়ে মিসা ভারতী (Misa Bharti) এবং হেমা যাদব সহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়।
লালুপ্রসাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ইউপিএ সরকারের রেলমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি রেলে চাকরির বিনিময়ে জমি ঘুষ নিয়েছিলেন। গতবছর অক্টোবরে এই মামলায় লালু-রাবড়ি সহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় সিবিআই। সংস্থার অভিযোগ, লালুপ্রসাদ এবং তাঁর পরিবার চাকরির বদলে জমি দখল করার দুর্নীতিতে প্রায় ১ লক্ষ বর্গফুট জমি করায়ত্ত করেছিলেন। বাজারদরের নামমাত্র দামে মাত্র ২৬ লক্ষ টাকায় ওই জমি যাদব পরিবারের নামে হস্তান্তর হয়। সেই আমলে যার প্রকৃত মূল্য ছিল ৪ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকা। এবারের সিবিআই তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদের নেপথ্যে রয়েছে নতুন কিছু তথ্য। এমনটাই সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে।